somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প- ''প্রত্যুত্তর''

২৯ শে জুন, ২০১১ ভোর ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“তোমাকে দেখা, তোমার বন্ধু হতে পারা, স্মৃতির বিস্তৃত ক্যানভাসে তোমাকে নিয়ে কিছু রঙ ছড়ানো-এই সব ছিল আমার জীবনের সবচাইতে আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। যদি ভালোবেসে এই হাতটা ধরো, তবে জেনে রেখো, এই হাত কখনো তোমার হাত ছাড়বেনা। আর যদি চলেই যাও, তোমার পথের দেয়াল হবোনা। আমি দুঃখবাদী মানুষ, হাজার রাতের অভ্যাসে দুঃখকে পোষ মানিয়ে ফেলেছি। তবে আমি একা থাকবোনা। বিষাদ সংগীত ও কবিতার অভাব নেই। তাদের সাথেই বাকী জীবন অদ্ভুত বিষাদ ও আনন্দের সাথেই কাটিয়ে দিবো…
আর সেই কথাটি এক মূহুর্তের জন্যও মিথ্যে ছিলোনা।
জয়া, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

এটিই ছিল জয়ার কাছে লিখা আমার শেষ চিঠি। ঠিক চিঠি নয়, ক্ষুদে-বার্তা। অবশ্য যার মাধ্যমে মনের গভীরের কথাগুলো প্রকাশ করা যায় তাকে চিঠি বলতে দোষ নেই। চিঠির প্রেরকের সাথে প্রাপকের সাক্ষাৎ হয়েছিল এক ঘোর বর্ষার ঘোরলাগা বিকেলে যখন আকাশে সূর্য আর মেঘের আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধ চলছিল আর চলছিল তবলার তালে তালে অবিরাম বর্ষণ।

সেবারের বর্ষাটা ছিল অন্যরকম। বৃষ্টির জলগুলো যেন একটু বেশি স্বচ্ছ ছিল, আকাশটাও ছিল একটু বেশি অভিমানী। তাই ক্ষণেক্ষণেই বৃষ্টি নামত অঝোরে। সেই বর্ষার এক বিকেলে জানালার পাশে বসে বৃষ্টির স্ফটিক ভাঙতে দেখছিলাম আর কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনছিলাম শাহানার রবীন্দ্রসংগীত। সেই সময়ের কথা মনে করলে এখনো যেন গানটি স্পষ্ঠ কানে বাজে-‘মোর ভাবনারে কী হাওয়া মাতাল, দোলে মন দোলে অকারণ হরষে...’। বৃষ্টি বিলাসে সম্পূর্ণ মত্ত ছিলাম না তাই পাশের বাড়ির ছাদে এক জলপরীর অলৌকিক জলকেলি আমাকে ক্ষণিকের জন্য অন্ধ করে দিয়েছিল। মেয়েটি হয়তো আহামরি রুপসী ছিলনা। কিন্তু সেই সময়ের বৃষ্টি, বৃষ্টির গান, আমার রোমান্টিক মন আর বৃষ্টিস্নাত মেয়েটি এক অপূর্ব সুরে বাঁধা পড়ে গেল। সেই অনুভূতির সংজ্ঞা আমার জানা ছিলনা। পরে বিভিন্ন উপসর্গ বিবেচনা করে বুঝেছিলাম প্রথম দর্শনে প্রেম একেই বলে।

