জরাথ্রুস্ত্র বলেন,পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই আলো, আধারির দ্বন্দ্ব।আলোর প্রতীক আহুর মাজদা ঈশ্বর নিয়ন্ত্রণ করেন- সব ভালোর প্রতীক। আর আহির মন যেটা চালায় স্বয়ং শয়তান,অন্ধকার থেকে জন্ম -সকল পাপের জন্ম সেখানেই।
ট্রেনে উঠেই এমন এক দোটানার মধ্যে পড়লো মনসুর। আজকে সফরে রোজা রাখবে, কি রাখবে না।চাটগা থেকে টাঙ্গাইল দীর্ঘ পথ।বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে এর পর ফের বাসে করে টাঙ্গাইল। এমনিতে ধর্মশাস্ত্রে ,সফরে রোজা রাখতে জবরদস্তি নেই।তাছাড়া অনিশ্চিত পথে, কিনে ইফতারি খাবার হ্যাপা তো আছেই।
শেষ কবে রোজা ভেঙ্গেছে তা তার মনে পরছে না।এমন লোকের জন্যে রোজা ভাঙ্গার কথা মাথায় আনাও পাপ।সবাই বলে তার মনের জোর অনেক, বন্ধুরা তাকে মনসুর না বলে “মন অসুর” বলে ডাকতো।ভ্রমণ মনসুর খুব একটা কাবু করতে পারেনা,তার উপর গত জন্মদিনে ঊর্মির দেয়া কাফকার “দ্যা ট্রায়াল” বইটা তো আছেই। কোনমতে বইটায় একবার ডুব দিতে পারলেই হয়, সময় তর তর করে চলে যাবে। অতএব রোজা ভাঙ্গার প্রশ্নই আসেনা। অতএব ,আহুর মাজদা পরাজিত। এ ভেবে কাফকায় ডুব দিলো।
“ঐ নাস্তা লন”,ক্যান্টিন বয়ের ডাকে মুখ তুলে দেখলো ,বয়ের হাসিমাখা মুখ,সাদা উর্দি পরা বুকের ডান পাশ বরাবর নীল সুতোয় শেলাই করে লেখা, ”হাবীব ক্যাটারিং সার্ভিস” ।চোখে চোখ পরতেই বলল, “স্যার নাস্তা করবেন? ভাল কাটলেট আছে।“ এ ব্যাটা স্বয়ং আহুর মাজদার খাস পেয়ারা এজেন্ট না হয়ে যায়না! কিভাবে বুঝলো কাটলেটের কথা বললে মনসুরের আহীরমন হেরে যেতে পারে! তবু মনে মনে ভাবল,রমজানে শয়তান বন্দি থাকে। অতএব এ ব্যাটা শয়তান নয়। সফরে রোজা ভাঙ্গা যায়।
অভিশপ্ত কাটলেটের সাথে মনসুরের সম্পর্ক,সুগার কোটেট তেঁতো বড়ির মতো।সখ্যতার আড়ালে শত্রুতা।ঊর্মির সাথে প্রথম রেলে পরিচয় ,তখন দুজনে কাটলেট খেয়েছিলো এবং এটা ছিল দুজনেরই জীবনের প্রথম কাটলেট।,সুগারের অংশ টুকু বলতে এতটুকুই।বলা বাহুল্য, উপন্যাসে পড়া স্বপ্নের খাবার “কাটলেট” খাবার পর দুজনেই কিভাবে ট্রেনের জানালা খুলে লাফ দেয়া থেকে নিজেদের স্বংবরণ করেছিল বারান্তরে সু্যোগ পেলে অন্যত্র শোনাব।
তবুও মনসুর ট্রেনে ঊঠলে প্রত্যেক বারেই কাটলেট খাবার মতো ভুল টুকু করে।ঊর্মিও তদ্বৎ।মনসুর বলতে চায়নি,তারপর ওর গলা হয়ে কে যেন বলে বসলো, “কাটলেট নিয়ে আসো”।
কাটলেটে প্রথম কামড় বসানোর পর মনে হলো জীবনে মস্ত ভুলগুলির তালিকা আরেকটু লম্বা হল।সবচেয়ে বড় সর্বনাশ- রোজা টা ভেঙ্গে গেল, এখন আর ফেরার উপায় নেই।তারপর আরও বড় ভুল করে বসলো,পয়সার কথা ভেবে কাটলেট টা শেষ করার সিদ্বান্ত নিয়ে।
গ্রেভিটেশনের কারনে তাবৎ পদার্থকে পৃথিবী টেনে রাখে। এর ঠিক উল্টো- লেভিটেশন ।লেভিটেশন দিয়ে গ্রেভিটেশন জয় করা যায়- বিজ্ঞানিদের আরাধ্য এটা আবিস্কার করা।এটা আবিস্কার হলে উড়ে ঊড়ে একযায়গা থেকে অন্য যায়গায় যাওয়া যাবে। ধারণা করা হয় মিশরিরা লেভিটেশন আবিস্কার করতে পেরেছিল। অনেকে মনে করেন লেভিটেশনের কল্যাণে অতো বড় বড় পাথরের খন্ড গুলো উপড়ে উঠিয়ে পিড়ামিড বানাতে পেড়েছিল!এতদিন লেভিটেশন সম্পর্কে পড়েছিল আজ কাটলেট খাবার পর পরপুরি বুঝতে পারলো লেভিটেশন কি?মনসুররের মনে হতে লাগলো তাকে আর পৃথিবী টানছেনা। কামরার সিলিং ক্রমশঃ নিকটবর্তী হতে লাগলো। মনসুরের মনে হোল চোখের রঙ বদলে গিয়েছে। যদি ভুল না হয়ে থাকে সে শুনেছে, পাশের সদ্য টিনেজে পা রাখা ফ্যাশনেবল তরুণি তার বাবাকে মনসুরের দিকে ইঙ্গিত করে ফিসফিস করে বলছে ,”পাপা, নেক্সট ঠাইম সিঙ্গাপুরে গেলে পাশের আন্কেলের মতো কন্টাক্ট লেন্স নিয়ে আসবে”
