“ মামা, বেলির একটা মালা দিন তো , জলদি মামা । ”
বলেই পাশে দাঁড়ান মেয়েটিকে চোখে পড়ে ওর । আয়ত চোখ মেলে গোলাপি রঙের কারনেশন ফুলগুলো দেখছে ও । মেয়েটির গায়ের রঙ চাপা , কিন্তু মুখটাতে যেন আল্লাহ পৃথিবীর সব মায়া ঢেলে দিয়েছেন । সেইদিকে এমনই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল ও , যে মামার বাড়িয়ে দেওয়া বেলি ফুলের মালাটি চোখেই পড়লো না । হঠাৎ মামার তাড়া শুনেই ওর সংবিৎ ফিরে এলো । পকেট থেকে টাকা বের করে মামার হাতে গুঁজে দিলো ।
হঠাৎ কি মনে হতেই আরেকবার পাশে তাকিয়ে একটা ধাক্কা খেল ও । ধাক্কার কারন মেয়েটির চোখ । পৃথিবীতে যত সুন্দর চোখের মানুষের জন্ম হয়েছে এই মেয়ে নির্ঘাত সেই দলেই পড়ে যাবে । চোখটি যেন আঁকানো , কাজল দেওয়ার ফলে আরও অপূর্ব হয়ে ফুটে রয়েছে ।
মেয়েটির চোখে একটু দ্বিধা দেখতে পেয়ে ও বুঝল এতক্ষণ মেয়েটির চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল ও । লজ্জা পেয়ে ও দ্রুত প্রস্থান করলো সেখান থেকে ।
***
ইজেলে সাঁটা সাদা কাগজের জমিনে একজোড়া মায়াবী চোখ । কাজল টানা আঁকানো একটা চোখ, অবয়ববিহীন । অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মেয়েটির মুখটি মনে করতে পারল না কাব্য । শুধুই চোখের ছবিটাই চোখে ভাসছে । কি অবাক কাণ্ড !!! মেয়েটি তো ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল । কিন্তু তা সত্ত্বেও মেয়েটির মুখাবয়ব মনে পরছে না কেন ?? এ কোন তাল !! :/
অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে বুঝল যে ও শুধুই মেয়েটির চোখটাই দেখেছে , আর কিছুই ওর নজরে পরেনি । তাই আর চেষ্টা করেও ও তুলি ছোঁয়াতে পারল না । আর কয়দিন পরেই ওর ছবির প্রদর্শনী । ও ভেবে রেখেছিল এই ছবিটাও স্থান পাবে সেখানে । কিন্তু কিছুই হল না । তবুও আজ ওকে একবার বেরতে হবে । কত কাজ পড়ে আছে ওর ।
***
“ দোস্ত , প্লিজ , চলনা আমাদের সাথে । আমাদের ভার্সিটির এক ভাইয়ার চিত্র-প্রদর্শনী । ” – বলেই হাত ধরে টানতে থাকল রিমি । এই মেয়েটা না একদম নাছোড়বান্দা । যদি আমি না যাই তাহলে সারাটা দিন কানের কাছে প্যানপ্যান করতে থাকবে । কি যে যন্ত্রণা করতে পারে মেয়েটা ।
“ আচ্ছা , বাবা । যা তুই , আমি একটু ফ্রেশ হয়েই আসছি । ” কথাটা শুনেই ওর মুখে এক হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠলো যেন ।
আমিও আর দেরি না করে ওয়াশ-রুমে ঢুকলাম , না আবার ওর গান শুরু হতে পারে ।
***
“ মামা, একটু দ্রুত চালায়েন , আজ আমার এক্সজিবিশন আছে । ” – বলে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলাম । এটাই আমার প্রথম এক্সজিবিশন । রিক্সার চলার গতি বাড়ার সাথে সাথে আমার বুকের ধুঁকপুকানি ও যেন বেড়েই চলেছে । ২০ মিনিটের পথ ১২ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম । তবুও মনে হল একটু দেরি হয়ে গেছে । গেট দিয়ে ঢুকেই দেখতে পেলাম আমার বন্ধুরাও আমার জন্যই উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে । যাই হোক নানা ফর্মালিটি শেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হল আজকে ।
বন্ধুদেরকে একটু সামলে নিতে বলে এসে দাঁড়ালাম আমার সেই প্রিয় ছবিটার সামনে । রংধনুর সাত রঙের মাঝে একজোড়া কাজল টানা মায়াবী চোখ ।
