somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদেখা মেঘের কাব্য

০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ মামা, ওই ফুলগুলো কত বলুন তো ?? ” – বলেই হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় মেয়েটি ফুলগুলোর অবস্থান ।
“ মামা, বেলির একটা মালা দিন তো , জলদি মামা । ”
বলেই পাশে দাঁড়ান মেয়েটিকে চোখে পড়ে ওর । আয়ত চোখ মেলে গোলাপি রঙের কারনেশন ফুলগুলো দেখছে ও । মেয়েটির গায়ের রঙ চাপা , কিন্তু মুখটাতে যেন আল্লাহ পৃথিবীর সব মায়া ঢেলে দিয়েছেন । সেইদিকে এমনই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল ও , যে মামার বাড়িয়ে দেওয়া বেলি ফুলের মালাটি চোখেই পড়লো না । হঠাৎ মামার তাড়া শুনেই ওর সংবিৎ ফিরে এলো । পকেট থেকে টাকা বের করে মামার হাতে গুঁজে দিলো ।
হঠাৎ কি মনে হতেই আরেকবার পাশে তাকিয়ে একটা ধাক্কা খেল ও । ধাক্কার কারন মেয়েটির চোখ । পৃথিবীতে যত সুন্দর চোখের মানুষের জন্ম হয়েছে এই মেয়ে নির্ঘাত সেই দলেই পড়ে যাবে । চোখটি যেন আঁকানো , কাজল দেওয়ার ফলে আরও অপূর্ব হয়ে ফুটে রয়েছে ।
মেয়েটির চোখে একটু দ্বিধা দেখতে পেয়ে ও বুঝল এতক্ষণ মেয়েটির চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল ও । লজ্জা পেয়ে ও দ্রুত প্রস্থান করলো সেখান থেকে ।


***

ইজেলে সাঁটা সাদা কাগজের জমিনে একজোড়া মায়াবী চোখ । কাজল টানা আঁকানো একটা চোখ, অবয়ববিহীন । অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মেয়েটির মুখটি মনে করতে পারল না কাব্য । শুধুই চোখের ছবিটাই চোখে ভাসছে । কি অবাক কাণ্ড !!! মেয়েটি তো ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল । কিন্তু তা সত্ত্বেও মেয়েটির মুখাবয়ব মনে পরছে না কেন ?? এ কোন তাল !! :/
অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে বুঝল যে ও শুধুই মেয়েটির চোখটাই দেখেছে , আর কিছুই ওর নজরে পরেনি । তাই আর চেষ্টা করেও ও তুলি ছোঁয়াতে পারল না । আর কয়দিন পরেই ওর ছবির প্রদর্শনী । ও ভেবে রেখেছিল এই ছবিটাও স্থান পাবে সেখানে । কিন্তু কিছুই হল না । তবুও আজ ওকে একবার বেরতে হবে । কত কাজ পড়ে আছে ওর ।

***


“ দোস্ত , প্লিজ , চলনা আমাদের সাথে । আমাদের ভার্সিটির এক ভাইয়ার চিত্র-প্রদর্শনী । ” – বলেই হাত ধরে টানতে থাকল রিমি । এই মেয়েটা না একদম নাছোড়বান্দা । যদি আমি না যাই তাহলে সারাটা দিন কানের কাছে প্যানপ্যান করতে থাকবে । কি যে যন্ত্রণা করতে পারে মেয়েটা ।
“ আচ্ছা , বাবা । যা তুই , আমি একটু ফ্রেশ হয়েই আসছি । ” কথাটা শুনেই ওর মুখে এক হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠলো যেন ।
আমিও আর দেরি না করে ওয়াশ-রুমে ঢুকলাম , না আবার ওর গান শুরু হতে পারে ।


***


“ মামা, একটু দ্রুত চালায়েন , আজ আমার এক্সজিবিশন আছে । ” – বলে বারবার ঘড়ির দিকে তাকাতে লাগলাম । এটাই আমার প্রথম এক্সজিবিশন । রিক্সার চলার গতি বাড়ার সাথে সাথে আমার বুকের ধুঁকপুকানি ও যেন বেড়েই চলেছে । ২০ মিনিটের পথ ১২ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম । তবুও মনে হল একটু দেরি হয়ে গেছে । গেট দিয়ে ঢুকেই দেখতে পেলাম আমার বন্ধুরাও আমার জন্যই উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে । যাই হোক নানা ফর্মালিটি শেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হল আজকে ।

