somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওই বুট ওই লাথি, ওই আমাদের শিক্ষক, ওই পড়ে মার খায় জনতার লোক

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যাঁ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে রাস্তায় পেড়ে ফেলে লাঠিপেটা, পদাঘাত, বুট দিয়ে পেষা আমরা সহ্য করে নেব। আমাদের চোয়াল শক্ত হলেও, দাঁতে দাঁতে পেষাপেষির শব্দ আপাতত কাউকে শুনতে দেব না। কারণ, দিনবদলের সরকার আর গ্যাস-কয়লার লুণ্ঠনের সহযোগী দালালদের আমরা সহ্য করে নিয়েছি। কারণ, এনজিও আর কর্পোরেটের দালালদের আমরা জাতীয় বুদ্ধিজীবীর তকমায় মুড়িয়ে কেষ্ঠগোপাল বানিয়ে মাথায় করে রেখেছি। আমাদের এখন গা কাঁপলেও, চোখ জ্বললেও আমরা স্বাভাবিক হয়ে যাব। একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম-নৃশংস ও নোংরাভাবে হত্যা করার পরও তো আমরা স্বাভাবিক আছি। আছি না?

আমাদের এই বিষাক্ত স্বাভাবিকতা, আমাদের এই অসহ্য কাপুরুষতা, আমাদের এই নির্লজ্জ নিরাপত্তাকাতরতার খেসারত দিতে দিতে আমাদের পশ্চাদদেশ লাল হয়ে গেছে, আমাদের সবুজ দেশটা ধর্ষণে ধর্ষণে মধ্যাঙ্গে স্থায়ী লাল রক্তিমা নিয়ে চললেও আমরা বলবো, ওই লাল স্বাধীনতার সূর্যের আভা। কোনো এক রাষ্ট্রদূতের থাপ্পর খেয়েও আমরা মুখে হাসি ধরে রাখি। দেশের মাটির তলার গ্যাসসম্পদ সাবাড় হয়ে গেলেও, সমুদ্রের গ্যাস বিদেশি বেনিয়াদের তুলে দেব বলে আমরা দিনবদলের সরকার আনি।
অবোধ পশু-পাখির সামনে ন্যাংটো হতে কেউ লজ্জা পায় না। এদেশের অসংগঠিত নেতৃত্বহীন জনতাকে হাসিনা-খালেদার সরকার, ইঊনূস-আবেদেন সিভিল সোসাইটি আর মরিয়ার্টি-পিনাক-ওয়ালিকদের কাশিমবাজার কুঠির বালবংশধররা দেশকে ন্যাংটো করতে লজ্জা বোধ করেন না। জনগণকে নির্বোধ ঠাউরে নিয়ে ন্যাংটা দশার খ্যামটা নাচে তারা বিব্রত হয়না। এই ন্যাংটার নাই বাটপারের ভয়ের দেশে আনু মুহাম্মদরা মার খাবেই।

ভুলতে গিয়েও তবু ভুলি না, এই ব্যক্তি ব্যক্তি নন কেবল। বাল্যকাল থেকে বিচিত্রায় লিখতে শুরু করা আনু মুহাম্মদ, দীর্ঘকাল বিপ্লবী রাজনীতির সংগঠক আনু মুহাম্মদ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সম্পদ রা আন্দোলনের অন্যতম নেতা আনু মুহাম্মদ, দেশের প্রায় একমাত্র মার্কসীয় অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক-এডিবি-আর এনজিওদুর্গে অনবরত আঘাত হানা আনু মুহাম্মদ, ফুলবাড়ী কয়লাখনি রা আন্দোলনের সাফল্যের অন্যতম নায়ক ফুলবাড়ীবাসীর প্রাণাধিক আনু মুহাম্মদ, রাজনৈতিক অর্থনীতির জনপ্রিয় লেখক আনু মুহাম্মদ অনেক বিচারেই এক নিঃসঙ্গ বিদ্রোহী, এক বিরল শেরপা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকের মতো নন তিনি। বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীদের মতো তিনি ক্ষমতার নানানমহলের মধু খেয়ে মহান হতে পারেননি। দালালির সুবিধায় ওপরমহলের রাকবচ জোটেনি তাঁর। তিনি এদের অনেকের জন্য অনিরাপদ। তাই গোপন মহল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি আসে অনবরত। তাঁর রিকশাকে আঘাত করে পা ভেঙ্গে দিয়ে যায় অচেনা পাজেরো। তাঁর ওপর বোমা পড়ে। আর আজ বাংলাদেশের পুলিশ সমুদ্রের গ্যাস বিদেশিদের তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ মিছিল থেকে তাঁকে রাজপথে শুইয়ে পেটায়, লাথি মারে।

