somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের পেনিট্রেশনের স্বরূপ

১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের "সমাজ ব্যবস্থা"র একেবারে তৃণমূলে সামাজিক কাঠামো রক্ষা এবং সামাজিক ভ্যালূ চর্চার একেবারে প্রান্তিক প্রচেষ্টা ছিল গ্রামীণ সালিশি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা কখনো গ্রামীণ পঞ্চায়েত, কখনো গ্রাম সরকার কিংবা গ্রাম আদালত কিংবা চৌকিদার কিংবা গ্রামীণ কাছারি নির্ভর হয়ে বিচার-সালিস বন্দবস্তের মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতো। এখানে সেমি প্রতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে সমাজের রীতি নীতি এবং নৈতিকতা বাস্তবায়নে এবং অপরাধ দমনে সালিশি কাজ কর্ম চলতো স্থানীয়, মুরুব্বী, অভিজ্ঞাতা সম্পন্ন কিংবা শিক্ষিত মান্যবর লোকেদের মাধ্যমে। তবে নথি ভিত্তিক লিখিত রূপ, আন্ত গ্রাম বা চুক্তি নির্ভর অন্ত সমাজ সংযোগ না থাকলেও সাম্য, ন্যায়বিচার এবং প্রান্তিক যোগাযোগের ভিত্তি ছিল ধর্মীয় নৈতিকতা নির্ভর সামাজিক রীতিনীতি, আচার ব্যবহারের কথিত-চলিত ব্যবস্থা যা হাজার বছর ধরে সমাজের স্তিতাবস্থা ধরে রেখেছিল।

বলা অবশ্যিক যে সেসব রীতিনীতির অধিকাংশই সভ্যতার নিরিখে কালোত্তীর্ন হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক হবার কারনে আদর্শিক বিচ্যুতি, নৈতিক স্খলন, সম্পদের লোভ এবং স্থানীয় ক্ষমতার যোগ সেসব কথ্য এবং অলিখিত চলিত বিষয়গুলোকে সবসময়েই কম বেশি আঘাত করেছে, সময় যত গড়িয়েছে ক্ষমতা বলয়ের প্রভাব (আঘাত) ততই বেড়েছে।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন তৃণমূলের দিকে অগ্রসর হবার প্রথম দিকে মেম্বার এবং চেয়ারম্যান গন (শহরে ওয়ার্ড কমিশনার,তার ইকুইভাল্যান্ট) এই ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে সচেতনে কিংবা অচেতনেই কারণ এথিকস এবং ভ্যালূ ড্রিভেন রাজনৈতিক ব্যবস্থা কিংবা কালচার কোনটাই আমাদের কখনই ছিল না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু মেম্বার এবং চ্যেরমায়ন ভালো ছিলেন। আশির এবং নব্বইয়ের দশকে এসে দেখা গেল মেম্বার/ওয়ার্ড কমিশনার, চেয়ারম্যান , মেয়র এদের পিছনে ফেলে জাতীয় সংসদের এমপিরা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসে সরাসরি সমাজ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে (গ্রামীণ পঞ্চায়েত, ইউনিয়ন পরিষদের বিচার ব্যবস্থা, গ্রামীণ ক্লাব-সমাজ হিতৈষী সংঘ, পাঠাগার, যুব এবং ক্রীড়া সমিতি) অনৈতিক নাক গলাচ্ছে। একই সময় এমপিদেরকে স্থানীয় স্কুল গুলোর অবিভাবক কমিটির সভাপতির পদ বাধ্যতামূলক করে দেয়া হোল, ফলে স্কুল ভর্তি এবং শিক্ষক নিয়োগ রাজনৈতিক জালিয়াতির অতলে গেল এবং সেই সাথে গেল শিক্ষার মান এবং অবিভাবক সচেতনতা। এর পরে দেখা গেল এমপিরা এবং তাদের মনোনীতরা সরাসরি মসজিদ এবং মন্দির কমিটি গুলোতেও ঢুকে পড়লেন। একসময়ে মসজিদ কমিটি গুলো স্থানীয় ব্যক্তি এবং পরিবারের ক্ষমতা চর্চার কেন্দ্র হলেও আমরা এখন দেখছি এই কমিটি গুলোও দলীয় নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছে, মসজিদ ব্যবস্থাপনায় এলাকার অরাজনৈতিক লোক, ইমামদের এমনকি ব্যক্তি দাতাও ভূমিকা রাখার কোন অবকাশ নেই। দুর্নিতির টাকার কিছু অংশ মসজিদে ইনভেস্টের বিপরীতে আমাদের প্রার্থনার যায়গা গুলোকেও লূটে নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আমরা এখন দেখছি, স্থানীয় সরকারের গ্রাম এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কাজ (বরাদ্দ) গুলোও এমপির অফিস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় যদিও তার বাস্তবায়নের চ্যানেল এর অনুকূলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্ন মন্ত্রনালয়ের (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ) প্রতিষ্ঠিত কাঠামো রয়েছে।


স্থানীয় সরকার এবং সমাজে রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের এই পর্যায়ে এসে ২০১৫ তে সমাজ এবং রাজনীতির নূন্যতম লাজ শরমের মাথা খেয়ে স্থানীয় নির্বাচনকেও দলীয় দুর্বিত্তায়নের সরাসরি রূপ দেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে না দিয়ে লুটপাট ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার গুলোকেও সরাসরি দলীয় প্যাকেজে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ঘুষ তদবির এবং ইমপ্লিমেন্টেশন বাজেট এর লুটপাট সহজতর করতে দলীয় লোকের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে। এই জঘন্য এবং অতিশয় নিন্দনীয় ব্যবস্থার উত্তরণ এর অনুকূলে আগে থেকে রাজনৈতিক দলের কমিটিকে থানা-ইউনিয়ন পর্যায় থেকে নামিয়ে গ্রাম পর্যায়ে আনা হয়েছে। মানে এই সময়ে এসে এমনিতেই জর্জরিত হতে থাকা "সমাজ ব্যবস্থা" পুরোপুরি বিলোপ করে দিয়ে "দুর্বিত্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা" দিয়ে রিপ্লেইস করে ফেলা হয়েছে।

মানে বাংলাদেশের কোথাও সমাজ বলে আর কিছু অবশিষ্ট রইলো না। সমাজহীন দেশের (!) এই রুপান্তর গ্রামীণ জনপদ গুলোতে অপরাধের বিস্তার ইতিমধ্যেই অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলেছে, হীন থেকে হীনতর অতি জঘন্য মাত্রার সব অপরাধই আজ "দুর্বিত্ত রাজনৈতিক সমাজের" একমাত্র দর্পণ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় ব্যক্তি নাগরিকের গ্রামীণ সমাজেও কোন ভূমিকা রাখার কোনই অবকাশ রইলো না।
সমাজহীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের পেনেট্রেশন (পড়ুন কালো ছোবল) এর পরবর্তি আনুষ্ঠানিক টার্গেট গ্রামের ভিতরের এক একটি পাড়া,এর পর এক একটি বাড়ি এবং তার পরে এক এক জন পরিবার বা এক এক জন ব্যক্তি, যদিও অনানুষ্ঠানিক ভাবে ইতিমধ্যেই ব্যক্তি এবং তার পরিবার এই কাল ছোবলের বাইরে নয়।

দুর্বিত্তায়নের এই রূপ ভীতি জাগানিয়া।
সত্যই ভয়ঙ্কর পর্যায়ের ভীতি জাগানিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×