পিনাকি বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে এক বর্ণময় চরিত্র। উনাকে নিয়ে কথা বলার আগে দুচার ফর্দ ভাবতে হয়। উনার প্রোস এন্ড কন্স আলোচনা এতটা দুধভাত কাজ না।
পিনাকি এই মহুর্তে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির সবচাইতে পপুলিস্ট ইস্যু গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করে আলোচনার তুঙ্গে উঠেছে অভিযোগ হচ্ছে নিজেও পপুলিস্ট হয়েছেন।
একটা সময় ছিল বাংলাদেশের মধ্যপন্থীরা কেরানির চাকরি কেন্দ্রিক লেখাপড়া, আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি কেন্দ্রিক বড়জোর পরিবার কেন্দ্রিক চিন্তার পর্যায়ের ছিলেন কিংবা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত ছিল। সমাজের ভবিষ্যৎ চিন্তার পেছনে সময় ব্যয় করা তাদের হয়ে উঠেনি, হয়ত জীবনের সংগ্রামে ব্যস্ত থেকেছেন বলে। তবে বসে থাকেননি ডানপন্থী এবং বামপন্থীরা। এরা লেখাপড়া করে গেছে। নিজ নিজ বলয়ে থেকে এরা নিজেদের আলকিত ভাবত। সাধারণ মধ্যবিত্ত কিংবা গ্রামীণ সমাজে ডান ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হলেও শহুরে অভিজাত পাড়ায় চিন্তার অঙ্গনে প্রভাব রেখেছে বাম। পসচাত্য উন্নত জীবন, সংস্কৃতি চর্চা, খাবার এসব দেশে আমদানির বেতালেও বাম ছিল অগ্রগণ্য। এলিট ক্লাবে ডমিনেট করতে না পারায় ডান, রাষ্ট্রের ক্ষমতা চর্চার প্রশ্নে পিছিয়ে গেছে।
কিন্তু সময় পাল্টে যাচ্ছে। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদীদের যে কোন মূল্যে ঘৃণার সংস্কৃতি জারি করে বাংলাদেশে একটা অনির্বাচিত ও জবাব্দিহিহীন ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠায় আজকের বাম ইতিহাসের কাঠগড়ায় দায়বদ্ধ থাকবে। সে ইতিহাসের এক কালো পাঁকে আটকে গিয়ে নিজের চিন্তা উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে। শত বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে বাম বহু মেহনত করে যে চিন্তা নির্মাণ করেছে ও রাজনৈতিক সভ্যতা তৈরির যে সৎ চেষ্টা করেছে, তার সব অর্জনকে আজকের বাম আওয়ামীলীগের অবৈধ ক্ষমতার কাছে বর্গা দিয়ে বসেছে। বিএনপি-জামাত-হেফাজতের (পড়ুন ইস্লামিস্ট) বাইরে গ্রহণযোগ্য বিরোধীদল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বিনা আওয়ামীলীগের ভোটের সরকারকে একপাক্ষিক সমর্থনের যে অনৈতিক প্রকল্প বাম নিয়েছে, তাতে জড়ো হয়েছে বিশাল বিশাল সব অপরাধের তালিকা। এই ভার যে বাম আর বহন করতে পারছেন না! আগামীর দিনের ইতিহাসের কাছে আগাম অপরাধী হয়ে গেছে।
আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বাম শুধু চিন্তা উৎপাদনই করেনি, সে নিজ দায়িত্বে ছাগু (পড়ুন ইস্লামিস্ট) পুন্দিয়েছে, জাতীয়তাবাদীদের সোদন দিয়েছে (হ্যাঁ তাদের ভাষাগুলো ঠিক এমনই ছিল, এখনও আছে কারো কারো প্রফাইলে)। বিষয় হচ্ছে, এই সব কিছুর পরে আমরা দেখি- বাংলাদেশ এমন সফল এবং নির্মম স্বৈরাচার (বাকশাল ২.০), এমন জবাবদিহি হীন প্রশাসন, এমন মানবাধিকার হরণকারী পুলিশ, এমন ভোট চুরি, এমন রাতের ভোট, প্রকল্পের নামে এমন অর্থ লুট, এমন ব্যাংক চুরি এসব এত ব্যাপক ও খোলামেলা পর্যায়ে আগে কেউ দেখেনি। এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও বাংলাদেশের মানুষ প্রথম দেখেছে। কিন্তু এসব অপরাধের সিকিভাগও বামের হাতে গুনা চার পাঁচ মন্ত্রী মিলে করেনি, বাম মূলত ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন কেন্দ্রই ছিল। কিন্তু তারপরেও বামকে এসব দায় নিতে হচ্ছে, কেননা ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে ঝাপ না দেয়ার (পড়ুন স্বচ্ছ নির্বাচন) চিন্তা কাঠামো চর্চার, বয়ান তৈরির মূল কান্ডারি ছিল বামই। ফলে আজকের বাম একদিকে আর চিন্তা উৎপাদন করতে পারে না, অন্যদিকে সমাজে আজ তার গ্রহণযোগ্যতাও প্রান্তিক। জনস্বার্থে কিংবা মহামারী ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্যে বাম কোন কথা বলার আগে কাঙ্গালের মত চেয়ে থাকে তাঁর প্রভু আওয়ামীলীগের দিকে, পাছে প্রভূর রাজনৈতিক কোন ক্ষতি হয়ে যায়, সে বিব্রত হয়। যে এলিট সমাজকে বাম চিন্তা ও সংস্ক্রিতি চর্চায় পথ দেখিয়েছে, ঠিক তারাই আজ একদল লুণ্ঠনকারীর ভূমিকা নিয়ে একদল ভোট চোর, ব্যাংক চোর হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। পেছনে পড়ে আছে আহত বামের চিন্তাবৃক্ষের কঙ্কালসার জড় কায়া। বাম দেখছে, যে মধ্যবিত্তকে সে আলোর মশাল দেখিয়েছে 'বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে', সে মধ্যবিত্ত যেন এক ভোগবাদী, রাষ্ট্র চিন্তাহীন এক জড় সত্তা মাত্র। বাংলাদেশে বাম চিন্তার এই আত্মাহুতি যতটা করুন ও বেদনার, তারচেয়েও বেশি আগামী দিনের জন্য গ্লানির।
এখন পিনাকি প্রশ্নে আসি। পিনাকি বামের মধ্যে সেই অল্প কয়েকজন, যে কিনা শাহবাগের রাজনৈতিক কর্তিত্ব হাতছাড়া হবার ঠিক পরপরই, শাহবাগ বিপ্লবের পিছনের রাজনৈতিক প্রকল্প বুঝে ফেলেন, কিংবা একটি হাতছাড়া বিপ্লবের প্রতিবিপ্লবের প্রবল সম্ভাবনা বুঝতে পারেন, কিংবা তাকে শাহবাগের প্রকল্পের মাস্টারমাইন্ডরা ডিরেকশান চেঞ্জে উদ্ভুদ্ধ করেছেন। তবে এরকম বুঝতে পারা তরুণ ও মেধাবী চিন্তক কিন্তু আরো আছেন, যারা নিজেদের উদার বাম রাজনৈতিক অবস্থানের ন্যায্যতা এবং চিন্তার স্বচ্ছতার জন্য অবস্থান পরিবর্তন করনেননি। বরং নিজ অবস্থানে থেকে যথাসম্ভব মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। (আমি এখানে আমাদের সমাজের দুজন অত্যন্ত সম্মানিত চিন্তক ফারুক ওয়াসিফ এবং আলতাফ পারভেজের নাম নিতে পারি)। কিন্তু এটা বলা অন্যায় হবে না যে, ফারুক ওয়াসিফ সুস্থ সমাজ চিন্তায় তরুণ আলোর দিশারী হলেও তাঁকে একলা হাঁটতে হয়েছে, খোদ বামও তাকে সন্দেহ করেছে। অন্যদিকে বামের আপত্তিকে থোরাই কেয়ার করে পিনাকি পক্ষ পরিবর্তন করেন, হতে পারে এই আগাম বুঝতে পারাই পিনাকির সাফল্য।
