১৩ তারিখ প্রিয়ন্তীর বিয়ে। ছেলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী। মিস্টার এন্ড মিসেস রায়হানের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করতেছে প্রিয়ন্তী। শুনেছি ছেলের বাবা প্রিয়ন্তীর বাবা'র বাল্যকালের বন্ধু। তাই বিয়েতে প্রিয়ন্তীর বাবা রায়হান সাহেব-ই সবচেয়ে বেশি খুসি। প্রিয়ন্তী অপেক্ষা করতেছে। আমি এখনো রিকশায়। ইতিমধ্যে ৭বার ফোন কাটা হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তী বড়ই অস্থির প্রকৃতির প্রাণী। মাঝে মাঝে ওর বাসর রাতের কথা ভাবলে খুব দুশ্চিন্তা হয় আমার।
রিকশা থেকে হুরমুর করে নামেই দৌড়ের গতিতে হাটা শুরু করলাম। হাজার মানুষের ভিড়েও প্রিয়ন্তী কে খুঁজতে খুব একটা সমস্যা হয় না আমার। প্রিয়ন্তীর চোখে চশমা নাই। প্রিয়ন্তী বলছিল ও বিশেষ দিনগুলাতে চশমা পরে না।
আমি আসার ২-৩ মিনিট হয়ে গেছে। কিছু না বলে প্রিয়ন্তী এখনো বাদাম খায়ে যাচ্ছে। ওর দেখাদেখি আমিও বাদাম ছিলতে শুরু করলাম। প্রিয়ন্তী কি জানি ভাবছে। আমি ওর পা থেকে একটা নুপুর খুলে নিলাম।
প্রিয়ন্তীঃ কি করবি নুপুর টা.?
আমিঃ ধুয়ে পানি খাবো।
প্রিয়ন্তীঃ আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তুই কিছু বলবি না.?
আমিঃ অভিনন্দন।
প্রিয়ন্তীঃ এ্যালেন ওখানে একটা মোবাইল কম্পানী তে জব করে। বিয়ের পর আমরা ওখানেই থাকবো।
আমিঃ দেশে আর ভাল্লাগতেছে না। বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাইস।
প্রিয়ন্তীঃ যাবি আমার সাথে.?
আমিঃ আগে বিয়ে টা কর।
আমিঃ এ্যালেন দেখতে কিরকম রে.?
প্রিয়ন্তীঃ দামি মোবাইলের মতো।
আমিঃ ছবি দেখা তো।
প্রিয়ন্তীঃ নাহ্। বিয়েতে দেখিস।
আমিঃ আচ্ছা বিয়ের পর আর ফোন দিবি না আমাকে.?
প্রিয়ন্তীঃ দিবো তো।
আমিঃ প্রতিদিন.?
প্রিয়ন্তীঃ হুম্ম।
আমিঃ কতোবার দিবি.?
প্রিয়ন্তীঃ যতোবার মনে পড়বে।
আমিঃ এই নে, আমার দেওয়া তোকে শেষ উপহার।
প্রিয়ন্তীঃ কি আছে ভিতরে.?
আমিঃ এখন খুলিস না।
প্রিয়ন্তীঃ তাহলে.?
আমিঃ বিয়ের পর।
প্রিয়ন্তীঃ মানে কি.?
আমিঃ মানে নাই।
প্রিয়ন্তীঃ বিয়ের আগে মনেহয় আর দেখা হচ্ছে না আমাদের।
আমিঃ আমিও বাড়ি যাবো ভাবতেছি।
প্রিয়ন্তীঃ কয়েকদিন আগেই তো আসলি।
আমিঃ আবার যেতে হবে।
প্রিয়ন্তীঃ কি যে আছে তোর ঐ বাড়িতে ভগবান-ই জানে।
আমিঃ বউ আছে।
প্রিয়ন্তীঃ জানোয়ার।
আমিঃ চল উঠি।
প্রিয়ন্তীঃ আন্টির সাথে তুই আজ পর্যন্ত কথা বলায় দিলি না আমাকে।
আমিঃ বিয়ের পর বলিস।
প্রিয়ন্তীঃ আর বলে কি হবে।
আমিঃ আগে বলায় দিলে কি হইতো.?
প্রিয়ন্তীঃ যেটা হইলো না।
আমিঃ ঢং দেখাইস না তো, যাহ্ এখান থেকে।
প্রিয়ন্তীঃ যাচ্ছি যাচ্ছি। এবার গেলে আর পাবি না।
আমিঃ কবেই বা আর তোকে পাইছিলাম, সারাজীবন তো স্বপ্ন-ই দেখাইলি।
আমি দাঁড়ায় আছি। হঠাৎ বাম গালে একটা কষে চড় বসলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রিয়ন্তী আমাকে জড়ায় কাঁদতে শুরু করলো।
এবার একটা চুমু। এই মমুহুর্তে প্রিয়ন্তী কে শান্তনা দেওয়ার মতো অবস্থা আমার নাই। সাথে প্রিয়ন্তীর দেওয়া এই চড় আর চুমুর ব্যাখ্যাও আমার জানা নাই। জানতেও চাইনা। বাকিটা পথ একলা পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রিয়ন্তীর দেওয়া এই শান্তনাটুকু আমার জন্য যথেষ্ট।
আমি গ্রামের বাসায়। প্রিয়ন্তীর বিয়েতে যাওয়ার দুঃসাহস আমার হবে না । তবে একটা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাবো ভাবতেছি। পাঠাবো। অবশ্যই পাঠাবো।