বন্ধুদেরকে একটু সামলে নিতে বলে এসে দাঁড়ালাম আমার সেই প্রিয় ছবিটার সামনে । রংধনুর সাত রঙের মাঝে একজোড়া কাজল টানা মায়াবী চোখ ।
“ এক্সকিউজ মি ” – সংবিৎ ফিরল এক মেয়ের রিনরিনে কণ্ঠের ডাকে । পিছনে ফিরেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । সেই মায়াবী চোখের মালকিন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।

***


ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটিও বিমুঢ় হয়ে গেল । “ আরে , এই ছেলেটাকে তো সেইদিন ফুলের দোকানের সামনে দেখেছিলাম । হায়রে, এইটা নাকি বড়ভাই । খাইছে রে । ” – মনে মনে বলে উঠলাম আমি । হঠাৎ রিমির কথা শুনলাম ।

“ ভাইয়া , আমি আপনার একজন বড় ফ্যান । আপনার আঁকা ছবিগুলো অনেক সুন্দর । ভাইয়া, একটা অটোগ্রাফ কি পেতে পারি ?? ”

“ হ্যাঁ, অবশ্যই । আমি দিয়ে দিচ্ছি । কাগজটা দাও ।”
রিমি আমার দিকে তাকাল । আমি নীল রঙের প্যাডটা এগিয়ে দিলাম । হঠাৎ করেই চোখে পড়লো ভাইয়ার পিছনে আঁকা ছবিটাতে । খুব পরিচিত লাগছে ছবিটা আমার । কোথায় যেন দেখেছি এই চোখ দুটোকে । খুব আপন লাগছে । একটু ভাবতেই উত্তরটা পেয়ে গেলাম । আরে , এ যে আমারই চোখ । একটু অবাক হয়েই ভাইয়ার দিকে তাকালাম । দেখলাম তিনিও মুখে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে আমার দিকেই চেয়ে আছেন । একটু লজ্জা পেয়েই চোখটা নামিয়ে নিলাম আমি । খেয়াল করলাম অটোগ্রাফ দেওয়া কাগজটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি । হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলাম ওটা ।

ভাইয়া, রিমির দিকে তাকিয়ে বলল , “ তোমাদের নাম তো শোনা হল না । আমাদের ভার্সিটিতে পড় বুঝি । ”
“ হ্যাঁ, ভাইয়া । একই ভার্সিটিতে । আমার নাম রিমি আর ও আমার ফ্রেন্ড মেঘ । ”
একটু মুচকি হেসেই জবাব দিলো ভাইয়া - “ আমি কাব্য । ”


***


“ যাক, নামটা তো জানা হল । এবার দোস্তদের ধরে মেয়েটাকে বের করতে পারলেই হবে । কিন্তু মনের কথাটা যে কিভাবে বলব ।” এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফিরলাম । ফ্রেশ হয়েই ফোন দিলাম রাহাতকে ।
“ কিরে শালা, এত রাতে আবার জালাইতাছস ক্যান রে???? সারাটা দিনই তো তোর পিছেই ব্যয় করলাম । ”
“ আরেকটু কষ্ট করতে হবে দোস্ত । এক মেয়ের যাবতীয় খবর আইনা দিতে হবে । পারবি না?? ”

“ ওয়াও , এক প্রদর্শনীতেই এই অবস্থা শালা । এখনও তো কতদুর যাইতে হবে । তোর বোন আমার মাথা না ফাটায় , যদি শুনে তোরে এই কাম কইরা দিচ্ছি । ”

