পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে সরকারের অবৈধ সন্তানেরা তথা শাহবাগিরা যখন কুরুচি মন্তব্য করল তখন তা জনগণের কাছে প্রকাশ করলেন বাংলাদেশের সত্যের সিপাহসালার আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ব্লগে ও ফেসবুকে নাস্তিকদের গোপন বিদ্বেষ মূলক কথা প্রকাশের পর শাহবাগিদের উদ্দেশ্য ফাঁস হয়ে যায়,ধর্মপ্রাণ মুসলমান ধিক্কার জানায় এ অবৈধ গণজাগরণ মঞ্চকে। মাহমুদুর রহমানের কলমের খোঁচায় সরকারের পাতানো খেলা সব ধীরে ধীরে প্রকাশ হয়ে যায়। আর তখনই নষ্টদের দাবী মাহমুদুর রহমানের বিচার চাই ও আমার দেশ বন্ধ হোক। সরকারের পরোক্ষ সহায়তায় পুলিশ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করে ও দু মাসের মত নজরবন্দি করে। তিনি একজন বীর মুজাহিদের মত সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তার শানিত কলম ধরেছেন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে। নাস্তিকতার আবরণে ইসলামবিদ্বষ এই প্রতিবেদন তাকে পরিচিত করে সারাবিশ্বে। আজ সত্য ও হক কথা বলতে গিয়ে মিথ্যে মামলায় কারাগারে বন্দি। তবে হক বাতিলের দ্বন্দ্ব পৃথিবী সৃষ্টিলগ্নে। মাহমুদুর রহমানের ডাকে দেশের আলেম সমাজ একত্র ও ঐক্যবদ্ধ হয়,তার ডাকে দেশব্যাপী মানুষ রোজা পালন করে। ধর্মদ্রোহীদের মুখোশ খুলে পড়ে। সরকারের ইন্ধনে শাহবাগিরা আমার দেশ পত্রিকা বন্ধের আহবান জানায় ও প্রকাশ্যে পত্রিকা পুড়ে ফেলে। পবিত্র হাদিসে জালেমের সামনে হক কথা বলাকে জিহাদ হিসেবে বলা হয়েছে। মাহমুদুর রহমান কাউকে পরোয়া না করে সত্য কথা প্রচার করে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মর্দে মুজাহিদ কাকে বলে। মাহমুদুর রহমান ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে রাজশাহীতে মহাসমাবেশ করেছেন। টিপাইমুখে বাঁধ দেয়ার বিরুদ্ধে লংমার্চ করেছেন। ভারতকে করিডোর দেয়ার বিরোধিতা করেছেন তিনি। সরকারের সব ধরনের অন্যায়-অবিচারকে সুনিপুণ কায়দায় জনগণের সামনে প্রকাশ করেছে আমার দেশ পত্রিকা। রেল কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার লুণ্ঠন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারিসহ হাজারও দুর্নীতির সবিস্তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দৈনিক আমার দেশ। যুদ্ধাপরাধীর বিচার সবাই চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার করার নামে প্রহসনের বিচার কেউ চায় না। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ দৈনিক আমার দেশ সাহসের সঙ্গে জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেয়। যে কারণে একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পরপরই এ দেশে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল তার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে একের পর এক রিপোর্ট করেছে দৈনিক আমার দেশ।
সরকারের সমালোচনার জন্যই আজ তিনি বন্দী। তাকে পর পর দুইবার কারাবরণ করতে হচ্ছে। সত্যের সেনানীরা নিবেনাকো বিশ্রাম আমাদের সংগ্রাম চলবেই অবিরাম। এই শ্লোগান মাহমুদুর রহমান অর্জন করেছেন। কথিক মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় দেশ বরেণ্য আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হয়,বিক্ষোভে ফেঁটেপড়ে গোটা দেশ,নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে সরকার। হত্যান্ডের তীব্রবিরোধীতা করেন মাহমুদুর রহমান। শাহবাগিরা তাকে হত্যার হুমকি দিলেও সরকার চুপ থাকে।
