১৯৭১ : মুজাফফরাবাদ
এরকম আরও পালিয়ে যাবার খবর আসতে শুরু করে। অধিকাংশই আমার ধারনা তরুন অফিসার ও জোয়ান। জোয়ানরা অবশ্য দেশে ছুটিতে গিয়ে আর ফেরেন নি, জেনেছি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, অনেকে। এ ধরনের ঘটনা যত ঘটছিল, আমরা যারা রয়ে গিয়েছিলাম, তাদের উপর সামরিক গোয়েন্দা নজরদারি স্বাভাবিক কারনেই বেড়ে গিয়েছিল। এই একই কারনে অনেক পরিবার সম্পন্ন সামরিক চাকুরে বাংলাদেশে তাদের ছুটি কাটাতে যান নি।
মুজাফফরাবাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বাবার চাকুরী ছিল। এই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সরকারী বেসরকারী সব ধরনের রোগী ও যোদ্ধাদের চিকিৎসা চলতো। ভারতীয় যোদ্ধাহত সৈন্যও এই হাসপাতালে চিকিৎসা হতে দেখেছি। বিশেষ করে আমি ও আমার ছোট বোনতো শোনার পর দৌড়ে দেখতে গেছিলাম, শত্রু দেখতে কেমন হয় এটা দেখার জন্য। দেখার পর আমার উৎসাহ একেবারে নিবে গেছিল, মনে গভীরভাবে উচ্চারিত হচ্ছিল, "আরে ও তো আরেকটা মানুষ"।
১৯৭১ এর জুন মাস থেকে নয়া দিল্লি রেডিও যতটুকু মনে পড়ে, বিকাল চারটা থেকে এক ঘন্টা ব্যপী বাংলা অনুষ্ঠান চালু করেছিল। ঐ রেডিও আর বিবিসি থেকেই মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর পাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। বিবিসি বাংলার সিরাজুর রহমান তখন অতি পরিচিত কন্ঠ। ওটা সকালে ১৫ মিনিটের জন্য আর বিকেলে আধা ঘন্টার জন্য হোত। তবে সকলে বিবিসির তথ্যকেই প্রদান্য দিয়ে থাকত।
ঐ দুই রেডিও প্রচার শোনার জন্য আমাদেরকে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হোত। "লো" ভলিউম ও ট্রান্সিস্টর রেডিও কাছে গিয়ে কান পেতে, রুমের দরজা বন্ধ করে শুনতাম প্রায় সকলেই। এক পরিবার তো গোয়েন্দাদের/প্রতিবেশীকে খুশি করার জন্য বিবিসি আর দিল্লি রেডিও বদ্ধ ঘরে শোনার পর, রেডিও পাকিস্তান "হাই" ভলিউমে চালিয়ে দরজা - জানালা খুলে রাখত ( "নে তোদের রেডিও শোন")।
ডিসেম্বরের দশ তারিখে সম্ভবত আমার এ্যবোটাবাদ পাবলিক স্কুল শীত কালীন ছুটি হলে মুজাফফরাবাদ আসি। আসার পর দেখি বাবা নেই, জানালো হোল ফ্রন্ট লাইনে ফিল্ড এ্যম্বুলেন্সের সংগে বাবাকে যুদ্ধের ডিউটিতে পাঠিয়েছে। আমি জানতাম বাবার এই সিনিয়র পজিশনে থেকে যুদ্ধে রনক্ষেত্রে যাবার কথা নয়, ওটা জুনিয়ররা করে থাকেন। বুঝলাম বাঙ্গালী হিসেবে বাবাকে শাস্তি দেয়ার জন্যই তাকে এই শীতে রনক্ষেত্রে পাঠিয়েছে। সিংগেল জুনিয়র বাঙ্গালী ডাক্তারকে পাঠানো যাবে না, কারন সে যদি ভারতে পালিয়ে যায়। সবাই দোয়া করছে কুশল সংবাদের জন্য। নিজের দেশে দেশের জন্য কাজ করতে পাঠানোর সময়ও আমাদেরকে শত্রু ভাবা হচ্ছে।
১৯৭১ এর শেষ দিকে আমরা ও যাত্রা পথে পাকিস্তানীদের অশোভন উক্তি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখার লক্ষে নিজেরা ও অপ্রয়োজনীয় ভ্রমন প্রায় বাদই দিয়ে ফেলেছিলাম।
নভেম্বরের দিকে নয়া দিল্লি রেডিও "শোন একটি মজিবরের কন্ঠ থেকে লক্ষ মজিবরের কন্ঠ........." এই গানটি প্রচার করত। এবং গানটি শুনতে অসম্ভব ভাল লাগত। রেডিও তরঙ্গ জ্যমি প্রযুক্তি তখন নিশ্চয়ই উন্নত ছিল না। থাকলে ভারতের আকাশ বানী শুনতে হোত না।
১৪ই ডিসেম্বর বাবাকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে বেশ অসুস্থ অবস্থায় ফেরত আনা হোল। চারিদিকে তুষারপাত অবস্থা ও তীব্র ঠান্ডা পরিবেশে তাঁবুতে থাকতে থাকতে বাবার বয়সে ধরা শরীর আর ধকল নিতে পারে নি।
১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকেই বিবিসির খবরে আমরা জানতে পারি। বাংলাদেশে পাকিস্তান বাহিনী আত্মস্বমর্পণ করেছে। অবশ্য তেশরা ডিসেম্বর থেকেই নয়া দিল্লি রেডিও থেকে পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মস্বমর্পণ করতে ইষ্টার্ন কমান্ড থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল।
ছবিঃ ইন্টারনেট মুজাফফরাবাদ
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন