মায়েরা ক্রমাগত ভবিশ্যত বানী করতে থাকেন আর কাকতালে যদিস্যাত একটা ফলে যায় তখুনি বলে উঠবে, “বলিনি আগে? এরকম করিস না, এবার হলো ?দেখেছিস? নে এবার সামলা!”
ক্রমাগত এটা করিস না ,এদিক যাবিনা,ও করবি না, শুনতে শুনতে ঝালাপালা।২২ বছর আগেই অবশ্য আমি এর দাওয়াই বের করেছি।দাওয়াইটাকে মোক্ষম বলা যায় না, কারণ এ দাওয়াই এ নগন্যস্য নগন্য পাপ জড়িত। মা কিছু যন্ত্রনা দিতে চাইলে পালটা যন্ত্রনা দেয়া।
ছেলে বেলায় একবার মা দুয়া পরে ফু দিচ্ছেন।
“মা, কি করেন?”
“দুয়া পড়ে ফু দিলাম”.
আমার জন্যে একটু বেশি করে করবেন। একটু এদিক সেদিক হলে সমস্যা আছে। দেখেন না বেশির ভাগ ভাতের হোটেল ,ট্রাক বাসের নাম , মায়ের দুয়া পরিবহন, মায়ের দুয়া ভাতের হোটেল।
এখন চাইলেও মার সাথে সত্য মুখ দিয়ে আসে না। আমার এ উচ্চাঙ্গ ঘরাণার পাপের খবর শুনে যারা আমাকে অভিশাপ দেবার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন,তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি- আমি কেন মিথ্যে বলি ,কেন জ্বালাই , কিভাবে যন্ত্রনা করি এ নিয়ে ভল্যুম ভল্যুম কিতাব লেখা যাবে এবং আমি স্থির নিশ্চিত আপনার জীবনের সাথে অল্প বিস্তর মিলে যাবে। এ স্থলে কিছু ঘটনা নিবেদন করিঃ
পিকনিকে যাব শেরপুরের গজনীতে। কি বুঝে যেন মা রাজী হলেন। পিকনিকের ডিসিশন হওয়া থেকে রওনা দেবার আগের দিন পর্যন্ত ঘ্যান ঘ্যান, পানি তে নামিস না পাহাড়ে উঠিস না,আসে পাশে কি আছে? পরিচিত আছে কি না,বাসে রোদের পাশে বসিস না,পানির বোতল নিস, বড় হলে আবার যাবি, এখন কোন মতে ঘুরে আয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
সকাল বেলা বের হব ।বাসার পেছনের মাঠ টা তে বাস দাঁড়ানো।মা ভোর থেকেই বাস টাকে দেখছে। কিছুক্ষন বাদে নিজেই বোরকা পরে রেডি।
“মা কোথাও যাবেন নাকি?”
“আমিও যাব তোর সাথে”
ঊষ্মা সহকারে জানতে চাইলাম,” কেন?”
প্রত্যত্তরে বল্লো, তোর কোন অসুবিধে আছে?
“কারো মায়েরাই যাচ্ছে না , আপনাকে নিবে না”
কি করে এ যাত্রা পিকনিকে গিয়েছি সে ফিরিস্তি বারান্তরে সুযোগ পেলে জানাবো আশা করি।তবে পিকনিক অবধি পুরোটা সময়ি দুয়াতে ছিলেন তিনি।
সিলেটে ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে যাব,বহু কষ্টে একলা ছাড়তে রাজী হয়েছে। বার বার সেই একই কথা পরীক্ষা শেষে কোথাও ঘুরাঘুরি করিস না, চান্স পেলে না হয় ঘুরিস।
চান্স পেলাম। এরপর ক্লাসের সবাই মিলে পিকনিকে জাফলং যাব। টাকা লাগবে বিধায় বাসায় জানাতে বাধ্য হলাম
সাথে সাথে পুরোনো ইত্তেফাকএর বরাত দিয়ে জানালো, জাফলঙ গোছল করতে গিয়ে মেধাবী শিক্ষর্থির মৃত্যু।অতএব যাওয়া বন্ধ।
যদ্যপি স্কুলে ফি বছর,পরীক্ষায় আমার লেখা পরে আমাকে পাশ করাতে,শিক্ষকের নিজস্ব মেধা অপচয় করে বিশেষ বিবেচনা করানোর মত মেধা আমার ছিলো, তদুপরি প্রচলিত সংজ্ঞায় আমাকে মেধাবীদের দলে ফেলা চলে না। মাকে বললাম,” মা আমি মেধাবি নই। অতএব এসকল মৃত্য ঝুঁকি কম। ফের বলে এরকম অলুক্ষুনে কথা বলতে নেই , তৌবা কর।“
