somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ হিমুর একদিন ”

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোদটা বড্ড বেশি চোখে লাগছে । মুখভরতি দাঁড়ির জঙ্গল । এই অবস্থায় বড়ফুপুর বাড়ি গেলে কেমন হয় । এমনিতেই বড়ফুপা আর বড়ফুপু ২ জনেই আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করেছে । তাদের বাড়ির চৌদ্দ-সীমানা যেন না পাড়াই । তার উপর আজকের এই বেহাল দশায় উপস্থিত হলে খারাবি তো আছেই । এসব ভেবে কি আর মনের ইচ্ছা দমানো যায় । বাবার কত চেষ্টার ফলাফল শুন্য । একেবারে শুন্য যে হয়নি তা আমিও জানি । কিছু কিছু ক্ষমতা আমার মধ্যে তিনি তৈরি করে যেতে পেরেছেন ।
বাবা তার খাতায় লিখেছেন -

“ মহাপুরুষদের কোন দুঃখ, কষ্ট ,আনন্দ,ভয়,ইচ্ছা থাকা উচিত না । এগুলো তোমাকে মায়ার বন্ধনে যুক্ত করে দিতে পারে । তুমি এগুলোকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবে । ছোটবেলায় এই সব তুচ্ছ অনুভুতি নিয়ে তোমাকে আমি অনেক পরীক্ষাও করেছি । ”

বাবা খুব যত্নে এসব ছোট ছোট ঘটনা অবলীলায় পাতার পর পাতা লিখে গেছেন । কিন্তু অনেক বড় বড় ঘটনা তিনি সযতনে এড়িয়ে গেছেন । বাবার এই উক্তি এখন আমার কোনই কাজে আসছে না । এই কাঠ-ফাটা রোদের ভিতরে খালি পায়ে হাঁটার যে কষ্টটা হচ্ছে তা মোটেও এড়ানো যাচ্ছে না । মন চাইছে কোন সিএনজি বা রিকশায় উঠে পড়তে । আবার বাসেও ওঠা যায় । এসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটছি । হঠাৎ বলা-কওয়া নেই একটা পাজেরো গাড়ি ঠিক আমার পাশে এসে থামল ।
“আরে হিমু ভাই না ?? ”- কণ্ঠ শুনেই মুগ্ধ হয়ে পাশ ফিরলাম । আরেকবার মুগ্ধ হতে হল গাড়িতে বসা মেয়েটিকে দেখে । শার্ট প্যান্ট পড়া , উগ্র মেকআপ দেওয়া কাউকেই আশা করেছিলাম , কিন্তু তার বদলে দেখি সুতির শাড়ি পড়া, হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি , আর চোখে বড় করে টানা কাজল । এই মেয়ের প্রসাধন ব্যবহার করার দরকার নেই , এমনিতেই সে স্বসৌন্দর্যে জ্বলছে । হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগল, শাড়ি পড়ে এই মেয়ে কিভাবে এই দামি গাড়ি চালাচ্ছে ?
মেয়েটি হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে হাসল । আমি চিনতে পারার ভঙ্গি করে বললাম , “কে , তামান্না না ?? ”
“ আপনি আমায় চিনতে পারেননি, তাই না হিমু ভাই ?? ”
এমন সুন্দরী মেয়ের কাছে ভুল স্বীকার করলে কিছু দোষের নেই । আমিও স্বীকার করলাম , “ হুম, আসলেই চিনি নাই । ”
“চিনতে পারেননি তাই বলে অন্য কারোর নাম বলবেন ?? এটা ঠিক না । যাই হোক , আমি ইরা । বাদলের কাকাতো বোন । এবার মনে পরেছে ?? ”
আমি মনে মনে বড়সড় একটা টাস্কি খেলাম । এই সেই মেয়ে । দারুন ব্রিলিয়ান্ট কিন্তু মনটা পাথরের মতো । অথচ এই অল্পকয়দিনে এরুপ পরিবর্তন , ব্যাপারটা কি । আমি এবার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম “ ও তুই ইরা । ”
এবার ইরা সত্যি সত্যি তার সেই পাথর কঠিন দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকাল । “আপনি বললেই পারতেন আপনি আমাকে চেনেন নি , কিন্তু তুই বলছেন কেন?? আপনি তো আমাকে আপনি করেই বলতেন । ”
“আসলে অনেকদিন পর দেখা তো তাই ভেবেছিলাম আপনাকে হয়তো বাদলের মতো তুই করেই বলি । ”
“কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি ?? আপনার তো আবার নির্দিষ্ট কোন যাওয়ার জায়গা নেই । ”
“গুলশানে, বাদলদের বাসায় । ”
“আপনাকে না কাকা তার বাসায় যেতে নিষেধ করেছেন , তাও যাবেন ?? ”
“হুম, যাব। কারণ আজ একটা বিশেষ দিন । আজ ফুপা-ফুপুর বিবাহ বার্ষিকী । ”
তামান্না একটু অবাক হয়েই বলল , “ সত্যি নাকি বাগড়া দিচ্ছেন ?? ”
আমি বললাম , “সত্যি কিনা জানার একটাই উপায় আপনিও আমার সাথে চলুন । ”
“না, আমার অন্য কাজ আছে । আচ্ছা, আপনি যান যেখানে খুশি । ” – এই বলেই ভুশ করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল ।
ইরা চলে যাওয়ার পর মনে পড়লো ওকে তো প্রশ্নটা করা হল না , কিভাবে শাড়ি পড়ে গাড়ি চালাচ্ছে ।

