সকল প্রশংসা সমস্ত জগতের অধিপতি একক-অদ্বিতীয় স্রষ্টার জন্য। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী ও রাসূলের ইমাম আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি।
সম্মানিত ভাই ও বোন (আল্লাহ আপনাদেরকে করুণা করুন) জেনে রাখুন, আমাদের প্রত্যেকের জন্য চারটি বিষয় জানা অপবিহার্য।
প্রথমতঃ- জ্ঞান অর্জন করা; আপনাকে কে সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি করেছে, আপনার করণিয় কি?
দ্বিতীয়তঃ- আমল করা; জ্ঞান অর্জন করার পর কর্ম না করলে সে পথ হারা পথিকের মত।
তৃতীয়তঃ- দাওয়াত বা আহব্বান; আপনি যতটুকু সত্য জানেন সে অনুযায়ি অন্যদেরকে সত্যের দিকে আহব্বান করা।
চতুর্থতঃ- ধৈর্য ধারণ করা; ধৈর্য ধারণ করতে হবে জ্ঞান শিক্ষার পথে। ধৈর্য ধারণ করতে হবে তদানুযায়ী কর্ম করার ক্ষেত্রে। আর ধৈর্য ধারণ করতে হবে সত্যের পথে মানুষকে আহব্বান করার ক্ষেত্রে।
মানুষের জ্ঞান অসম্পূর্ণ এবং তার বিবেক অপরিপক্ক। এর বিপরীত স্রষ্টার জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ এবং তাঁর বিবেক সবরকম দোষমুক্ত। তাই এক মানুষের বিবেক-বুদ্ধির সাথে অন্য মানুষের বিবেক বুদ্ধির সাথে সংঘর্ষ হতে বাধ্য। এমতাবস্তাই যার জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ এবং যার বিবেক সবদিক দিয়ে পরিপক্ক কেবল তারই নির্দেশ মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে। আর তা মানুষকে সবরকম তর্ক-বিতর্ক ও হানাহানি থেকে বাঁচাতে পারে, যদি সমস্ত মানুষই তার নির্দেশটা খুশীমনে মেনে নিতে পারে। অজ্ঞতার অন্ধকারকে দুরীকরণের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করার জন্য এবং শান্তির জীবনের অসীম সূধা অনুসন্ধানকারীদের পিপাসাকে নিবারণ করার জন্য আমার সামান্য এই প্রয়াস।
আল্লাহ না ভগবান, স্রষ্টা না ব্রহ্মা এ প্রশ্নের উত্তরে আমি আপনাদের কাছে পেশ করব সর্বশক্তিমান স্রষ্টার বানীঃ-তিনি বলেন, আমার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, সেই নামের মাধ্যমে তোমরা আমাকে ডাক। (আল-কুরআন, সূরাঃ আল-আরাফ, আয়াত-১৮০) যেমন; আল্লাহ, আর-রহমান, খালেক ইত্যাদি।
ঈশ্বর একজনই। জ্ঞানীরা তাকে ডেকে থাকেন অনেক নামে। (ঋগবেদ ২নং গ্রন্থ, ১নং অনুচ্ছেদ) যেমন; ঈশ্বর, ভগবান, ব্রহ্মা ইত্যাদি। আমার কোন আপত্তি নেয় যদি কেউ বলে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা হচ্ছেনঃ- আল্লাহ, রহমান, খালিক। অথবা, যদি বলে ঈশ্বর, ভাগবান, ব্রহ্মা।
এবার গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছেঃ- যদি আমি কিছু বলি বা অন্য কেউ কিছু বলে যা ধর্মগ্রন্থগুলোর সাথে মিলে যায় তাহলে আমরা অবশ্যই মেনে নেব। যদি কোনো উদাহরন দিই যা ধর্মগ্রন্থগুলোর সাথে মিলে যায় তাহলে আমরা তা মেনে নেব। যদি আমি এমন কিছু বলি বা উদাহরন দেয় যা ধর্মগ্রন্থগুলোর সাথে মিলে না তাহলে তা বাদ দিয়ে দিব। আপনি যদি কোনো সাধারন হিন্দুকে প্রশ্ন করেন যে কতজন দেবতাকে বিশ্বাস করে, কেউ বলবে ৩ জন, কেউ বলবে ১০০ জন, কেউ বলবে ৩৩কোটি বা ৩৩০ মিলিয়ন।
কিন্তু যদি কোন জ্ঞানী হিন্দুকে জিজ্ঞেস করেন, যার হিন্দু ধর্মগ্রন্থে সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। তিনি জবাব দিবেন যে হিন্দুধর্ম অনুযায়ি আমাদের বিশ্বাস ও পূজা করা উচিৎ এক ঈশ্বরকে। সাধারণ হিন্দুরা বিশ্বাস করে- গাছ, সূর্য, চন্দ্র, মানুষ এমন কি সাপও স্রষ্টা। আর আমরা মুসলিমরা বলি সবকিছু স্রষ্টার। আসুন এবার সত্য খুজে বের করি।
১, হে রাসুল! আপনি বলে দিন তিনিই আল্লাহ, যিনি এক ও অদ্বিতীয়। (আল-কুরআন, সূরা ইখলাস, ১)
