গতকাল ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ তম ব্যাচের প্রথম ক্লাস । গতকাল থেকেই ফেসবুকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.আই.টি বিভাগের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা আলোচিত হয় । সেটি পড়ে অনেকে তা ফেসবুকে শেয়ার করছেন এবং একটি সনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যা ইচ্ছা তাই বলে বেড়াচ্ছেন । আসুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন বর্তমান ছাত্র শশী হিমুর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে দেখে নেই বাস্তব চিত্র-
গতকাল রাত থেকেই ফেসবুকে একটি খবর সবাই শেয়ার করেছেন “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আই.টি. - ১ম বর্ষের একজন ছাত্রীকে জাহানারা ইমাম হলের সিনিয়র আপুরা র্যাগ (rag) দিয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেছে।” প্রমাণ সহ বলতে পারি এই খবরটি সম্পূর্ণ একটই গুজব ছাড়া আর কিছুই না।
জা.বি’র একজন বর্তমান ছাত্র আমি, আমি যখন গতকাল রাতেই এই খবর শুনতে পাই সাথে সাথেই খবরের সত্যতা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছি। এবং আজ সকাল ১০ টা থেকে সশরীরে ক্যাম্পাসে থেকে এর সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছি। এবং অনুসন্ধান করে জেনেছি এটি একটি গুজব। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং এটি যে একটি গুজব তাঁর প্রমাণ নিচে দিচ্ছি।
১. রাতে মাহাবুব হাসান ভাই প্রথম এই খবরের স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এবং রাতেই আমি তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে ‘কথিত’ লাঞ্ছিত মেয়েটির নাম এবং রোল নাম্বার সংগ্রহ করেছিলাম। এবং রাতেই জাহানারা ইমাম হলে আমার সহপাঠী এবং জুনিয়র মেয়ের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করেছি মেয়ের পরিচয় গোপন রেখে। রাতে কিছুই জানতে পারিনি কারন তখন প্রায় মধ্যরাত।
২. আজ সকালে মাহাবুব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে কথিত ভিক্টিম মেয়ের ‘কথিত’ ভাইয়ের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করি এবং তার সাথেও যোগাযোগ করি। কিন্তু সে এই ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলতে নারাজ ছিলেন। তখনি সন্দেহ করছিলাম এটি একই গুজব।
৩. এর পর আমি যোগাযোগ করি জাহানারা ইমাম হলের হল সুপারের সাথে এবং প্রভোস্ট এর সাথে। জাহানারা ইমাম হলে আইটি- ১ম বর্ষের মাত্র দুইজন মেয়ে হলে উঠেছে। এবং সেই জুইজনের কেউই র্যাগের স্বীকার হয়নি এবং এই সম্পর্কে কিছুই জানে না। এবং পরবর্তীতে আমি হল সুপারের কাছে কথিত ভিক্টিম মেয়ের নাম বলেছি এবং হলের রেজিস্ট্রি খাতা খুঁজে জানতে পেরেছি, যেই মেয়ের নাম আমাকে বলা হয়েছে সেই নামের মেয়ে এখনো হলেই উঠেনি। সেখানে তাকে র্যাগ দেয়ার প্রশ্নই আসেনা। এখানে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করতে চাই- হলে প্রথম যেদিন কেউ উঠে সেদিনই একটা স্লিপের মাধ্যমে তাকে হলের রুম নাম্বার ঠিক করে দেয়া হয়, অর্থাৎ সেই নামের কেউ হলে উঠে থাকলে সেটার প্রমাণ তো থাকবেই। এখানেও প্রমান হয় ঘটনা গুজব ছাড়া কিছুই না।
৪. এর পর আমি যোগাযোগ করি ‘ব্লগার শারমিন রেজওয়ানা’ আপুর সাথে। তিনিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্রী। তিনিও গতকাল রাত থেকে ভার্সিটির ‘এসিস্ট্যান্ট প্রোক্টর’ এর সাথে যোগাযোগ করেছেন, এবং জাহানারা ইমাম হলের দুই জন হল সুপারের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনিও এই ঘটনার কোনও সত্যতা খুঁজে পান নি। অর্থাৎ এটি একটি গুজব ছাড়া আর কিছুই না।