“ এক্সকিউজ মি ” – সংবিৎ ফিরল এক মেয়ের রিনরিনে কণ্ঠের ডাকে । পিছনে ফিরেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । সেই মায়াবী চোখের মালকিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
***
ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটিও বিমুঢ় হয়ে গেল । “ আরে , এই ছেলেটাকে তো সেইদিন ফুলের দোকানের সামনে দেখেছিলাম । হায়রে, এইটা নাকি বড়ভাই । খাইছে রে । ” – মনে মনে বলে উঠলাম আমি । হঠাৎ রিমির কথা শুনলাম ।
“ ভাইয়া , আমি আপনার একজন বড় ফ্যান । আপনার আঁকা ছবিগুলো অনেক সুন্দর । ভাইয়া, একটা অটোগ্রাফ কি পেতে পারি ?? ”
“ হ্যাঁ, অবশ্যই । আমি দিয়ে দিচ্ছি । কাগজটা দাও ।”
রিমি আমার দিকে তাকাল । আমি নীল রঙের প্যাডটা এগিয়ে দিলাম । হঠাৎ করেই চোখে পড়লো ভাইয়ার পিছনে আঁকা ছবিটাতে । খুব পরিচিত লাগছে ছবিটা আমার । কোথায় যেন দেখেছি এই চোখ দুটোকে । খুব আপন লাগছে । একটু ভাবতেই উত্তরটা পেয়ে গেলাম । আরে , এ যে আমারই চোখ । একটু অবাক হয়েই ভাইয়ার দিকে তাকালাম । দেখলাম তিনিও মুখে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে আমার দিকেই চেয়ে আছেন । একটু লজ্জা পেয়েই চোখটা নামিয়ে নিলাম আমি । খেয়াল করলাম অটোগ্রাফ দেওয়া কাগজটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি । হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলাম ওটা ।
ভাইয়া, রিমির দিকে তাকিয়ে বলল , “ তোমাদের নাম তো শোনা হল না । আমাদের ভার্সিটিতে পড় বুঝি । ”
“ হ্যাঁ, ভাইয়া । একই ভার্সিটিতে । আমার নাম রিমি আর ও আমার ফ্রেন্ড মেঘ । ”
একটু মুচকি হেসেই জবাব দিলো ভাইয়া - “ আমি কাব্য । ”
***
“ যাক, নামটা তো জানা হল । এবার দোস্তদের ধরে মেয়েটাকে বের করতে পারলেই হবে । কিন্তু মনের কথাটা যে কিভাবে বলব ।” এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফিরলাম । ফ্রেশ হয়েই ফোন দিলাম রাহাতকে ।
“ কিরে শালা, এত রাতে আবার জালাইতাছস ক্যান রে???? সারাটা দিনই তো তোর পিছেই ব্যয় করলাম । ”
“ আরেকটু কষ্ট করতে হবে দোস্ত । এক মেয়ের যাবতীয় খবর আইনা দিতে হবে । পারবি না?? ”
“ ওয়াও , এক প্রদর্শনীতেই এই অবস্থা শালা । এখনও তো কতদুর যাইতে হবে । তোর বোন আমার মাথা না ফাটায় , যদি শুনে তোরে এই কাম কইরা দিচ্ছি । ”
“ আরে কিছুই হবে না । আমি তোরে নামটা কইয়া দিমু, তুই খালি একটু বাইর কইরা দিবি । ”
“ তা দিবানি , আগে ক কি খাওয়াবি ?? নাইলে এর মধ্যে আমি নাই । ”
“ সবই হবে দুলাভাই , খালি আগে কাজটা তো করে দে । ”
“ আচ্ছা, যা । নাকে তেল দিয়ে ঘুমা । ”
খুশি মনেই ফোনটা রেখে ঘুম দিলাম একটা ।
***
কি আজব ব্যাপার , কে দিলো এটা ?? র্যা পিং করা কাগজটা সরাতেই সেই অপূর্ব চোখের ছবিটি বেরিয়ে পড়লো । সাথে সাথেই বুঝল মেঘ এটা কে দিয়েছে । ছবিটা সোজা করে রাখতে গিয়ে টের পেল একটা কাগজ গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে । কাগজটা উঠিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে খুলল ও । একটা চিঠি , নীল কাগজের জমিনে সাদা অক্ষরগুলো একটার পর একটা মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে । কি সুন্দর লেখা !!
