আমার অলসতা ভুবন খ্যাত।তার উপর ভ্রমণের উপর নিরাসক্তি। তাও যে অলসতার ফাঁকে কিছু দর্শনীয় বস্তু দেখা হয়নি তা বলা যায়না।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিশাবে আছে ,চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, যাদুঘর(ক্লাস টু তে থাকতে গিয়েছিলাম-জুয়েল আইচ কে না পেয়ে কচি মন ভীষণ আহত হয়েছিল)কক্সবাজার, নৃবিজ্ঞানের উপল ভাই ইত্যাদি ইত্যাদি। উপল ভাই কে দেখেন নি? অসুবিধা নেই, হুমায়ুন ফরিদি কে দেখলে একটা আইডিয়া পাওয়া যাবে।নির্লিপ্ত ভাবে ভাব গাম্ভীর্যের সাথে একের পর এক কাহিনী করে যাবে যেন এটাই স্বাভাবিক।ভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এ ভুয়া অসুখের নাম করে ওষুধ সংগ্রহ করে তা অন্য ফার্মেসি তে বিক্রি করে,সে টাকা দিয়ে 555 কেনা, ব্যাক ডেটের টিকেট দিয়ে রেল ভ্রমন,অতঃপর ধারা খাবার পর টিকেট চেকার এর দেশি ভাই বনে যেয়ে কে ইমশনাল ব্ল্যাকমেল,পাহাড় সমান অজুহাত দিয়ে স্যারদের বিভ্রান্ত করে পরীক্ষা পেছান, উপল ভাইয়ের বা হাতের কাজ । আমরা উনার চেলা চামুণ্ডারা উনাকে ফলো করতে যেয়ে কত যে হেনেস্তা হয়েছি ইয়াত্তা নেই। পরে খান্ত দিয়েছি। বহু আগের স্টার এর বিজ্ঞাপনের মতো বলতে হয় (মডেল ইলিয়াস কাঞ্চন)স্টার তাদের ই মানায় জীবনে যারা বহুদূর যায়।আমরা চাইলেও উনার মত হতে পারব না। লন মোয়ার এর কাজ কি আর সেভিং রেজর দিয়ে হয়!
উপল ভাই তখন সেকেন্ড ইয়ারে।শীত তাড়াতে দুহাতের তালু ঘষতে ঘষতে শাবি(শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) গেট এ রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছেন। শীতের সকাল আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই রিক্সার স্বল্পতা।যে সমায়ের কথা বলছি সেসময় এখনকার মত ইজি বাইকের চল ছিলনা। অনতিদূরে আরেক ভদ্রলোক রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কাহিনীর দরকারে ভদ্রলকের নামটা গোপন করছি। ধরা যাক উনার না্ম মুরশেদ। কিছু সময় পর একটা রিক্সা এল।যেহেতু মুরশেদ সাহেব আগে দাঁড়ানো ছিলেন স্বভাবতই উনি রিক্সাটা আগে নিতে পেরেছেন। “ছোট ভাই, একটা লিফট দেয়া যাবে?” উপল ভাইয়ের বিনয় মাখানো ডাকে পিছনে তাকিয়ে, হাসি মুখে ততোধিক বিনয়ের সাথে বললেন,” ওঃ শিউর,প্লিজ”। রিকসায় উঠেই সিগারেট ধরিয়ে নাম শুধলেন। এরপর গেট থেকে ক্যাম্পাস এ এক কিলো পর্যন্ত রিক্সাতে বসে উনাদের কথোপকথন নিম্নরূপঃ
উপলঃভাইয়া কোন ডিপার্টমেন্ট?
মুরশেদঃ এন্থ্রপলজি
উপলঃআমিও। ফার্স্ট ইয়ার?
মুঃ না আমি এখানে লেকচারার হিশেবে জয়েন করেছি। আজকে আমার ফার্স্ট ক্লাস ,সেকেন্ড ইয়ারের সাথে।আপনি?
(ইতিমধ্যে উপল ভাইয়ের জুলপি বেয়ে ঘাম পড়া শুরু হয়েছে)
উপলঃ(নার্ভাস হয়ে তৎসম শব্দ বেশি বের হয় তার উপর মিথ্যা কথা )সহকারী অধ্যাপক,পরিবেশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল বিভাগ।(নিরজলা মিথ্যা- নৃবিজ্ঞান) আপনাকে তো তাহলে আপনি বলতেই হয়(নার্ভাস আর কৃত্তিম হাসি সহ -যেন কত বড় রসিকতা করেছেন!)
মুরসেদঃ ও!
ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের খানিক আগে ব্যঙ্ক আর ক্যান্টিন এর সামনে আসার পর রিক্সা থামালেন উপল ভাই।“আমাকে এখানে নামতে হবে ব্যাঙ্কে , কাজ আছে। ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি। আর সমস্যা হলে চলে আসবেন। লাইব্রেরি বিল্ডিং এ ,আমি ১০৬/এ তে বসি” ...নেমেই সোজা ক্যান্টিনে।
মুরশেদ সাহেব ভেবে পেলেন না,সকাল ৮ টায় ব্যাঙ্ক খলার আগে ব্যাঙ্ক এ কিভাবে করো কাজ থাকতে পারে।
পরে উপল ভাই, কিভাবে নিজের সাবজেক্টের মুরশেদ স্যার কে ম্যানেজ করেছেন বারান্তরে আরেকবার বলবো।
উপল ভাই মিথ্যা বলেন নি। ১০৬/এ তে উনি বসতেন,আসলে না বসে উনার উপায়ও ছিলনা।১০৬/এ ছিল লাইব্রেরি বিল্ডিং এর টয়লেট।