এরকম শপথ আমরা সকলেই কমবেশি প্রতিদিনই করি, দাঁতের উপর দাঁত চেপে। কাল থেকে আমার সবকিছুই হবে অসাধারণ। কিন্তু কাল আর কাইল’ না হয়ে ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ায় আমাদের জন্য। এই শপথটাই আমাদের জীবনে একধরণের সর্বনাশ ডেকে আনে। আসলে সফল ব্যক্তিদের জীবনে আগামীকাল বলে কোন শব্দ নেই কাজ করার জন্য। যখন পরীক্ষা সামনে, তখনই ভাবি কাল থেকে ভালো করে পড়বো। কিন্তু কাল আস্লে আবারো মোবাইলে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইউটিউব, মুভি, স্যাড সং, আর নানারকম নীতিবাক্য ছুড়ে নিজেদের একেবারে মাহাত্মা গান্ধী না হয় সক্রেটিস বানিয়ে ফেলি। আসলে এই কাল’ কাল’ করে আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে যতবার কুড়াল মেরে সর্বনাশ করি আমাদের মারাত্মক শত্রুরাও একলক্ষ ভাগের একভাগ সর্বনাশও করেনা শ্ত্রুতার মধ্যে দিয়ে। আমার ভার্সিটির এক বড়ভাই ছিলেন রকি ভাই, বলতেন ‘পড়লে এমন পড়াশুনা করো যাতে সারাজীবনই ফার্স্ট হও, মাস্তানি করলে গডফাদার হও, রাজনীতি করলে মন্ত্রী হও, ব্যবসা করলে বিল গেট্স হও; কিন্তু কোন খানেই ‘চামচা’ ( নিকৃষ্ট গোলাম ) হয়োনা। যেটা করবে সেটা করার মত কর, এমনভাবে করোনা, যেভাবে ভাঙ্গা হাত ঝুলে থাকে। জীবনে সেরা হও, সেরাদের মধ্যে সেরা হও, নাহলে পৃথিবীটা তোমায় গোলাম বানিয়ে সারা জীবন টেনে-হিচড়ে নিয়ে বেড়াবে। এখন চয়েস তোমার!’’ ভাইটি এখন সম্ভবত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! তাই যারা এইরকম কাজ ফেলে রাখে বা করতে করতে শেষে একদম তাড়াহুড়া করে দায়সারাভাবে করে, তারা কাজটাও করে আবার সেই ভুলভাল বা যত্নহীন কাজের জন্যও তিরস্কারও পেয়ে যায় কড়ায়গণ্ডায়!
যে কাজ এখন না করলেও কিছুই যায় আসেনা, তা এখন করার দরকারটা কী। কী হবে দিনে সব পোস্টেই কমেন্ট না করলে, কী হবে প্রতিঘন্টায় একটা করে স্ট্যাটাস না দিলে, কী হবে ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিলে, কী হবে জীবনে দু একটা মুভি কম দেখলে? কিছু হবেনা, বরং আপনি সারাজীবন নিশ্চিন্তে বসে বসে মুভি দেখারই সুযোগই হারাবেন এসব করলে। আর উল্টোদিকে এসব না করলে কী হবে? হয়তো আপনার জীবদ্দশাতেই হলিউডের কোন বিখ্যাত পরিচালক আপনার জীবনী নিয়ে একটা মুভি বানাতে চাইবে যেটা দেখবে সারা বিশ্ব। পত্রিকার বিখ্যাতব্যক্তিদের পাতায় আপনার ছবি মাঝে মধ্যে জ্বলজ্বল করবে। যদি সে রকম কিছুই প্রত্যাশা করেন তাহলে ‘আগামীকাল করবো’ রোগের চিকিৎসা আজই করেন, মিথ্যে ছলনাময়ী বদ-অভ্যাসগুলো আজই ত্যাগ করুন।
একটু পরে, কাল করে দিব, এমনটা করলে দেখবেন মানুষ আপনাকে দিয়ে কোন কাজও করিয়ে নিতে চাইবেনা। কারণ আপনি কাজের গুরুত্ব দেন না, গুরুত্ব দেন আপনার অজগরবৃত্তির। আমার এই লেখাটাই গত দুদিন ধরে লিখব লিখব করছি অথচ লিখা হয়নি।হঠাৎ আজ এক ছোট ভাইয়ের সামান্য অনুরোধেই প্রায় আধাঘণ্টার মধ্যেই লেখা হয়ে গেল। কোন কাজ শুরু করাটাই নাকি কাজের অর্ধেক, তাহলে শুরু করে দেখেন না! শেষও হয়ে যাবে। আপনার ভালো রেজাল্ট দরকার, এক্ষুণি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠুন, ভাবুন আপনি পড়ালেখা শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, ক্ষণস্থায়ী সুখের মায়াগুলো ত্যাগ করুন, আপাতত ফেসবুক সেলিব্রেটি হওয়ার চিন্তা, থ্রি ইডিয়ট্সের আমির খানের মত না পড়েই ফার্স্ট হওয়ার চিন্তা পায়ের তলায় ইচ্ছেমত পিষে ফেলে পড়তে বসুন, বইয়ের পাতার পড়াগুলোকে শাসন করতে শুরু করুন, দেখবেন আপনি আপনার জেলার মধ্যে এমনকি গোটা দেশের মধ্যেই ফার্স্ট হয়ে গেছেন! তখনকার অনুভূতিটা প্লিজ আপনি আমার সাথে শেয়ার করবেন!
শেষ করছি একটি সত্যি ঘটনা দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড়ভাই বিসিএস ভাইভা দিয়ে এসে বলল, পিএসসি যদি এবার আমাকে চাকুরি না দেয় অর্থাৎ ক্যাডার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো! পরে ভাইটি পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়েছিল। এবার চিন্তা করুণ, কথার সাথে কাজের মিল কত তীব্র। তাই আমি, আমরা সবাই নিজেদের এই ‘আগামীকাল থেকে করবো’ রোগকে বিদায় জানিয়ে বলছি, ডু ইট নাউ!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:২৬