সেই বিকেলের পর থেকে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে আমি আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম। আমার বার বার মনে হতে লাগল মেয়েটি এই পৃথিবীর কেউ না,এমনকি পার্থিব কোন শব্দেও তাকে বিশেষায়িত করা যায়না। সে কোন রুপকথার পরী, কোন দুষ্টু কাঠুরিয়া তার ডানা লুকিয়ে রেখেছে বলে উড়ে যেতে পারছেনা। জট-পাকানো ধাঁধার মত মেয়েটি সারাক্ষণ আমার মাথায় ঘুরতে লাগল। যেভাবেই হোক এই জট আমার খুলতেই হবে, নইলে যে আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাব!
আক্ষরিক অর্থেই নির্ঘুম রাত্রি কাটানোর পর সকালে আমি ভার্সিটি যাচ্ছিলাম। তখন দেখি পাশের বাড়ির গেইট দিয়ে গতকালের সেই পরীটি বেরিয়ে আসল। আমি উচ্চ রক্তচাপের রোগী না, তবু আমার রক্তচাপ যেন হু হু করে বেড়ে গেল। মেয়েটি কেবল এক পলক আমার দিকে তাকালো। আমার মনে হল সূর্যটা খুব কাছে চলে এসেছে, আমি ঘেমে একাকার হয়ে গেলাম। আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম, মেয়েটি একটি রিকশা ডেকে উঠে চলে গেল। আমি কোন কথা বলতে পারলাম না। সেদিন খুব রাগ হচ্ছিল নিজের উপর। কেন কথা বললাম না। কেন তার সাথে পরিচিত হতে পারলাম না।
এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেল। আমি সারাক্ষণ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি অচেনা মেয়েটিকে একপলক দেখার আশায়। কিন্তু পরীর দেখা আর মেলেনা। আমি হতাশ,ক্লান্ত ও অসহায় হয়ে পড়লাম। ঐ এলাকায় আমরা ছিলাম নতুন। তাছাড়া প্রচন্ড ইন্ট্রোভার্ট হওয়াতে পাড়ার কারো সাথে আমার তেমন জানাশোনা ছিলনা। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কার কাছে গিয়ে মেয়েটির কথা জানতে চাইবো। আশৈশব সঞ্চিত লজ্জ্বা ও দ্বিধা আমাকে বর্ষাস্নাত বিকেলের মেয়েটির আর কোন খবর নিতে দিল না।
তবে দুই সপ্তাহ পরে একদিন বিনা নোটিসে পরীক্ষার মত মেয়েটির সাথে আমার আবার দেখা হয়ে গেল। সেদিনও সে ঐ বাড়ির গেইটের সামনে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। আমি কিছুটা ইতস্তত করে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু সংকোচের দেয়াল ভেঙ্গে কোন কথা বলতে পারছিলাম না। আমার মুখে সম্ভবত প্রবল আকুতির ছাপ ছিল, তাই মেয়েটি কী ভেবে জানি নিজ থেকেই কথা বলতে শুরু করল।
‘‘কিছু বলবেন? ইভ টিজিং করতে চাচ্ছেন নাকি? এইসব আমার সাথে করবেন না। আমি জুডো শিখেছি, মেরে হাত-পা ভেঙ্গে দেব।’’
পরীর মত একটা মেয়ের মুখে এইসব মারমুখো কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
আমার পাথর হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মেয়েটি হেসে দিল।
‘‘স্যরি, মজা করছিলাম। আপনাকে দেখেই বুঝা যায় আপনি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু পারেন না।’’
আমি এবার আরো অবাক হলাম। তাহলে মেয়েটি আমাকে জানালার পাশে দেখেছিল।
এবার আমি হাসলাম।
‘‘আমি অনিক। এই বাসায় থাকি।’’
আমাদের বাসা দেখিয়ে তাকে বললাম।
‘‘আমি জয়া। আর আমি এই বাসায় থাকি না।’’
সেও আমাদের বাসা দেখিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিল।

এভাবেই জয়ার সাথে আমার পরিচয়।

বয়সের মাপকাঠিতে জয়া ছিল আমার এক বছরের বড়। তবে দু’টি বন্ধুভাবাপন্ন হৃদয়ের উষ্ণতার স্রোতে সেই পার্থক্য কোন দেয়াল হতে পারেনি। আরো অনেক বৈপরীত্য আমাদের মাঝে ছিল। আমি ছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট, জয়া ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রী। আমি কথা বলতাম খুব কম, আর সে খুব কমই মুখ বন্ধ করত। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য সুতোর বন্ধনে আমরা খুব সহজেই বাঁধা পড়ে গেলাম। হয়তো বিপরীতধর্মী ছিলাম বলেই একসাথে মিশে গিয়েছিলাম রসায়নের সূত্র অনুসরণ করে। আমাদের দু’জনের ক্যাম্পাস ছিল পাশাপাশি। তবে আমার পাশের বাড়িতে সে থাকতোনা। ওটা ছিল তার আত্নীয়ের বাড়ি। সে হোস্টেলেই থাকত। তার বাবা-মা’র বিষয়ে কোন কথা আমি কখনো জানতে পারিনি। শুধু জানতাম ঐ বিষয়ে তার কাছে প্রশ্ন করলে কোন উত্তর আমি পাবোনা। আমি ইতিহাসবিদ নই, তাই তার পরিবার কিংবা অতীত সম্পর্কে আমার তেমন কোন মাথাব্যথা ছিল না, কৌতুহলও ছিলনা।

আমরা খুব দ্রুত বন্ধু হয়ে গেলাম, হয়তো বন্ধুর চাইতে বেশি যা আমরা নিজেরাও লক্ষ্য করিনি। সম্পর্ক বোধহয় অনেকটা গাছের মতই। জল-হাওয়া-রোদ পেলে তরতর করে অলক্ষ্যেই বেড়ে যায়। যেই আমি সবসময় একা থাকতে পছন্দ করতাম সে আমিও একদিন জয়ার সাথে কথা না হলে খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতাম। আমি যেন চাঁদের মত হয়ে পড়লাম। জয়ার আলো ছাড়া জ্বলতে পারতাম না। এই শহরের আনাচে-কানাচে, পার্কে-রাস্তায় আমরা দু’জন বন্ধুত্বের সুর ছড়িয়ে যেতাম। একসাথে রোদে পুড়তাম। একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতাম। একজনের মনে অভিমানের বরফ জমলে আরেকজন তা গলিয়ে নিতাম। একজনের মনের বাগানে ফুল ঝরে পড়লে আরেকজন ফুল ফোটাতাম। একজনের চোখের অশ্রু রেখা আরেকজন মুছে দিতাম। একজনের ভয়ের কুয়াশা আরেকজন সরিয়ে দিতাম। খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম আমরা-সুর ও সংগীতের মত। তাল ও লয়ের মত।