কিন্তু এখানে নুক্তা আছে, অনেকেই বলেন যদিও পিনাকি লার্নেড, যদিও পিনাকি তীক্ষ্ণ চিন্তক, তিনি এত মেধাবী নন যে শাহবাগের তুঙ্গে থেকে তিনি ২ বছর পরের শাপলার মনস্তত্ত্ব ধরে ফেলবেন। তাই কিছু লোক এই হাইপো থিসিস নিয়ে এসেছেন যে, শাহবাগের পরে শাপলার পর্যায়ক্রমিক এজেন্ডা পরিকল্পিত, দুয়ের পক্ষেই এস্টাব্লিশ্মেন্টের সায় ও দায় ছিল। এটা আওয়ামীলীগ ও র'য়ের যৌথ এজেন্ডা, শাহবাগ ও শাপলার বিভাজনের ছক কষেই এগিয়েছে তারা, যাতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে দুর্বল করা যায়, সমাজকে করা যায় বিভাজিত। পিনাকি এই পরিকল্পনার অংশ ছিলেন বলেই সময়মত পক্ষ পরিবর্তন করতে পেরেছেন এবং ডান জন মনস্তত্ত্বকে নিজের কাছে ভীড় করাতে পেরেছেন।
পিনাকি ডানপন্থী জন মনস্তত্ত্বে গভীরে ঢুকে গেছেন কিংবা ঢুকতে চেষ্টা করেছেন এবং পেরেছেন। এটা ঠিক যে, ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে গুরু গৌতম দাস সমাজে নতুন চিন্তা উৎপাদন করেছেন, পিনাকি গুরুর বিদ্যা নকল করেছেন মাত্র। ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড়া করানোর সরলীকৃত হিন্মান্যতার বিপরীতে দেয়া পিকানি'র মুখে গৌতম দার বয়ান সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তথাপি পিনাকির ভিডিওতে সামাজিক ক্যাচাল এবং অপরাপর ডেইলি পপুলিস্ট আলাপ প্রাধান্য পায়। বোধকরি, একজন লেখককে শুধু মৌলিক চিন্তার কথা বলে টিকে থাকা যায় না এমন বোধ থেকেই পিনাকি এসব করেন। লেখক পিনাকি যতটা সংযত এবং ধারাবাহিক, সোশ্যাল মিডিয়ার পিনাকি ততটাই অসংযত এবং বদরাগী।
পিনাকি কাঁচা গালি দেন, পাল্টা গালি হজম না করতে পেরে ব্লক করেন। পুস্তকের পিনাকিকে আমরা তার ফেইসবুক লেখায় পাই না। উনার ফেইসবুক লেখা কিংবা ভিডিও কন্টেন্ট এর যথার্থতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে এবং উনার কন্সপায়রেসি থিউরি গুলোর ভিত্তি কিছু ক্ষেত্রে খুব দুর্বল। আমি কিছু উদাহরণ দেই- ১। রোজিনার ডোকুমেন্ট চুরি, ২। শেখ হাসিনার চীনের কোলে উঠা। ৩- কংগ্রেস ম্যান মিকি আর্থারকে চাঁদাবাজ বলা। এসব ক্ষেত্রে পিনাকি দ্রুত ব্যাখ্যা উপস্থাপনে এসে বহু ভুল করেছেন। নিজেদের একটা লেজুড় সরকারের কাছ থেকে তথ্য চুরি করতে ভারতের সংবাদিক পাঠানো লাগে না, বরং শেখা হাসিনা সরকারের বহু মন্ত্রী এবং প্রশাসনের সচিব মুহুর্তেই তাদের স্মার্টফোন স্ন্যাপ দিতে পারেন। ভারত এমন কাঁচা কাজ করে বাংলাদেশে এস্টাব্লিশ্মমেন্ট কায়েম করছে বুঝি! গত ১৪ বছর! হ্যাঁ দেশের ভিতরের-বাইরের বহু উৎসাহী পক্ষের ইন্ধনে আড়িপাতার ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু পিনাকি এতে অনেক রঙ দিয়েছেন।