ঠিক একই কথা আছে, স্রষ্টা মাত্র একজনই, দ্বিতীয় কেউ নেই। (ছান্দগ্য উপনিষদঃ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ ১ ও ২)
২, আল্লাহ কারো মূখাপেক্ষি নন, সবাই তাহার মূখাপেক্ষি।(আল-কুরআন, সূরা ইখলাস, ২)
৩,তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কারো থেকে জন্ম নেন নি।(আল-কুরআন, সূরা ইখলাস, ৩)
ঠিক একই কথা আছে, ঈশ্বরের কোনো বাবা মা নেই, তার কোনো প্রভু নেই, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোনো বাবা নেই, তার কোন মা নেই তার চেয়ে বড় আর কেউ নেই। (শ্বেতাপত্র উপনিষদ, অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ ৯)
৪, তার সমতুল্য বা মত কেউ নেই। (আল-কুরআন, সূরা ইখলাস, ৪)
ঠিক একই কথা আছে, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কোনো প্রতিমূর্তি নেই, তার কোনো রূপক নেই, তার মত কেউ নেই।(যযুর্বেদ, অধ্যায়-৩২, অনুচ্ছেদ-৩)
কিন্তু যদি কেউ বলে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ৪টি মাথা আছে, ৪টি হাত আছে। প্রত্যেক মাথায় একটি করে মুকুট আছে, এক হাতে পদ্ম, আরেক হাতে শাখ। তাহলে আমরা মুসলিমরা বলব স্রষ্টার প্রতিমূর্তি বানানো হচ্ছে এবং এতে আপত্তি জানাব। কারণ, আমার জানা মতে হিন্দুধর্মের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র হলো বেদ। আপনি বেদের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কোনো প্রতিমূর্তি নেই, তার কোনো রূপক নেই, তার মত কেউ নেই। (যযুর্বেদ, অধ্যায়-৩২, অনুচ্ছেদ-৩)
তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা প্রাকৃতিক বস্তুর পূজা করে। যেমনঃ- আগুন, পানি, বাতাস ইত্যাদি। (যযুর্বেদ, অধ্যায়-৪০, অনুচ্ছেদ-৯)
তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে যারা সাম্বুতির পূজা করে। অর্থাৎ মানুষের তৈরি বস্তু, যেমনঃ চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। (যযুর্বেদ, অধ্যায়-৪০, অনুচ্ছেদ-৯)
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে-
১, আল্লাহ(ঈশ্বর) একজনই। তাকে ছাড়া আর কারো উপাষনা করা নিষেধ।
২, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, কারো থেকে জন্ম নেন নি। তিনিই শুরু এবং শেষ।
৩, তিনি কারো মূখাপেক্ষি নন। অর্থাৎ তার খাবারের প্রয়োজন হয় না, বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।
৪, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কোনো প্রতিমূর্তি নেই, তার কোনো রূপক নেই, তার মত কেউ নেই।
নামের দিক দিয়ে আল্লাহ নামটি হচ্ছেন সবার উপরে। আমরা মুসলিম হিসেবে সর্বশক্তিমান স্রষ্টাকে আল্লাহ বলে ডাকি কেন? কারণ, God থেকে god's ভগবান থেকে ভগবতি হয়। আমি প্রথমেই আলোচনা করেছি যে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা তার কোনো বাবা নেই, মা নেই, তার চেয়ে বড় কেউ নেই। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন তার কোনো লিং নেই। তাছাড়া, আল্লাহ শব্দটি আছে ঋগবেদ গ্রন্থ-৩, পরিচ্ছেদ ৩০, অনুচ্ছেদ ১০। আরো একটি কিতাবও আছে যার নাম আল্লো উপনিষদ। অতএব আল্লাহ বলাটা সর্বোউৎকৃষ্ট। সর্বশক্তিমান স্রষ্টা আমাদেরকে সত্য বুঝার তাউফিক দান করুন।
=============================================পর্যালোচনা ও প্রশ্ন হিন্দুরা বলেঃ-
১. আমার ভগবান কোন দুরে লুকিয়ে নেই সে সর্বত্র আছে প্রতিটি বস্তুতে আছে শুধু তাকে অনুভব করতে হবে।
তাদের ধারনা সর্বশক্তিমান স্রষ্টা সর্বস্থানে আছে।
প্রশ্নঃ- তাহলে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ি কি সর্বশক্তিমান স্রষ্টা দূর্গন্ধময়, নিকৃষ্টতম, নাপাক স্থান টয়লেটে আছে, বেশ্যাখানায় আছে?