এক বর্ষায় আমাদের পরিচয় হয়েছিল। তখন আরেক বর্ষা এসে গেছে। আমরা তখন দু’জন দু’জনের সবচাইতে কাছের বন্ধু,সবচাইতে কাছের মানুষ।
আমি ভিখিরী ছিলাম না, ডাকাতও ছিলাম না। শুধু চেয়েছিলাম তাকে স্বর্ণলতার মত আজীবন আঁকড়ে ধরতে। সেদিন ছিল আমাদের প্রথম পরিচয়ের এক বছর পূর্তি। ভোর থেকেই আমার বুকে মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছিল। আর খুব পিপাসা পাচ্ছিল, যেন আমার বুক ফেটে খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে। নাহ, যাই হোক, আজ জয়াকে মনের কথাটা বলব। যেভাবেই হোক বলব। বলতে আমাকে হবেই। বিকেল ৫টায় আমাদের দেখা করার কথা ছিল। আমি আমার প্রিয় কালো রঙের পাঞ্জাবী পরলাম। গ্ল্যাডিওলাস ছিল তার সবচাইতে প্রিয় ফুল। তাই গ্ল্যাডিওলাসকেই আমার প্রথম প্রেমের স্মারক হিসেবে নির্বাচন করলাম।

৫টায় রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি জয়া আমার আগেই পৌঁছে গেছে।
‘‘সর‍্যি লেইট হয়ে গেল।’’
আমি কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বললাম।
‘‘না ঠিক আছে।’’
সে একটু হাসল। ঠিক আগের মত প্রাণ খোলা ছিলনা সেই হাসিটা। কিছু কী লুকোচ্ছে সে আমার কাছে?
অতকিছু ভাবার ধৈর্য্য তখন আমার ছিলনা। তাই আমি জয়াকে চমকে দিয়ে হঠাৎ ফুলগুলো টেবিলের সামনে রাখলাম। জয়া অবাক হল কিন্তু কিছু বলল না। আমি গত কয়দিন ধরেই বলছিলাম আমার ওকে বিশেষ কিছু বলার আছে। তাই হয়তো আঁচ করতে পেরেছিল। আমি জয়ার দিকে তাকালাম। দেখলাম মাথা নিচু করে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। হালকা সবুজ রঙের শাড়িতে তাকে অপূর্ব লাগছিল। হঠাৎ আমার কী হল জানিনা...কী পাগলামি মাথায় খেলে গেল... এত সাহসই বা কোত্থেকে পেলাম! আমি জয়ার হাত দু’টো ধরে ৩৬৫ দিন ধরে জমানো বাক্যটি বলেই ফেললাম।
জয়া মোটেও অবাক হলনা। কিন্তু কথাটি শোনার পর সে যেন আরো বিষন্ন হয়ে গেল। আমি স্পষ্ঠ বুঝতে পারলাম সে প্রাণপণে কান্না আটকাতে চাইছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব, কী বলব। কেন জয়া কাঁদছে? কেন সে এমন করছে? আমি কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। ঐদিন আমাদের মাঝে আর কোন কথা হয়নি। এবং এরপর জয়ার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। কেবল সেদিন রাতে আমার পাঠানো সেই ‘চিঠি’র উত্তর সে দিয়েছিল এক সপ্তাহ পরে।