‘দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আইসিটি মামলায় গ্রেফতার করে পত্রিকার প্রেসে তালা লাগিয়ে দেয়া এবং কোনো কারণ না দেখিয়ে দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অনেক সাংবাদিককে বেকারত্বের অন্ধকারে নিক্ষেপ করা কোনো নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে অনুকূল নয়।’ ১৯৭২-৭৫ সালে মিডিয়া বলতে কেবল সংবাদপত্রই বোঝাত। তাও আবার হাতেগনা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে ছিল শুধুই বিটিভি আর বাংলাদেশ বেতার। যুগ, সময় ও প্রযুক্তিব্যাপক পাল্টিয়েছে। শুধু বদলায়নি আওয়ামী অপশাসকদের মনোবৃত্তি। উল্লিখিত সময়ে মিডিয়া তথা সব সংবাদপত্র আওয়ামী কীর্তন গাইত। শুধু গণকণ্ঠ, হককথা, স্পোকসম্যান, মুখপত্র এমন কয়েকটি সংবাদপত্র ছিল, যারা সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করত। সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়া সরকারের পতন ঘটানোর ‘অপপ্রয়াস’ এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ত্রুটিবিচ্যুতি ধরিয়ে দেয়ার লক্ষ্য হচ্ছে সরকার যাতে নিজেকে সংশোধন করে জনকল্যাণের পথে অগ্রসর হতে পারে। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিব সরকার এবং ২০০৯ সালের আওয়ামী ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের সেটি উপলব্ধি করার কোনো ক্ষমতা নেই। শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল না এখনও শেখ হাসিনারও নেই। সেই যে আওয়ামী লীগের মিডিয়াবিরোধী ভূমিকা শুরু হয়েছিল, তা এই সরকারের আমলেও অব্যাহত আছে। যত খুশি অন্যায় করো। আমরা তার বৈধতা দেবো। সংবিধান সংশোধন করে হলেও দেবো। সেই সরকার এই সমাজের শ্রদ্ধাভাজন রাজনৈতিক নেতাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। তারা থাকার চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। মইনুউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের যে সরকার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল, জনবিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে।
যদিও আমার দেশ নিয়ে একটি কলাম ছাপা হয় আমার ২৬মে সংখ্যায়। আমি মাহমুদুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিনা বা এই পর্যন্তও দেখা সাক্ষাত হয়নি,তবুও তার কথা বলি। আমার লেখায় তাকে জুড়ে দেই ও চেষ্টা করি।তার জন্য আমার মন কাঁদে আঁখি কাঁদে। যা হোক আসল কথায় আসি,গনতান্ত্রিক সরকার ব্যাবস্থা পৃথিবীর একটি সর্বাধুনিক শাসন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় একজন নাগরিক সরকারের সমালোচনা করতে পারে কিন্তু তা অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। আর আলোচনা ও সমালোচনার মধ্য দিয়ে সরকার শিক্ষা নেয়। মাহমুদুর রহমান একজন দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সাবেক জ্বালানী উপদেষ্টা। তাকে মূলত গ্রেফতারের কারণ সরকারের দুর্নীতি ও ব্যর্থতা পত্রিকায় তুলে ধরায়। সরকারের ব্যপক সমালোচনা করলেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সরকারের অনুধাবন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে গেছে।