চীন প্রশ্নে শেখ হাসিনার অবস্থানকে পিনাকিদা সবচেয়ে বাজে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পিনাকি দা সমাজে হাসিনাকে চীনের কোলে উঠে যাওয়া মাঝি হিসেবে দেখিয়েছেন। এতে আদতে হাসিনার ইমেইজ রিবিল্ড হয়েছে। ভারতের ফ্রি টাঞ্জিট, ট্রানশসিপমেন্ট, নদীতে বাঁধ দিয়ে মিলিটারি যান চলাচল, বহু অর্থনৈতিক জুলুম, সীমান্ত অবিচার এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরনে প্রণব-সুজাতা-শ্রিংলা-আকবর-হর্ষবর্ধন চক্রের সকল ষড়যন্ত্রের পরে, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ভারত বিরোধীতা চূড়ান্ত একটা পর্যায়ে আছে। এই পর্যায়ে এসে পিনাকি দেখাচ্ছেন শেখ হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্কের নন রিপেয়ারেবল ফাটল তৈরি হয়েছে, এবং হাসিনা টাকার জন্য চীনের কোলে উঠে পড়েছেন। এমন বয়ান ভোট চোর হাসিনাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা বলেই, অনেকে পিনাকিকে দ্বমূখীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন এবং র'র ফিউচার ফিল্ড তৈরির জন্য কাজ করা এজেন্ট হবার অভিযোগ কিংবা অপবাদ দিচ্ছেন।
আমার ধারণা এই ব্যাখ্যাই উনাকে র এর এজেন্ট বলার মূল ভিত্তিটাকে পোক্ত করেছে। আমার ধারণা এই ব্যাখ্যাই উনাকে র এর এজেন্ট বলার মূল ভিত্তিটাকে পোক্ত করেছে। এর বাইরে পিনাকি দা কে ভারতের এজেন্ট বলার কোন ক্লু আমাদের জানা নাই। আবার অনেকেই ভারতের বিপরীতে চীনকে জনপ্রিয় করার কারিগর হিসেবে তাকে র নয় বরং চীনের এজেন্ট বলেন। এর সত্য মিথ্যা ইতিহাস বলে দিবে।
আমরা যারা ডেভেলপমেন্ট এনালাইসি করি নিয়মিত, আমরা জানি বাংলাদেশের বড় প্রকল্প গুলোতে চীনের ব্যাপক ইনভল্ভমেন্ট আছে। তবে বাস্তবে আমরা এও দেখি যে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বেশিরভাগ আসে আসলে জাইকা ও এডিবি থেকে। চীন থেকে ঋণ আসে আসলেই কম, ২৪ বিলিয়নের এমওইউ হয়েছে, তবে ছাড় হয়েছে সামান্য। চীন বাংলাদেশের বড় প্রকল্পের সাথে ব্যাপক ভাবে যুক্ত, তবে এসব প্রকল্প ভারত করতে অপারগ। ভারতের সক্ষমতা মাঝারি পর্যায় পর্যন্ত, মেগা প্রকল্পে বাংলাদেশের বড় পার্টনার শুধু চীন নয়। বরং জাপানও। এই সত্যটা ভারত ভাল করেই জানে। কিন্তু পিনাকি দা অন্য বহু বিষয়ের মত, এটা সরল ভাবে উপস্থাপন করেননি। বরং একটা পাল্টা বয়ান তুলেছেন যা হাসিনাকে পলিটিক্যাল এস্কেইপ দিচ্ছে। হ্যাঁ বাংলাদেশের চীন নির্ভরতা বেড়েছে, তবে এটা একক নয়, এটাই সত্য।
এভাবে মিকি আর্থার প্রশ্নেও পিনাকি দা, বাড়াবাড়ি করেছেন, মার্কিন কংগ্রেস্ম্যান দের চাঁদা উঠানো আইনের সীমা নির্ধারিত। পিনাকি দা দ্রুত বয়ান আনতে গিয়ে তাড়াহুড়া করেছেন, পরে আমরা দেখেছি মিকি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে শক্ত বক্তব্য দিয়েছে। সত্য হচ্ছে সরকার মিকির বক্তব্যকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে প্রেসকে তা ছাপাতে ব্যাধ্য করেছে।