“অনিক,
কেমন আছ তুমি? নিশ্চয় অনেক রাগ আমার উপর? কষ্ট পাচ্ছ কি খুব? তুমি আমাকে কখনো কাঁদতে দেখোনি। কিন্তু জানো, তোমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমি প্রায় প্রতি রাতে কাঁদতাম। খুব অবাক হচ্ছ বুঝি? কারণ আমি জানতাম আমি কখনো তোমার হতে পারব না। বিশ্বাস করো, তুমি ছিলে আমার জীবনে দেখা সুন্দরতম স্বপ্ন। তুমি যেই কথাটি আমাকে সেদিন বলেছিলে, আমি সেই কথাটি প্রতিদিন তোমাকে বলতাম। মুখে বলতাম না, চোখ দিয়ে বলতাম। তাই হয়তো তুমি শুনতে পাওনি।
তোমাকে আমি বলেছিলাম আমার বাবা-মা বা পরিবার সম্পর্কে কোন প্রশ্ন না করতে। তুমি কোনদিন করোনি। আজ আমি সব তোমাকে বলব। তুমি এতদিন আমাকে দেখেছো সবসময় হাসিমুখে থাকতে। তোমার হয়তো মনে হয়েছে পৃথিবীর কোন দুঃখ কখনো আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আংশিক হলেও কথাটা সত্য। শৈশবে আমাকে এত দুঃখের আগুনে পুড়তে হয়েছে যে এখন আর কোন দুঃখের উত্তাপ আমাকে ছুঁতে পারেনা। আমার জম্ম হয়েছিল এক পতিতা পল্লীতে। শুনেছি জম্মের পর সেই অন্ধকার পল্লীর শিশুদের মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। মায়েরাও জানতে পারেনা তাদের সন্তান কোথায় আছে। তাই মায়ের কথা আমার কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে এক অন্ধকার ঘরে আরো কিছু অবাঞ্চিত শিশুর সংগে আমার দুঃসহ কিছু সময় কেটেছিল। সেখান থেকে এক খ্রিস্টান যাজক ফাদার অগাস্ট রোজারিও আমাকে আলোর পৃথিবী দেখান। যখন আমি ফাদার-এর আশ্রয়ে আসি তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। এরপর থেকে তিনি নিজের মেয়ের মত আমাকে বড় করে তুলতে থাকেন। ফাদার আমার পরিচয় কখনো কাউকে বলেননি। তিনি সবাইকে বলতেন এক দুর্ঘটনায় মেয়েটির বাবা-মা মারা গেছেন। ঈশ্বর নিশ্চয় এই মিথ্যার জন্য ফাদারকে ক্ষমা করে দেবেন।
ফাদার আমার জম্মের প্রকৃত ইতিহাস আমাকেও কখনো বলেননি। এইসব আমি জেনেছি ফাদারের খুব ব্যক্তিগত একটা ডায়েরী পড়ে। এই কারণে তার উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। তোমার আগে পৃথিবীতে আমি এই একটা মানুষকেই ভালোবেসেছিলাম। খুব বেশি ভালোবাসি আমি ফাদারকে। মায়ের চেয়েও বেশি, বাবার চেয়েও বেশি। তিনিই যে আমার কাছে বাবা-মা সব।
ফাদার আমাকে চেয়েছিলেন তার আদর্শে বড় করে তুলতে। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন কখনো কোন সম্পর্কে না জড়াই, কেবল অসুস্থ ও দুঃস্থদের সেবায় নিজের জীবন কাটিয়ে দেই। আমিও কোন দ্বিমত করিনি। এ কারণে আমাকে তিনি মেডিকেলে ভর্তি করেছিলেন যেন আমি সেবার ব্রতে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। তিনি আমাকে সবকিছুর স্বাধীনতাই দিয়েছিলেন, শুধু নিষেধ করেছিলেন আমি যেন কোন সম্পর্কে না জড়াই। কিন্তু অকৃতজ্ঞ আমি তোমাকে পেয়ে সব ভুলে গিয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই তোমাকে নিজের সাথে বেঁধে ফেলেছিলাম।
তোমার সাথে যেদিন শেষ দেখা হল, তার আগের দিন ফ্রান্স থেকে ফোন এসেছিল। ফাদার খুব অসুস্থ, মৃত্যুশয্যায়। তিনি আমাকে দেখতে চাইছেন। আমি কাল ফ্রান্স চলে যাচ্ছি। কখন আসবো জানিনা। আসলেও তোমাকে জানাতে চাইনা। আমি চাইনা আমাদের মধ্যে আর যোগাযোগ হোক। তোমাকে দেখলেই আমি আবার দুর্বল হয়ে যাবো। এইসব প্রতিজ্ঞা আর শপথ কিছুই আমি রাখতে পারবোনা। তুমি নিশ্চয় আমাকে ছোট হতে দিবেনা।

অনিক, ভালো থেকো। সবসময় ভালো থেকো। অন্তত ভালো থাকার চেষ্টা কর। আমি চাইনা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি ক্ষমার অযোগ্য।
ইতি
জয়া রোজারিও

পুনশ্চঃ তোমার সাথে কেবল একটি মিথ্যেই আমি বলেছিলাম। তোমার পাশের বাড়িতে আমার কোন আত্মীয় থাকতোনা। ওটা ছিল ফাদারের আরেক মেয়ের বাড়ি। এই মিথ্যার জন্যও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছিনা।”

আমি জয়াকে ছোট হতে দেইনি। যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে ছোট করা যায়না। এটিই ছিল জয়ার কাছ থেকে পাওয়া আমার প্রথম ও শেষ চিঠি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×