somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃমৃত মানুষ

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যুর পর কবরে বেশ ভালোই দিন কাটছিল নুহার।কিন্তু সমস্যা করত তহুরা!কবরে সব সুখ শান্তির ভিতর এই তহুরাই নুহার এক মাত্র অশান্তির কারণ!মেয়েটা এমনিতে খারাপ না।কিন্তু তহুরা অসম্ভব বাচাল।শুধু বাচাল হলেও একটা কথা ছিল!তহুরা ভয়াবহ রকমের ঠোট কাটা।কোনো কথা তার মুখে বাধে না।টাশ টাশ করে সব সত্য কথা বলে ফেলে।বেচারী তহুরা খানম মরেছিলও এই সত্য কথা বলার দোষেই।
তহুরা খানম পলিটিক্স করত।ভার্সিটির গন্ডি পেরিয়েও ঐ পলিটিক্সেই লেগে রইল।ঐ সময় এক পলিটিকাল গুন্ডার হাতে রেপ হয় তহুরারই সমসাময়িক আরেক মহিলা নেত্রী।ব্যাপারটা তহুরা জানতে পেরে ঐ নেতাকে আইনের হাতে ফাসানোর চেষ্টা করেছিল।কিন্তু নেতাকে ফাসানোর আগে সেই ফেসে গেল।নেতা ইচ্ছা করলে তাকেও রেপ করে মারতে পারত।তবে নেতা তা করল না।নেতার গুণ্ডারা তহুরার রগ কেটে মাগুর মাছ জিয়ানো ডোবায় ফেলে দিল।তহুরার আর টিকিটাও কেউ খুজে পেল না।
মৃত্যুর আগে তহুরা আর নুহা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ত।তবে তখন কেউ কাউকে চিনত না।কিন্তু এখন মৃত্যুর পর সেই ইউনিভার্সিটির সূত্র ধরেই তহুরা নুহার সাথে খাতির দিচ্ছে।
তহুরার কথা বেশীক্ষন শুনলে নুহার মাথা ঝিমঝিম করে।তারপরেও নুহা ভদ্রতার খাতিরে তহুরাকে কিছু বলতে পারেনা।
নুহা একা বসে বসে হেডফোনে মোৎজার্টে্র নতুন কিছু সুর শুনছিল।ওগুলো মোৎজার্ট সাহেব নাকি মৃত্যুর পর করেছেন।নুহা এটা শুনে তেমন অবাক হয়নি।বরং তার হাসি এসেছিল এই ভেবে যে ঢেকি আসলেই হয়তো স্বর্গে গেলেও ধানই ভানে!
ঠিক এই সময় তহুরা খানম এসে হাজির।নুহা মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে একটা হাসি বানিয়ে রাখল।
তহুরা এসেই তার স্বভাবমত হাক মেরে জিজ্ঞাসা করলঃঐ মাইয়া খবর কি?সারা দিন কানের মধ্যে নল লাগায়ে রাখো ক্যান?
-আরে তহুরা!কেমন আছো?
-ভালো!তুমি তো আমার খবরই লও না।তারপর কবরে তোমার কেমন লাগতেছে।
-খুবই ভালো!মরার আগে মৃত্যুটাকে কত ভয় পেতাম।অথচ এখন এত ভাল লাগছে!
-তাই নাকি?খুব ভাল লাগতেছে?যেদিন প্রথম আইছিলা ঐদিন তো খুব ফ্যাচফ্যাচ কইরা কানছিলা!
-আরে ঐদিন তো ভেবেছিলাম-সবাইকে ছেড়ে থাকব কিভাবে!এই জগৎটা যে এত সুন্দর তা কি জানতাম নাকি?কেন তুমি কাদোনি?
-না কান্দি নাই।কান্দার মত কাউকে দুনিয়ায় রাইখ্যা আসি নাই।তুমি কার লইগ্যা কানছিলা?কারো লগে পিরিত আছিল নাকি?
-তোমার যা কথা তহুরা!মানুষ কি শুধু যার সাথে প্রেম করে তার জন্যেই কাদে?মা-বাবার জন্য ঐদিন খুব কষ্ট হচ্ছিল।তাছাড়া ওকেও খুব মিস করছিলাম।
-ও-টা আবার কেডা?
-ফায়রুজ!ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।আমি এক্সিডেন্টে মারা না গেলে নেক্সট মাসেই বিয়ে হয়ে যেত।ওর জন্য খুব খারাপ লাগে তহুরা!বেচারা বোধহয় আর কখনো বিয়েই করবেনা!
-ধুরু হাদা মাইয়া!বিয়া আবার করবো না!দেখ গিয়া এখনই বিয়া কইরা ফালাইছে।পুরুষ মানুষের ঠিক আছে নাকি?
-তহুরা মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ!ফাইরুজ কখনই সেরকম না।
-বেট লাগবা?
-মানে?
-চল দুনিয়ায় গিয়া তোমার ফায়রুজের খবর লইয়া আসি।
-প্লিজ তহুরা এসব বাদ দাও তো!
-না,বাদ দিলে হইব না।চল!
তহুরা এক প্রকার টেনে হিচড়েই নুহাকে নিয়ে ফায়রুযকে অনুসরন করতে শুরু করল।ওরা যখন ফায়রুজের বাসায় পৌছল তখন সকালের দিক!ফায়রুজ তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে!

