শহুরে নাগরিক বিভিন্ন ব্যয় ভারে নূজ্য থাকেন। বিস্তৃত নিন্ম বিত্তের প্রায় শতভাগ উপার্জিত জীবিকা খাদ্য সংক্রান্ত খাতে ব্যয় হয়। আমাদের বিকাশমান মধ্যবিত্তেরও সিংহ ভাগ উপার্জন খাদ্য পণ্য ক্রয়ে ব্যয় হয়। নদীর সারফেইস ওয়াটার, ভূগর্ভস্ত পানির স্বল্পতা কিংবা দুষ্প্রাপ্যতা, ঋতুর পরিবর্তন, খরা, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার জঞ্জাল, কৃষি ঋন এবং কৃষি উপকরণের কোম্পনি নির্ভরতার প্রত্যক্ষ কারণে দিন দিন বাড়ছে কৃষি উৎপাদন ব্যয়। সেই সাথে রয়েছে দাম বৃদ্ধির পিছনের কিছু পরোক্ষ কারণ। এই সব নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনার পরিসর গড়া হয়েছে এই কৃষি ইনফাস্ট্রাকচার সম্পর্কিত কথামালায়।
১। কৃষি পণ্য রেজিস্ট্রেশন, বিভিন্ন ফলনের ভারসাম্য এবং ডাইভার্সিটিঃ বাংলাদেশে কৃষি পণ্য রেজিস্টার্ড নয়, চাহিদার আলোকে উৎপাদন হয় না। রেজিস্টার্ড না থাকায় ফলনে ভারসাম্য এবং ডাইভার্সিটি নেই। ফলে একদিকে বিশেষ বিশেষ এলাকায় বিশেষ বিশেষ ফলন বেশি করা হয়। এতে হয় বাম্পার ফলন হচ্ছে, বাম্পার মানেই ফলনের দাম কম, বিক্রি করতে না পারা, ফলন গরুতে খাওয়ানো, হারভেস্ট না করা। অন্যদিকে ভূগর্ভস্ত সেচের পানি না থাকায়, নদিতে পানি না থাকায় এবং খরায় (অনাবৃষ্টি), কিংবা অতি বৃষ্টি এবং শিলা বৃষ্টিতে এলাকার সবাই ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে। ফলনে ভারসাম্য এবং ডাইভার্সিটি এমন একটা ব্যাপার যা সরকার এবং কৃষি প্রশাসনই শুধু দেশের সামগ্রিক ভোক্তা চাহিদা এবং দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার চাহিদার আলোকে নির্নয় করতে পারে। সেই আলোকে বিশেষ বিশেষ ফলন উৎপাদনের জন্য কৃষককে উৎসাহ এবং প্রণোদনা দিতে পারে। প্রণোদনা হচ্ছে বীজ, সার, ফলন ভেদে নিউট্রিশন, কৃষি পরামর্শক এবং চাষাবাদ বিশয়ক টুলস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, যোগান দেয়া বা এগুলোর প্রাপ্তিকে ফেসিলিটেইট করা। এগুলো আমাদের তৃণমূল পর্জায়ে বিস্তৃত আঞ্চলিক কৃষি অফিসের মাধ্যমে করতে পারার কথা। কিন্তু হায়! এসব কিছুই না করে উনারা সারের ডিলারশীপ ভিত্তিক ঘুষ আদান প্রদানে ব্যস্ত থাকেন। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্য পণ্য সংগ্রহের কাজে যে ফান্ড দেয়া হয় সেটার নয়ছয় এবং ফলন কিনে কৃষক হয়রানি করে ঘুষ আদায়ই উনাদের প্রধান কাজ। কৃষকরা সমস্যা নিয়ে কৃষি অফিসে গেলে বরং বিপদেই পড়েন।
বিস্তীর্ন মাঠে ধানের আবাদ-বাম্পার ফলন তাও বিপর্যস্ত ধান চাষি (সমন্বিত চাষ এর অনুপস্থিতি)
২। বিশ্বের সবচাইতে ঘন বসতি পুর্ন দেশে মাস প্রোডাক্টিভিটি নিশ্চিত করতে আমাদের থানা এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক আঞ্চলিক কৃষি অফিস গুলোর হয়ে উঠা দরকার ছিল এক একটি টুলস হাউজ, যাতে কৃষক তাঁর কায়িক শ্রম থেকে মুক্তি পান। কৃষিকে পেশা হিসেবে আনন্দময় হিসেবে পান। এক একটি কৃষি অফিসের এক একটি সহায়ক কৃষি ফার্ম হয়ে উঠার কথা ছিল, ছিল এক একটি ফ্রি পরামর্শ কেন্দ্র, ট্রেনিং সেন্টার এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিন্তু এসব স্বপ্ন। সামান্য পাওয়ার টিলার এর ভাড়া দিতেই কৃষকের আর্থিক দম ফুরায়।
গতর খাটানো কৃষি শ্রম-ফসলের মাঠে কৃষকের অরক্ষিত হাঁসি!
৩। কিছু ফলন (ধান, আলু, আম, পেয়ারা, বড়ই, কাঁঠাল, বিভিন্ন সবজি ইত্যাদি) এর বাম্পার হলেও একই মৌসুমের অন্য ফলনের ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও উৎপাদন হচ্ছেই না, প্রতি বছর আদা, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় যা অতি রাসায়নিক সার, স্প্রে নির্ভর জিএমও জাত, স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখানে কিছু আমদানিকারক চক্র রয়েছে যারা পিঁয়াজ এর মত ফলন গুলো স্থানীয় ভাবে উৎপাদনে কিংবা উৎপাদন সহজীকরনে পরোক্ষ বাঁধা দেয়। এই সব রাজনৈতিক দুরবিত্তায়নের যুগে অপ্রতিরোধ্য চক্র হয়ে উঠেছে।
৪। কৃষক সরকারের কাছ থেকে সরাসরি রাসায়নিক সার, বীজ, কীটনাশক জৈব সার পাচ্ছেন না। এগুলো এজেন্ট/ডিলার/দালালের মাধ্যমে আসে। এই সাপ্ল্যাই চেইনটা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে, মূল দামের সাথে এদের বখরা যোগ হয়। এর বাইরে আছে দলীয় কর্মীদের অনুকল্য এবং আরো এক স্তরের দালালী ব্যবসা। ফলে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে জিএমও বীজের ফলন করেন। তাছাড়া একটি এলাকায় সবাই ধান করলে চাইলে অন্য ফলন করা যায় না। কৃষক পর্যায়ে বিচিত্র ফলনের সমাহার আনা দুস্কর হয়েছে পরিপার্শের কৃষি ইনভাইরন্মেন্টের কারণে, তাই এই কাজে কৃষি প্রশাসন কে খুব প্রয়োজন। ফলন রেজিস্ট্রেশন এবং এর অনুকুলে বীজ সার দেয়া, ফসলকে চাহিদার আলোকে সমন্বিত করা হয় না বলে এবং উৎপাদিত কৃষি পন্যের দামের ন্যায্য মূল্য না দেয়ায়, পণ্য দামে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকাই স্বাভাবিক। কৃষক হয় হায় হায় করে অথবা সময় বুঝে বেশি দাম নিবার চেস্টা করে।
৫। ব্যাপারটা এতো সহজও নয়। বাংলাদেশের জন্য উপযোগী ফারমার্স মার্কেট হয়ে উঠেনি শহরে, ফলে শহরের ভোক্তা এবং গ্রামের উৎপাদনকারীর মাধ্যে কয়েক স্তরের দালাল চক্র কাজ করে। কাওরান বাজারের মত বড় বাজার গুলোতে ব্যক্তি কৃষকের ফলন নিয়ে আসার সুযোগ নেই। দেশে অরগ্যানিক বা জৈব কৃষির চাষাবাদের উদীয়মান বাজার এর পুরোটাই সুপার শপ ভিত্তিক। খোলা বাজারে জৈব পণ্যের সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। পবিত্র রমজান মাসে এবং অন্য ফেস্টিভালে মজুতদাররা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এখানে কৃষক তেমন সুবিধা পান না। কারন ফলন তারা আগেই লট ধরে বেচে দেন, কিছু সামান্য ব্যাতিক্রম ছাড়া !
৬। ট্রান্সপোর্টেশন খুবই এক্সপেন্সিভ।মানহীন। ফলজ পণ্য, দানাদার শস্য, পাতা জাতীয় সবই একই খোল ট্রাকে, যাত্রীবাহী বাসের ছাদে কিংবা বক্সে অত্যন্ত গরমের মধ্যে, অত্যধিক বাতাসে, রোদে পরিবহণ করা হয়, মানে পরিবহণ মাধ্যমটির অভ্যন্তর লেয়ারড নয়, তাপানূকুল পরিবেশ তো আশাই করি না। মানে বলছি দেশে সবজি সহ নানা রকম কৃষি পণ্য পরিবহনের উপযোগী কোন যুতসই পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি।এক ট্রাকই সকল পন্যের ট্রান্সপোর্ট ডেস্টিনেশন। গবেশনায় দেখা গিয়েছে ১৫-২০% পণ্য শুধু পরিবহনে নস্ট হয়। ফলে পরিবহনে পণ্যের মান নস্ট হয়ে কিছু অংশ মূল্য হারায়। ট্রান্সপোর্টেশন সেকটরে পুলিশের চাঁদাবাজিও ভয়ানক। ২০১৫ তে পবিত্র কুরবানীর ঈদের সময় দেখা গিয়েছে এক ট্রাক গরু উত্তর বঙ্গ থেকে ঢাকায় আসতে পথে পথে চাঁদাবাজি হয়। এগুলো প্যাসিভ কষ্ট হয়ে কৃষি উৎপাদনের দাম বাড়াচ্ছে।
২২হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় ১০ টনের একটি ট্রাককে ৪৩৯ কিমি পথ অতিক্রম করতে, পন্যের দাম কমবে না বাড়বে?
পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে পুলিশের চাঁদাবাজি
৭। স্থানীয় পাইকারি বাজারের সমিতি নির্ভর, পুলিশি এবং রাজনৈতিক চাঁদাবাজি। স্থানীয় দুর্বিত্ত রাজনীতির লোকেরা শকুনের মত লুফিয়ে থাকে কখন ফলন তোলার সময় হবে!
৮। ঋন থাকায় ফলন স্টরেজ করতে পারেন না আমাদের কৃষক, উৎপাদনের অব্যবহতি পরেই তা বিক্রয় করে দেন। তার উপর উচ্চ আদ্রতার এবং উচ্চ তাপমাত্রার আবহাওয়ায় পচনশীল সবজি জাতীয় কৃষি পণ্য সংরক্ষণের কোন উপায়ই দেশে নেই, এগুলো নিয়ে কোন পরামর্শ নেই, টুলস সাপোর্ট নেই, গবেষণা নেই। নেই কোন ইনফাস্ট্রাকচার। কোল্ড স্টরেজ ফ্যাসিলিটি সীমিত, প্রান্তিক কৃষক এখানে এক্সেস কম পান, সাধারণত মজুতদার কোল্ড স্টরেজ ব্যবহার করেন। তবে কারিগরি ব্যাপার হোল ভিন্ন ভিন্ন ফলনের চাহিদা মোতাবেক আমাদের কোল্ড স্টরেজ ক্লাসিফাইড নয়, দেখা যায় পুরটাই আলূর উপযোগী! ফলে কৃষকরা তারা এন্টি ক্লোরিনেটেড ওয়াটার, কার্বাইড কিংবা ফরমালিন ব্যবহার করছেন! উৎপাদিত পচনশীল পন্যের সংরক্ষণ না থাকায় মৌসুমের বাইরে ফলনের কোন বাজার নেই। এতে কৃষককে অনেক বেশি উৎপাদিত বাল্ক পণ্য মৌসুমেই বাজারে ছাড়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। (উদাহরণ ভিন্ন ভিন্ন জাতের আমের হারভেস্ট ডিউরেশন ৩-৪ সপ্তাহ, লিচূর মাত্র ২ সপ্তাহ,কাঠলের ৩-৪ সপ্তাহ ,সংরক্ষণ ব্যবস্থা না হাকায় এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যেই আপনাকে বাজারজাত করতে হবে! )। তাই পরিমানের তুলনায় বেশি উৎপাদন হলেও সমন্বিত বাজারজাতকরনের অভাবে পচনশীল পন্য পানির দরে বিক্রি হয় ফুল মৌসুমে