বঙ্গবন্ধু বড় মানুষ ছিলেন। আবেগের আতিশয্য ছিল, ব্যক্তিত্বের গভীরতা ছিল, জাতীয়তাবোধের অহঙ্কার ছিল। তাঁর চরিত্রের এ গুনগুলোই বাংলাদেশের জন্মের প্রেক্ষাপটের সে আগুনঝরা দিনগুলোতে আন্দোলনের অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বিজয়ের পরের দিনগুলোতেও সেই একই বঙ্গবন্ধুর একই চরিত্র দিল উল্টো ফল। এবিএম মুসাকে একদিন ডেকে বলেছিলেন, তুই যা-বিটিভিটারে মানুষ কর। তাজউদ্দিন আহমেদকে ডেকে বলেছিলেন, আপনি মুসাকে টাকা দিয়ে দেন। এভাবে যখন যা প্রয়োজন মনে করেছেন তখনি কাউকে ডেকে বলে দিয়েছেন। আদর করেছেন, ধমক দিয়েছেন কিন্তু তিনি না থাকলে কী হবে সেটি ভাবেননি। বঙ্গবন্ধুর শাসনের বৈশিষ্ট্যই ছিল ব্যক্তিনির্ভরতা। অখচ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। কোন প্রতিষ্ঠান মানুষ হয়ে ওঠেনি। ইতিহাস বলে, ৭৩ এর নির্বাচন কোন আদর্শ নির্বাচন ছিলনা। সে সময়টায় রাষ্ট্রের কোন প্রতিষ্ঠান পোক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। না নির্বাচন কমিশন, না সংসদ, না বিচার বিভাগ, না প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো। একই চরিত্রের প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তিনি একজন ডিসিশন মেকার। এটি নেতৃত্বের অপরিহার্য গুন। যে কোন পরিস্থিতিতেই, চ্যালেঞ্জের মুখে তাকে কখনো দ্বিধাগ্রস্ত দেখা যায়না। কিন্তু সেই একই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা আর দলকেন্দ্রিকতা। রাষ্ট্রের কোন আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা সত্ত্বার উন্নয়ন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথেই যেন যায়না। ৯১ পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন যতটা শক্তি অর্জন করেছিল তা রাতারাতিই ধুলিস্মাত হয়ে গেছে। অনির্বাচিত মানুষের চাটুকারিতার সংসদ, জোর করে প্রতিনিধিত্ব পাওয়া চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে উপজেলা পরিষদ এসবই প্রাতিষ্ঠানিক দেউলিয়াত্বের উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি একে বৈধ করে ফেলে তবে আধুনিক রাষ্ট্রের অভিযাত্রায় পশ্চাদগামিতাই হবে আমাদের নিয়তি। আওয়ামীলীগকে তার প্রতিষ্ঠান বৈরিতা ঘুচাতে হবে। অন্যথায় তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে।
পরবর্তী প্রজন্মের রাজনীতি হোক খেলার মাঠ (প্রাতিষ্ঠানিক), জুয়ার আসর (অপপ্রাতিষ্ঠানিক) নয়।