ভোর হলেই পুলিশ আসবে। ওমা, খুব বেশিতো দেরি নেই। বারোটা বেজে গেছে ? এত কখন বাজলো! একটু আগেই না বাসায় ঢুকে দেখলাম এগারোটার মতো বাজে।
নাদিয়া গোসল করে বের হলো মাত্র। কি ভয়ংকর সুন্দর লাগছে ! ভেজা চুলে নাদিয়াকে এর আগে এত সুন্দর লেগেছিল কখনো ? এতদিন এত গুলো একসাথে এক ছাদের নিচে থাকা, এমন তো লাগেনি কখনো। হ্যা, বিয়ের রাতে লেগেছিল। বিয়ের রাতেও আজকের মতো বৃষ্টি ছিল। কি নির্বিকারভাবে নাদিয়া জিজ্ঞেস করল। "তোমার কি আজকেই কোন আবদার টাবদার আছে? থাকলে মেটাও! নাহলে বলো, ঘুমিয়ে পড়ি। প্রচন্ড ঘুম আসছে। পালিয়ে তো এর আগে বিয়ে করিনি, এত ধকল তাতো জানতাম না" ! আমি তখন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঠিক এভাবেই হয়তো। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।
নাদিয়ার মাথায় জড়ানো তোয়ালে টা মুকুটের মতো লাগছে। কি অসম্ভব সুন্দর।
নাদিয়া হাসিমুখে তাকালো আমার দিকে। কি মায়াবী হাসি ! এই মেয়েটা কি সব মায়া আজকে রাতের জন্যই তুলে রেখেছিল ?."খাবে না ? খেতে বসো। শরীর খারাপ লাগছিল, তেমন কিছু করতে পারিনি, একটু বসো, ডিম ভেজে দিচ্ছি।"
আমি টেবিলে বসে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে আছি। নাদিয়া পেয়াজ কাটছে। লাল শাড়ি পরেছে নাকি ? খেয়াল করিনি তো এতক্ষণ। বিয়ের রাতেও লাল শাড়িই ছিল। কে বলবে এই মেয়েটাই সকালে গিয়ে পুলিশের কাছে তার স্বামীর সব তথ্য দিয়ে এসেছে ? বস আগেই বলেছিল এইসব কাগজপত্র ঘরে না রাখতে। রাখলেও ড্রয়ার ভালোমত তালা দিয়ে রাখতে। কে জানতো নাদিয়া কোনদিন ওইসব কাগজ ঘেটে দেখবে ! পুলিশকে দিয়ে আসবে তাতো ভাবার প্রশ্নই ওঠে না। ভাবনার অতীত ও কত ঘটনা ঘটে যায়।
নাদিয়াও খেতে বসেছে। ভাগ্যিস একটু সময় করে ডিম টা ভেজেছে, করল্লার তরকারিতে বিষ মেশানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া গেছে। ইস, মেয়েটা কিভাবে বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে ! খুব খিদা লেগেছিল হয়তো। আমার অপেক্ষায় এতক্ষণ খায়ওনি।
আর আমি কি সুন্দর আজ রাতেও নির্বিকার, চুপচাপ খেয়ে গেলাম। শুধু দু একবার মনে মনে বললাম, "নাদিয়া, আমাকে ক্ষমা কোরো। তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। কখনো বলা হয়নি। আর কখনো হবেওনা। বিয়ের রাতে তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি সারারাত তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এটাও আর কখনো বলা হবেনা। আমি আজ তোমাকে না মারলে তোমাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারবে। আমাকেও মারবে, কাউকে ছাড়বে না। আমাকে ক্ষমা করো নাদিয়া, ক্ষমা করো..."
নাদিয়া আজ খুব ধীরেসুস্থে খাচ্ছে। অন্যদিনের চেয়ে অনেক ধীরে। যতক্ষণ খাওয়া হবে ততক্ষণই শুধু সময়, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাবে। থাক না, আরো কিছুক্ষণ চোখের সামনে থাক প্রিয় মুখটা। বোকাটা টেনশনে খেতেও পারছে না ঠিকমতো। গাধাই থেকে গেল সারাজীবন। করল্লা যে খাই না এটাও তার মনে নেই, বিষ মিশিয়েছে করল্লায়। একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা, এই লোক এত বিশ্রী সব ক্রাইম করে কিভাবে ? এত সময় নিয়ে ডিম ভাজি করা হলো, তাও বিষ মেশাতে হিমশিম খাচ্ছিল। একটু বোঝেওনা সামান্য ডিম ভাজি করতে কি এত দেরি হয় ! লাল শাড়ি কেন পরেছি আজকে তাও বোঝেনি।
কিছু বুঝতই বা কবে! বিয়ের রাতে বললাম ঘুমিয়ে পড়বো, তার মানে কি এই যে ঘুমিয়ে পড়ছি ! সারারাত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, একটু ছুয়ে দেখবে না সত্যিই ঘুমিয়েছি কিনা। ঠোঁটে নাহয় কপালে একটা চুমু খেয়েই দেখতো চোখ মেলে তাকাই কিনা ! গাধাটা এখন চোখের পানিও লুকানোর চেষ্টা করছে। বুঝতেও পারছে না তার দিকে না তাকিয়ে পানি লুকানোর সুযোগ করে দিচ্ছি। যদিও তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে। খুব ইচ্ছা করছে। অবশ্য তাতে খুব লাভ নেই। এর মধ্যেই সব অন্ধকার হয়ে আসছে। গাধাটা কি বুঝতে পারছে ? না বুঝুক, কিছু বুঝেছে কবে ! গাধা কোথাকার !