যদিও পড়ে আকাশচুম্বী থাকে দাম। এতে বিষ মিশিয়ে সংরক্ষণের প্রবণতা বাড়ে, এই কাজ সাধারণত দালাল এবং মজুতদারেরাই বেশি করে। উপরন্তু বাংলাদেশ এমন একটি কৃষি উৎপাদনকারী দেশ যার পণ্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা কিছু মাত্র ভোগ করলেও আমাদের কোন ভিনদেশি ভোক্তার আন্তর্জাতিক বাজার নেই, এর প্রধান কারন মানসম্পন্ন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরন, ফুড গ্রেড প্রসেস, মান্সম্পন্ন প্যাকেজিং এবং বিপণন। এই কাজে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং ব্রাজিলকে ফলো করতে পারে বাংলাদেশ।
৯। কৃষি পণ্যের বাজার বাজারঃ একটি কৃষি পন্যের অন্তত ৬ রকমের বাজার থাকা চাই-
ক। মৌসুমে দেশি ভোক্তার বাজার
খ। মৌসুমের বাইরে দেশি ভোক্তার বাজার
গ। মৌসুমে বিদেশি ভোক্তার বাজার
ঘ। মৌসুমের বাইরে বিদেশি ভোক্তার বাজার
ঙ। এই পণ্য জাত প্রসেসড ফুডের বাজার দেশে (যেমন ফলের ক্ষেত্রে ড্রাই ফ্রুট,জুস, জুস তৈরির নেক্টার)
চ। এই পণ্য জাত প্রসেসড ফুডের বাজার বিদেশে (খেয়াল করবেন- পেয়ারার জুস পৃথিবীর অন্যতম দামি, কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে গরুতে খায় আমাদের দেশে!)।
আফসুস হচ্ছে, আমাদের কৃষকের বাজার "ক" তেই সীমাবদ্ধ। হ্যাঁ মজুদকারীরা বিষ মিশিয়ে "খ" বাজার তৈরির চেষ্টায় আছেন, সেই সাথে পুরো খাদ্য চক্র বিষাক্ত হয়ে উঠেছে, ঘরে ঘরে আজ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে। অথচ কৃষি প্রধান দেশে সরকারের আন্তরিকতা থাকলে মৌসুমের বাইরে দেশি ভোক্তার বাজার ফুড গ্রেড প্রসেসের মধ্যে থেকেই বের করা যায়। মোট কথা আমাদের কৃষি উৎপাদন বেশি মাত্রায় অনিয়ন্ত্রিত এবং আন এক্সপ্লোরড।
এই ছয় রকমের বাজারের বাইরেও এই সময়ে অরগ্যানিক কৃষি পন্যের জন্যও এই ৬ টি প্যারালাল বাজার সৃষ্টি করা সম্ভভ। একজন কৃষককে মোট ১২ রকমের বাজারে তাঁর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করনের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এক অভাবনীয় মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম কৃষি উৎপাদনকারী দেশ, কৃষিতে আমাদের অর্জন অবশ্যই অসামান্য। উৎপাদনের এই অর্জনকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরনে সঞ্চারিত করা গেলে সেটা হবে একটা টেকসই উন্নয়ন।
