somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কটু বাক্য শুনেও তা পরিহার করা

০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত ইবন উমর(রা) হতে বর্ণিত, রাসুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নমনীয় প্রকৃতির লোক ছিলেন। তাঁর বাহির ও ভিতর পরিষ্কার ছিল এবং তাঁর ক্রোধ ও সন্তুষ্টি মুখ মণ্ডল মোবারকেই প্রকাশ পেত। বেশী রাগের সময় তিনি দাড়ি মোবারকে বার বার হাত বুলাতেন। (ইবন হাব্বান)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো সামনাসামনি তার অপছন্দনীয় কথা বলতেন না। (ইবন হাব্বান)



হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, একবার হলুদ রঙের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসলে, উহাতে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েও তাকে কিছু বলেননি, সে চলে গেলে বললেন, তাকে বলে দিও সে যেন হলুদ রঙের পোষাক ছেড়ে দেয়। (আবু দাউদ, শামায়েলে তিরমিযি)

হযরত আনাস(রা) হতে বর্ণিত, এক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে মসজিদে (নববীতে) পেশাব করতে শুরু করে। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তাকে মারার জন্য উদ্যত হলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাকে কিছু বলো না; পরে তাকে ডেকে এনে বুঝালেন। দেখ! মসজিদ পেশাব পায়খানা করার জায়গা নয়। অপর এক বর্ণনায় এরুপ এসেছে যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামগণকে বললেন যে, তাকে ভয় দেখাইও না। বরং কাছে ডেকে আনো। (বুখারি ও মুসলিম)



হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, একদা এক বেদুঈন(গ্রাম্য ব্যক্তি) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কিছু চাইল। তিনি তা দান করে বললেন, আমি তোমার সাথে উত্তম ব্যবহার করিনি ? সে অস্বীকার করে বলল, উত্তম তো দূরের কথা মধ্যম ধরণের ব্যবহার ও করেননি। তার একথা শুনে সাহাবায়ে কেরামগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে মারার জন্যে প্রস্তুত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের ইশারায় নিষেধ করে গৃহে চলে যান এবং পরে সেই গ্রাম্য ব্যক্তিকে ডেকে এনে আরো বেশী দান করে বললেন, কেমন এখনত উত্তম ব্যবহার করেছি ? সে বলল, জি হ্যাঁ, আপনার পরিজনকে এ দানের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যা ইতিপূর্বে বলেছ তা তোমার মনে আছে, সে জন্য আমার সাহাবাদের অন্তর ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। কাজেই এখন তুমি আমার সম্মুখে যা বললে এ কথাগুলিই আমার সাহাবাদের সামনে বলে তাদের অন্তরের ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি দূর কর, অবশ্য যদি এতে তোমার বিরক্তিবোধ না হয়। সে উহা বলতে অস্বীকার করল।
পরের দিন সন্ধ্যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইরে তাশরীফ এনে সাহাবায়ে কেরামদের (রা) সম্বোধন করে বললেন, এ গ্রাম্য লোকটি গতকাল যা বলেছে তা হয়তো তোমাদের জানা আছে। পরে আমি তাকে আরো দান করলে সে বলেছ যে, আমার উত্তম ব্যবহারে সে সন্তুষ্ট হয়েছে। এ বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, কি ভাই , ঠিক না ? সে বলল, জি হাঁ। আপনার পরিবারবর্গকে ঐ দানের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বিনিময় দান করুন।



অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, আমার আর এ গ্রাম্য লোকটির উদাহরণ এমন, যেমন কোন ব্যক্তির উট ছুটে পালাচ্ছে, আর লোকেরা তাকে ধরার জন্য পিছু ধাওয়া করেছে, এতে ঐ উটটি আরো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আরো দ্রুত বেগে পালাতে শুরু করেছে। তখন সেই উটের মালিক চিৎকার করে বলল, তোমরা আমার উট ধরার এরুপ ব্যর্থ চেষ্টা আর করো না। আমি তাকে ধরার এবং বশীভূত করার ভালো কৌশল জানি। অতঃপর উটওয়ালা কিছু খাদ্য ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে উটটিকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলে উটটি তার কাছে এসে বসে পড়ল। সে তখন তার হাওদা বেঁধে আরোহণ করল। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেদিন এ ব্যক্তি যে কথাগুলো বলেছে, যদি তখন তোমাদের ঐ অবস্থার উপর ছেড়ে দিতাম তোমরা হয়ত তাকে মেরেই ফেলতে, আর এ অবস্থায় সে দোযখবাসী হয়ে যেত। (বাযযার, ইবন হাব্বান)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সময় যদি কোন মুসলমানকে ভর্ৎসনা করতেন , তবে সাথে সাথে তার জন্যে দোয়াও করে দিতেন,যেন তার গোনাহের বদলাও তার জন্যে রহমত এর কারণ হয়। (বুখারি ও মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, একদা যুদ্ধ চলাকালীন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র খেদমতে আরজ করা হল যে, এখন শত্রুদের উপর অভিশাপ করাই আপনার জন্যে উপযোগী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, আমাকে রহমতস্বরুপ প্রেরণ করা হয়েছে, অভিশাপের জন্যে নয়। (মুসলিম)

মূল : আখলাকে মোহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ)


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×