মনসুরের ভাবনা গুলো কেমন যেন এলপাথারি হয়ে যাচ্ছে-সুরিয়ালিস্টিক মুভি গুলোতে যেমনটা দেখা যায়, কতগুলো এলোমেলো ঘটনার সমাবেশ সবটা শেষ হলে একটা থিম দাঁড়ায়।
মনসুরের স্থির বিশ্বাস ,১৮৬২ সালে রেলের জন্ম তখন থেকে ইংরেজরা রেলের খাবারের তালিকায় এমন বিস্বাদের কাটলেট রেখেছে ফরাসিদের অপমান করার জন্য। দেখ, ফরাশিরা কিরকম বিশ্রি জিনিশ খেয়ে কি বড়াই করে!কাটলেটের জন্মভুমি ফ্রান্সে, কোন ফরাশি যদি রেলের কাটলেট খেয়ে ইংরেজের দিকে পিস্তল তাক করে ,ফরাশিকে দোষ দেয়া যাবেনা।
ইংরেজের স্বভাবই এই। উপনিবেশের কল্যাণে অনেক জাতির সাথে উঠাবসা। তবে একজাতির সাথে অন্য জাতির পরিচয় করিয়ে দ্যায় নোংরা ভাবে।উপমহাদেশে আসার পর ফ্রান্স, জার্মানের কাছে বল্লে-ভারতীয়রা বজ্জাত ,কালা আদমির দেশ ,জাদু টোনা করে পেট চালায়, আর আমাদের কাছে বলল -জরমন রা যুধধবাজ, ফরাসিরা গোছল করে কেবল নৌকো ডুবলে। তাই সুগন্ধি বানিয়ে গায়ের গন্ধ তাড়ায়। অথচ সুগন্ধির বিশাল অংশ আমদানি করে ইংরেজ।
মহারানি ভিক্টোরিয়া সাধারণ ইংরেজদের অভিবাদন করতেন নাকে হাত চেপে- ওরা জীবণে গোছল করেনা বলে। আর উনি গন্ধ পেতেন কারন উনি জীবনে দুইবার স্নান করেছিলেন।প্রথমটা জন্মের পরপর আর দ্বিতীয় টা, বিয়ের সময়
ইংরেজেদের ,অপরকে অপমান করার বদ খাসলত নিয়ে
একটা কৌতুক প্রচলিত আছেঃ উপমহাদেশে বহুদিন সরকারি সারভিস করে , অবসরের পর লনডনে থিতু হলেন। বাংলা ফেরতা ঐ ইংরেজ তার টয়লেটে নেতাজি সুবাস বোসের ছবি টাঙ্গিয়ে রেখেছে।উপমহাদেশের কর্মজীবনে এ ভদ্রলোক অনেক প্যারা দিয়েছিল ঐ ইংরেজ ব্যাটা কে। তার এক বন্ধু স্থানীয় বাঙ্গাল কোন এক ব্যবসায়িক কাজে ইংল্যান্ডে ওই ইংরেজের বাড়িতে উঠলো। ফ্রেস হবার পর শুধল,
“ তোমাদের ওরকম প্রবল জনপ্রিয় নেতার ছবি বাথরুমে দেখে অবাক হওনি?”
কে না জানে, বাঙ্গালির হাজির জবাব দেবার ক্ষমতা ভূবন বিখ্যাত!জবাবে বাঙ্গাল বলল,” এটাই তো স্বাভাবিক, জাতি হিশেবে তোমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগো। ঊনার ছবির দিকে তাকালে ভয়ের চোটে এমনিতেই তর তর করে বাথ রুম হয়”
নিজেরা ছবি রেখে যতই অপমান করার চেষ্টা করুক দরকারের সময় অন্যের পা চাটতে দেরী করেনা। ২য় বিশ্ব যুধ্বের সময়কার একটা চুটকি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।
চার্চিল, হোয়াইট হাউজে রুজভেল্টের কাছে দেখা করতে গেছে নাঙ্গা হয়ে।রুজভেল্ট অবাক হয়ে শুধল এরকম নাঙ্গা হয়ে আসবার অর্থ কি?
জবাবে চার্চিল বলেছিল,” মি. প্রেসিডেন্ট,মহান আমেরিকার কাছে ব্রিটিশদের লুকাবার কিছুই নেই। তাই খামকা পোষাক পড়ার বাহুল্য রাখলাম না”
বগির উপরের সাউন্ডবক্সে আজানের ধ্বনিতে সম্বিত পেলো মনসুর, না হলে ভাবনা কোথায় ঠেকত কে জানে!
বিল দেবার সময় আরেক দফা ভিরমি খাবার পালা-গতবারের তুলনায় পাচটাকা বেড়েছে।
দৌড় দিয়ে সেন্ডেল ছিড়ে লঞ্চ মিস করার পর যেমনটা বলে, লঞ্চ ও গেলো , পন্স ও গেলো।
থাক কি হবে অতো ভেবে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