১০। এখন প্রায় সব বীজই জিএমও, এগুলা থেকে উৎপাদিত ফলনের বীজ থেকে চারা হয় কিন্তু ফল হয় না। ফলে প্রতি বছর চারা কিনার বোঝা, আর এগুলা যেহেতু পতঙ্গ প্রতিরোধী নয় তাই এদের সার বীজ কীটনাশক স্প্রে বেশি লাগে। এগুলা সব মিলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ছেই, সেই সাথে বছর বছর ঋনের দায় বাড়ছেই। কোন বিরল ফলনের জাত চাষ করা চাষি তার ফলন থেকে ডিস্কন্টিনিঊ হয়ে জান, ফলে ধান বা সবজির বিশেষ জাত ২-৩ বছর চাষাবাদ না হবার কারনে বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে চাইলে তা আর পাওয়া যায় না। ফলে দিন দিন দেশীয় জাত বিলুপ্ত হয়ে বিদেশি কোম্পানির উপর জি এম ও চারা নির্ভরতা আসছে যা রোগ বালাই এবং পতঙ্গ প্রতিরোধী নয়। আপনাকে তাদের সার, এন্টি ফাঙ্গাস, এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল কীটনাশক স্প্রে কিনতে হবে। যেহেতু এগুলো ব্যবহার করে উপকারী পোকা গুলোর প্রজাতি নস্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই ক্ষতিকারক পোকা গুলো আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মানে হোল আপনাকে বছর বছর আরো শক্তিশালী ঔষধ (সার, এন্টি ফাঙ্গাস, এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল কীটনাশক স্প্রে ইত্যাদি) কিনতে হবে। এভাবেই আপনি সার বীজ কীটনাশক ছত্রাকনাশক সব কিছুর জন্য কোম্পানি নির্ভর হয়ে উঠবেন। এটা সরকার এবং প্রশাসনের লোকদের আমরা বুঝাতে পারছিনা। আফসুস। উনাদের বুঝে আসে না, কেন কৃষকের উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে।
১১। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জনপদে পন্য পরিবহণ এবং নাগরিক ট্রাস্পোর্টেশন সেবা পৌঁছে দেয়াই হবার কথা ছিল- বিআরটিসি'র আর রেলের কাজ। কিন্তু তা না করে বিআরটিসি ওয়েল স্ট্যাব্লিশড রুট গুলোতে এসি বাস সার্ভিস নিয়ে ব্যস্ত আছে, অধিক ব্যয় দেখিয়ে প্রফিট হাতিয়ে নেয়ার মচ্ছব বানাচ্ছে একের পর এক। আর রেল! কি আর বলবো- ইঞ্জিন না কিনে কোচ কিনা নিয়েই ব্যস্ত আছে! ফলে সাধারণ ট্রাক - নসিমন-করিমন-টেম্পু আর পাম্প চালিত যান সহ স্থানীয় উদ্ভাবন গুলোই হয়ে উঠেছে গ্রামীণ মানুষের জন এবং পন্যের পরিবহণ। অতি অবাক করা বিষয় কৃষি উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে আজো কোন পরবহন ব্যবস্থা দাঁড়া করায়নি "বি আর টি সি" এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজো উত্তর বঙ্গ, দক্ষিণ বঙ্গের পণ্য শহরে আনার জন্য কোন বিশেষায়িত বাস ট্রেন নেই, ক্লাসিফাইড এবং লেয়ারড রেল কোচ নেই, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচ নেই, বি আর টি সি এবং রেলের! অথচ মাস এগ্রি এবং ফিশারিজ প্রডাক্ট কিছু নির্দিস্ট বেল্ট থেকেই আসে। চাঁদাবাজি, বখরা, কমিশন মুক্ত রেল এবং বি আর টি সির ক্ল্যাসিফাইড কৃষি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা তৈরি করা গেলে বাংলাদেশের কৃষিকে এবং কৃষি পণ্যের ট্রান্সপোর্টেশন এবং বাজারজাতকরনের ব্যবস্থাপনা গুলোকে এক অভাবনীয় উচ্চতায় আনা যাবে।
