হিপ্নটিজম নিয়ে আমার প্রথম ব্লগ টা এতো সাড়া পাবে ধারণা ছিলনা। এমনিতেই নতুন ব্লগার আমি। তাই ভালো লাগাটার পরিমাণ অনেক বেশী ছিল। উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ সবাই কে। প্রথম ব্লগ এর লিঙ্ক Click This Link
এবার তাহলে হিপ্নটিজম জিনিসটা কি সেটা সাধারণভাবে বলার চেষ্টা করিঃ
আসলে হিপ্নটাইজড অবস্থা টা আমাদের খুব পরিচিত ১ টি অবস্থা এবং আমরা কিছুটা হলেও প্রতিদিন ই এর ভেতর দিয়ে যাই। অর্থাৎ হিপ্নটাইজড হই। আংশিক হলেও।কিভাবে???
বলছি, ভুরু সোজা করুন।
আমাদের জীবনে আমরা সবাই কমবেশি এমন পরিস্থিতি তে পড়েছি যে হয়ত খুব ভালো ১ টা বই পড়ছি এবং বইটায় এতই তন্ময় যে অন্য কোনও কিছুর প্রতি খেয়াল নেই। হয়ত খেতে ডাকছে বা ব্লাডার যায় যায় অবস্থা।কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসেনা। এটা এক ধরনের হিপ্নটিক ট্র্যান্স। এটা কে বলে বুক ট্র্যান্স।
আরেকটা উদাহারন আমাদের ড্রয়িং রুমেই আছে। হ্যাঁ টিভি। এমন অনেক হয়, যে খুব জরুরি কাজ। বুঝতেসি যাওয়া প্রয়োজন কিন্তু উঠতে পারতেসিনা টিভির সামনে থেকে। মাথায় অন্য কিছু কাজ করছেনা। এটাও ১ ধরনের ট্র্যান্স।
আরেকটা ঘটনা ঘটে হাইওয়ে তে। রাস্তার মাঝখানের সাদা দাগগুলো বার বার দেখার ফলে চালক এর মনে একঘেয়েমির কারনে ট্র্যান্স এর সৃষ্টি হয়। চার চাকা চালানোর সৌভাগ্য হয়নি। তাই এটা নিয়ে আর কিছু বলতে পারতেসিনা। আপনারা যারা গাড়ী চালান তাদের দায়িত্ব থাকল এটা নিয়ে বলার।
তাহলে সোজা কথায় বলতে গেলে হিপ্নসিস হল মনের ১ টা পরিবর্তিত অবস্থা । এবং এই অবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে এসময় মন যে কোনও সাজেশন এর প্রতি অতি মাত্রায় সাড়া দেয়। এটা আমি পরে আরও ব্যাখ্যা করবো।
হিপ্নটিজম কিভাবে কাজ করেঃ
একটু পুরানো জিনিস নিয়ে কপচাই। আপনারা হয়ত সবাই জানেন এসব ।
আমাদের মনের ২ টি অংশ ।সচেতন মন ও অবচেতন মন। দৃশ্যত সচেতন মন কে আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে দেখলেও আসলে ভেতরে থেকে সব কলকাঠি নাড়ে অবচেতন মন। অনেকটা কম্পেউটার এর মনিটর আর সি.পি.ইউ এর মত। আমাদের খাওয়া-দাওয়া, হাটা- চলা, কাজ এসব আমরা সচেতন অবস্থায় করলেও হাটার সময় কোন পা কখন উঠবে তা আমরা চিন্তা করে উঠাই না। এটা করে দেয় অবচেতন মন। আমাদের নিঃশ্বাস নেয়া, আবেগ, ঘুম,স্বপ্ন, মনোযোগ, স্মৃতি এসব কিছুই অবচেতন মন নিয়ন্ত্রণ করে। আর এ কারণেই বেসিক আলীর হিল্লোল ছাড়া আমরা কেউ কখনো নিঃশ্বাস নিতে ভুলিনা।
হিপ্নটিজম এ কিছু কথা ও কল্পনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্রেন ওয়েভ কমিয়ে ফেলা হয়। ঘুম থেকে উঠার পর যেমন অবস্থা থাকে অনেকটা তেমন। এই কম ওয়েভ ই হল অবচেতন মন এর সাথে যোগাযোগ এর মূলমন্ত্র। এসময় যোগাযোগ এর দুয়ার খুলে যায় এবং অবচেতন মন কে সরাসরি সাজেশন দিলে সে সেই অনুযায়ী কাজ করে। আর মজার ব্যাপার হল যে এসময় সচেতন মন দর্শক হিসেবে পুর ব্যাপারটা অবলোকন করে।
১ টা উদাহারন দিলে এটা পরিস্কার হয়ে যাবেঃ ধরুন আমি আপনাকে গাইড করে করে রিলাক্সিং কিছু কল্পনা করিয়ে আপনার ব্রেন ওয়েভ কমিয়ে আনলাম। এরপর আপনাকে বললাম যে এখন থেকে "প্লাটীপাস" কথাটা বললে আপনার অনেক হাসি পাবে। আপনার মন ব্যাপারটা গ্রহণ করলে এটা ব্রেন এ প্রোগ্রামড হয়ে যাবে এবং আমি "প্লাটীপাস" বললে আসলেই আপনার অনেক হাসি পাবে। এবং আপনার সচেতন মন দিয়ে আপনি এই পুরো ঘটনা বুঝতে পারবেন এবং সব আপনার সামনেই হবে। আপনি যদি ব্যাপারটায় মজা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি চুপ করে থাকবেন আর দেখবেন যে, আপনার হাসার ইচ্ছা না থাকলেও আপনি হাসছেন। তবে আমি যদি এমন কিছু বলি যেটা আপনার ক্ষতি করবে বা আপনার মানসম্মান এর ক্ষতি হবে তখন আপনি সাথে সাথে ট্র্যান্স থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
এভাবে মজাদার অনেক কিছু করা যায়। যেমন আমি আমার ২ বন্ধু কে এমন করে ৪ সংখ্যা টা ভুলিয়ে দিয়েছিলাম। ওদের জাগানোর পর ওদের হাতের আঙ্গুল গুণতে বলা হলে ওরা ৪ বাদ দিয়ে গুনে ১,২,৩,৫,৬ মোট ৬ টা গুণতে ছিল। ওরা বুঝতেসিল যে হাতের আঙ্গুল ৬ টা না। কিন্তু কিভাবে ৬ টা হল সেটা বুঝতেসিলনা।
হাত মুঠ করে কাল্পনিক গাম লাগিয়ে দিলে আর খুলতে পারবেনা।
হাত কে লোহার মত শক্ত বানিয়ে দেয়া যায় অথবা হাতে কাল্পনিক হিলিয়াম বেলুন বেধে দিলে হাত একা একাই উপরে উঠে যায়।
হাত অবশ ও করা যায় ।আর যেগুলো বললাম আমি সেগুলো করতে সক্ষম হয়েছি এবং আরও অনেক কিছু। আপনারাও পারবেন। ১ দম সহজ। আজ এ পর্যন্তই থাকুক। টাইপ করার অভ্যাস নাই। হাত ব্যাথা করছে। কারো কোনও প্রশ্ন থাকলে করবেন। আর কোনও ভুল করে থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে আমার লেখা পড়ার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩৬