ঘটনাটা ঘটে আমার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে যখন এইবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাই তখন।
আমাদের বন্ধু-বৃত্তের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচাইতে বেশি নাক সিঁটকানো স্বভাব যার, সেই আবুল আহমেদ যখন আমাকে ফোন করে বলল, ‘দোস্ত আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে, আই এম ইন লাভ’ তখন আমি টাসকি না খেয়ে পারলাম না। টাসকি জিনিসটা কী-ফলমূল নাকি চকলেট সেটা নিয়ে গবেষণা করার সময় তখন ছিলনা, আমার মন তখন আঁকুপাঁকু করছিল মূল ঘটনা শুনার জন্য; তাই প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি যখন আমাদের এলাকার বাঁকখালী নদীর পাশে এক অখ্যাত চায়ের দোকানে পৌঁছলাম তখন বিকেল ৫টা। আড্ডার জন্য এই অখ্যাত স্থান নির্বাচনের কারণ-এইখানে আমরা যতই বিড়ি-সিগারেট খাইনা কেন সেটা আমাদের বাপ-চাচাদের কানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা শূণ্যের কাছাকাছি। উপার্জনহীন অবস্থায় স্ব স্ব পরিবারে ভদ্রতার মুখোশ ধরে রাখার জন্য এই গোপনীয়তা খুব জরুরী। যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বৃষ্টিতে ছাগল-ভেজা হয়ে যখন আড্ডা-খানায় উপস্থিত হলাম তখন চায়ের দোকানের ছোট্ট ঘরটি সাদা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। স্বভাবিক। এই প্রচন্ড টেনশনে সবাই একটু বেশিই নিকোটিন চাইবে। আমি গিয়েই আবুলকে চেপে ধরলাম।
- দেখ দোস্ত, ঝেড়ে কাশতে হবে। কোন ডিটেইলস বাদ দেওয়া যাবেনা। আগা টু গোড়া সব বলবি।
আমি উত্তেজনার সাথে বললাম।
-আমি আর কী বলব। আমার তো সর্বনাশ হয়ে গেছে। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কী করে? কী তার চুল-কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত-ব্ল্যাক বোর্ডের মত কালো, কী তার মুখ-কয়েকটা চাঁদও সুইসাইড করবে তাকে দেখলে, কী তার হাত, কী তার পা, কী সুন্দর করে যে তাকায়...কথা বলেও অদ্ভুত সুন্দর করে...সুন্দরের সংজ্ঞা জানতে হলে মেয়েটাকে দেখতেই হবে...চলোর্মির মত কেমন হিল্লোল তুলে হেঁটে যায়...সামান্য চটপটি খেল তাতেও কত শিল্পিত ভাব...
আবুলের মতো দেহত্ববাদী পুরুষের মুখে এইসব কাব্যিক কথা শুনে আমি আবারো টাসকি নামক রহস্যময় বস্তুটা খেলাম। আজকে বোধহয় টাসকি খেতে খেতে বদহজম হয়ে যাবে।
-আচ্ছা দোস্ত, কিছু বাদ পড়ছেনা তো? তুই আসল পয়েন্টগুলাই মে বি মিস করতেছিস!
আমি আগ্রহ ভরে জানতে চাইলাম।
-দেখ দোস্ত, এতদিন আমি অন্ধ ছিলাম। গত পরশুদিন আমার চোখ খুলে গেছে। শেষ বিকেলের মেয়েটি আমার ভেতরের পশুটাকে মেরে আসল মানুষটাকে বের করে এনেছে।
আমি আর তর সইতে পারলাম না।
-আবুলের বাচ্চার বাপ, ভাবের কথা বাদ দে। অইদিন কী হইসে পুরোপুরি বল।
তারপর আবুল আবেগসিক্ত গলায় বলতে শুরু করল-
গত পরশুদিন তোকে ফোন দিসিলাম, তুই তো ব্যস্ত ছিলি। আমি, ইয়াসির, রিপন আর তকি মিলে বীচে গেলাম সী ইন পয়েন্টে। প্রতিদিনের মত সুন্দরীদের অঙ্গসস্থান ও গঠনগত বৈচিত্র্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিলাম আর চা-সিগারেট খাচ্ছিলাম। হঠাত দেখি একটা ডানা-কাটা পরী তিনজন বান্ধবী নিয়ে সৈকতে নামছে। জীবনে কত মেয়ে দেখেছি, কত মেয়ের মার্কিং করেছি, কিন্তু এই প্রথম কোন অপূর্ব সুন্দরীকে দেখে মার্কিং করতে ভুলে গেলাম। আমি মন্ত্রবশীভূত হয়ে মেয়েটির পেছন পেছন ঘুরতে লাগলাম। যেহেতু আমি ওদের পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করি, ইয়াসির, তকি আর রিপনও আমার পিছনে আসা শুর করল। শেষ বিকেলের রহস্যময় আলোয় আমি তখন আমার বুয়েটিয়ান ইগো ভুলে গেছি। আমি হয়ে গিয়েছিলাম হ্যামিলনের ইঁদুর, আর মেয়েটি বাঁশিওয়ালা।
