অক্ষরগুলো বসাচ্ছি আর ভাবছি, অক্ষরপিছু কতটি মৃত্যু ঘটছে ফিলিস্তিনে, গাজায়? দশ-বিশ-এক শ বা এক হাজারেও কি তা কুলাবে? মাসের পর মাস তারা ভূমিতে বন্দী, পানি ও রুটি থেকে বঞ্চিত আর আকাশ থেকে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষুধা ও বিনা চিকিতসার মৃত্যুর পর এসেছে বিমান, ট্যাংক ও সৈন্যদের বোমা-গুলিতে মৃত্যু। ৪০ বছর ধরে ফিলিস্তিন ইসরায়েলি দখলদারির অধীন। একাত্তরের নয় মাসের দখলদারির দুঃসহ অভিজ্ঞতাকে ৫০ দিয়ে গুণ করলে যা হয়, ফিলিস্তিনে তা-ই ঘটে চলেছে। এই ৪০ বছরে তারা তাদের মাতৃভূমির পাঁচ ভাগের চার ভাগ এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। হারিয়েছে অজস্র মানুষ। সেখানে এখন শানদার ঝকঝকে ইহুদি বসতি, সুন্দর মানুষ ও তাদের পরিবারের শান্তির নীড়। বাইবেলের ঈশ্বর সোডোম আর গোমোরাহ নামে দুটি শহরকে আগুন আর পাথর বর্ষণ করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর মধ্যপ্রাচ্যের আজকের ঈশ্বর ইসরায়েল ফিলিস্তিন আর লেবাননকে ধ্বংস করে চলেছে ট্যাংক আর মিসাইলে।
এমন ত্রাস যে গর্ভের শিশুও জন্মাতে ভয় পায়। তবু তারা বন্দী মাতার জঠর থেকে বের হয়ে হাঁটতে শেখার আগেই অপমান, নির্যাতন, বন্দিত্ব কিংবা মৃত্যুর ভাগে বরাদ্দ হয়ে যায়। এই জীবন খাঁচায় বন্দী প্রাণীর জীবন। ভাগ্য বদলাতে তারা তখন পাথর, রাইফেল বা রকেট হাতে নেয় কিংবা নিজেকেই বোমা বানায়। বন্দিশালায় শৈশব বলে কিছু থাকে না। তবু সেই শিশুরা বলে না, মা, ''আমাকে তুই আনলি কেন ফিরিয়ে নে'। বোমা-বারুদ আর মৃত্যুর আবহে নারী-পুরুষের মিলন তবু হয়, সন্তানের আশায়। হায় সন্তান! এত জন্মায় তবু কমে যায় জাতির আকার। ধ্বংসপ্রায় ফিলিস্তিনি জাতিকে টেকাতে, অজস্র মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিতে তাই আরও আরও জন্ম চাই; শহীদদের শূন্যস্থান ভরাট করার জন্য। তার জন্যই বোধহয় সেখানে তরুণ-তরুণীরা ফিবছর গণবিয়ের অনুষ্ঠান করে। তাদের কেউ বাঁচে কেউ মরে। তখন আরো তরুণ এসে দাঁড়ায়। জন্ম আর মৃত্যুর এ কোন অঙ্ক কষে যাচ্ছে আজ ফিলিস্তিন ও লেবানন! কোনো কালো অক্ষর, কোনো সংখ্যা দিয়ে কি সেই হিসাব নিরূপণ করা যাবে?