সমাজে নতুন ব্যাখ্যা, বয়ান ও প্রভাব তৈরি করতে হলে, ঘটনার সাথে সাথেই নিজস্ব ন্যারেটিভ দাঁড়া করানো দরকার পড়ে। এটা যারা আগে করতে পাড়েই তারাই দাঁড়িয়ে যায়। এই দিয়ে সমাজকে প্রভাবিত করা যায়। এটাই পিনাকি দা'র ট্রিক। তবে এতে প্রায়ই ভুল হয়। পিনাকি রিজার্ভ নিয়ে যা যা বলেছেন সবই প্রায় ভুল, এই ভুল অন্যরা ধরিয়ে দিতে আসলে সবাইকে গালি দিয়েছেন তিনি, এটা তাঁর চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা।
পিনাকি বলেছে সরকার রিজার্ভ চুরি করেছে ৮ বা ১০ বিলিয়ন যা মিথ্যা। এই মিথ্যাকে স্বীকার না করে পিনাকি ক্রমাগত রিজার্ভ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে গেছে। তাসনীম খলিল একবার এটা শুধরাতে গেলে তাঁকে এটাক শুরু করেছে, ভাবখানা এমন সে ভুলভাল তথ্য দিলে সেটা শুধ্রে দেয়ার বা সমালোচনা করার অধিকার কারও নাই। বাস্তবতা হচ্ছে, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এবং রপ্তানির ইয়ারকিউ কোটা সম্পর্কে পিনাকি ভাল্ভাবে জানতেন না, পরে আইএমএফ এসব ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হলে, পিনাকি ক্রমাগত কথা ঘুরাতে থাকে, কিন্তু নিজের ভুল স্বীকার না করে উলাটা তাসনীম খলিল কে গালি দিতে থাকে। এবং তাসনীমের কাছ থেকে তীব্র গালি খায়।
পিনাকি দিনশেষে আলোচনায় থেকে যেতে চান। এতে আমি দোষ দেখি না। উনি চিন্তা বিক্রি করেন, গালি দিয়ে ভিউ পান, তবে তাকে পেটের খোরাক তো জোগাড় করতে হবে! সুতরাং আলোচনায় থাকার তীব্র চেষ্টাকে খারাপভাবে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু অন্যকে গালি দিয়ে, ভুলভাল তথ্যে ফ্যাসিবাদ মোকাবেলার যেনতেন কৌশল মার্কেট প্রাপ্তিতে এগিয়ে রাখবে, ভিউ বাড়িয়ে আয় বাড়াবে, তবে এতে শিক্ষিতজনের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা থকাবে না।
পিনাকি বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু জনমনস্তত্ত্বের বিপরীতে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘু জনমনস্তত্ত্বের তুলনামূলক এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পিনাকি বলেছেন ভারতের মুসলিম ভারতের জন্য রক্ত দেয়া জাতি। মুসলিমরা ভারতের স্বাধীনতার জন্য হাজারে হাজারে প্রান দিয়েছেন। তাই তারা সেখানে রাজনৈতিক বুঝাপড়া করে, লড়ে টিক্তে চায় প্রতিনিয়ত। তারা রাজনৈতিক প্রশ্নে কোন দলের সাথে আপোষ করে না, বরং সংগ্রাম করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামীলীগের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক সত্ত্ব বর্গা দিয়ে রেখেছে। এইটা তিক্ত সত্য এলিটদের জন্য, তবে সাধারনে জন্য এটা মিথ্যা। তাই এধরণের মেসেজিং ক্লাসিফাইড না করে উপস্থাপন বিপদজনক।