ওই পুলিশ আর তাদের অভিভাবক সাহারা খাতুন, ওই ওসি আর তার প্রভু বেনিয়া অধিপতি, ওই সরকার আর তার প্রভু মার্কিন-ভারত, তারা ওখানে এক অধ্যাপককে এক শিক্ষককে এক প্রতিবাদী মনীষাকে পদাঘাত করছে না কেবল, পদাঘাত করছে বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রজাতির এক মানুষকে, যিনি তাঁর সামর্থ্যরে সর্বস্ব দিয়ে জনতার সংগ্রামের সামনের সারির লোক, সার্বভৌমত্বের এক নিঃসঙ্গ কিন্তু অবিচল প্রতিনিধি। আজ তাঁকে তারা লাঞ্ছিত করেছে। তা করার আগে ওই পুলিশকে, ওই মন্ত্রীকে, ওই সরকারকে এবং কাল বেশিরভাগ পত্রিকায় মামুলিভাবে ছাপা হওয়া এই সংবাদটির সাংবাদিকরা কি তাদের সভ্যতার পোশাক, তাদের মানবিকতার শিক্ষা, তাদের দেশাত্মবোধের দায় সব খুলে অসভ্য, অমানবিক, বর্বর, গণবিরোধী এক সুবিধাবাদী কীট হয়ে যায়নি? যাচ্ছে না কি?

এই কীটেরা আজ দেশকে খাবলে খাচ্ছে। জনতাকে ধোঁকা দিয়ে মার দিয়ে চুপ করিয়ে রাখছে। দেশকে যুগের পর যুগ ধরে বিক্রি করে দিতে দিতে তারাও সব বিক্রি হয়ে গেছে। আশা মরলেই সুবিধাবাদ জন্মায়। তারা আশাহীন, তাই আত্মবিক্রয়ের সোনা সঞ্চয় করে চলেছে। তাদের সোনার ভোগে লাথি থথু ধিক।

তবুও আমরা সব সয়ে যাই। কারণ আরামের বিষ্ঠায়, ভয়ের গাদে আর লোভের পাপে আমরা এতদিনে কচ্ছপের মতো শক্ত খোল বানিয়ে নিয়েছি। বিপদ দেখলে তাতে ঢুকে পড়া রপ্ত করেছি। মাঝে মাঝে আরামে বা ব্যারামে তারা গলা বাড়ায় বটে, তবে ওটুকুই সার। দেশের মাটিতে তারা কেবলই অসার। ফুলবাড়ী-কানসাটের শহীদ কৃষকসন্তানরা মাঝে মাঝে এই খোলে আঘাত করেন, মাঝে মাঝে আনু মুহাম্মদরা এই খোলে মাথা ঠোকেন, কিন্তু কুম্ভের ঘুম ভাঙ্গে না। আনু মুহাম্মদরা ভাঙ্গেন কিন্তু কদাচ মচকান না।

আনু ভাই, আপনার এই অবমাননা ব্যক্তিগত নয়, জাতীয়। আপনার সঙ্গে আর যারা মার খেয়েছে তারাও এই দুষ্কালে অল্পকটি শিখা। এই শিখা নিভবে না, কারণ আঘাত আছে, কারণ দেশ ভেতরে ভেতরে জ্বলছে, কারণ ভদ্রলোকরা সুখে থাকলেই দেশের মানুষ সুখে থাকে না। এই অসহায়ত্ব এক মুহুর্তের জন্য ভুলি না। তাই আমরা লড়ে যাই, কিছুটা বাঁচি কিছুটা মরি, পারলে মারি, আবারো লড়ি। এই আমাদের ব্রত এই আমাদের দগ্ধ ক্ষত।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:২৮
৭১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের সেকাল এবং একালের ঈদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:১৩



কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা খুঁজতে গতকাল সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বা খোলা মাঠে ছুটে যাইনি। শৈশবে সরু এই চাঁদটা আকাশে দেখতে পেলেই দেহকোষের সবখানে একটা আনন্দধারা বয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×