ফিলিস্তিনেরই এক সাংবাদিক রামজি বারুদ লিখেছেন, 'তরুণ বয়সে যখন নির্মম ইসরায়েলি দখলদারির মধ্যে বেড়ে উঠছি, তখন আমি ও আমার বন্ধুরা বিশ্বাস করতাম, দখলদারি ও অপমানের একমাত্র নিদান আরবদের জাতীয় সংকল্প। গাজার উদ্বাস্তু শিবিরে ইসরায়েলি কারফিউর মধ্যে হামেশাই এ আশা নিয়ে ঘুমাতে যেতাম যে সম্মিলিত আরব বাহিনী হয়তো রাতের যেকোনো মুহূর্তে সীমান্ত পেরোবে। আমাদের মুক্ত করবে এই গরাদখানা থেকে। তারা আসেনি, আজও না।' এই স্বপ্ন কেবল রামজি বারুদের একার নয়, তাঁর মতোই আরও বেশুমার আরব তরুণের। কিন্তু তারা বড় হতে হতে বুঝলেন, বিষয়গুলো এত সরল আর সাচ্চা নয়। আরব-শাসকদের কেউই সালাদিন নন। বরং উল্টোটা, দু-একজন দলছুট নাসের-আরাফাত দাঁড়ান ঠিকই কিন্তু দখলদারের পয়বন্দ রাজা-বাদশাহরা তাদের ব্যর্থ করে দেন। আরব জনগণ বারবার জাতীয় নেতা ও বীর চেয়েছে কিন্তু পেয়েছে মার্কিন-ইসরায়েলের খয়েরখাঁগিরিতে মত্ত আমির-বাদশা-সুলতান। এবারও তা-ই, যখন গাজায় গোটা বিশ্বের সামনে ফিলিস্তিনি নিধন চলছে, তখনো তারা নীরব। বুশ কী করবেন তা যেকোনো বালকও জানে। ইসরায়েল বরাবরের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্টের পূর্ণ সমর্থনধন্য। তবে ওবামা নীরব থাকেননি। একজন 'উপযুক্ত' মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতোই তিনি বলেছেন, 'আমাদের বুঝতে হবে, ইসরায়েল কেন এটা করতে বাধ্য হয়েছে...ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া করার অধিকার রয়েছে, যদিও একই সঙ্গে তারা বেসামরিক য়তি কমিয়ে রাখায় সচেষ্ট। নিরাপত্তা পরিষদের উচিত পরিষ্কারভাবে এবং এক কণ্ঠে রকেট হামলার নিন্দা করা...তা না করতে পারলে তাদের উচিত চুপ থাকা।'
না, তারা চুপ থাকেনি। কিছু হল্লা-চিল্লার পর নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, আবার ফিলিস্তিনের দায়িত্বে আসীন হামাসের নিন্দাও করেছে। 'নিন্দা' কেবল জাতিসংঘই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নও করে আসছে। তবে সেটা ফিলিস্তিনীদের। যুগের পর যুগ সেখানে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম দীর্ঘমেয়াদি দখলদারি চলছে। আলোকিত ইউরোপ পরোক্ষে তাকে সমর্থনই করে এসেছে। ইসরায়েলের চাহিদামাফিক তারা নির্বাচিত হামাস সরকারকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছে। ঠিক ইরাকের মতো করে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এবং অর্থনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনকে অবরুদ্ধ করায় সমর্থন জুগিয়েছে। সুতরাং গাজায় যা চলছে তা একতরফা আগ্রাসন। একে যুদ্ধ বলা কূটনীতি নয়, গণহত্যার উলঙ্গ সমর্থন।
কিন্তু ফিলিস্তিনের জন্য এটা কি নতুন কিছু? সেখানেই প্রশ্ন। এক পূর্বনির্ধারিত ধ্বংসের দিনপঞ্জির পথে নেওয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনকে। এর শুরু অসলো চুক্তি থেকে। অনেকেই সেটাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই চুক্তির মাধ্যমেই আরাফাতকে মার্কিন-ইসরায়েলি চাপের কাছে নতি স্বীকার করানো হয়েছিল। এর সুবাদেই ১৯৪৭ সালের সীমানা খোয়াতে খোয়াতে আদি ফিলিস্তিনের মাত্র এক-পঞ্চমাংশের মধ্যে আটকে থাকা জাতিটিকে টুকরো টুকরো করা হয়। তখন থেকেই ফিলিস্তিন হয়ে পড়ে পরস্পরবিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ কয়েকটি বস্তি এলাকা। এরপর সেই বস্তিগুলোকে উঁচু কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলে বানানো হয় বিশ্বের সবথেকে বিরাট বন্দিশালা। অন্যগুলো থেকে পার্থক্য এখানেই যে, আকাশটা কেবল উন্মুক্ত। তার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতিটি নড়াচড়াই হয়ে ওঠে ইসরায়েলি রাইফেল আর বাইনোকুলারের নজরবন্দি। তাই যারা এমনিতেই মুমূর্ষু, তাদের আবার মারার কী কারণ? পরিষ্কার কারণটি এই যে, ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিন বলে কিছু রাখা হবে না।
ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের আদি বাসনা থেকে বিশ্বের একনম্বর ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল এক মুহূর্তের জন্য একচুলও সরে আসেনি। বর্তমানের 'অপারেশন কাস্ট লিড' এরই অংশ। এর প্রাথমিক পরিকল্পনাটি নেওয়া হয় ২০০১ সালে। আর ইসরায়েলি প্রধান দৈনিক হারেতজ-এর গত ২৭ ডিসেম্বর সংখ্যায় লেখা হয়, 'একটি প্রতিরক্ষা সূত্র বলেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এহুদ বারাক ছয় মাস আগেই এ অভিযানের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। যদিও ইসরায়েল তখন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল।' অথচ তারও আগে হামাস একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং গত এক বছরে যাবত অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করে। কিন্তু ঠিক মার্কিন নির্বাচনের দিন, ৪ নভেম্বরে গাজায় বিমান হামলা চলে। বিশ্ব তখন ওবামা নিয়ে ব্যস্ত। তারও আগে থেকে অবরোধ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষ ও বিনা চিকিতসায় মারার ব্যবস্থা করা হয়। এ রকম অবরোধেই ইরাকে পাঁচ লাখ শিশু মারা গিয়েছিল। তাই ইসরায়েল বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোয় সচেষ্ট, ওবামার এই ভাষণ সত্যভাষণ নয়।
এবারের হামলার উদ্দেশ্য শুধু হামাস বা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ-আন্দোলন নয়, বরং গোটা ফিলিস্তিনিদের মনোবল এমনভাবে ভেঙে ফেলা যাতে তারা হাঁটু গেড়ে বসে প্রাণভিক্ষা চায়। তাদের সম্পদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর সর্বোচ্চ ধ্বংস ঘটিয়ে, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলে তাদের গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করাই আসল ল্ক্ষ্য। তার জন্যই ফিলিস্তিনীদের শহর-গ্রাম অবরুদ্ধ করে তাদের বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও কর্মস্থল অকেজো করা হয়। তাই অপারেশন কাস্ট লিড আসলে ২০০১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন প্রণীত 'ন্যায্য প্রতিহিংসা' বা 'অপারেশন জাস্টিফায়েড ভেনেগ্যান্স'-এরই অংশ। কেবল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ধ্বংসই নয়, সব প্রতিরোধযোদ্ধাকে নিরস্ত্র করা এবং গাজা ও পশ্চিম তীরকে পুনর্দখল করা পর্যন্ত এটা চলবে। এর জন্য কয়েক শ ইসরায়েলির মৃত্যু হলেও (ওয়াশিংটন পোস্ট, ১৯ মার্চ, ২০০২) সর্বাত্মক আক্রমণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং ইয়াসির আরাফাতকে তাড়িয়ে সব যোদ্ধাকে হত্যা করা হবে (জেনস ডিফেন্স জার্নাল, জুলাই ১২, ২০০১)।
এরই অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা আরাফাতকে হত্যার বিল পাস করে। জাতিসংঘ এর নিন্দা করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে তা ঠেকায় এবং আইনটিকে সমর্থন দেয়। মন্ত্রিসভার এক সদস্য মোফাজ বলেন, 'আমরা উপযুক্ত সময় ও সুযোগ বেছে নিয়ে আরাফাতকে হত্যা করব। কিছুদিন পর আরাফাত মারা যান। তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগের লণ দেখা দিয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা তো বটেই, অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞও ঘটনাটিকে গুপ্তহত্যা বলে সন্দেহ করে অভিযোগ তুলেছেন। আরাফাতের মৃত্যুর পর একদিকে তাঁর দল ফাতাহ ইসরায়েলিদের হাতের পুতুল বনে যায়, অন্যদিকে হামাস হয়ে ওঠে প্রতিরোধ ও সংকল্পের প্রতীক।
এর পরই শুরু হলো গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ইহুদি বসতি সরিয়ে নেওয়ার ধাপ্পা। কুখ্যাত শাবরা-শাতিলা গণহত্যার নায়ক এরিয়েল শ্যারন হঠাত ফিলিস্তিনি দরদি সাজেন। এবং বলেন, 'ভবিষ্যতে যাতে গাজায় কোনো ইহুদি না থাকে, সেই ল্েয আমি এই কর্মসূচি নিয়েছি (সিবিএস, মার্চ ২০০৪)। এখন বোঝা যাচ্ছে, সর্বাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়ে গাজা থেকে প্রতিটি ফিলিস্তিনিকে নির্বাসনে পাঠানোর খাতিরেই শ্যারণ ওই 'শান্তিবাদী' কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন। সাত হাজার ইহুদিকে সরিয়ে নিয়ে এভাবে ১৫ লাখ গাজাবাসীকে 'শান্তি' দেওয়া হয়। সেই শান্তিই এখন বর্ষণ করছে ইসরায়েলের এফ-১৬ বিমান আর আর্মারড ট্যাংকগুলো। যা ইসরায়েলের 'শান্তি' তাতেই আরবদের 'ধ্বংস'। বলা বাহুল্য, সেটাই আমেরিকার 'শান্তির রোডম্যাপ', বুশের উত্তরসূরি ওবামা হবেন তারই আখেরি বাস্তবায়ক।
