তখন ছিল,স্বর্ণযুগ বটে!!পান থেকে চুন খসলেই আম্মু ধরে এমন ছ্যাচা দিত!আমি একটু কম বান্দর ছিলাম বলে মাইর আমার উপর দিয়ে কম যেত।কিন্তু,আমার ভাই ছিল বেসম্ভব বদের হাড্ডি।জ্বালাতন করার জন্যে ছেলে হোক ,মেয়ে হোক একটা বদের হাড্ডিই যথেষ্ট।আমার আম্মুও আবার সেই মাপের সিরিয়াস মাদার।আমার উপর চড় থাপ্পরের বেশি কখনও এ্যাপ্লাই করা লাগে নাই।কিন্তু ভাইয়ার পিঠে যে কিসের বাড়ি না পরেছে সেটাই বরং গবেষণার বিষয়বস্তু।জুতার বাড়ি,ঝাড়ুর বাড়ি,হাংগার,চামচ,খোন্তা,ডাল-ঘুটূনি কোনটাই বাদ যায় নাই।মাইরের ফলশ্রুতিতেই কিনা কে জানে,আমার ভাই এখন পর্যন্ত একজন অতি ভদ্রলোক।মা-বউ-বোন-বাপ এবং বাকি সমাজের কাছে সে খুবই সুশীল লোক বলে পরিচিত।আমার মা এবং ভাই উভয়েরই ধারনা,আমার ভাইয়ের সকল ক্ষেত্রে এত সাফল্যের পিছনে যে প্রধান নিয়ামক,সেটা হল মাইর।
তবে এখন আর সেই যুগ নাই।এখন মা-বাবারা অনেক ভালো হয়ে গিয়েছেন।সেদিন আমাদের বাসায় এক দম্পতি আর তাদের সন্তান আসলেন।বাচ্চাটা যে কি ডেঞ্জারাস বদ তা বলে বোঝাতে পারবো না।এই বাচ্চা কাউকে মানে না।বাসায় ঢোকার ১৫ মিনিটের মাথায় পুরা বাসা এলো মেলো করে ফেলল।আমি অবাক হয়ে দেখলাম,তার মা-বাবা কেউ কিছু বলছে না।বরং এমন ভাব করে হাসছে যেন,তার সন্তান এক বিরাট কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করছে।
গুণীজনেরা বলেন,মার-ধর করলে নাকি শিশুদের মেধা বিকাশ হয় না।আমি আসলে একজন আমজনতা।তাই গুনীজনেরা কি বলেন তা কখনও যাচাই করে দেখিনি।তবে হ্যা,গুনীজনেরা যদি বলে থাকেন,তবে অবশ্যই এটা সত্য।কিন্তু তাই বলে কি বাচ্চাদের ভাল-মন্দ শেখানোর দায়িত্বটাও মা-বাবা ছেড়ে দেবেন?মা-বাবা যদি সন্তানদের সভ্যতা-ভভ্যতা না শেখান তাহলে সে মানুষ হতে হলে যেসব জ্ঞান দরকার তা পাবে কোথায়।
মাইরের উপর ঔষধ নাই-এটা অবশ্যই ভুল কথা।তবে অন্তত ভাল-মন্দটা তো শেখানো যায়,তাই না?