৫ জানুয়ারি'২০১৪ পুর্বে বাংলাদেশে ক্ষমতাবলয় নির্ধারনী নির্বাচনী প্লট গুলোতে ক্ষমতাসীন দল, প্রধান বিরোধীদল এবং সেনাবাহিনী এই তিন পক্ষের "দুই" যেদিকে থেকেছে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল সেভাবেই হয়েছে। এই নেক্সাসে ভারত এবং এমেরিকা অবজার্ভার ছিল যারা মাঝে মধ্যে নিজ নিজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ্য বাস্তবায়নে বিশেষ বিশেষ দলের অনুকুলে প্রভাবক হয়ে উঠত। কিন্তু রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয় এবং প্রসাশনিক অথোরেটেরিয়ান পটপরিবর্তনের অধ্যায়ের পরে (৫ জানুয়ারি নির্বাচন ও এতদসংক্রান্ত মহাপ্রস্তুতি) এমেরিকাকে অব্জার্ভার হিসেবে রেখে ভারত বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলে বিরোধী পক্ষকে বাদ দিয়ে নিজেই সরাসরি নীতিনির্ধারণী পক্ষ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে, এই অবস্থায় এমনকি সংবিধান ও বিচার বিভাগীয় কাঠামোতেও দেশের জনগনের বিকল্প মতামত কিংবা রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। সহজ ভাষায় দেশের এমনিতেই চলতে থাকা অরাজকতা পুর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক মহাপরিকল্পনা এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতালিপ্সার ইচ্ছা নির্ভর হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় এস্টাব্লিশ্মেন্ট
২০১৪'তে চাপিয়ে দেয়া নির্বাচনের প্রধান পক্ষ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সড়ক, নৌ, রেল, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ, নৌ বন্দর ও সমুদ্র বন্দরের যাবতীয় আর্থিক ও অবকাঠামো ফেসিটিলিটির এক্সেস এবং ট্রান্সজিট প্রায় বিনা মূল্যে এবং বিনা শুল্কে বাগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ এবং বন ধ্বংসকারী হিসেবে ১ম পাইলট হিসেবে রামপাল কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের সূচনা করে দেশে ভারতীয় কয়লার বাজার সৃষ্টির অমীত সম্ভাবন সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের অতি প্রয়োজনীয় চট্রগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ, বহুল অপেক্ষমাণ কর্ণফুলী নদীর মোহনার মেরিনা বে এবং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের মত ম্যাক্রো ইকনোমিক পটেনশিয়াল গুলোকে নিজ স্বার্থে কুটনৈতিক চাপে বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র ভারতীয় ট্রানজিট ও কয়লা ব্যবসার অনুকূলে দরকার পড়া অগভীর নদী মোহনায় পায়রা বন্দর এবং মাওয়া-পায়রা রেল সহ বহু ঋণ নির্ভর অতি খরুচে আবকাঠমোগত কাজ আন্তর্জাতিক বিবেচনায় অতি দুর্বল সরকারকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। উল্টো ক্যাপাসিটি সংকটে ভোগা চট্রগ্রাম বন্দরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভারতীয় পণ্যের খালাস চেয়ে চুক্তি করতে বাধ্য করেছে। এইসব প্রকল্পে ফান্ডিং এর জন্য ৮৫% পন্য-সেবা-মেশিনারি-ডিজাইন-ইমপ্লিমেন্টেশন ভারত থেকে আসার শর্ত রেখে উচ্চ সুদে কয়েক বিলিয়ন ঋণও গছিয়ে দিয়েছে।
ভারতীয় বিবেচনায় বাংলাদেশের দুর্বল পুতুল সরকারকে বাধ্য করে তারা এদেশের নির্মিতব্য নিউক্লিয়ার প্রকল্পে সরাসরি ঢুকে পড়েছে এবং ঢুকে পড়েছে প্রায় প্রতিটি গুরুত্ব পূর্ণ অবকাঠামো এবং সফটওয়্যার খাতের নির্মানে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহ সরকারি ব্যাংক ও প্রশাসনে ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর এন্ট্রান্স নিশ্চিত হয়েছে এইসময়ে। তেল উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশেকে কিনতে বাধ্য করেছে ভারত থেকে উচ্চ দামে ডিজেল। (ধারণা করছি এই তেল আন্তর্জাতিক ডিজেলের মানে পরিশোধিত নয় এবং এতে ক্ষতিকর সালফার বেশি পরিমানে রয়েছে, এমনিতেই ইটের ভাটায় ব্যবহৃত অতি নিন্ম মানের ভারতীয় কয়লা এবং সর্ব ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল আরবান ও হিউম্যান ওয়েস্টে দেশের জল স্থল বিষিয়েছে)। একই সময়ে বাংলাদেশ ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ কিনে জ্বালানী নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উপলক্ষ তৈরি করেছে। আরো উল্লেখ্য এই সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শত্রু তালিকা থেকে ভারতের নাম প্রত্যাহার হয়েছে, ভারত বিদ্বেষী ঊর্ধতন সেনা অফিসারদের তাড়ানো হয়েছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাদেরই নিন্ম মানের অস্ত্র কিনার চাপ এসেছে।
বিপরীতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদীর ন্যায্য পানি হিস্যার ছিটে ফোটাও পায়নি, চুক্তি সত্ত্বেও পানি শুধুই কমেছে পদ্মায়, চুক্তিহীন তিস্তায় সম্পুর্ণ পানিই প্রত্যাহার হয়েছে শুস্ক মৌসূমে। বাংলাদেশের সড়ক-নৌ-রেল পরিবহণ,বন্দর, জ্বালানী নিরাপত্তা এবং সফটওয়্যার নিরাপত্তার সকল কৌশলগত উপাদান এখন কার্যত ভারতের নিয়ন্ত্রণে, পোষ্ট কলোনিয়াল সময়ে এসে ভারত একটি দুর্বিত্ত চক্রের যোগসাজশে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক নিও-কলোনিয়ালিজম প্রতিষ্ঠা করেছে।
এমনিতেই ভারতীয় ভূ-রাজনৈতিক আধপিত্যের অনুকূল দল হিসেবে পরিচিত, আওয়ামীলীগকে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখার ভারতীয় চেষ্টা ও চর্চা দৃশ্যমান ও দৃষ্টিকটু পর্যায়ে কূটনৈতিক হীন্মান্যতার, ভারতীয় আর্থিক প্রাপ্তির বিপরীতে এই চেষ্টার তীব্রতা বোধগম্য। ফলে প্রতিটি নির্বাচনের আগে এখানে "রথ দেখতে ও কলা বেচতে" আসছেন সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মূখার্জি সহ স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা। এমনকি বাংলাদেশের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ট্রেনিংও দিয়েছে ভারতীয়রা। এই বহুবিধ অর্থ-রাজনৈতিক বাণিজ্য বড়ই একপেশে। বাংলাদেশ এই একতরফা বাণিজ্যে উদোম হয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী এস্টাব্লিশ্মেন্ট
নির্মত্ত ও দুর্বিত্ত দলীয়করণের ফায়দা নিয়ে সহজেই বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্ষমতার বলয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দলীয় বিচারপতি দিয়ে অতি উৎসাহী ও একপেশে রায়ে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অর্জিত চ্যাক এন্ড ব্যালান্স সৃষ্টিকারী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, বিপরীতে সংসদ না ভেঙেই দুর্বিত্ত রাজনীতির প্রতিনিধিত্বকারী ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেপারোয়া লুটকারী দলীয় প্রধানের অধীনেই নির্বাচন করার হাস্যকর বিধান চালু হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ভোটহীন সরকার প্রতিষ্ঠা সহজ হয়েছে, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারার তান্ডাব। অন্যদিকে নির্বাচন আসলেই সুর সুর করে বিরোধী পক্ষের উচ্চ মধ্য এমনকি নিন্ম পর্যায়ের লোকেদের হাজত বাস নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।
এমনিতেই ব্যাপক হারে বিদেশী শান্তি মিশনে ব্যস্তথাকা বাংলাদেশের বাহিনীগুলোকে (এমনকি ব্যক্তি অফিসারদেরকেও) অথোরেটেরিয়ান সরকার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ অধিক সংখ্যায় এবং বেশ খরুচে সব প্রশাসনিক ও ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ধরিয়ে দিয়ে আর্থিক ভাবে ফুলিয়ে রাজনৈতিক ভাবে নির্লিপ্ত করে তোলায় বেশ সফল, অন্যদিকে সেনা বিমান ও নৌ বাহিনীগুলো থেকে এস্টাব্লিশ্মেন্ট বিরোধী অফিসারদের তাড়িয়ে খেদানোর মহাআয়োজনও সমাপ্ত (ধারণা করা হয় পরিকল্পিত বিডিআর বিদ্রোহ এরই অংশ ছিল)।
অতিমাত্রার অপরাধ প্রবণ ও সীমাহীন দুর্নীতির দেশে শুধু মাত্র দলীয় ছাত্র সংগঠনের দুর্বিত্তদের দিয়ে পুলিশ ফোর্স বোঝাই করা হয়েছে, ফলে বিরোধী দমনের আদালতীয় এবং পুলিশী যৌথ পন্থা কায়েম হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাংক হিসেব জব্দ করে রাস্তা কেন্দ্রিক কর্মসূচির চেষ্টা এবং অনুকূলে প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্যও ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এই মহা পরিকল্পনার আরো উচ্চ ধাপে এসে, দলীয় লোকেদের মিডিয়া হাউজগুলোতে সেট করা হয়েছে, ফলে বাংলদেশের মিডিয়া বিরোধী মতামত শূন্য, যেখানে সেতুর একটি পিলার ব্রেকিং হিসেবে অভির্ভূত হলেও রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট কিংবা শিক্ষা ধ্বংসের মহা আয়োজনের কোন আওয়াজ নেই আজকের মিডিয়াতে।
ভারতীয় ভূ-রাজণোইতিক ইচ্ছার প্রবল প্রতাপে একদলীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকার অনুকুলে সমর্থন যোগানো আওয়ামীলীগ পন্থী বুদ্ধিজীবিরা ইনিয়ে বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর সরকার ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবে, রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ষাটোর্ধ একজনের সেলফ সেটেস্ফিকশন আসবে, ফলে উনি ভালো কাজ করবেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে সেই সব বুদ্ধিজীবীরাই বড় বড় নিয়োগ বাগিয়ে নিয়ে বাংক লূটে আবির্ভুত হয়েছে (যেমন অর্থনিতিবিদ বারাকাত ও ইতিহাসবিদ বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুন)। অন্যদিকে প্রশাসনিক আমলা কর্মকর্তা এবং উচ্চ মধ্যম নেতারাও পিছিয়ে নেই, যে যেভাবে পারছে বেসামাল বেপারয়া লুটপাট লিপ্ত হয়েছে প্রবল পরাক্রমে। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প বিশ্বরেকর্ড পরিমাণ খরুচে হয়ে উঠছে, প্রায় প্রতিটি একনেক বৈঠকেই বড় বড় প্রকল্প গুলোর ব্যয় শত বা হাজার কোটি করে বাড়ছে। আর ছোট প্রকল্পগুলোও কয়েক দফা ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া শেষ হচ্ছে না। প্রায় সকল উন্নয়ন প্রকল্প উচ্চ সুদের বিদেশী ঋণে হবার কারণে বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল ক্রমশ দেশের বাজেটের শীর্ষ খাতে হিসেবে আবির্ভুত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশ মাত্র এক দশকে ৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার প্রত্যক্ষ করেছে। প্রতিটি সরকারি ব্যাংক হাজার কোটির উপরে লোকসান করেছে। সরকারি বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাফী ঋণ প্রত্যক্ষ করেছে। সোনার বাংলাকে আওয়ামী এস্টাব্লিশ্মেন্ট লুট ও পাচারের ভাগাড় বানিয়ে ছেড়েছে।
ক্রান্তিকাল
দলীয় ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে বর্তমান রাজনীতিতে বহুবিধ দেশী ও বিদেশী কারণে দীর্ঘমেয়াদে পিছিয়ে পড়া দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী পক্ষ বিএনপি'র দায় কোন অংশেই কম নয়। বিএনপির দুটি বৈধ ট্রার্মই শেষ হয়েছে ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসির মধ্য দিয়ে, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মানার মধ্যদিয়ে, অন্যটি তত্তাবধায়ক সরকারকে দলীয় গন্ডির মধ্যে রেখে পুনির্বাচিত হবার দুর্বিত্ত চেষ্টার মধ্যদিয়ে। উভয়টিতেই বিএনপি পরাজিত হয়েছে। একটি মেরুন্ডবান নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে বিএনপিকে আন্তরিক হতে দেখা যায়নি যার ফল দলটি ভোগ করছে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভারতীয় স্ট্যাব্লিশ্মেন্টের বাইরের থাকা দাবি করে আসা দলটি দু দুবার পুর্ণ মেয়াদে থেকেও দেশের বিদ্যুৎ বন্দর রেল, সড়ক, যাতায়াত ও শিল্প ইনফাস্ট্রাকচার ভারতীয় ও চাইনিজ প্রভাবমুক্ত করে বুহুদুর এগিয়ে নিবার দূরদৃষ্টি দেখাতে প্রায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে (উল্লেখযোগ্য বলার মত হচ্ছে, সাধারণ ভাবে দেশের শিক্ষা ও নারী শিক্ষা এগিয়ে নিবার ভুল ভাল চেষ্টা করেছে দলটি)। বিএনপি বিগত সময়ে কখনই একটি পূর্নাঙ্গ ও টেকসই ভাবে কর্যকর এবং কল্যান ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের স্বপ্ন, দেশের সমস্যার সমাধান ও তা বাস্তবায়নে সক্ষম দলীয় লোকবল সৃষ্টি করার দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হতে পারেনি, আসলে দলটি নিদারুণ ভাবে অক্ষম, প্রজ্ঞাহীনদের দিয়ে চালিত। ফলে আজ রাজনৈতিক ও আর্থিক শক্তিতে পিছিয়ে পড়ে দানবীয় একদলীয় উত্থানে দলটি সরাসরি ভুক্তভোগী। মধ্যম পর্যায়ের দুটি দলের একটি যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিপর্যস্ত, অন্যটি ক্ষমতা বলয়ে ঢুকে আর্থিক যোগ উপভোগ রত। দেশের ক্ষুদ্র বিরোধীদল গুলোর ডান ও বামের দুটি ধারাতে বহুবিভক্ত, এদেরও কিছু সরাসরি ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগী, কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগের চেষ্টায় ও নিরন্তর অপেক্ষায় লিপ্ত। একটি অংশ ক্ষমতা বলয়কে অসন্তুষ্ট করে রাজনৈতিক কর্মসুচি দিতে নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে অক্ষম (এমনকি শত চেষ্টা করেও একটি সামাজিক আন্দোলনকেও এরা দাঁড়া করাতে পারেনি, যেমন রামপাল)। ডান ও বামের অন্য দুটি ক্ষুদ্র ধারা রাজনৈতিক বিপ্লব চাইলেও নিদারুণ ভাবে শক্তি ও অর্থে অক্ষম। ফলে কর্যকর ও জনস্বার্থ ভিত্তিক বিরোধী দল না থাকায় তাঁবেদার সরকাকে পুঁজি করে পেন্ডিং থাকা ডেভেলপমেন্ট স্কোপ গুলোতে ভারত ও চায়না এস্টাব্লিশ্মেন্টের একচেটিয়া অনুপ্রবেশে দেশের আর্থিক গোলামী প্রলম্বিত হচ্ছে, আর দেশের নাগরিক তা চেয়ে চেয়ে দেখচে।
ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করার পরবর্তী ধাপ গুলো আপাত দৃশ্যমান!
দুর্বিত্ত একদলীয় দলীয় ক্ষমতার নিরঙ্কুশ চর্চাকে প্রলম্বিত করতে ও বেপারোয়া লুটপাট জারি রাখতে আরেকটি একদলীয় ও ভোট হীন নির্বাচনের দিকে পা বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনা ও তার দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিগত জোট সরকারের সময় দায়ের করা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে শুধু খালেদা জিয়া ও বিএনপি দলীয়দের নামে থাকা মামলাগুলো রেখে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জারি রেখেছে। ( তিনটি গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য নাইকোকে কাজ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি সাধনের অভিযোগে দুদকের মামলা,কয়েকটি ঘুষের