“ আরে কিছুই হবে না । আমি তোরে নামটা কইয়া দিমু, তুই খালি একটু বাইর কইরা দিবি । ”
“ তা দিবানি , আগে ক কি খাওয়াবি ?? নাইলে এর মধ্যে আমি নাই । ”
“ সবই হবে দুলাভাই , খালি আগে কাজটা তো করে দে । ”
“ আচ্ছা, যা । নাকে তেল দিয়ে ঘুমা । ”
খুশি মনেই ফোনটা রেখে ঘুম দিলাম একটা ।

***


কি আজব ব্যাপার , কে দিলো এটা ?? র্যা পিং করা কাগজটা সরাতেই সেই অপূর্ব চোখের ছবিটি বেরিয়ে পড়লো । সাথে সাথেই বুঝল মেঘ এটা কে দিয়েছে । ছবিটা সোজা করে রাখতে গিয়ে টের পেল একটা কাগজ গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে । কাগজটা উঠিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে খুলল ও । একটা চিঠি , নীল কাগজের জমিনে সাদা অক্ষরগুলো একটার পর একটা মুক্তার মতো জ্বলজ্বল করছে । কি সুন্দর লেখা !!

পড়তে শুরু করলো ও ,

“ কোন সম্ভাষণ করলাম না । কেননা কি সম্ভাষণ করব সেটা ভেবে পাইনি । আবার প্রিয় তুমি লিখতে গিয়েও ভেবেছি, এটা লেখার অধিকার আমি এখনও পাইনি । সেদিন ফুলের দোকানে তোমার চোখ দুটি আমার চোখেই ধরা পরেছিল বিমূর্ত প্রতীক হয়ে । তোমার মুখটা অনেক কষ্টেও মনে করতে পারিনি । তাই মনের ক্যানভাসে আঁকা ছবিটিকেই কাগজের জমিনে ফুটিয়ে তুলেছিলাম রংধনুর সাতটি রঙের মাঝে । আর এটিই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ একটা শিল্পকর্ম । যেদিন তোমায় এক্সজিবিশনে দেখলাম সেদিন ও তোমার ওই চোখটাকেই আবার ফ্রেমে বন্দি করেছি । তবে এবার আর জীবন্ত করে তুলিনি । তোমার এই মেঘ নামটাও অদ্ভুত সুন্দর । সেদিনই আমি প্রথম প্রেমে পরেছিলাম যেদিন তুমি তোমার ওই আয়ত চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে । তখনও বুঝিনি একে প্রেম বলে । কিন্তু এই কয়দিনে এটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে আমি সত্যি কারোর প্রেমে পরেছি । তোমার কাছে হয়তো এটা ভ্যাবলামি মনে হতে পারে, কিন্তু আমি সিরিয়াস । আমি তোমায় কোনরকম জোর করবোনা । তোমার বিশেষ কেউ থাকতে পারে । কিন্তু আমার কাছে তুমিই বিশেষ । আমি কি তোমার হাতটি সারাজীবনের জন্য ধরতে পারি ?? ”

যা সন্দেহ করেছিল তাই হয়েছে । সেদিন ভাইয়ার চোখ দেখেই ও বুঝতে পেরেছিল । মেয়েদের এটা একটা বিশেষ ক্ষমতা , যে তাদের প্রতি কোন ছেলের আকৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারটা । ও বেশ কয়েকবার ভেবেছে এটা আসলে তা নয় । হয়তো ব্যাপারটা ছবি পর্যন্তই , কিন্তু আজ তা খোলাসা হয়ে গেল । যে ভয়টা ও এই কয়দিন ধরে পাচ্ছিল তাই কিনা আজ সত্যি হল । ও বুঝল এখানে থাকাটা ওর পক্ষে আর হয়তো সম্ভব নয় । রাতের ট্রেনটা হয়তো এখনও পাওয়া সম্ভব ।


***

ঝিকঝিক করে রাতের ট্রেনটা ছুটে চলেছে । গন্তব্য ঢাকা ; কতদিন আগে যেন ঢাকা ছেড়েছিল ও , ১০ বছর .........হা, ১০ বছর হবে হয়তো । সামনের ওই সীটটা শুরু থেকেই ফাঁকাই দেখছে ও । হয়তো আজ কোন যাত্রী ওর সঙ্গী নয় । যেদিন শুনল মেঘ চলে গিয়েছে ভার্সিটি থেকে ও সেদিনই ক্যাম্পাস ছেড়েছিল । তবে ওর ছবি আঁকাটা ছাড়তে পারেনি । ও আজও জানে না মেঘের পূর্ণ মুখাবয়ব । সেই প্রদর্শনীর দিনও ওই চোখেই ওর চোখ বাধা পড়েছিল । আজও সময়টা ওখানেই থেমে আছে ওর ।

