The Many Roles of Women in the French Revolution
এটি "ফরাসি বিপ্লবে নারীদের বিভিন্ন ভূমিকা" হিসেবেও আমার মতে অনুবাদ করা যায়।
ফরাসি বিপ্লব ঘটেছিল ১৭৮৯খৃঃ থেকে আরম্ভ হয়ে ১৭৯৯খৃঃ পর্যন্ত। বিপ্লব শেষান্তে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের আরোহন হয়।
ফরাসি বিপ্লবের মূলনীতি ছিল "Liberté, égalité, fraternité, ou la mort!" অর্থাৎ "স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব অথবা মৃত্যু"। দীর্ঘ ১০(দশ) বছরের এই বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে বিপ্লবের মূলনীতিতে বলিয়ান হয়ে প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
ফরাসি বিপ্লব মহিলাদের রাজনৈতিক নেতা, কর্মী এবং বুদ্ধিজীবী সহ অনেক ভূমিকায় অবতীর্ন হতে দেখেছিল। ইতিহাসের এই বিশেষ পরিবর্তনের ক্ষনে ফ্রান্সের জনপ্রিয় কিছু মহিলা তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্য হারান এবং অন্য মহিলাগন তাদের সামাজিক প্রভাব ও আধিপত্য অর্জনে প্রভাব ফেলার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেন।
মনে করা হয়, ফরাসি বিপ্লব শুরু হয় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য রুটির উচ্চ মূল্য ও এর অভাব নিয়ে; দুটিই হাজার হাজার নারীকে অসন্তুষ্ট করে। এই অসন্তুষ্ট মহিলারাই বিক্ষোপ শুরু করেন এবং দুই দিনেই এই মহিলা আন্দোলন ৬০,০০০ বিক্ষোপকারীদেরকে আন্দোলনে আনতে পেরেছিল। এই বিক্ষোপ পদযাত্রা ফ্রান্সের রাজকীয় শাসনের বিরুদ্ধে জোয়ার ঘুরিয়ে দিয়েছিল, রাজ্য শাষনকে জনগনের দাবী মানতে বাধ্য করেছিল এবং এই আন্দোলন প্রমাণ করেছিল যে রাজার শাষন কোন কঠিন শাষন নয় বরং ভংকুর
১। মেরি অ্যান্টোইনেট: ফ্রান্সের রানী, (১৭৭৪খৃঃ থেকে ১৭৯৩খৃঃ পর্যন্ত)
তিনি ছিলেন প্রভাবশালী অস্ট্রিয়ান সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার কন্যা। ফরাসি ডাউফিনের সাথে ম্যারি অ্যান্টিনেটের বিয়ের পরে ফ্রান্সের সোল(১৬) লুই এর সাথে তার বিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট এর বিয়ে বলে গন্য করা হয়। বিলম্বে সন্তান এবং অতিরিক্ত, বিলাসবহুল ব্যয় এর জন্য তার খ্যাতি ছিল।
ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে তার বিলাসিতা এবং সংস্কারের বিরুদ্ধে তার সমর্থন ১৭৯২খৃঃ সালে ফরাসি রাজতন্ত্রের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। রাজা সোল(১৬) লুই মৃত্যুদন্ড ১৭৯৩খৃষ্টাব্দের জানুয়ারিতে কার্যকর করা হয়েছিল এবং সেই বছরের ১৬ ই অক্টোবর মেরি অ্যান্টোইনেট এর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
২। এলিজাবেথ ভিগি লে ব্রুন:-
সতের শতাব্দিতে ক্যমেরা আবিষ্কার হয়নি। চিত্রশিল্পীরাই রাজা মহারাজাদের জনগনের নিকট ফুঠিয়ে তুলতেন।
এলিজাবেথ ভিগি লে ব্রুন মারি অ্যান্টোয়েনেটের সরকারী চিত্রশিল্পী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। মধ্যবিত্ত জীবনধারা সহ একনিষ্ঠ মা হিসাবে রানীর ভাবমূর্তি বাড়ানোর আশায় তিনি অশান্তি বাড়ার সাথে সাথে রানিকে এবং তার পরিবারকে কম আনুষ্ঠানিক প্রতিকৃতিতে আঁকেন।
