সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কতই না চেষ্টা! ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধপত্র আরো কত কী! অথচ রোজকার জীবনে ছোট ছোট কিছু বিষয় মেনে চললে নিজেকে রাখা যায় অনেকটাই সুস্থ। কিছু সুঅভ্যাসকে জীবনের সঙ্গী করে নিলে রোগ-বালাইকে রাখা যায় অনেক দূরে। বিশেষ করে শীতে দিনে রোগ-বালাইয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই শীতকালে নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে মেনে চলা উচিত কিছু বিষয়। তাহলে যেমন রোগমুক্ত থাকা সম্ভব, তেমনি হওয়া যাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
বিছানা ছাড়ুন ধীরে :
শীতের রাত গরমের চেয়ে একটু বেশিই দীর্ঘ হয়। এই দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার ফলে মাংসপেশির কর্মক্ষমতা অনেকাংশেই মন্থর হয়ে যায়। খেয়াল করে দেখেছেন নিশ্চয়ই, শীতের রাতে আপনি একটু কমই নড়াচড়া করে থাকেন? দীর্ঘসময় একভাবে থাকার ফলে শরীরের পেশিগুলোর কর্মক্ষম হতে একটু সময় লাগে। তাই ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে ধড়মড়িয়ে লাফ দিয়ে উঠবেন না। এতে মাংসপেশিতে টান পড়া বা খিঁচ ধরার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিছানাতেই ধীরে ধীরে আপনার হাত-পা নাড়ান এবং বিছানা ছাড়ুন ধীরগতিতে।
চোখ পরিষ্কার করুন :
ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে অনেকেরই শীতকালে চোখে পিচুটির পরিমাণ বেড়ে যায়। এটা থেকে চোখে ইনফেকশনসহ হতে পারে নানা রকম সমস্যা। তাই শীতকালে চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। দিনে অন্তত দু থেকে তিনবার চোখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। চোখে পানির ঝাপটা দিন ১০-১৫ বার। এতে চোখের পিচুটি ও অন্যান্য ময়লা দূর হয়ে যাবে।
দাঁত পরিষ্কার করুন :
ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে শীতকালে দাঁত ও মুখের সমস্যা দেখা দেয় বেশি। যেমন দাঁতব্যথা, দাঁত শিরশির করা, মুখের দুর্গন্ধ। বিশেষ করে জ্বর এলে বা সর্দির কারণে নিঃশ্বাসেও দেখা দেয় দুর্গন্ধ। রাতে খাবার পর ও সকালে খাবার পর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং করুন। এছাড়া জিভও পরিষ্কার করুন নিয়মিত। এতে দাঁত ও মুখ থাকবে সুস্থ।
ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন :
শীতকালের ঠান্ডাজনিত অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করতে ভিটামিন-এর জুড়ি নেই! তাই শীতকালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। শীতকালীন সকল শাকসবজি ও ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখুন নিয়মিত। ভিটামিন সি ঠান্ডাজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের অন্যান্য সংক্রমণ দূর করে। হৃদরোগ ও স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা হ্রাস করে। ভিটামিন সি একটি উন্নত মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই এটি যেমন ত্বক সুন্দর রাখে, তেমনি ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
খাবারে সরিষার তেল ব্যবহার করুন :
সাধারণত আমরা ভর্তা বা সালাদে সরিষার তেল খেয়েই থাকি। সরিষার তেল শরীরে উষ্ণতা যোগায়। তাই শীতকালে রোজকার খাবারে ব্যবহার করুন সরিষার তেল। সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সরিষার তেল হৃদরোগ, ঠান্ডাজনিত সমস্যা, সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সহায়তা করে। সরিষার তেল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে খাবারে নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত পানি পান করুন :
শীতকালে পানি পিপাসা একটু কম পায় বলে অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় পানি কম পান করেন। অথচ শীতকালেই বেশি করে পানি পান করা উচিত। কারণ শীতকালে সহজেই শরীর চড়া হয়ে যায় এবং দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে এ সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় ক্রনিকরূপে। তাই বেশি করে পানি পান করুন।
ব্যায়াম করুন :
ব্যায়াম বারো মাসেই সুস্থ থাকার অন্যতম উপায়। তবে শীতকালে এর বেশি প্রয়োজন। শীতকালে বিভিন্ন পুরোনো অসুখ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এসব ব্যথাজাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পাবে। এছাড়া শরীরের মাংসপেশি নিয়মিত নড়াচড়ায় কর্মক্ষমতা বজায় থাকবে।
ত্বকের যত্ন নিন :
শীতকাল শুকনো মৌসুম বলে ত্বকের একটু বেশিই যত্ন নেয়া উচিত এ সময়। এ সময় ত্বক আর্দ্রতা হারায়। ফলে ত্বকে হতে পারে খোসপাঁচড়া ও অ্যালার্জির মতো চর্মরোগ। উঠে যেতে পারে হাতের চামড়া, ফেটে যেতে পারে পা। তাই শীতকালে নিন ত্বকের বিশেষ যত্ন। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন। সাবানের ক্ষার ত্বককে করে তোলে খসখসে আর বাড়িয়ে তোলে ত্বকের যেকোনো সমস্যা। তাই ব্যবহার করতে পারেন ময়দা ও বেসনের মতো ঘরোয়া উপাদান। এগুলোতে ত্বকের কোনো ক্ষতি হয় না। ত্বক মোলায়েম রাখতে ও ত্বকের ফেটে যাওয়া রোধ করতে ত্বক ময়েশ্চারাইজিং করুন নিয়মিত। ব্যবহার করুন ক্রিম, লোশন, অলিভ অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি।
চুলের যত্ন নিন :
শীতকালে চুলের সমস্যাও বেড়ে যায়। চুলের রুক্ষতা, চুলপড়া, খুশকি, মাথার ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি যেন শীতকালের নিত্যসঙ্গী। তাই এ সময় চুলেরও চাই বিশেষ যত্ন। সারা বছর যেমনই কাটান না কেন, শীতকালে চুলে অবশ্যই তেল লাগান। নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল গরম করে চুলে লাগান সপ্তাহে অন্তত ২ বার। চুল পরিষ্কার করতে ব্যবহার করুন ভালো মানের শ্যাম্পু। এতে চুলপড়া, খুশকি কমে যাবে এবং চুল হবে মোলায়েম। নিয়মিত চুল আঁচড়ান। এতে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং চুল হবে মজবুত।
ঘুমানোর আগে গরম পানি পান করুন :
ঘুমানোর আগে পান করুন এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানি। এতে যেমন শরীরের মেটাবলিজমের হার বাড়বে, তেমনি দূর থাকবে ঠান্ডাজনিত সমস্যাও। সর্দি, কাশি, বুকে কফ জমা, সাইনোসাইটিসের ব্যথা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করবে মাত্র এক গ্লাস সাধারণ উষ্ণ গরম পানি! তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মনে করে গরম পানি পান করুন।