২. তারা বলে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রতিটি বস্তুতে আছে। গাছের ভিতর, মাছের ভিতর, মানুষের ভিতরেও আছে।
প্রশ্নঃ- তাহলে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ি সর্বশক্তিমান স্রষ্টা তাদের স্ত্রীদের ভিতরেও আছে যার সাথে তারা সহবাসে মিলিত হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা কার সাথে সহবাস করে?
৩. তারা বলে যে সারা বিশ্ব সৃষ্টি করতে পারে শুধু এক নির্দেশে সে কি কোন রুপ ধারণ করতে পারেনা। হ্যা আমি বার বার বলছি যে রুপে বা যে ভাবেই পুজা করি না কেন আমি তো সেই ভগবান কেই পুজা করছি তাকেই ভক্তি করছি এতে সমস্যা টা কোথায়?
প্রশ্নঃ- তাহলে কি তারা পবিত্র বেদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে না?
৪.তারা বলে ধর্ম সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে তুমার কাজ ভগবানকে ডাকা তুমি কিভাবে ডাকবা সেটা তোমার ব্যাপার।
প্রশ্নঃ- তাহলে কি তারা নিজেদের ইচ্ছামত নিয়ম নীতি বানিয়ে নিল না?
৫. তারা বলে, ভগবান বলছেন আমি আমার ভক্তের দাস, ভক্ত যেমন আমাকে ডাকে আমি ও তেমন ভক্তকে ডাকি, তার ডাকে পাগল হয়ে তার কাছে ছুটে যাই।
প্রশ্নঃ- তাহলে কি বান্দা আর দাস মিশে একাকার হয়ে গেল না? সর্বশক্তিমান স্রষ্টার ধরন ও সবাভ মানুষের মত হল না? (যিনি কিনা পাগল হয়।)
=============================================
সর্বশক্তিমান স্রষ্টার বানীঃ- আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব,(আল-কুরআন) যা আমি তোমার (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে। (আল কুরআন, সূরা ইব্রাহীম, আয়াত-১) এখানে আলোচ্য আয়াতে সৃষ্টিকর্তা কেবল মুসলিম কিংবা আরব জাতির কথা বলেন নি বরং সমগ্র মানবজাতির কথা উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেনঃ নিশ্চয় অধিকাংশ মানুষই আমার (আল্লাহর) নিদর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ (গাফেল)।(সূরাঃ ইউনুস, আয়াত-৯২)
আসুন আমরা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন তওবা (ক্ষমাপ্রার্থণা) করি এবং ফিরে আসি জান্নাতের পথে। একটি মাত্র পথ তাও সর্বশক্তিমান স্রষ্টা বলে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ- আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য জীবন ব্যবস্থা (ধর্ম) অন্বেষণ করে তা কখনই গ্রহন করা হবে না অতএব পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (আল-কুরআন, সূরা-ইমরান, আয়াত-৮৫)
ইনশাল্লাহ আগামীতে আসছে (সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গাম্বর কে?)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১২:১৪