অক্টোবর, ১৭৮৯ সালে, জনতা যখন ভার্সাই প্রাসাদে আঘাত হানে, তখন ভিগি লে ব্রুন তার ছোট কন্যা এবং গভার্নেন্স (পরিচারিকা) নিয়ে প্যারিস থেকে পালিয়ে যান এবং ১৮০১ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের বাইরে বসবাস করেন এবং কর্মরত ছিলেন। বাইরে থেকেই তিনি রাজকীয় চিত্রলিপির কাজ করে যেতে থাকেন।
৩। ম্যাডাম ডি স্টেইল (এপৃল, ১৭৬৬ ~ জুলাই ১৪, ১৮১৭খৃঃ)
উনবিংশ শতাব্দীর লেখকদের কাছে ম্যাডাম ডি স্টেইল অন্যতম বিখ্যাত "ইতিহাসের মহিলা" ছিলেন। তিনি অনেককেই উৎসাহিত করেছিলেন, যদিও তিনি আজ এতটা পরিচিত নন। তিনি তার সেলুন ( বুদ্ধিজীবিদের জমায়েত বা মিলনক্ষেত্র ) এর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ফরাসী বিপ্লবের সময় সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছিলেন, যদিও প্রথমে তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ফ্রান্সে ফিরে আসার পরে, নেপোলিয়নের সমালোচনা করায় নিজেকে বিরোধে জড়িয়ে ফেলেন।
৪। শার্লট কর্ডে :- (জুলাই ২৭, ১৭৬৮ - জুলাই ১৭, ১৭৯৩খৃঃ.)
শার্লট কর্ডে বিপ্লবকে সমর্থন করতেন এবং তখনকার মধ্যপন্থী রিপাবলিকান দলকেও সমর্থন করতেন। গিরনডিস্ট দলকে সমর্থন করেছিলেন যে একবার এই বিরোধ চলছিল। যখন আরও উগ্রবাদী জ্যাকবিনস গিরনবাদীদের দিকে ফিরলেন, কর্ডে জিন পল মারাতকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যিনি গিরনডিষ্টবাদীদের মৃত্যুর ডাক দিয়েছিলেন। তিনি ১৩ জুলাই, ১৭৯৩ সালে "মারাতকে" তার বাথটাবে তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল এবং দ্রুত বিচার ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার চার দিন পরে তাকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
৫। অলিম্প দে গৌজেস
১৭৮৯ সালের আগস্টে, ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদ "মানব ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র" জারি করে, যা ফরাসি বিপ্লবের মূল্যবোধ সংগতি পূর্ণ ছিল এবং পরবর্তিতে এই ঘোষনাপত্র সংবিধানের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
( যুক্তরার্ষ্ট্রের থমাস জেফারসনও নথির কিছু খসড়া নিয়ে কাজ করেছিলেন; তিনি তখন সদ্য স্বাধীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে প্যারিসে ছিলেন।)
ঘোষণায় প্রাকৃতিক (এবং ধর্মনিরপেক্ষ) আইনের ভিত্তিতে নাগরিকদের অধিকার এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে এতে কেবল পুরুষদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অলিম্প দে গৌজেস, যিনি বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের একজন নাট্যকার ছিলেন, তিনি নারীকে বাদ দেওয়ার প্রতিকার চেয়েছিলেন। ১৭৯১ সালে, তিনি "মহিলা এবং নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র" (ফরাসী ভাষায়, "সিটোয়েন") লিখেছিলেন এবং প্রকাশ করেছিলেন। দলিলটি বিধানসভার নথির পরে মডেল করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে, পুরুষরা নারীদের থেকে পৃথক হলেও, মহিলারাও "যুক্তি এবং নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন" বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তিনি দৃঢ় ভাবে বলেছেন যে "মহিলাদেরও বাকস্বাধীনতার অধিকার রয়েছে"।
