somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে তো নারী

২১ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ নারী ছিল, যার বয়স প্রায় সত্তরের মত হবে। সে যখন ঘর থেকে বের হতো ও ঘরে প্রবেশ করত, তখন তাকে দেখে আমার খুব দয়া হতো। কারণ, তার সঙ্গে তার পরিবার বা বংশের কেউ ছিল না, যে তাকে সাহায্য করবে। সে নিজেই নিজের প্রয়োজনের সামগ্রী, যেমন খানাপিনা ও কাপড় চোপড় কেনাকাটা করত। তার ঘরের অবস্থা ছিল ভুতরে পরিবেশ, কখনো কেউ তার দরজা নক করতে আসতো না। ইসলাম যেহেতু প্রতিবেশীর কতক অধিকার আমাদের উপর ওয়াজিব করে দিয়েছে, তাই আমি তার সামান্য খেদমত আঞ্জাম দিতে, তার বাড়িতে গেলাম। সে আমাকে দেখে বিস্ময়ে অবাক! অথচ আমি তার বড় কোন প্রয়োজন পুরো করেনি। কারণ, সে এমন এক সমাজে বাস করে, যেখানে ভাল কাজ বলতে কিছুই নেই। সে সমাজ মহব্বত, পরস্পর কল্যাণ কামনা ও প্রতিবেশীর হক বলতে কিছু জানে না। বেশীর চেয়ে বেশী সকাল-সন্ধ্যার অভিভাদন।

সে দ্বিতীয় দিন আমার বাচ্চাদের জন্য কিছু মিষ্টিদ্রব্য ও শুভেচ্ছা স্বরূপ একটি কার্ড নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হল। কার্ডে আগের দিনে আমাদের পেশ করা উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতার বাণী লিখা ছিল। আমি তাকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করলাম। সে সময়ে সময়ে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসা করত। সে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে জানতে পারল যে, আমাদের দেশে পুরুষরাই নারীদের জিম্মাদার। পুরুষরা নারীদের জন্য কাজ করে, পোশাক-আশাক কেনাকাটাসহ আরো অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় নারীদের ব্যাপারে মুসলমানদের সম্মান বোধ সম্পর্কেও জানতে পারে সে। বিশেষ করে, নারী যখন বৃদ্ধ হয়। তার সন্তান ও নাতী-পুতিরা তার খেদমত ও আরামের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে যে তার পিতা-মাতার খেদমত পরিহার করে, সে পরিত্যাক্ত ও নিন্দিত বলে বিবেচিত হয়।

বৃদ্ধ এ মহিলা মুসলিম পরিবারের দৃশ্য অবলোকন করতেছিল। কিভাবে পিতা তার সন্তানের সঙ্গে ব্যবহার করে, সন্তানরা কিভাবে পিতাকে ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরে। নারী কিভাবে তার স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়। এ অসহায় নারী তাদের সমাজের অবস্থা ও আমাদের সমাজের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করতেছিল। সে তার সন্তানদের স্মরণ করত, কিন্তু কে কোথায় আছে কিছুই সে জানতো না। কেউ তাকে দেখতে আসতো না। হয়তো এক সময় সে মারা যাবে, তাকে দাফন করা হবে, কিন্তু তারা এ বৃদ্ধা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। তাদের কাছে এ বিষয়টির কোনও গুরুত্ব নেই। আর বাড়িটি হচ্ছে তার সারা জীবনের উপার্জন ও কষ্টের ফসল। সে আমার স্ত্রীর কাছে পাশ্চাত্যের নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে ও হাটবাজারে কেনাকাটার দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দিত। এ বলেই সে তার কথা শেষ করত : তোমাদের দেশে নারীরা তো রানী। আমার যদি এ বার্ধক্য না হতো, তবে তোমার স্বামীর মত একজন স্বামী গ্রহণ করতাম ও তোমাদের মত জীবন-যাপন করতাম।

পাশ্চাত্যের দেশসমূহে শিক্ষা কিংবা কর্ম উপলক্ষ্যে বসবাসকারী আমাদের দেশের লোকেরা অহরহ এ দৃশ্য দেখছে। তবুও আমাদের দেশের এক শ্রেণী তাদের অনুকরণ ও আনুগত্য করতে লজ্জাবোধ করছে না। আমাদের দেশের অনেক পত্র-পত্রিকা পাশ্চাত্যের নারীদের পোশাক, চালচলন ও তাদের কর্ম ক্ষেত্রের প্রশংসা করে যাচ্ছে। সে সমাজের নারীদের স্বাধীনতা আমাদের দেশে আমদানী করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।
হে আল্লাহ, তুমি সকল প্রশংসার মালিক। তুমিই আমাদেরকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿17﴾ (سورة الحجرات : 17)
তারা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহন করে তোমাকে ধন্য করেছে। তুমি বল : তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। (হুজুরাত : ১৭)
সূত্রঃ- (আমার দেখা বৃটেন, লেখকঃ ড. আব্দুল্লাহ খাতের রহ.)
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×