“দোস্ত খেলা দেখসস্ কালকে? সাকিব তো পুরাই অস্থির খেলসে,৫ উইকেট নিল”- ক্লাসে ঢোকার পরপরই এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল। খুব আফসোস এর সাথে বললাম, “না”। সাকিব আল হাসান- বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার, একজন বাংলাদেশী হিসেবে ক্রিকেট জগতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্রকে নিয়ে তাই দেশের মানুষের আবেগ, ভালোবাসা সবই একটু বেশি নিঃসন্দেহে। কেনই বা থাকবে না! যেই ফরম্যাটেই খেলেছেন, সেখানেই নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন। দেশের আর দশ জন মানুষের মত সাকিবকে নিয়ে আমার উৎসাহও তাই একটু বেশি। কোন ম্যাচে সাকিব ভালো খেলল, কোন ম্যাচে ব্যাটিংটা একটু খারাপ হল, কোন ম্যাচে বোলিং বা ফিল্ডিং আগের চেয়ে ভালো হল, এই নিয়ে আলোচনা তাই আমার মত সবার বন্ধু মহলে চলতেই থাকে।
সাকিব কি করল? কোথায় খেলতে গেল? কত রান করল? সেই আলোচনা করতে থাকলে সারাদিন লেগে যাবে। আজকে লিখতে বসা অবশ্য একটু অন্য ব্যাপার নিয়ে। সাকিব ক্রেজ এর একটু নমুনা অবশ্য আমার ঘরেই বিদ্যমান। ছোট ভাই তো ক্রিকেট বলতে পাগল, আর আমার ছোট্ট ভাগ্নি তো টিভি অথবা রাস্তায় সাকিবের বিজ্ঞাপন দেখে হা করে থাকে। হ্যাঁ, যে কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম, সাকিবের বিজ্ঞাপন নিয়ে... আজকাল মোটামোটি অনেক পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে সাকিব আল হাসানের সরব উপস্থিতি। ভালো ও করছে আমাদের অল- রাউন্ডার, সে বিষয়ে বলার মত অবশ্য আমি কেউ নই। তারপরও একজন ক্রিকেট প্রেমী হিসেবে প্রিয় খেলোয়াড়ের ভালো খারাপ নিয়ে কথা বলার অধিকার থেকেই বলছি কথাগুলো। অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের মত আমাদের দেশের খেলোয়াড়দেরও আজকাল দেখে যায় বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিইং এ। কিন্তু তাদের মধ্যে সাকিবের চাহিদাটা একটু বেশিই মনে হয়। আর দেশ সেরা ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে নামি দামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সাকিব প্রথম পছন্দ। কিন্তু আমার সমস্যাটা একটু ভিন্ন। আজকাল দেখা যায়, এমনও কিছু পণ্য আছে, যেগুলোর বিজ্ঞাপনে দেখা যায় সাকিবকে, অথচ আমার মতে সাকিবের মত একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের সেখানে থাকার কথা না। আমার মতের সাথে অনেকেই দ্বিমত করবেন। Standard Chartered Bank এর মত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে যখন সাকিবকে দেখি তখন মনে হয় তিনি তার ইমেজের সাথে মিল রেখেই বিজ্ঞাপন করছেন,কিন্তু যখন দেখি অখ্যাত এক মোটরসাইকেল এর বিজ্ঞাপনে শণ শণ করে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন তখন ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, নিজের খেলা দিয়ে সাকিব নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সেখানে আমরা কখনই চাইব না সেখান থেকে তিনি সরে আসুক। অবশ্য এসব বিজ্ঞাপনে টাকা-পয়সার একটা ব্যাপার জড়িত। অনেক নাম না জানা ব্র্যান্ডও বেশি টাকার বিনিময়ে হলেও চায় সাকিবকে দিয়ে তাদের পণ্যের একটা বিজ্ঞাপন করিয়ে নিতে। এখানেই মূলত সমস্যা। টাকার ব্যাপার না থাকলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি সাকিবের মাপের খেলোয়াড় বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতেন। টাকা খুবই প্রয়োজনীয়, কিন্তু নিজের আত্মসম্মান বোধটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের প্রিয় খেলোয়াড়ের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, টাকার জন্য নাম না জানা বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহন না করে, নিজের অবস্থান চিন্তা করে কাজ গুলো করবেন। তাহলে হয়ত আমাদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা আর মর্যাদা আরও কয়েকগুন বেড়ে যাবে। একজন সাধারন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে এটাই আপনার কাছে চাওয়া।