“ কাব্য , বাবা , দুষ্টামি করে না । এসো আমাদের সীটে গিয়ে বসি । ” –দরজার ওপাশ থেকে কণ্ঠটা শুনে ওর কল্পনার তুলিরা থেমে গেল অকস্মাৎ । দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সেই চোখজোড়া , যে চোখের মায়াতে আজও মোহাবিষ্ট কাব্য । কিন্তু মেয়েটি আজ থমকাল না , এগিয়ে গিয়ে বসলো সামনের সীটে । অনেক কষ্টে চোখ ফিরিয়ে নিল কাব্য । হঠাৎ একটা অস্বস্তি পেয়ে বসলো আমায় । ঠিক কি যেন মিলছে না । সেই চোখ , সেই কণ্ঠ ............ কিন্তু অস্বস্তিটা কিসের ??? আবার তাকাল ও । নাহ , এবার আর কোন মিল পেল না । তবে কি হ্যালুসিনেশন হল আমার? মেয়েটিও বোধহয় কিছু বুঝতে পারল । মেয়েটি এবার ওর দিকে তাকিয়ে রইল , নাহ এখন যেন একটু মিল পাচ্ছে ও ; কিন্তু অস্পষ্ট । হঠাৎ মেয়েটা জিজ্ঞেস করে বসলো, “ আপনি কি কাব্য ???? ”

ওর মুখে নামটা শুনে স্থবির হয়ে গেলাম । কোনরকমে বললাম , “ হ্যাঁ, আমি কাব্য । কিন্তু আপনি ? ”
“ আপনি আমায় চিনবেন না । আমি মেঘের ছোট বোন । আমার নাম বৃষ্টি । আপু আপনার কথা অনেকবার বলেছে আমাকে । আপনার অনেক খোঁজ করেছি আমি । কোথায় ছিলেন ভাইয়া?? ”
“ এইতো ছিলাম আশেপাশে , মেঘ কেমন আছে ?? ” – হাল্কা একটা হাসি দিয়ে জানতে চাইলাম ।
“ আপু মারা গেছেন এইতো ৭ বছর পার হয়ে গেল । ” – কেমন নিরুত্তাপ গলায় বলে গেল বৃষ্টি । কিন্তু ওই নির্বিকারভাবে বলা কথাগুলোই আমার কানে বেজে যাচ্ছিলো বারবার ।
“ আপু ঢাকা থেকে চলে আসার পর আসল সমস্যা শুরু হয়েছিল ।” আবার বলতে শুরু করে বৃষ্টি । “ আপু সবসময় আপনার কথা বলত । আপনি নাকি তার চোখের প্রেমে পড়েছিলেন । আমাকে বলেছিল আপু যে আপনাকে আমি কিভাবে চিনতে পারব । বলেছিল আমি নই , বরং আমার চোখ দেখে আপনি হয়তো আমায় চিনে নেবেন । তাই হল আজকে । আপনি ওভাবে আমার চোখের দিকে না তাকিয়ে থাকলে আমিও বুঝতাম না যে আপনি সেই মানুষ । ”

হঠাৎ দেখলাম নীল খামের একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে । কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বলল ও ,“ এটা আপুর লেখা শেষ চিঠি । আপনাকে আপু কিছু কথা জানাতে চেয়েছিল । আমি অনেকবার আপনাকে খুঁজেছি , কিন্তু পাইনি । আপুও কেন যেন ভেঙে পড়েছিল । আচ্ছা, ভাইয়া , আমার নামার সময় হয়ে গেছে । আমি আসি । ” – বলে নেমে গেল খুব চেনা অচেনা মেয়েটি ।
আমার হাতে নীল খামটা ; খুব ভারী লাগছে এখন এটাকে ।


