৪টা ২০ অপরাহ্ণ
আমার হাত থেকে দড়িটা পড়ে গেল , সাথে বাঁধা বালতিটা , আমি প্রতিধ্বনির জন্য অপেক্ষা করছিলাম , ১ ২ ৩ হয়তো অনন্ত কাল , কুয়োর ভেতরটা উঁকি দিয়ে দেখবো বলে মাথা গলিয়েছি ওমনি আমার পতন শুরু হল , আমি অন্ধকারে তলিয়ে যেতে লাগলাম , ঢং ঢং করে বেল বাজছে , আমার মোজা তো ভেজা , আজকেও ঐ মোটা লোকটা বেত নিয়ে এসেছে , তুমি আঙ্গুল তুলে আমাকে দেখিয়ে দিলে , বললে হ্যাঁ হ্যাঁ এই ছেলেটাই দেয়ালে আমার বাজে ছবি এঁকেছে । আমি উত্তর করবো , কিন্তু চারিদিকে কিসের আওয়াজ , আমার কণ্ঠ শোনা গেলনা ।
আমি চোখ খুলে দেখলাম ৪টা ২০ , ফোনটা বেজে চলছে , আমার বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক
আমি সেই মুহূর্তে সিধান্ত নিয়ে নিলাম , আমি আর পৃথিবীতে থাকছিনা । ঐ ২৫০ পাউন্ড চর্বির স্তূপে তুমি খনি খনন প্রযুক্তিতে হৃদয় খুঁজে বের করো , হাসো কাঁদো যা ইচ্ছা তাই করো । আমি তোমাকে ঘেন্না করি , আমি যদি জানতাম , আমি যদি আগেই বুঝে ফেলতাম তুমি একটা লোভের টুকরো বৈ আর কিছু নও আমি তোমাকে কেবল খুন করে ফেলতাম ।
৬টা ৫৭
ডায়াজিপাম পেলাম , বাসায় পাতা খানেক আছে , আরও কয়েক পাতা লাগবে , এক দোকান থেকে বেশী নিতে ইচ্ছা করছেনা । ঐ দোকানদারটা ওভাবে তাকাল কেন ? ঐ শালা বুঝে ফেললো নাকি আমি হেরে গেছি ,
যাক সারা দুনিয়া বুঝে যাক আমি হেরে গেছি , আমি গোহারা হেরেছি । আমি ঐ লাল রঙের গাড়িটার কাছে হেরে গেছি , আমি ঐ গলফ ক্লাবটার কাছে হেরে গেছি , আমি নীল বড়িগুলোর কাছে হেরে গেছি , ব্যাংক বীমা , চকচকে জুতার পালিশ , আর শালা ঐ বুড়ো হাবড়াটা , নিশ্চিত ডাক্তার বলে দিয়েছে ওকে “উত্তেজনা থেকে সাবধান” , আমি ঐ বুড়োটার কাছে হেরে গেছি , তুমি কি ওর দিকেও দিগন্ত রেখার মত ঝুঁকে পড় ? মেয়েগুলো সব আস্ত বেশ্যা । বাড়ি ভাড়ার টাকাটা আর দিতে হচ্ছেনা , ঐ বুড়োবেটা বাড়িওয়ালা বেশ ঝামেলায় পড়বে , পড়ুক , সব বুড়োগুলো ঝামেলায় পড়ুক , মরুক ।
ডায়াজিপামের সাথে হুইস্কি , মরবই । তোমার কানে খবরটা যাবে তো , চিরকুট লিখে যাব নাকি , বেশ কেলেংকারী হোক , সবাই জানুক আমি তোমার বিরহে মারা পরলাম । কিন্তু সাফ সাফ জেনে রাখো আমি তোমাকে ঘেন্না করি , আমি পরাজয়কে ঘেন্না করি ।
৯টা ৫৯
লিফটে বাড়িওয়ালার ছেলের বউটাকে দেখলাম , মহসীনের হাত থেকে বোতলটা নিয়ে একটু খুলে দেখছিলাম , বউটার মনে হয় আকাশ দেখার ইচ্ছে হয়েছে , কে জানে পাশের ছাদে হয়তো কোন নাগর জুটেছে । এম্মা ঐভাবে কি দেখছে , তোমার হুলোটা তো প্রতি রাতেই টং হয়ে আসে , তুমি বুঝি দেখনা , নাকি তুমিও বুঝে গেলে আমি হেরে গেছি । বড় হারা হেরে গেছি ।
মেয়েটার শরীর থেকে হুবহু তোমার সুগন্ধ আসছিল , ও এও তাহলে সুগন্ধির কারবার , আমি তো ভেবেছিলাম ওটা কেবল তোমারই । শালা কত জানা বাকি থাকলো ।
১১টা ৪৭
এবার প্রস্তুতি নেয়া যাক , বোতলটা খুললাম , তোমার স্বাস্থ্য পান করছি । কিন্তু ঐ বাড়িওয়ালার ছেলের বউটার সুগন্ধ আমাকে বড় ভাবিয়ে তুলছে , ওর হুলোটা ফিরেছে ? মেয়েটা বেশ কিন্তু । ও কি ঘুমিয়েছে ? কে জানে , আমার বুকের ভেতর হা হা করছে , কেন ?
আহা মেয়েটা বুঝি বারান্দায় ।
বেশ চনমনে লাগছে , যাও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম , একটা চিরকুট লেখা যায় পৃথিবীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে , আচ্ছা আমি মরে গেলে ঐ বউটা কি ভাববে কালকে আমি বেশ জীবিত ছিলাম , হা হা হা , ঐ ২৫০ পাউন্ড চর্বির স্তূপটার নগ্নতা বেশ হাসির দৃশ্য তো , যাক ঐ বেটার কি দোষ , তোমারই বা দোষ কই । এই লাল চোখ তো বেশ মানায় আমাকে । কিন্তু ঐ বউটা মাথায় ঘুরছে কেন । আমার কি জ্বর এলো ?
কটা বাজে ১২টা ৩ , ঘড়িটা ৫ মিনিট ফাস্ট , আমি এটা জানি বলেই আমার অফিসে প্রতিদিন দেরি হয় ।
এটা ভুলে গেলেই তো বেশ হত আগের দিনগুলো ।
ওষুধের পাতাগুলো কি বিশ্রী দেখতে
আমার হাতটা কাঁপছে কেন , নাহ এতোটুকুতে তো আমার ধরেনা
আমার ভূগোলে বেশ একটা বৃক্ষের সাড়া পাচ্ছি ,
কোন ফোল্ডারে রেখেছি , ওহ ডি ড্রাইভে , কি নাম যেন লাতিন মেয়েটার
১টা ২৫
আয়নায় বেশ লাগছে দেখতে আমাকে , আমি তো আমিই , আমি আমার বিশেষণ সর্বনাম অব্যয় । কালকে অফিস যাব না , বস কে কি বাহানা দেই ? আচ্ছা প্রতি রাতে কি বাড়িওয়ালার ছেলের বউটা ছাদে যায় ?