যাই হোক, আমরা প্রায় দেড় ঘন্টা ওদের পিছন পিছন হাঁটলাম। ওরা বাদাম খেল, আমরাও খেলাম। ওরা ঝালমুড়ি খেল, আমরাও খেলাম। ওরা ছবি তুলল, আমরাও তুললাম। ওরা চটপটির দোকানে গিয়ে ফুচকা খেল, আমরাও খেলাম।
এই পর্যন্ত শুনে আমি আবুলকে থামিয়ে বললাম-দোস্ত ওরা মানবী ছিলনা।
আবুল শুনে খুশি হয়ে বলল- ঠিক ঠিক। ওরা ছিল পরী।
আমি বললাম-দোস্ত পরী না, ওরা রাক্ষসী ছিল। দেড় ঘন্টার মধ্যে যে খাওয়া-দাওয়াটা দিল।
আবুল বিরক্ত হয়ে বলল, সবকিছুতেই তোর ফাইজলামী। যা তোকে আর কিছুই বলবনা। তোর শুনা লাগবেনা।
আমি আবুলের মান ভাঙ্গাতে ওকে সিগারেট আনিয়ে দিলাম। মামুন সিগারেট ধরিয়ে আবার শুরু করল।
- ওরা যখন চটপটি খাচ্ছিল আমরাও তখন খাচ্ছিলাম। আমি তকিকে বললাম ওদের সাথে একটু ভাব করতে। তারপর দোস্ত তকি যা করল...
আমি তকির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুই আবার কি করলি?’
তকি ভয়ে ভয়ে বলল, ‘আমি আবার কি করলাম?’
ইয়াসির এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে নিরবতা ভেঙে বলল, ‘তকি তারপর ঐ মেয়েদের রীতিমত ভয় পাইয়ে দিল। সে গিয়ে বাংলা আর ইংরেজি মিশিয়ে এমন সব কথা বলতে শুরু করল যে মেয়েরা চটপটি ফেলে প্রায় দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।’
আবুল বলল, ‘শালার তকিকে কথা বলতে দেয়াটাই ভুল ছিল। সে গিয়ে এমন সব জগাখিচুড়ি কথা বলতে শুরু করল যে নিষ্পাপ মেয়েগুলো ভয় পেয়ে একটা টমটম গাড়িতে উঠে গেল। ’
আমি তকির দিকে ফিরে জানতে চাইলাম, ‘কি এমন বিদ্ঘুটে ইংলিশ বললি রে?’
তকি উত্তরে বলল, ‘আরে আমি একটু হাইপার হয়ে গিয়েছিলাম। বললাম, হোয়াটস আপ ফ্রেন্ডস, এনি প্রবস?’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘এইসব কি বলেছিস? তুই কি কোন প্রোগ্রামের উপস্থাপনা করছিলি? আর প্রবস কিরে?’
তকি নিরামিষ মুখে জবাব দিল, ‘আরে প্রবস মানে প্রবলেম’
ততক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম বাকি সবাই কেন তকির উপর ক্ষেপে আছে।
-আচ্ছা যাই হোক। তোরা মেয়েগুলোকে ফলো করিসনি?
আমি জানতে চাইলাম।
-হুম করেছি। কিন্তু অর্ধেক যেতেই হারিয়ে ফেলি। বুঝিস তো, এখন টুরিস্ট সিজান। তবে মেয়েগুলা যে লোকাল এইটা সিউর।
আবুল বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলল।
-কেমনে সিউর হলি?
-আরে কাল বিকেলেও তো আমরা বিচে এসেছিলাম। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, ঐসময় দেখি গত পরশু সন্ধ্যা বেলার সেই টমটমের ড্রাইভারটা যেটাতে করে ওরা পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে ওকে ধরলাম। নগদ টাকার লোভ দেখালাম। ড্রাইভার আমাদের ওই মেয়েগুলোকে যে জায়গায় নামিয়ে দিয়েছিল সেই জায়গায় নিয়ে গেল।
-তো, সেই তীর্থস্থানটার নাম কি?
আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
-টেকপাড়ার মোড়।
বাকি সবাই একসাথে বলে উঠল।
-আরে এই মেয়েকে তো খুঁজে পাওয়া ওয়ান-টুর ব্যাপার। টেকপাড়ার লেডিস এক্সপার্টদের খবর দিলেই হবে। তো মেয়েটার নাম, ছবি কিছু তো কালেক্ট করতে পেরেছিস?