***


“ প্রিয় কাব্য,
অনেক সাহস সঞ্চয় করে তোমায় এই চিঠিটা লিখছি । জানিনা তুমি কখনও এই চিঠিটা হাতে পাবে কিনা । তোমার সেই চিঠিটা আমি আজও লালন করছি । ওদেরকেও বলেছি যাতে আমার মৃত্যুর পর এই চিঠিটাকে আমার সাথেই দিয়ে দেওয়া হয় । জানি নিয়ম নেই তবুও ......... তোমার দেওয়া চিঠিটা পড়ে আমি আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিলাম । ভয় পেয়েছিলাম তোমার হাত ধরলেও তা আমি ধরে রাখতে পারব কিনা । তোমার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন । বলতে পারিনি যে আমিও তোমার প্রেমে পরেছিলাম । তোমায় এরপর অনেক খুঁজেছি । আমার বোন বৃষ্টিকেও পাঠিয়েছিলাম তোমায় খুঁজতে । কিন্তু ও ফিরলে জানতে পারলাম আমি চলে আসার পরপরই তুমিও কোথায় যেন হারিয়ে গেছ । তবুও আমার বিশ্বাস ছিল, একদিন আমি তোমায় আমার এভাবে পালিয়ে আসার ব্যাখ্যা হয়তো দিতে পারব । কিন্তু আল্লাহ আমায় সে সুযোগ দিলেন না । ভার্সিটিতে ভর্তির আগে আমি একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি । তখন জানতে পারি আমার ব্লাড-ক্যান্সার হয়েছে । আমার নিজের কোন ইচ্ছাই ছিল না নতুন করে পড়াশোনা করার । কিন্তু পরিবারের চাপে আমি ভর্তি হই । ভেবেছিলাম হয়তো এটাই ভালো হল । সময়টা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে । ক্যাম্পাসের পরিবেশ আমায় ভুলিয়েই দিয়েছিল যে আমার আয়ু আর অল্প কয়টা দিন । কিন্তু যেদিন তোমার চিঠিটা হাতে পেলাম সেদিন এই নির্মম সত্যটা আবার আমার চোখের সামনে ধরা দিলো । আমি তোমার কাছ থেকে পালিয়ে এলাম । অনেক চেষ্টা করেছি তোমায় ভুলতে । কিন্তু যতই তোমায় ভুলতে চেয়েছি, ততই তুমি আমার আরও কাছে চলে এসেছ । শেষের দিনগুলোতে আমি তোমায় বুভুক্ষের মতো চাইতাম । কিন্তু তুমি তো সেদিনই হারিয়ে গিয়েছিলে , যেদিন আমি নিজেকেই তোমার থেকে দূরে সরিয়েছিলাম । আমার খুব ইচ্ছা করতো তোমার হাত ধরে বাকি পথ পাড়ি দিতে । কিন্তু সে সৌভাগ্য আমাকে বিধাতা দেননি । তাই হয়তো আমার শেষ ইচ্ছেটাও অপূর্ণই থেকে গেল । তোমার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ হয়তো নেই , তবুও আমাকে ক্ষমা করো । আমি তোমায় এতটাই ভালবেসেছিলাম যে তোমায় জানিয়ে যেতে পারলাম না । তবে আমি জেনেছিলাম রিয়েল লাভ কি জিনিস ।

“ LOVE is like WIND,
You can’t see it, but you can feel it . ”

আমায় কখনও মনে পড়লে এই কথাগুলো স্মরণ করো । দেখবে আমি তোমার কাছেই চলে এসেছি । আর তোমার আঁকা সেই বিখ্যাত ছবিটি তোমায় উপহার দিলাম । শেষবারের মতো আবার বলছি আমায় ক্ষমা করো প্রিয় । ”


খামের ভিতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বেরোল । খুলে দেখলাম আমার আঁকা সেই ছবিটি । সাতটি রঙের মাঝে কাজল টানা মায়াবী একজোড়া চোখ । আমি যার মুখাবয়ব এখনও সাজাতে পারিনি ।

_______________________________________________________________________________________________________________________________________
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×