পড়তে শুরু করলো ও ,
“ কোন সম্ভাষণ করলাম না । কেননা কি সম্ভাষণ করব সেটা ভেবে পাইনি । আবার প্রিয় তুমি লিখতে গিয়েও ভেবেছি, এটা লেখার অধিকার আমি এখনও পাইনি । সেদিন ফুলের দোকানে তোমার চোখ দুটি আমার চোখেই ধরা পরেছিল বিমূর্ত প্রতীক হয়ে । তোমার মুখটা অনেক কষ্টেও মনে করতে পারিনি । তাই মনের ক্যানভাসে আঁকা ছবিটিকেই কাগজের জমিনে ফুটিয়ে তুলেছিলাম রংধনুর সাতটি রঙের মাঝে । আর এটিই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ একটা শিল্পকর্ম । যেদিন তোমায় এক্সজিবিশনে দেখলাম সেদিন ও তোমার ওই চোখটাকেই আবার ফ্রেমে বন্দি করেছি । তবে এবার আর জীবন্ত করে তুলিনি । তোমার এই মেঘ নামটাও অদ্ভুত সুন্দর । সেদিনই আমি প্রথম প্রেমে পরেছিলাম যেদিন তুমি তোমার ওই আয়ত চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে । তখনও বুঝিনি একে প্রেম বলে । কিন্তু এই কয়দিনে এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমি সত্যি কারোর প্রেমে পরেছি । তোমার কাছে হয়তো এটা ভ্যাবলামি মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সিরিয়াস । আমি তোমায় কোনরকম জোর করবোনা । তোমার বিশেষ কেউ থাকতে পারে । কিন্তু আমার কাছে তুমিই বিশেষ । আমি কি তোমার হাতটি সারাজীবনের জন্য ধরতে পারি ?? ”
যা সন্দেহ করেছিল তাই হয়েছে । সেদিন ভাইয়ার চোখ দেখেই ও বুঝতে পেরেছিল । মেয়েদের এটা একটা বিশেষ ক্ষমতা , যে তাদের প্রতি কোন ছেলের আকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারটা । ও বেশ কয়েকবার ভেবেছে এটা আসলে তা নয় । হয়তো ব্যাপারটা ছবি পর্যন্তই , কিন্তু আজ তা খোলাসা হয়ে গেল । যে ভয়টা ও এই কয়দিন ধরে পাচ্ছিল তাই কিনা আজ সত্যি হল । ও বুঝল এখানে থাকাটা ওর পক্ষে আর হয়তো সম্ভব নয় । রাতের ট্রেনটা হয়তো এখনও পাওয়া সম্ভব ।
***
ঝিকঝিক করে রাতের ট্রেনটা ছুটে চলেছে । গন্তব্য ঢাকা ; কতদিন আগে যেন ঢাকা ছেড়েছিল ও , ১০ বছর .........হা, ১০ বছর হবে হয়তো । সামনের ওই সীটটা শুরু থেকেই ফাঁকাই দেখছে ও । হয়তো আজ কোন যাত্রী ওর সঙ্গী নয় । যেদিন শুনল মেঘ চলে গিয়েছে ভার্সিটি থেকে ও সেদিনই ক্যাম্পাস ছেড়েছিল । তবে ওর ছবি আঁকাটা ছাড়তে পারেনি । ও আজও জানে না মেঘের পূর্ণ মুখাবয়ব । সেই প্রদর্শনীর দিনও ওই চোখেই ওর চোখ বাধা পড়েছিল । আজও সময়টা ওখানেই থেমে আছে ওর ।