ফিলিস্তিনিদের সহ্যের শেষ সীমায় ঠেলে নিয়ে গিয়ে উসকিয়ে কয়েকটা রকেট ছোড়াতে পারাও সেই মারণাত্মক পরিকল্পনারই অংশ। জল্লাদেরা সাধারণত কপট হয় না। ইসরায়েলের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'ৎজিপি লিভনি খোলাখুলিই বলেছেন, 'হামাসের ধ্বংসই আমাদের লক্ষ্য (ঠিক যেভাবে তাঁর পূর্বসূরীরা বলেছিল, হিজবুল্লাহর ধ্বংসই তাদের লক্ষ্য) কাসাম রকেট তার অছিলা তৈরি করে দিয়েছে।' মোসাদের সাবেক এই গুপ্তঘাতক এবং ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলাসহ বেশ কটি নাশকতার এই নায়িকাই হতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের ভাবী প্রধানমন্ত্রী।
হামাস লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো ইসরায়েলকে আরেকটি পরাজয়ের স্বাদ দিতে পারবে কি না তা এখনো দেখার অপো। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে ফিলিস্তিনিরা হার মানবে না। ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আগ্রাসন চললেও এ রকম অনেক গণহত্যা ও ধ্বংস তারা পেরিয়ে এসেছে। এবং এ বিষয়েও নিশ্চিত, যে পাশ্চাত্য ইহুদি গণহত্যা ঘটিয়েছিল, যারা উপনিবেশবাদ কায়েমের পথে অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দণি আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ায় কোটি কোটি মানুষ হত্যা করেছিল, যারা হিরোশিমায় এক লহমায় কয়েক লাখ মানুষের জীবন নিয়েছিল, দেশে দেশে যারা স্বৈরশাসকদের গণহত্যায় মদদ জুগিয়ে আসছে, ফিলিস্তিনি শিশু-নারী-বৃদ্ধসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে সেই পাশ্চাত্যের গায়ের একটি রোমও কেঁপে উঠবে না। ইরাকে কাঁপেনি, আফগানিস্তানে কাঁপেনি, লেবানন-ফিলিস্তিনেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আজ মিসর-সৌদি আরবসহ বেশির ভাগ আরব-শাসক যোগ দিয়েছে তাদেরই শিবিরে। এমনকি দুর্বল গাদ্দাফিও এই সব শাসককে কাপুরুষ বলতে দ্বিধা করেননি। অথচ আরবরা এক হলে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের জন্যই শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হতে পারতো। এখনো যদি তারা তা বুঝে থাকে, তবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ বুমেরাং হয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধে হয়ে তাদের খাবে। আলবাত।
এই লেখাটা যতক্ষণে পড়বেন ততণে আরও শখানেক বা আরও বেশি ফিলিস্তিনির নৃশংস মৃত্যু ঘটবে। তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শেক্সপিয়রের মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকের ইহুদি চরিত্রটির জায়গায় আজকের একজন ফিলিস্তিনিকে বসিয়ে দেখতে পারি। সেই ফিলিস্তিনীও হয়তো সেইসময়ের এক নির্যাতিত ইহুদির মতো করে বলবে:
আমি একজন ফিলিস্তিনি। একজন ফিলিস্তিনিদের কি চোখ নেই? নেই হাত, অঙ্গ, ভাব, অনুভূতি, বোধ ও ভালোবাসা? তুমি আমি একই খাবার খাই, আহত হই একই অস্ত্রে। একই অসুখে আমরা ভুগি এবং সেরে উঠি একই ওষুধে। ইহুদিদের মতোই একই শীত ও গ্রীষ্ম আমাদেরও ওম দেয় আর ঠান্ডায় কাঁপায়। তুমি যদি খোঁচাও, আমার কি রক্ত ঝরে না? তুমি যদি কৌতুক করো, আমি কি হাসি না? এবং তুমি যদি অন্যায় কর, আমি কি তার প্রতিশোধ নেব না? সবকিছুতেই যদি আমরা তোমাদের মতোই হই, তাহলে তুমি যা আমার প্রতি করছ; আমিও তা-ই করব। হয়তো তা হবে তোমার থেকেও কঠিন, কারণ আমি তো তোমার কাছ থেকেই শিখছি।
পুনশ্চ: দেখুন আমার এই ব্লগে
ইয়াসির আরাফাতকে কি হত্যা করা হয়েছিল?
বিতর্ক: খাঁচার পাখি উড়তে ভুলে যায়নি তো?
'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি'_২
'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি'_১
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:২০