somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা হু

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।১।
রাতে,নদির পার গুলো তুলনামূলক ভাবে উষ্ণ থাকে,তাই নদীর পারের ফুটপাত গুলোতে ঘুমানোর আগে, শরীরে ভালকরে পত্রিকা দিয়ে মুড়িয়ে এর পর কাপড় পরে ঘুমালে লন্ডনের শীতও কাবু করতে পারেনা।এ কায়দা গুলো শিখিয়েছে ইস্ট লন্ডনের এক ট্র্যাম্প।
আতাউর লন্ডনে এসেছে প্রায় খালি হাতে-একটা সুয়েটার আর ক্যাপ।এরি মধ্যে সে একটা পোল্যান্ডি মাফলার যোগাড় করে ফেলেছে ইস্ট লন্ডনের এক স্কটিশ চার্চ এর বেঞ্চ থেকে। চার্চে কে যেন ভুল করে ফেলে গিয়েছিল। রাতে ধার্মিক ভাব ফুটিয়ে ধর্মীয় সঙ্গীত শুনে, চার্চের স্যুপ দিয়ে ডিনার সেরে নেয়।খালি পকেটে লন্ডনে কিভাবে থাকা যায় সে এরি মধ্যে রপ্ত করে ফেলেছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে, গা থেকে পত্রিকা সরাতে যেয়ে বিজ্ঞাপন টা নজরে আসে।
দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল আতাউরের।১৮ সেপ্টেম্বর,সাউথ লন্ডনে, ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফান্ড রেইজিং কনসার্ট -দ্যা হু,রড স্টুয়ার্ট আর কে কে যেন আসবে। কনসার্ট চলবে সকাল এগারোটা থেকে রাত সাড়ে ন’টা অবধি। গেট খুলবে সকাল ন’টায়।
।২।
ফল সেমিস্টার শুরু সেপ্টেম্বরে। এসময়ে কোন কোর্স নেয়না আতাউর। এ সময়টা সে সাধারণত প্যারিসে আগত টুরিস্ট দের পোর্টেট এঁকে টাকা রুজি করে।
লন্ডনে কিছুই চেনেনা- এবারই প্রথম এসেছে। লন্ডনে আসার বুদ্ধ্বিটা দিয়েছিল তার থেকে দুবছর সিনিয়র কলিকাতার অমিত। সেও বিয়ক্সের স্টুডন্ট।প্যারিসে পেইন্টিং এ পড়তে এসেছে।অমিত দার কথা মতে প্যারিস তামাম ইয়ুরোপের রাজধানি হলেও লন্ডনে নাকি হোটেলে কাজ করে প্যারিসে পোর্টেট আঁকা থেকে বেশি পয়সা কামানো যায়। এ রকম অবস্থায় ,এ মুহূর্তে কনসার্টে সোয়া পৌন্ড খরচা তার কাছে বিলাসিতা বলা চলে
।৩।
দেশ ছেড়েছে ৬৮ তে-ছবি আঁকার নেশায় বিয়ক্সে ভর্তি হয়েছে।প্যারিসে আসার পর কারো সাথে যোগাযোগ রাখা হয়ে উঠেনি।এমনি তে অর্ধাহারে অনাহারে থাকায় সে অভ্যস্ত।ছবি আকার সরঞ্জাম কিনে পার্ট টাইম কাজ করে প্যারিসে টেকা এক প্রকার অসম্ভব।
এবছরে তার একটু বেশি টাকা দরকার, বেশ কিছু ক্যানভাস রঙ আর ফ্রেম কেনা লাগবে। ডিসেম্বরে সে একটা এক্সিবিশন করবে।দেশ স্বাধীন হবে,, স্বাধীন হতে টাকা লাগে।তাই শীতের প্রারম্ভে লন্ডনে আসা।
।৪।

শরৎ শেষ হয়ে শীত নামছে। এসময় কনসার্ট করার কোন মানে হয় আয়োজকদের নিরবুদ্ধ্বিতায় বেশ হতাশ হলো সে। তবুও সে “গুড বাই সামার” কনসার্টে যাবে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্বেও সেদিন আতাউরের মতো আরো ৩৫০০০ লোক গিয়েছিলো।১.২৫ পৌন্ড প্রতি টিকেট।টিকেট থেকে অর্জিত টাকা ব্যয় হবে ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্ধস্হ আর সামরিক আগ্রাসনে আক্রান্ত নতুন দেশের সাধারণের কল্যাণে। সে যাবেই যাবে।সেদিনের কনসার্ট কেবল বাংলাদেশের জন্য।
এর আগে নাকি ২০ ফুটি উচু ষ্টেজ নাকি জিম মরিসনের কনসার্টেও হয়নি। এত ভাল সাউন্ড সিস্টেম নাকি এ প্রথম ব্যবহৃত হয়েছে। কথা গুলো শারলট।কনসার্টে তার সাথে পরিচয়।
বাঙালি শুনে শারলট অনেক কথাই জানতে চেয়েছিলো।শুন্য পকেটে বিল দিবো দিবো ভাব করেছিল আতাউর, শারলট সারাদিন একবারো বিল দিতে দেয়নি।বিয়ক্সে পেইন্টিংস এ পরে শুনে পারলে তখুনি বাড়ি নিয়ে যায়।বিদায় বেলায় ২১ ডিসেম্বরে আতাউরের এক্সিবিশনের আমন্ত্রন দিতে ভুলেনি।
। ২।
ল্যু ভরে এক্সিবিশন। আর মাত্র ৫দিন বাকি। শারলট একটু আগেই চলে এসেছে।আতাউরের ফ্ল্যাটের দরজা খোলাই ছিলো। এসে দেখে ইজি চেয়ারে বাংলা “দ” এর মতো এক কাত হয়ে, মুখ হা করে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আতাউর, হাতে একটা ব্রুশিয়র।মাথার চুল গুলো গুছিয়ে দেবার লোভটা সামলে নিয়ে,হাত থেকে আলতো ভাবে ব্রুশিয়রটা আলাদা করে পড়তে থাকে।পাশে রেডিও তে বিবিসি বাচালের মতো এক তরফা কথা বলেই যাচ্ছে- পাকিস্তানিরা সারেন্ডার করেছে।
ঘুমন্ত আতাউরকে আর ডাকেনি সে, নিজেই কিচেনে কফি বানিয়ে,প্রদর্শনীর জন্যে প্রস্তুত ছবি গুলো দেখতে থাকে।কিছু ছবির ফাইনাল টাচবাকি।কিছু ড্রয়িং এর উপর এখন ও রঙ চড়ানো হয়নি।কিছু ছবির রঙ কাঁচা রয়েছে
শারলটের মনে হলো আতাউরের ছড়ানো ছিটানো রুম কাম স্টুডিও টা ঠিক যেনো, নতুন বাংলাদেশের মতো- ছড়ানো ছিটানো,কিছু কিছু যায়গায় রঙ এখনো কাঁচা ,কিন্তু কি আশ্চর্য রকমের গাঢ় রং!
(শেষ লাইন এর থিম টা আবু হেনা মোস্তফা কামালের “ছবি” নামের কবিতা থেকে নেয়া)


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×