মাহমুদুর রহমান কেন, সত্য কথা বলতে গিয়ে প্রতি যুগে যুগে ভাল মানুষেরা ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েছেন। মিশরে ইখওয়ানুল মোসলেমীনরা নিষিদ্ধ হয়েছিলেন,তাদের নেতাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হয়। একটি বিদেশী বিখ্যাত বই “কারাগারে রাতদিন” জয়নব আল গাজ্জালীর এটি এই প্রমান বহন করে। সত্যের সেনানীরা নির্যাতন ভোগ করবেনই,মিশরের নাসের সরকার যা করেছিল ৪৬ বছর আগে তদ্রুপ আওয়ামী লীগই তাই করছে বর্তমানে। পৃথিবীর প্রাচীন যুগে তথা ৪৭০ অব্দে জন্ম নেন বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস,তিনিও তৎকালীন শাসকের হাতে বন্দি হন ও তাকে বিষাক্ত বিষ পান করিয়ে হত্যা করা হয়। এথেন্সবাসীদের তিনি ভাল ও দ্বান্দ্বিক জ্ঞান শিক্ষা দিতেন ও শাসকদের সমালোচনা করতেন আর এই অন্যায়ে তাকে হত্যা করা হয়। পৃথিবী জুড়েই এই আক্রোশ ভালদের উপর। তুরস্কের কামাল আতাতুর্কও ছিলেন তাদের দলে তথা জুলুম কারীদের কাতারে,শত শত আলেম হত্যা করে কামাল পাশা,দাড়িতে কর বসায়,মুসলীমদের ইসলামী রাজনীতিও নিষিদ্ধ করেন।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থায় একজন নাগরিক সরকারের সমলোচনার ইখতিয়ার রাখেন কিন্তু সমালোচনা করলেই যে জেল জুলুম পোহাতে হবে তা কোন আইন? যদি একটি আর্টিকেল লিখেই জেলে যেতে হয় তবে গণতন্ত্রের শ্লোগান দেয়ার দরকারটা কী? আওয়ামী সরকার গায়ের জোরে আমার দেশ পত্রিকার প্রেস সিলগালা করে দিয়েছে, প্রায় ৬ মাসে পদার্পনে। সাংবাদিকরা অসহায় দিন কাটাচ্ছেন,প্রেসের কর্মীরাও অলস দিন কাটাচ্ছেন। তাদের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলছে সরকার। তবে মজার ব্যাপার সুন্দর কথায় বেশ পটু এই সরকার। জাতিসংঘে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীবাসীকে নসিহত করলেন,অস্রের ঝনঝনানী ত্যাগ করতে। কিন্তু নিজ দলের মাঝে অবাধ লাইসেন্স প্রদানের কথা কে বলবে? কে বলবে সত্য কথা বলতে গিয়ে মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের কথা,রিমান্ডের কথা। তিনি সত্যিই বড় ময়াজাল বুননকারী।সরকার সাধারণ মানুষদের যতটা বেকুব ভাবুক আসলে মানুষ ততটা রোকা নন,মানুষ এখন খুবই সচেতন ও বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে। তারা ভাল-মন্দ সমন্ধে বেশ সচেতনতা রাখে। সত্যমিথ্যার প্রবেধের সামর্থ রাখে ও কুটকৌশল ধরতেও বেশ এগিয়ে।
আওয়ামী ও বামমার্কা মিডিয়া গুলো দেশকে দুটি পক্ষে বিভক্তে চেষ্টায় বিভোর। একটি মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত স্বাধীনতা সপক্ষের দল আর অন্যটি কট্রর ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। আর এই বাম মিডিয়ার মিথ্যা ও কথার ফুঝুড়িতে মাহমুদুর রহমানের এ অবস্থা। শাহবাগিদের মুখোশ প্রথম খুলে ইনকিলাব পত্রিকা,কিন্তু তা পরিপূর্ন ফাঁস করে আমার দেশ। আর এতেই বিপত্তি সৃষ্টি হয়। অনেক প্রিন্টমিডিয়াও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখে,তাকে জামায়াত মৌলবাদী বলে ফলাও করে। টকশোতে তাকে নিয়ে সমালোচনা করে। তবে এটা সত্য সাধারণ নবতরুন যারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তাদের প্রিয় মানুষ মাহমুদুর রহমান। বিশ্বের নন্দিত কবি ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশী মানুষের প্রাণের প্রেরণা,আর বাঙ্গালী পরিচয়দানকারী মানুষের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,এখানেই একটা পার্থক্য পাওয়া যায়। কবি নজরুল তার কবিতায় বলেছিলেন-“তারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ,আমরা বলিব সাম্যশান্তি এক আল্লাহ্ জিন্দাবাদ”। আর তাই তা প্রচার করেছেন মাহমুদুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