বইঃ বাঙালি মুসলমানের মন
১। আওয়ামীলীগের যারা বুদ্ধিজীবী তাদের অনেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানসমাজে গ্রহণযোগ্য ভাষায় কথা বলতে জানেন না। তাদের কথা অনেক সময় মনে হয় ভারতের তথাকথিত সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের ক্ষীণ প্রতিধ্বনি মাত্র। তাঁরা দেশের ভেতরে সেক্যুলারিজম আবিস্কার করতে অক্ষম। বাইরে থেকে সেক্যুলারিজম আমদানি করায় অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে। এখানেই আমাদের জাতি এবং সমাজ জীবনের যাবতীয় বিপত্তির উৎস।
২। হিন্দু বর্ণাশ্রম প্রথাই এ দেশের সাম্প্রদায়িকতার আদিমতম উৎস। কেউ কেউ অবশ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকেই সাম্প্রদায়িকতার জনয়িতা মনে করেন। তাঁরা ভারতীয় ইতিহাসের অতীতকে শুধু ব্রিটিশ শাসনের দু’শ বছরের মধ্যে সীমিত রাখেন বলেই এই ভুলটা করে থাকেন।
৩। বাঙালি মুসলমানসমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে ভয় করে। তাঁর মনের আদিম সংস্কারগুলো কাটেনি। সে কিছুই গ্রহণ করে না মনের গভীরে। ভাসাভাসাভাবে, অনেককিছুই জানার ভান করে, আসলে তাঁর জানাশোনার পরিধি খুবই সংকুচিত।
৪। যে জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাঁকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়।
৫। বাঙালি মুসলমানের মন যে এখনও আদিম অবস্থায়, তা বাঙালি হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়। সুদীর্ঘকালব্যাপী একটি ঐতিহাসিক পদ্ধতির দরুন তাঁর মনের উপর একটি গাঢ় মায়াজাল বিস্তৃত রয়েছে, সজ্ঞানে তাঁর বাইরে সে আসতে পারে না। তাই এক পা যদি এগিয়ে আসে, তিন পা পিছিয়ে যেতে হয়। মানসিক ভীতিই এই সমাজকে চালিয়ে থাকে।
৬। প্রতিটি রাষ্ট্র নিজস্ব প্রয়োজনে ইতিহাসকে বিকৃত করে।
৭। রাষ্ট্র যা শিক্ষা দেয় তাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিথ্যার মিশাল থাকেই; এই মিথ্যা মারাত্মক, মানুষের মনোবৃত্তিকে বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা এর অপরিসীম।
৮। বস্তুত একজন বিশ্বাসী মানুষ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে যে ধরনের নির্মল আনন্দ অনুভব করেন, একজন ধর্মবিশ্বাসহীন মানুষ উন্নত সাহিত্য পাঠেও একই আনন্দ পেয়ে থাকেন।
৯। সভ্যতা কোন দেশ জাতি বা সম্প্রদায় বিশেষের সম্পত্তি নয়— অথচ প্রতিটি তথাকথিত সুসভ্য জাতির মধ্যেই এই সভ্য অভিমান প্রচন্ডভাবে লক্ষ্য করা যায়।
১০। আগেকার নবী পয়গম্বরেরা মানবজীবনের চরম পরম লক্ষ্য বলতে বুঝতেন পরমসত্তার জ্ঞান। এই কালের মানব জীবনের পরম লক্ষ্য কী? সম্ভবত মানুষের সমস্ত সম্ভাবনা বিকশিত করে তোলাই যদি বলা হয়, আশা করি অন্যায় হবে না।
সম্পাদনাঃ ফাতিন আরেফিন
প্রথম কিস্তির লিঙ্ক
দ্বিতীয় কিস্তির লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৫