মামলা, মিগ ক্রয় মামলা উল্লেখযোগ্য)। ঠিক নির্বাচনের মূহুর্তে এসে মামলা গুলো এত বেশি সচল হয়েছে যে, খালেদা ও তার দলের সবাইকে প্রায় প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেরা মাজার জিয়ারত করে সরকারি পদে থেকে নির্বাচনী প্রচারণ চালানো শুরু করেছে। সবশেষে এসে দেখা গেল, হাজার কোটি টাকা লোপাট হবার দেশের আদালত দু কোটি টাকার মামলায় খালেদাকে ৫ বছরের জেলে পাঠিয়েছে, যদিও এই বিচার কার্যক্রমের শেষ দিনে সরকার স্বঘোষিত অবরোধ সৃষ্টি করে শত কোটি টাকার শ্রমঘন্টা নষ্ট করেছে এবং লেলিয়ে দেয়া সরকার দলীয় গুন্ডারা নিজেরাই বিবাদে লিপ্ত হয়ে নিজেদের একজনকে খুন করেছে। যেদেশে এমনকি সাধারণ রাজনীতিবিদেরও ডজন ডজন মামলা ডাল্ভাত সেদেশে দুবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে নিবার প্রয়োজন হয়েছে, কিন্তু জেলে যেতে হয়নি দুর্নীতির মামলায় শাস্তি ও জেল প্রাপ্ত বর্তমান সংসদেরই মন্ত্রীর কিংবা সাংসদকেও।
কথা হচ্ছে অত্যন্ত সুচারুরূপে বহুবিধ ধাপে দীর্ঘমেয়াদী একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠাকারী দুটি স্টাব্লিশ্মেন্টের উইন উইন সিচুয়েশন অব্যহত রাখতে, এই দুটি এস্টাব্লিশ্মেন্টের সকল সংস্ক্রিতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিমেন্টস গুলোকে সচল রাখতে দেশী-বিদেশী জোট এখানেই থামবে কিনা! আগের বার খালেদাকে বাইরে রেখেই একদলীয় নির্বাচন করা গেলেও এবারে ও সামনের দিনে আরো স্ট্রেইট ও নিরাপদ খেলতে চাচ্ছে গোষ্ঠীটি। সম্ভবত খালেদাকে জেলে নিবার প্রয়োজন ছিল এই কারণে যে, যেটুকু অবশিষ্ট নাগরিক সমর্থনের শক্তি খালেদা কেন্দ্রিক বিএনপি জোটের আছে তার অবসান ঘটানো। এমতাবস্থায় স্লো পয়জনিং এর কব্জায় এনে শীর্ষ বিরোধী নেতৃত্বকে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে একদলীয় ও দানবীয় শাসনের আরেকটি সূচনার সম্ভাব্য আন্দাজও অমূলক নয়। সাম্প্রতিক দশকে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এমেরিকা সহ কয়েকটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে পলোনিয়াম এসাসিনেশনের বাস্তবাতাকে মাথায় রেখে বাংলদেশে এই অপরাজনৈতিক তৎপরতার প্রয়োগকে উড়িয়ে দেয়া যায়না।
একটি বেপারোয়া, প্রবল পরাক্রান্ত, কর্তিত্ববাদী ও চরম স্বৈরাচারী সরকার ইতিমধ্যেই ১০ বছর অতিক্রান্ত করতে চলেছে, ফলে ডান কিংবা মধ্য কিংবা বাম যেকোন পর্যায়ের শীর্ষ বিরোধী নেতৃত্বের অনুপুস্থিতি (এমনকি তারা দুর্নীতি পরায়ন হলেও), আন্দোলন ও বিপ্লব হীনতা দেশকে আরো বেশি ইন্সটিটিউশন হীনতা ও জবাবদিহিতা হীনতারর চুড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের এমনিতেই ভঙ্গুর ইনিস্টিটিউশনাল পুরুপুরি ব্যর্থ হয়ে উঠবে এবং দেশ তার ভিতর ও বাইরের আর্থনৈতিক শত্রুদের ভাগাড়ে পরিণত হবে। আর নাগরিক আবদ্ধ হবে দীর্ঘ মেয়াদের আর্থিক ঋণ, কর্মহীনতা এবং আর্থ-সামাজিক নির্যাতনে নিপীড়িত। নাগরিক মর্যাদাহীন ফ্যাসিবাদী সমাজে নিষ্ক্রিয় বসবাস সভ্যতা ও নৈতিকতার হীনতম পরাজয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশে একদলীয় শাসনের দীর্ঘমেয়াদী ও দানবীয় উত্থানে উইন উইন অবস্থার সৃষ্ট হয়েছে ভারতীয় এবং দেশী আওয়ামী এস্টাব্লিশ্মেন্টের দুটি বন্ধু শিবিরে। এই খেলায় পরাজিত দেশের ও নাগরিকের আর্থিক স্বার্থ। একটি দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক ক্ষতি ও প্রাতিষ্ঠানিক নৈরাজ্যের নতুন শুরুর আভাস দেখা যাচ্ছে সমসাময়িক রাজনৈতিক তৎপরতায়!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:০১