পিনাকি বলছেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের কোন সোশ্যাল ক্যাপিটাল গ্রো করেনি, ফলে আওয়ামীলীগ গেলে হিন্দুদের ভয় আছে। আমরা দেখি, সাবেক প্রধান বিচারপরি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কিংবা বাবু সুরঞ্জিতের পরে এমন কোন নেতা তৈরি হয়নি যাদের সোশ্যাল ক্যাপিটাল দিয়ে গরবি হিন্দু সংকটকালে আশ্রয় পাবে। পিনাকি ব্যাখ্যা করেছেন, এনআরসি, সিএএ তে মোদির হিন্দুত্ববাদ কিভাবে অনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের হিন্দুদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার একটা উন্ডো খোলা রেখেছে। একদিকে হিন্দুদের পবিত্র রাজ্যে বাঁচার মনোবাসনা, অন্যদিকে এদিকে নির্যাতনের এলিমেন্ট জারি রেখে অন্যদিকে নাগরিকত্বের আশ্বাস- এই যৌথ প্রযোজনার হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র পিনাকি উন্মুক্ত করেছে। এই ব্যাখ্যার বাস্তবতা বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় বিবেচনা করবে।
অভিযোগ কারীদের বয়ান হচ্ছে, র একজন হিন্দুকে দিয়ে মজলুম মুসলিমের ইতিহাস বলিয়ে, তাঁদের চিন্তার শূন্যতায় ঢুকিয়ে একজন ভবিষ্যৎ পটেনশিয়াল কিংবা মাস্টারমাইন্ড তৈরি করছে।
তবে পিনাকির বিরুদ্ধে মৌলিক চিন্তার মূল প্রবক্তাকে ক্রেডিট না দিয়ে, সবকিছু নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। (সমসাময়িক লেখকদের আগের প্রজন্মের লেখকদের প্রবন্ধ ও বই যেহেতু আমার বেশি পড়া হয়নি, তাই এই নিয়ে আমার নিজের কোন প্রপোজিশান নাই, আমি শুধু অভিযোগ শুনে যাওয়া এক নাদান)।
পিনাকি যদি বাংলাদেশের মুসলিম জন মনস্তত্ত্বের গভীরে গিয়ে তাদের সামাজিক অবস্থানকে সম্মান করে হিন্দু হিসেবে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে 'সোশ্যাল ক্যাপিটাল' তৈরি করতে সক্ষম হন, আমি তাঁকে তাঁর সৎ অবস্থানের জন্য কৃতিত্ব দিব এবং তাঁর ভবিষ্যৎ সৌভাগ্য আগাম কামনা করব। কিন্তু সাথে সাথে এও বলে রাখি, এই সোশ্যাল ক্যাপিটাল তৈরি করতে গিয়ে উনি যদি কোন কালো বাঁকে পা দিয়ে ধরা খান, তার জন্য তাঁকে নিজের সব অর্জন খোয়াতে হবে। এই বিপদ নিসচয়ই পিনাকি দার জানা আছে। সমস্যা হচ্ছে, পিনাকি যেহেতু আগে পল্টি দিয়েছেন, তাই ভবিষ্যতেও পল্টি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। বিশেষ করে উনি শাহবাগ ও শাপলা উভয়টিতে সরকারের বরকন্দাজ ছিলেন, শহবাগে ছাগু পোন্দানির কারিগর ছিলেন, হেফাজতের মিছিলে আগুন ধরানোর জন্য কওমীর ছেলেদের বীরুধে ক্রমাগত বিষেধাগার করেছেন।
পিনাকি বছেলেন হিন্দু এখনও পলিটি হতে পারেনি, মুলত আওয়ামী রেজিমে চাকরি পাবার লোভ, আওয়ামী হিন্দু রাজনীতি ও হিন্দুত্ববাদী নাগরিকত্বের উইন্ডোর যৌথ এজেন্ডার কারণে। তবে মোটা দাগে আমি বলতে চাই, পুর্ব বঙ্গের মুসলিমও এখনও রাজনৈতিক সচেতন জনগোষ্ঠী অর্থাৎ পলিটি হতে পারেনি। বরং জিগাংসা আমাদেকের সম্মিলিতভাবে একটা ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটে নিয়ে গেছে, যেখানে আজ আমাদের রাষ্ট্রের শক্তিশালী কোন প্রতিষ্ঠান নেই, যা কিনা কোন আশু সংকটকে মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে। এই বিগ পিচারটাকেও আপনার মাথায় রাখতে হবে, তাইলে বরং আপনার চিন্তা ও চর্চা ইঙ্কলুসিভ হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৩:৫২