"আকস্মিক"
২৮ শ্রাবণ রাত ২টা ৫৬ মিনিটে বাথরুমে পা পিছলে
ছেলেটি হঠাত মারা গেল।
টেবিলে তার আধখোলা একটি গল্পের বই পড়েছিল,
যার একটি পাতা ফ্যানের নিকোটিন যুক্ত বাতাসে
উড়ি উড়ি করেও উড়তে পারছিল না,
কারণ ছেলেটির রুমে তখন আর পাতা উল্টানোর মত কেউ ছিল না।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্লোরোসেন্ট বাল্ব সারারাত বিদ্যুৎ অপচয় করছিল অহেতুক,
কেননা স্যুইচ নেভানোর হাত দু’টো তখন নিস্পন্দিত হয়ে নিথর পড়েছিল-
কোন বোকা মূর্তির মত।
ছেলেটির পরদিন একটা এসাইনমেন্ট জমা ছিল,
দু’টো ক্লাস টেস্ট ছিল, জিওটেক ল্যাব ছিল;
দু’টো কবিতার বই তার বন্ধুকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা ছিল,
পাড়ার মোড়ের দোকানে ছ’কাপ চা আর এক প্যাকেট বেনসন বাকী ছিল।
সামনের সপ্তাহে মামাত ভাইয়ের জম্মদিনের দাওয়াত ছিল-
নিউ মার্কেটে একটা ঘড়িও পছন্দ করেছিল সে উপহার দিবে বলে।
ছেলেটির অপ্রেরিত কিছু চিঠি ছিল-
অরুপাকে ভেবে লিখা,
আরো ছিল ডায়েরীতে প্রতিরাতে জমা হওয়া গোপন কথার সম্ভার,
এলোমেলো কাব্য।
বারান্দার টবে আড়মোড়া ভাঙ্গা মুকুলের কাছে
একটি টকটকে লাল ফুলের প্রত্যাশা ছেলেটির ছিল।
জানালার পাশে অক্লান্ত দাঁড়িয়ে থাকা
চাঁপা গাছটির প্রতিবেশী পরিচিত পাখিদের কাছে
আরো কিছু মোহনীয় গান শুনার নির্দোষ বাসনা ছেলেটির ছিল।
ছেলেটির পরবর্তী বসন্তে ছাদের বাগান জুড়ে বিভিন্ন ঘাসফড়িং
আর বর্ণালী প্রজাপতিকে নিমন্ত্রণ করার কথা ছিল,
অথবা তারাময় কোন রাতে তারা স্খলনের কালে
একটি বিশেষ ইচ্ছে পোষণের ইচ্ছে ছেলেটির ছিল।
ছেলেটির অনেকের কাছে বিদায় নেয়ার ছিল,
অনেককে ভালবাসি বলবার ছিল;
প্রিয় মুখগুলোকে অন্তত একবার-শেষবার-
ছুঁয়ে দেখবার প্রবল প্রতিজ্ঞা তার ছিল।
ছেলেটির অনেক স্বপ্ন ছিল,শখ ছিল,অসম্পূর্ণ গল্প ছিল,
ছেলেটির বেঁচে থাকার সুতীব্র সাধ ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:২৬