তরঙ্গিণী স্টোরের সামনে যেতেই বদরুল সাহেব টেলিফোনের তালাটা খুলে দিলেন । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি খবর বদরুল সাহেব ?? ”
“খবর বিশেষ ভালো না হিমু ভাই । গতকাল বউয়ের চিঠি পেয়েছি । বড় মেয়েটার অসুখ । কিন্তু হাতে একদম টাকা পয়সা নাই । ”
“ কেন, আপনার দোকান কি ভালো চলছে না ? ”
“নারে ভাইজান, কোন কাস্টমারই আসে না । যদি মশা-মাছি আসতো তাও শান্তি পেতাম । কিন্তু এরাও এই দোকানের দিকে ফিরে তাকায় না । ”
“আপনি তো আসলেই বিশেষ কষ্টে আছেন । ”
বলে আমি টেলিফোনের ডায়াল ঘুরাতে লাগলাম । আমাকে ডায়াল ঘুরাতে দেখে বদরুল সাহেব বিরস মুখে অন্যপাশে সরে গেলেন ।
অনেকদিন রুপার সাথে কথা হয় না । রুপাকেই ফোন করলাম । রুপা ধরল, জানতাম ওই ধরবে ।
“হ্যালো, কে ? ”
“রুপা আমি, হিমু । ”
ওপাশে একটা দীর্ঘশ্বাস টানার শব্দ পেলাম । তারপরই রুপা বলল ,
“কেমন আছো তুমি ?? ”
“আমি তো ভালই আছি । কিন্তু তোমার কণ্ঠটা একটু অন্যরকম লাগছে কেন ? ”
“কিছু হয়নি । এমনি , অনেকদিন পর কথা বলছ তো তাই এমন লাগছে । তা হঠাৎ কি মনে করে স্মরণ করলে ? ”
“তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছে । তোমার সেই নীল শাড়িটা পড়ে বারান্দায় দাঁড়াবে একটু । ”
“ মিথ্যে কথা । তুমি আসবে না । আসবে আসবে বলেও কখনই আসনি । ” রুপার কণ্ঠটা কাঁদকাঁদ হয়ে গেল ।
আমি আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম । ফোন কাটার পরই মনে পড়লো যে কারণে রুপাকে ফোন দিলাম সেইটাই বলা হয়নি । আজ রুপার জন্মদিন । ওকে উইশ করতেই ভুলে গেছি । ইদানিং কি জানি হয়েছে । যা করব বলে ভাবছি তা অসমাপ্ত রয়ে যাচ্ছে ।
রুপার প্রতি জন্মদিনেই আমি ওকে বলি যে আজ ওকে দেখতে আসব । কিন্তু কোনদিনই আসি না । রুপাও জানে আমি আসব না । তারপরও রুপা শাড়ি পড়ে, সুন্দর করে চোখে কাজল দেয় , কপালে দেয় ছোট একটা টিপ । পাউডারের হাল্কা পাফও বুলায় দু গালে । এরপর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে আমার জন্য । আমি না গেলে কাঁদে বালিশে মুখ লুকিয়ে । অভিমান করে আমার উপর । মান-অভিমানের এই পর্বটা শেষ হতে বেশিক্ষণ লাগে না । কেননা ও জানে ওর এই পাগলামি আমার অন্তর স্পর্শ করে না ক্ষণিকের জন্যও । কিন্তু আজ আমি এর ব্যতিক্রম ঘটাব । আজ সত্যি রুপাকে দেখতে যাব ।
আমি চাইনা কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করুক । তবুও রুপা নামের কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই কেন জানি ভালো লাগে । তখন মনে হয় , এভাবেই চলুক না জীবন । এভাবেই কেউ আমার জন্য না হয় অপেক্ষা করুক ।
রুপার জন্য কিছু টাটকা গোলাপ কিনতে হবে । টাটকা গোলাপের খোঁজে আবারও সামনের দিকে পা বাড়াই । বড়ফুপার বাসায় যাওয়ার প্লানটা আপাতত বন্ধই থাক ।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×