ব্যাপক দুর্নীতির তদন্তে সরকারের অসহযোগিতার কারণে পদ্মাসেতুতে প্রতিশ্র“ত ১২০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি বাতিল করছে বিশ্বব্যাংক। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার ওই দুর্নীতিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। আজ সকালে বিবিসি’র প্রত্যুষা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় গত গভীর রাতে এ বিবৃতি দেয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটন থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা না করায় তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের বিবৃতিতে বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের যোগসাজশে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি বলছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেবে বলে তারা আশা করেছিল। বিশ্বব্যাংকের দাবি ছিল যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সরিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু সার্বিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ সন্তোষজনক ছিল না বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এজন্য বিশ্বব্যাংক বিষয়টিতে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয়। সব মিলিয়ে সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্র“ত ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি বলছে। বিবিসি আরও জানায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ওই সব তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, দুর্নীতির এ অভিযোগ পুর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দেবার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংক বলছে, বাস্তবে সেটি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের প্রথম দাবি ছিল, যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সরিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত, এ অভিযোগ তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত দল নিয়োগ করা। বিশ্বব্যাংক বলছে, এমন প্রেক্ষাপটে সংস্থাটির অবস্থান ব্যাখ্যা করা এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে উত্তর জানার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারের প্রতিক্রিয়া বা উত্তর সন্তোষজনক ছিল না বলে বিশ্বব্যাংক বলছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার কারণেই ১.২ বিলিয়ন বা ১২০ কোটি ডলারের এই ঋণচুক্তিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা একটি প্রকল্পে তখনই অর্থায়ন করতে পারে যখন তারা সেই প্রকল্পের স্বচ্ছতা এবং কার্যক্রমের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। বিবিসি আরও জানায়, পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিত রাখে। তবে বাংলাদেশ সরকার বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এছাড়া বিকল্প অর্থায়নের পথও খুঁজছিল বাংলাদেশ সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন আগে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে অর্থায়ন প্রশ্নে চূড়ান্ত চুক্তির খসড়া প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগেই বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্মানজনক সমাধানের চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এখনো সমঝোতার পথ বন্ধ হয়নি বলে তখন তিনি উল্লেখ করেছেন।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১২ সকাল ১১:৩৭