আমার এই প্রশ্ন শুনে সবাই ভ্যাবদা মেরে গেল। বুঝা গেল কাজের কাজটাই কেউ করতে পারেনি। শুধুই পিছন পিছন ঘুরেছে, উলটা পাল্টা কথা বলে তাদের ভয় দেখিয়েছে।
-আরে ব্যাপার না। মেয়েটার বর্ণনা দিলেই হবে, এক্সপার্টরা ঠিকই খুঁজে বের করবে।কিন্তু আবুল দোস্ত, তুই কি সিউর এইটা লাভ এট ফার্স্ট সাইট? কাল বীচে আর কোন সুন্দরী দেখিসনি? অন্য কোন রুপবতী দেখলে এর কথা তোর মনে থাকবে?
আবুল আমার কথা শুনে যেন কিছুটা ক্ষেপে গেল।
-তোকে বললাম না এইবার মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। রাতে ঘুম হয়নি। দেখ চোখে কালি পড়ে গেছে। বুকেও কেমন কেমন ব্যথা লাগছে...
বুঝলাম অবস্থা গুরুতর। হয়তো সত্যিই আবুল প্রেমে পড়েছে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। এক জায়গায় এতক্ষণ থেকে আমরাও বিরক্ত, ঠিক করলাম আবুলের প্রেমে পড়ার ট্রিবিউট হিসেবে টেকপাড়া এলাকাটা একবার চক্কর দিয়ে আবার ঐ সী ইন পয়েন্টে যাওয়া হবে। টেকপাড়ায় ব্যর্থ অভিযান চালিয়ে একঘন্টার মধ্যে আমরা সী ইন পয়েন্টে পৌঁছলাম। এরই মাঝে শহরের স্বনামধন্য ললনাবিদ ইশতিয়াককে খবর দেওয়া হয়েছে। ইশতিয়াক ছোট্ট এই পর্যটন নগরের একজন আদর্শ ললনাবিদ। তার বাইক আছে, টাকা আছে, মোবাইলে শহরের প্রায় সব সুন্দরীর মোবাইল নাম্বার আছে। কেউ যদি আমাদের সাহায্য করতে পারে, সে এক ইশতিয়াকই।
আবুলের হৃদয় হরণের সেই ঐতিহাসিক স্থানে আমরা দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসলাম। এইবার আমাদের সাথে আছে এক্সপার্ট ইশতিয়াক।
আমরা ইশতিয়াককে ঘটনা খুলে বললাম। আবুল মেয়েটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিল। আমরা আবারো তৃপ্তি নিয়ে শুনলাম।
ইশতিয়াক সব শুনে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন হয়ে রইল। তারপর দৈব বাণীর মত কেবল দু’টি শব্দই উচ্চারণ করল- লামিয়া ইয়াসমিন।
আমরা সবাই ‘ইয়াহু’ বলে বিকট চিতকার করে উঠলাম।
আমি বললাম, ‘লামিয়া ইয়াসমিন কি একজনের নাম?’
ইশতিয়াক বলল, ‘না, দুই মেয়ের নাম। লামিয়াও হতে পারে, ইয়াসমিনও হতে পারে।’
ততক্ষণে ইশতিয়াকের প্রতিদ্বন্দী এলাকার অন্যতম বালিকা গবেষক রাফায়েত আমাদের আড্ডায় শামিল হয়েছে। সব শুনে সে বলল, ‘এটা অবশ্যই ইয়াসমিন। এটা লামিয়া না, কারণ লামিয়া কিছুদিন আগে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিব্রতকর অবস্থায় বাবা মার হাতে ধরা খেয়ে আপাতত গৃহবন্দী অবস্থায় আছে।’
যুব সমাজের নৈতিক অধপতনের এই অবস্থা শুনে আমরা কিছুক্ষণ হা-হুতাশ করলাম।
সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং অন্যান্য আরো দু’একজন বিশেষজ্ঞের মতামত বিশ্লেষণ করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে ইয়াসমিন-ই সেই বিকেলের রহস্যময়ী সুন্দরী। ইয়াসমিনের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করা হল। পরদিন রাতে আমি আর আবুল ঢাকা চলে আসব। তাই ঐদিন বিকেলের মধ্যেই আমাদের ইয়াসমিনকে খুঁজে বের করতে হবে। ঠিক করলাম বিকেলে তার বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করব। ঐ সময় সে কোচিং এ পড়তে যায়।
আমি এক ঘুমে রাত পার করলেও পরদিন আবুলকে দেখে বুঝলাম রাতে তার একরত্তি ঘুমও হয়নি। নাহ, ছেলেটা এবার সত্যি সত্যিই প্রেমে পড়ল। আমরা পাঁচজন ইয়াসমিনের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি, আবুল, ইয়াসির, তকি আর রিপন। সবাই মুখে বড় বড় কথা বললেও এই ধরনের প্র্যাকটিকাল কাজে আমরা একবারেই আনকোড়া। আবুলের দিকে তাকিয়ে দেখি টেনশনে ওর চোখ মুখ শুকিয়ে শুটকি হয়ে গেছে। রিপন দাঁত দিয়ে নখ খুটছে। ইয়াসির নির্লিপ্ত চোখে আকাশ দেখছে আর তকি আবারো হাইপার হয়ে বাংলিশে কথা বলছে। ঘড়িতে তখন ৪ টা বেজে ২০ মিনিট। হঠাত দেখি ইয়াসমিনের বাড়ির গেইটের দরজা দিয়ে ছেলে-বুড়ো-মহিলার এক কিম্ভূতকিমাকার দল বেরিয়ে আসল। আমরা নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার ভান করলাম। সেই অদ্ভুত দলটি আমাদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলাম, তাদের নতুন বউমা বেশ সুন্দর এবং তাদের বেয়াই বাড়ির আপ্যায়ন মনে রাখার মত হয়েছে।
এত মানুষ জমকালো পোশাকে বের হচ্ছে, তাও আবার বিয়ের কথা বলছে। তবে কি ইয়াসমিনের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে?