মহাসড়কের পাশে, ফেরি ঘাটে, জ্যামে মাইলের পর মাইল দাঁড়িয়ে থাকে নন প্রায়োরিটি কৃষি পণ্য বাহী ট্রাক। সকাল ৬ টার মধ্যে ঢাকায় প্রবেশের বাধ্যবাধকতায় পড়ে, ৬-১০ টা ঢাকা বাইপাসের সুযোগ না থাকায় আটকে থাকে হাজার হাজার ট্রাক, এসব পণ্য মূল্য বাড়াচ্ছে, শ্রম ঘন্টা নস্ট হচ্ছে! এইসব পরোক্ষ বিষয় নিয়ে ভাবাই সময়ের দাবি।
কিন্তু শহরে বসে আমরা নাগরিকরা দাম কম চাই খালি! যদিও বহুবিধ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কারণে কৃষক সর্বসান্ত। হাঁ কিছু দালাল মধ্যস্বত্য ভোগ করে বড় লোক হচ্ছেন। এগুলার জন্য লীডারশীপ এবং কৃষি প্রসাশনের স্ট্রাকচারাল খামখেয়ালী পনা দায়ী। কিভাবে উপরে ব্যাখ্যা করেছি, এখানে শুধু একটা বিশেষ আইন করলেই বা নির্দেশ দিলেই হবে না। একটা সমন্বিত কৃষি উৎপাদন, প্রক্রিয়া জাতকরন, ফলন সমন্বয়, গবেষণা, স্টোরেজ, পরিবহণ এবং বিপনন ব্যবস্থার ফ্রেইমোয়ার্ক দাঁড়া করাতে হবে যাতে মধ্যস্বত্য দালালের অংশগ্রহন সিস্টেমেটিকেলি কমে আসে, যাতে ডিরেক্ট চ্যানেলে সরাসরি কৃষক তার পণ্য শহরের বাজারে আনতে পারবেন (ফার্মারস মারকেট) কিংবা সুপার চেইন গুলো ডাইভার্স কৃষক সোর্স থেকে পণ্য কিনতে বাধ্য থকবেন, যাতে কৃষক ৬+৬ রকমের বাজার এক্সপ্লোর করতে পারেন। সেই সাথে রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীট নাশক, জৈব বালাই নাশক, বীজের বন্দোবস্ত করতে হবে, মোট কথা চাহিদার আলোকে উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হবে। রাসায়নিক সারে উৎপাদিত বাজারের বাইরে প্যারালাল অরগ্যানিক কৃষি পন্যের বাজার তৈরিও সময়ের দাবি।
দাম কমানোই যেন নাগরিকের একমাত্র কাম্য না হয়। পিছনের ব্যাপার গুলো নাগরিকদের বুঝতে হবে, নাগরিক সচেতনতা তৈরি করে সরকারের উপর চাপ দিতে হবে। আমাদের সরকার গুলো জ্ঞানহীন দুর্নিতি প্রবণ হীনমান্য লোকে গড়া, এই ব্যাকডেটেড লোক গুলার দেশকে সার্ভিস দেবার ক্যাপাবিলিটিও নেই। তবে তারা যে সত্যিকারের দুরদর্শী সমাধান ভিত্তিক কাজ করছে না এটা তাদের চোখে আঙুল দিয়ে না দেখাতে পারলে তারা কিছুই করবে না। তাই কৃষি এবং খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ার দায় কৃষককে না দিয়ে প্রশাসন এবং সরকারকে মৌলিক ইনফাস্ট্রাকচারের অনুপুস্থিতির জানান দিক অগ্রসর নাগরিক!
কৃষি ব্যবস্থাপনার সেন্স আসুক নাগরিকের মাঝে,
কৃষি প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা সেন্স উন্নত হোক,
কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ পরিবহণ এবং বিপননের মান্সম্পন্ন জ্ঞান ছড়িয়ে যাক,
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
রেফারেন্স ব্যাংকঃ ১৫ ও ১৬ নং কমেন্টে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