৫. সব শেষ যখন আমি নিশ্চিত হলাম এটি একটি গুজব, তখম আমি আবার সেই ‘কথিত ভিক্টিম’ মেয়ের কথিত লতায় পাতায় ভাইকে (কাজিন) ফোন করেছি, যার মাধ্যমে মাহাবুব ভাই এই ব্যাপারে জেনেছিলেন। সেই কথিত ভাইকে ফোন করে ঝাড়ি দেয়ার পর তিনি নিজে আমাকে বলেছেন, “সরি ভাই, আমি পুরো ব্যাপারটার জন্য দুঃখিত। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন কাজ করবো না।” সব শেষে আবারো প্রমাণ হয় এটি একটি রটানো গুজব।
অনেকেই দেখলাম সকালে ফেসবুকে বলেছেন, ভিক্তিম মেয়েটি নিরাপদে আছে বলে ভার্সিটির ভিসি আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ভিসিকে মেয়েটির নাম ধাম, রোল নাম্বার কিছুই জানানো হয়নি। এক্ষেত্রে ভিসি কিভাবে আশ্বস্ত করেছেন যেখানে ভিক্টিমেরই কোনও খবর তিনি জানেন না, আর অস্তিত্ব নেই! এটিও একটি গুজব।
একটি অসাধু মহল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সব সময়েই খারাপ কথা গুজব আকারে প্রচার করে আসছে। জাবি প্রশাসন সব ধরণের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে সোচ্চার। আর র্যাগিং নামক কুপ্রথা ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরো বেশি সোচ্চার। ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনে , মূল গেইটে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে অভিযোগ কয়ার জন্য প্রক্টর, মহিলা প্রোক্টর এবং প্রশাসনের ফোন নাম্বার পোস্টারিং এর মাধ্যমে দেয়া আছে। একটি মাত্র ফোন করলেই দ্রুততম সময়ে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। সেখানে এমন র্যাগিং কখনোই হওয়া সম্ভব না। বিগত কয়েক বছর ধরেই র্যাগিং নামক অসামাজিক কাজটি একেবারেই বন্ধ আছে।
সব শেষে বলব, গুজবে কান দিবেন না। এবং গুজব ছড়িয়ে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবেন না। গতকাল রাতে যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি ইতোমধ্যে ডিস্ক্লেইমার ও দুঃখ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আর তিনি বলেছিলেন “প্রথমে র্যাগিং দিয়ে শুরু হলেও পরে ভার্সিটির বড় ভাই/নেতাদের মনোরঞ্জনে শরীরটাও বিকিয়ে দিতে হয় টিকে থাকতে হলে।" এতি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। গত ৪১ বছরের ইতিহাসে জাবিতে এমন কিছুই হয়নি। বরং আমি নিশ্চিত করতে পারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জুনিয়রের মাঝে যে সুসম্পর্ক বিরাজমান টা দেশের অন্য কোনও ভার্সিটিতে পাওয়া যাবে না। এই বিসয়ে গতকালকের স্ট্যাটাসদাতা দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
আবারো বলছি, গুজবে কান দিবেন না। র্যাগিং এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন। র্যাগিং প্রতিরোধ করতে জাবি যেমন বদ্ধ পরিকর তেমনি ভাবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও যেন ব্যাবস্থা নেয়া হয় সেই আশা করছি।
-
গতকাল রটে যাওয়া গুজব ঠেকাতে এবং সত্য ঘটনা সবাইকে জানানোর জন্য ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে বলবো, এই স্ট্যাটাসটি সেয়ার করে সবাইকে সত্য জানার সুযোগ করে দিবেন।
ধন্যবাদ
কেউ ফেসবুকে শশী হিমুর স্ট্যাটাসটি দেখতে চাইলে এই লিংক এ যেতে অনুরোধ করছি
গতকালের মূল ফেসবুক পোস্টপ্রদানকারী মাহবুব হাসানের ভুল স্বীকার করার বক্তব্য দেখতে পাবেন নিচের লিংক দুটিতে-
প্রথম লিংক
দ্বিতীয় লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