“ কাব্য , বাবা , দুষ্টামি করে না । এসো আমাদের সীটে গিয়ে বসি । ” –দরজার ওপাশ থেকে কণ্ঠটা শুনে ওর কল্পনার তুলিরা থেমে গেল অকস্মাৎ । দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সেই চোখজোড়া , যে চোখের মায়াতে আজও মোহাবিষ্ট কাব্য । কিন্তু মেয়েটি আজ থমকাল না , এগিয়ে গিয়ে বসলো সামনের সীটে । অনেক কষ্টে চোখ ফিরিয়ে নিল কাব্য । হঠাৎ একটা অস্বস্তি পেয়ে বসলো আমায় । ঠিক কি যেন মিলছে না । সেই চোখ , সেই কণ্ঠ ............ কিন্তু অস্বস্তিটা কিসের ??? আবার তাকাল ও । নাহ , এবার আর কোন মিল পেল না । তবে কি হ্যালুসিনেশন হল আমার? মেয়েটিও বোধহয় কিছু বুঝতে পারল । মেয়েটি এবার ওর দিকে তাকিয়ে রইল , নাহ এখন যেন একটু মিল পাচ্ছে ও ; কিন্তু অস্পষ্ট । হঠাৎ মেয়েটা জিজ্ঞেস করে বসলো, “ আপনি কি কাব্য ???? ”
ওর মুখে নামটা শুনে স্থবির হয়ে গেলাম । কোনরকমে বললাম , “ হ্যাঁ, আমি কাব্য । কিন্তু আপনি ? ”
“ আপনি আমায় চিনবেন না । আমি মেঘের ছোট বোন । আমার নাম বৃষ্টি । আপু আপনার কথা অনেকবার বলেছে আমাকে । আপনার অনেক খোঁজ করেছি আমি । কোথায় ছিলেন ভাইয়া?? ”
“ এইতো ছিলাম আশেপাশে , মেঘ কেমন আছে ?? ” – হাল্কা একটা হাসি দিয়ে জানতে চাইলাম ।
“ আপু মারা গেছেন এইতো ৭ বছর পার হয়ে গেল । ” – কেমন নিরুত্তাপ গলায় বলে গেল বৃষ্টি । কিন্তু ওই নির্বিকারভাবে বলা কথাগুলোই আমার কানে বেজে যাচ্ছিলো বারবার ।
“ আপু ঢাকা থেকে চলে আসার পর আসল সমস্যা শুরু হয়েছিল ।” আবার বলতে শুরু করে বৃষ্টি । “ আপু সবসময় আপনার কথা বলত । আপনি নাকি তার চোখের প্রেমে পড়েছিলেন । আমাকে বলেছিল আপু যে আপনাকে আমি কিভাবে চিনতে পারব । বলেছিল আমি নই , বরং আমার চোখ দেখে আপনি হয়তো আমায় চিনে নেবেন । তাই হল আজকে । আপনি ওভাবে আমার চোখের দিকে না তাকিয়ে থাকলে আমিও বুঝতাম না যে আপনি সেই মানুষ । ”
হঠাৎ দেখলাম নীল খামের একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে । কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বলল ও ,“ এটা আপুর লেখা শেষ চিঠি । আপনাকে আপু কিছু কথা জানাতে চেয়েছিল । আমি অনেকবার আপনাকে খুঁজেছি , কিন্তু পাইনি । আপুও কেন যেন ভেঙে পড়েছিল । আচ্ছা, ভাইয়া , আমার নামার সময় হয়ে গেছে । আমি আসি । ” – বলে নেমে গেল খুব চেনা অচেনা মেয়েটি ।
আমার হাতে নীল খামটা ; খুব ভারী লাগছে এখন এটাকে ।
***
“ প্রিয় কাব্য,