অবশ্য আমার মত অকম্যার ধারি অলসএর জন্য এহেন ধারা উদ্বিগ্নতা এক অর্থে ঠিকই আছে।
এত গেলো যন্ত্রনার কথা ,এবার আসি দাওয়াই এর প্রসঙ্গেঃ
আমার নানু বাড়ি,দাদু বাড়ি কাছাকাছি।সামার ভ্যাকেশনের বন্ধ, বাড়ি যাব নানুকে দেখতে।মা দেখলাম এক গাদা মনের মাধুরী মিশিয়ে , শহরে পাওয়া যায় এসকল দ্রবাদি দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করছেন।ব্যাগ মানে একদম বাজারে যাবার জন্যে চটের।
ভার্সিটি তে পড়ি , এরকম ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় যাচ্ছি , কেউ দেখলে প্রেস্টিজ পাংচার।তখন আবার এরকম মেকি লোকাচার ভীশন ভাবে মানতাম।এরকম ব্যাগ নিয়ে হাটতে লজ্জা লাগতো
আবার না নিলে মা কষ্ট পাবেন, আমি তাই নিতাম। এরপর ট্রেনে পাশের সিটে কারো সাথে আলাপ হলে খুশ গল্পে মেতে, তাকে সে ব্যাগ গিফট করে বলতাম, বাসায় নিয়ে যান বাসায় সবাই খুশী হবে।
আমাকে কেবল ব্যাগপ্যাকে বাড়িতে। নানু একোটূ অবাক। এরকম ত তার মেয়ে কখনো করেনি। একেবারে খালি হাতে!
ফেরার পথে নানু ও ঐ একই কর্ম, বাড়ির ফ্রেশ চাল , চালের গূড়ী, মোদ্দা কথা শহরে যা পাওয়া যায়না তাই হাজির।নানুর দেয়া ব্যাগ দিয়ে আস্ত রেজিমেন্ট পোশা যাবে এক মাস।
এখানেও তদ্বৎ। পথিমধ্যে আরেকজন কে দিয়ে আসা।মাও অবাক । মাট খালি হাতে পাঠাবার লোক না!
একাজ টা কয়েক বার করার পর ধরা খেলাম।
তখন মোবাইল ছিলনা। তাই এ দূস্কর্ম করতে গায়ে বাধেনি।
শীতকালে নানু , আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন। এক কথা দু কথায়, দুজনই জানলেন, ততক্ষনে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেছে।
আমি সিলেটে ভার্সিটিতে। ততদিনে চম্পট। এমনিতে ফি হপ্তা না হয় পনের দিনে বাসায় আসা হয়।নানু এসেছে শুনে তো আসা আবশ্যকতা বেড়ে যাবার কথা।তা না হয়ে , আমি সেমেস্টার পরিক্ষার কথা বলে হাওয়া।পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার দেখা যাবে।
এত গেল স্টুডেন্ট লাইফের কথা।
চাকুরি পাবার পর মা কে জানালাম, কাজ পেয়েছি বেতন ৩৫০০০।সে সময় একজন যুগ্মসচিবের সমান বেতন ।
আমার মগজ দিয়ে যে একটা তেলাপোকার এক বেলা আহারও হবেনা এটা আমার মা বিলক্ষন জানতেন।চিড়িয়াখানায় অনেক সময় খাটাশের জন্য বরাদ্ধ খাচায় না কুলোলে , বাঘের খালি থাকলে সে খাচায় খাটাশেরও আশ্রয় মেলে।এহেন মগজশুন্য ছেলের এত বেতন শুনে অবাক হলেও দুয়া করতে ভুললেন না।
মাস শেষে মাকে পাঁচ হাজার দিলাম। মা অবাক হয়ে জানতে চাইলো , বাকী টাকা কি করেছিস?
আমি বললাম বাকী টাকা?
মা বললো,তোর বেতন না ৩৫০০০?
আমি বললাম
হ্যা, ঠিকই তো আছে , এক মাসে না তো! সাত মাসে পঁয়ত্রিশ হাজার।
মা রা আসলেই অন্য জাতি। এত জ্বালাই এরপরও রাতে ঘুমুলে গায়ের কাথাটা উঠিয়ে দেয়।
আমার ভাগ্নে দুটা আমার বোনকে জ্বালাতন করলে বিরক্ত হয় পরক্ষনেই তার এক রাশ আতংক নিয়ে নাকি মনে পরে ,
নরানং মাতুলক্রম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০৬