অলিম্প দে গৌজেস গিরনডিস্টদের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং নভেম্বর ১৭৯৩ সালে সালে জ্যাকবিনসরা অলিম্প দে গৌজেসকে গিলোটিনে(উপর হতে পতিত ৪০ কেজি ওজনের ছুরি জাতিয় অস্ত্রের মাধ্যমে শিরোচ্ছেদ করনের স্ট্যান্ড বা মঞ্চ) র মাধ্যমে শিকার হন।
৬। মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট:-
মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট হয়ত একজন ব্রিটিশ লেখক এবং নাগরিক ছিলেন তবে ফরাসী বিপ্লব তাঁর কাজকে প্রভাবিত করেছিল। তিনি ফরাসী বিপ্লব সম্পর্কে বৌদ্ধিক বৃত্তে আলোচনা শোনার পরে "A Vindication of the Rights of Woman" (1792)(নারীর অধিকারের একটি প্রতিবন্ধকতা) এবং "A Vindication of the Rights of Man" (1790)(পুরুষ অধিকারের একটি প্রতিবন্ধকতা) লিখেছিলেন। তিনি ১৭৯২ সালে ফ্রান্স সফর করেছিলেন এবং "ফরাসি বিপ্লবের উৎস এবং অগ্রগতি; একটি ঐতিহাসিক এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি" প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। এই লেখায়, তিনি বিপ্লবের মূল ধারণাগুলির জন্য তার সমর্থনটিকে তার ভয়াবহতার সাথে পরে সংঘটিত রক্তপাতের সাথে স্বমন্বয় করার চেষ্টা করেছিলেন।
গিরনডিন, ব্রিসটিন নামেও পরিচিত, তৎকালিন ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের একটি রাজনীতি দলবদ্ধকরণের জন্য একটি নামকরন করা হয়েছিল, এদের মধ্যে কয়েকজন মূলত গিরনডিন বিভাগ থেকে এসেছিলেন। এরা বিপ্লবের সময় ১৭৯১ সালের অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বর ১৭৯২ সাল পর্যন্ত বিধানসভায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। আইনজীবি, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরা, গিরোনডিন ব্যবসায়ী, সাধারন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং অর্থনীতিবিদ এই গিরনডিনদেরকে অনুসরণ করেছিলেন। তবে ঐতিহাসিকরা "সত্যই গিরনডিনরা একটি সংগঠিত দল গঠন" করেছিলেন কিনা তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং ১৭৯৩ সালের এর পূর্বে "গিরোনডিনস" শব্দটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছিল।
জ্যাকোবিন একটি বিপ্লবী রাজনৈতিক আন্দোলনের দল যা ফরাসী বিপ্লবের (১৭৮৯ ~ ১৭৯৯) সময়ে সর্বাধিক বিখ্যাত রাজনৈতিক ক্লাব হিসেবে সম্প্রসারিত হয়েছিল। গিরনডিনদের সাথে কিছু বিষয়ে একমত পোষন করলেও অধিকাংশ সময়ে মতবিরোধে ছিলেন। জ্যাকোবিনদের রাজনৈতিক প্রশাসন একনায়কতন্ত্র সন্ত্রাসের রাজত্ব কার্যকর করার জন্য পরিচিত ছিল, তদের লক্ষ ছিল রাজতন্ত্রবাদী, দক্ষিণপন্থী আন্দোলনকারী, হবার্টবাদী এবং বিশ্বাসঘাতকদের এবং তাদের এই একনায়কতনত্রে বহু শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
সূত্রঃ প্রাথমিক
উইকিপিডিয়া,
অন্যান্য
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:১৮