ক্লাসের আস্তিক নাস্তিক সংশয়বাদি নির্বিশেষে সেমেস্টার নামাজি।ধর্ম বাবদে অবিচল শ্রদ্ধা থাকা সত্বেও ক্লাসের অধিকাংশেরই,সারা মাস জুম্মা ছাড়া খোঁজ নাই, পরিক্ষার আগে আসলেই ধর্মকর্ম বেড়ে যেত।
ইমরান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম,আচারনিষ্ঠ ধার্মিক।সময় পেলে তাবলীগে যায়।
সেমেস্টার ফাইনালের আগে আমরা পনেরো দিন বন্ধ পাই(এটাকে pl অর্থাৎ preparation leave বলি.)মূলতঃ এটাই নামাজ না পড়ে যে গর্হিত অপরাধ করছি সে ধরনের অনুশোচনাতে আক্রান্ত হবার মোক্ষম সময়।
সেবার সেমেস্টার টা অনেক কঠিন ছিল।ধর্মানুরাগ একটু আগেই শুরু হয়েছে।তবে আশার কথা এই পি এল এর অব্যবহিত আগে ,সরকারি বন্ধ আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে, তিন দিনের মত টানা ছুটি পড়ে গেল।তার মানে,এক্সাম প্রিপারেশনের একটা সুযোগ বাড়লো।
কোন এক সন্ধ্যায়, আমাদের আম্বরখানার ওয়েভসের বাসায় আড্ডায় আমরা বেশ মশগুল। আলোচনাতে ইমরান থাকায় আড্ডা ছিলো ধর্মকেন্দ্রিক। নামাজ না পড়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা চলছিল।আড্ডার সফলতা এই, আসছে ৩দিনের বন্ধে ,মিল্কি তিন দিনের তাবলীগে যাবে।আগামিকাল বাদ আসর ইমরান এসে মিল্কি কে নিয়ে যাবে।
আগেভাগে দুটা তথ্য দিয়ে নেই, পড়ে কাহিনী বুঝতে হলে এ তথ্যের দরকার হবে-পয়লা তথ্যঃমিল্কি ,জাবির এরা থাকে জিন্দাবাজার।ইমরান থাকে শাহপরান হলে।আর আমি থাকি আম্বরখানার ওয়েভসে।
দুসরা তথ্যঃ তখন মোবাইলের এত চল ছিলোনা।হলে একটা টিএন টি ফোন।কারো ফোন এলে ওমর সানি ভাই ,৩০৪ ইমরান ভাই , আপনার ফোন বলে ডেকে দিতো।
জিন্দাবাজারএর বাসায় পরদিন সকালে মিল্কিকে চিন্তিত বদনে পায়চারী করতে দেখে জাবির জানতে চাইলো কি হয়েছে।
প্রত্তুত্তরে মিল্কি জানালো, গতকাল ইমোশনাল হয়ে তাবলিগে যেতে রাজী হয়েছে, কিন্তু তার এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।
জাবির বললো, “এতে চিন্তার কি আছে , তুই পালা।পালিয়ে দুপুরের পর তুই আম্বরখানেতে ওয়েভসে(অর্থাৎ আমাদের বাসায়) )চলে যা,
আসরের পর ইমরান আসলে বলে দিবো জরূরী কাজে মিল্কি সিলেটের বাইরে গেছে,”
কথা মত মিল্কি আমাদের ওয়েভস এর বাসায় হাজির। আমি জানতে চাইলাম, কি রে আজকে না তোর তাবলীগে যাবার কথা?
পাপবিদ্ধ আকর্ণ হাসি দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না, মিল্কি পালিয়েছে।
অপরদিকে, জাবির অত সহজে মিল্কি কে ফাঁসানোর সুযোগ ছাড়বে কেন? ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে ,নিজ খর্চায় শাহপরান হলে ফোন করে ইমরান কে বলে দিয়েছে, জরুরি কাজে মিল্কি আম্বরখানা ওয়েভসে (অর্থাৎ আমাদের বাসায়) থাকবে। ইমরান যেন সে বাসা থেকে মিল্কি কে নিয়ে যায়। আর মিল্কি ব্যাগ গুছিয়ে জিন্দা বাজার এর বাসায় রেখেছে(কচু, জাবি স্বহস্তে সে ব্যাগ গুছিয়েছে)। আম্বরখানা থেকে যেন যাবার পথে ব্যাগটা নিয়ে যায়।
ফোন টা শেষ করেই মিল্কির ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো জাবির।
পরিশেষঃআসরের পর ইমরান ওয়েভস এ হাজির। মিল্কি তখন পরম নিশ্চিতে আমার বিছানায় ভাতঘুমে বেএক্তেয়ার। ইমরানের কন্ঠ শুনে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। যাবার সময় জিন্দাবাজারের বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে দুই বন্ধু তাবলিগে চলে গেল
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১০