অনেক সাহস সঞ্চয় করে তোমায় এই চিঠিটা লিখছি । জানিনা তুমি কখনও এই চিঠিটা হাতে পাবে কিনা । তোমার সেই চিঠিটা আমি আজও লালন করছি । ওদেরকেও বলেছি যাতে আমার মৃত্যুর পর এই চিঠিটাকে আমার সাথেই দিয়ে দেওয়া হয় । জানি নিয়ম নেই তবুও ......... তোমার দেওয়া চিঠিটা পড়ে আমি আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিলাম । ভয় পেয়েছিলাম তোমার হাত ধরলেও তা আমি ধরে রাখতে পারব কিনা । তোমার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন । বলতে পারিনি যে আমিও তোমার প্রেমে পরেছিলাম । তোমায় এরপর অনেক খুঁজেছি । আমার বোন বৃষ্টিকেও পাঠিয়েছিলাম তোমায় খুঁজতে । কিন্তু ও ফিরলে জানতে পারলাম আমি চলে আসার পরপরই তুমিও কোথায় যেন হারিয়ে গেছ । তবুও আমার বিশ্বাস ছিল, একদিন আমি তোমায় আমার এভাবে পালিয়ে আসার ব্যাখ্যা হয়তো দিতে পারব । কিন্তু আল্লাহ আমায় সে সুযোগ দিলেন না । ভার্সিটিতে ভর্তির আগে আমি একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি । তখন জানতে পারি আমার ব্লাড-ক্যান্সার হয়েছে । আমার নিজের কোন ইচ্ছাই ছিল না নতুন করে পড়াশোনা করার । কিন্তু পরিবারের চাপে আমি ভর্তি হই । ভেবেছিলাম হয়তো এটাই ভালো হল । সময়টা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে । ক্যাম্পাসের পরিবেশ আমায় ভুলিয়েই দিয়েছিল যে আমার আয়ু আর অল্প কয়টা দিন । কিন্তু যেদিন তোমার চিঠিটা হাতে পেলাম সেদিন এই নির্মম সত্যটা আবার আমার চোখের সামনে ধরা দিলো । আমি তোমার কাছ থেকে পালিয়ে এলাম । অনেক চেষ্টা করেছি তোমায় ভুলতে । কিন্তু যতই তোমায় ভুলতে চেয়েছি, ততই তুমি আমার আরও কাছে চলে এসেছ । শেষের দিনগুলোতে আমি তোমায় বুভুক্ষের মতো চাইতাম । কিন্তু তুমি তো সেদিনই হারিয়ে গিয়েছিলে , যেদিন আমি নিজেকেই তোমার থেকে দূরে সরিয়েছিলাম । আমার খুব ইচ্ছা করতো তোমার হাত ধরে বাকি পথ পাড়ি দিতে । কিন্তু সে সৌভাগ্য আমাকে বিধাতা দেননি । তাই হয়তো আমার শেষ ইচ্ছেটাও অপূর্ণই থেকে গেল । তোমার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ হয়তো নেই , তবুও আমাকে ক্ষমা করো । আমি তোমায় এতটাই ভালবেসেছিলাম যে তোমায় জানিয়ে যেতে পারলাম না । তবে আমি জেনেছিলাম রিয়েল লাভ কি জিনিস ।
“ LOVE is like WIND,
You can’t see it, but you can feel it . ”
আমায় কখনও মনে পড়লে এই কথাগুলো স্মরণ করো । দেখবে আমি তোমার কাছেই চলে এসেছি । আর তোমার আঁকা সেই বিখ্যাত ছবিটি তোমায় উপহার দিলাম । শেষবারের মতো আবার বলছি আমায় ক্ষমা করো প্রিয় । ”
খামের ভিতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বেরোল । খুলে দেখলাম আমার আঁকা সেই ছবিটি । সাতটি রঙের মাঝে কাজল টানা মায়াবী একজোড়া চোখ । আমি যার মুখাবয়ব এখনও সাজাতে পারিনি ।
_______________________________________________________________________________________________________________________________________