তহুরা বলল-দেখছো তুমি মরতে পারোনাই পনেরো দিন হইল আর এখনই ঐ শালা নাক ডাইকা ঘুমায়!
-প্লিজ তহুরা এভাবে বল না!ওর মুখটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছে!
-আরেহ ধুরু,মুখ শুকাইছে তো গাঞ্জা খাওয়ার কারণে।এই হালায় সিওর গাঞ্জা খায়।অবশ্য বড়লোকের পোলা তো!ইয়াবাও খাইতে পারে।
-তহুরা তুমি প্লিজ আর একটাও নোংরা কথা বলবেনা।
এমন সময় ফায়রুজের মোবাইলটা বেজে উঠল।ফায়রুজ ঘুম থেকে উঠে ফোনটা রিসিভ করে!
ফায়রুজঃহ্যালো দোস্ত,তুই এত সকালে?
অন্য প্রান্তঃআজকে রাতে আমার বাসায় পার্টি দিতেছি।আসবি নাকিরে মামা?
ফায়রুজঃআসবোনা মানে?একশ বার আসব।
অন্য প্রান্তঃনুহা মারা যাওয়ার পর এই একটা দিক থেকে তুই বেশ শান্তিতে আছিসরে দোস্ত।মাঝখানে ওর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তো পার্টিগুলোতে আসতেই পারতি না।
ফায়রুজঃতা ভুল বলিস নাই!মেয়েটা একটু বেশি কনজারভেটিভ ছিল।মরে গিয়ে ও আমাকে বাচিয়ে দিয়েছেরে!ঐ সব বিয়ে শাদী করে আমার আসলে পোষাতো না।ও বেচে থাকতে এক একটা সময় আমার দম বন্ধ হয়ে আসত।বা্ট ঐসব এখন পাস্ট মামা!এখন শুধুই মজা!
অন্য প্রান্তঃওকে তাহলে এসে পরিস।

ফায়রুজের কথা শুনে নুহা বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলল।
-ঐ মাইয়া কান্দো ক্যান?ঐসব ন্যাকা কান্দা বাদ দেও।কইছিলাম না সব পোলারা এক?
তহুরার কথা নুহার আর শুনতে ইচ্ছা করছে না।সে দৌড়ে কবরে ফিরে আসে।এরপর কয়েক দিন নুহা আর কারো সাথে কথা বলেনি।তহুরা এসে কয়েকবার দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ফিরে গিয়েছে।কিছুদিন পর নুহা নিজেই কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেল।
তহুরা মাঝে মাঝেই এসে নুহার সাথে গল্প করে।তহুরা ইদানিং বেশ ঘনঘন কবরের বাইরে যাওয়া শুরু করেছে।অবশ্য বেশী দূরে যায়না।কবরের আশে পাশেই ঘোরাঘুরি করে।আজকাল তহুরার গল্পগুলোও নুহার মন্দ লাগে না।শুধু বুকের ভিতর একটাই চিনচিনে ব্যাথা।প্রতারিত হওয়ার কষ্ট!
-ঐ নুহা তোমার কবরে মাঝে মাঝে একটা লম্বা কইরা পোলা আসে।ঐডা কেডা?
-কে জানি!
-মাঝে মধ্যেই তোমার কবরে আইসা বইসা থাকতে দেখি।
-তাই নাকি?
-হ!
-আচ্ছা একদিন দেখিও তো!
এর ভিতর তহুরা এসে জানালো যে এই ছেলেটা আবার নুহার কবরে এসেছে।নুহা গিয়ে দেখল প্রত্যয় বসে আছে।

নুহা এবার আর অবাক হল না।বরং নিজের বোকামীর জন্য বড্ড অনুতপ্ত লাগছিল।নুহা জানত প্রত্যয় তাকে পছন্দ করে।কিন্তু সে কখনই প্রত্যয়কে প্রশ্রয় দেয়নি।আজকে নুহার খুব বেশী অনুতাপ বোধ হচ্ছে।খুব বেশী ইচ্ছে করছে আর একটা বার জন্ম নিতে!তার চেয়েও বেশী ইচ্ছে করছে প্রত্যয়ের ভালবাসার প্রতিদান দিতে!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×