আমি বাকি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে শিকার হারানো বাঘের মুখে যে হতাশা থাকে সেই ধরনের এক অভিব্যক্তি দেখতে পেলাম। আবুলকে দেখে মনে হচ্ছিল তার বিয়ে করা বউ ঘরে বাচ্চা-কাচ্চা রেখে আরেকজনের সাথে পালিয়ে পালিয়ে গেছে। কয়েক মিনিট আমরা কেউ কোন কথা বললাম না। আমাদের মধ্যে মুরুব্বী এবং পার্থিব বিষয়ে জ্ঞানী বলে পরিচিত ইয়াসির অবশেষে মুখ খুলল, ‘দেখ আবুল, এই মেয়ে তোর ভাগ্যে নাই, সবই তকদির।’
অন্য সবাইও মারফতি লাইনে আবুলকে সান্তনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন হঠাত দেখি ঐ বাড়ির ফটক দিয়ে পরীর মত সুন্দরী এক মেয়ে বেরিয়ে আসল। কাঁধে তার কালো ব্যাগ। নিশ্চয় টিচারের কাছে পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু ইয়াসমিনের যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায় এই মেয়েটি কে?
প্রশ্নের উত্তর মিলল আবুলের মিনমিনে কন্ঠ শুনে, ‘দোস্ত দোস্ত, ইয়াসমিন ইয়াসমিন’
এই তাহলে নায়িকা। মেয়েটি কি এত আঁতেল যে এনগেজমেন্টের দিনেও পড়া বাদ দেইনা?
মেয়েটি আবুল আর তার দলবলকে চিনতে পেরেছিল তাই কিছুটা ভয় পেয়ে দ্রুত পায়ে আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি এইবার একটা কাজের মত কাজ করলাম। আবুলকে বললাম, ‘ হোক তার বিয়ে ঠিক হইসে, ইটজ নাউ অর নেভার, যা আছে কপালে, যা কথা বলে আয়’
এরপর যা হল আমরা কেউ তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আবুলের মত কিংবদন্তী চাপাবাজ ‘কথার রাজা’ এত সাহস কোত্থেকে পেল আমার স্বল্পবুদ্ধির মস্তিষ্কে তার কোন উত্তর পেলাম না। কোন সিনেমা দেখছিলাম নাকি নাটক দেখছিলাম তা নিয়েই আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। আমি আমার বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম আবুল মেয়েটির সামনে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল, পকেট থেকে একটা ফুল,একটা চিঠি, ওর ন্যাশনাল আইডি কার্ড আর ভার্সিটি আইডি কার্ডের একটা ফটোকপি বের করে মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর মেয়েটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমাদের উল্টোদিকে হাঁটা ধরল। মেয়েটিকে সম্পূর্ণ হতবাক অবস্থায় রেখে আমরা বাকি চারজনও তড়িঘড়ি করে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসলাম।
ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটেছিল। আবুল এত সাহস কোত্থেক পেয়েছিল আমরা জানিনা। পকেটে গোলাপ, চিঠি আর এইসব কাগজই বা কখন রেখেছিল তাও আমরা টের পাইনি। তবে তারা দু’জন এখন বেশ ভাল আছে। যদিও আবুলের চাপাবাজিতে মেয়েটা যথেষ্ট বিরক্ত। আর ঐদিন ইয়াসমিনের নয়, ওর বড় বোনের এনগেজমেন্ট হয়েছিল।
(ইহা একটি সম্পূর্ণিক কাল্পনিক ঘটনা। বাস্তব কোন ঘটনা বা চরিত্রের সাথে মিলিয়া গেলে উহা 'কাকতাল' বলিয়া বিবেচিত হইবে )