মেহেদী । উপমহাদেশের বিয়েতে মেয়েদের সাজের অন্যতম একটা উপকরণ । এখন তো শুধু বিয়ে না সব ধরণের পর্বণে মেয়েদের হাতে মেহেদী ছাড়া থাকবে ভাবা যায় না !!!!!!!!!!
বরাবর আমার স্মৃতিশক্তি অনেক কম । তথাপি ছোটবেলার কথা যতটা মনে পড়ে ঈদের আগের দিন মানে যাকে এখনো চান রাত বলি ♥ সেদিন বিকালে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছেলেমেয়েদের মেহেদী পাতা ছেঁড়ার ধুম লেগে যেতো । আমি মনে হয় মেহেদী না বলতাম মেন্দি । মেন্দি শবটাই বেশি ভালো লাগে । যে বাড়িতে মেহেদী গাছ থাকতো তাদের দামটাই আলাদা । সবাই সেই বাড়ির ছেলে মেয়েদের সাথে সখ্যতা রাখতো অন্তত ঈদের কয় একটা দিন !
আমাদের বাসায় মেহেদী গাছ ছিল না ! এমন না যে জায়গার অভাব ! আসলে গাছ টিকতো না । লাগালেই মরে যেত । সেই মেহেদী বাটা নিয়েও ঝামেলা !!! হাত লাল হয়ে যাবার ভয়ে বাটতে চাইতাম না । কোন ঈদে যদি এই দায়িত্ব পড়তো তাহলে আগে কেঁদে চোখ লাল করতাম । তারপর হাতের উপর পলিথিন মুড়িয়ে দিতাম বাটা । তারপরেও কিভাবে যেন ডান হাত লাল হয়েই যাইতো । এই দুঃখ রাখার জায়গা আর পাইতাম না । তারপর আসতো সেই কাঙ্ক্ষিত সন্ধ্যা বেলা । বাটা মেহেদী কাঠির আগায় নিয়ে নিয়ে নকশা বানায় দিত আপু । কিন্তু আমার সব সময় মনে হইতো আপু আমার থেকে আমার বোন আর পাশের বাড়ির ডিনা নামের মেয়েটাকে বেশি সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিতো !!! সেই নকশা গুলো এখন কেন জানি বেশি ভালো লাগে । মাঝে মাঝে সময় পেলে দেই কিন্তু মনে হয় আপু বেশি সুন্দর করে দিয়ে দিত ।
তারপর বাজারে এলো টিউব মেহেদী । সত্যি কথা বলতে কি বিনা পয়সায় পাশের বাড়ি থেকে যা এনে হাত রাঙ্গানো যায় তা টাকা খরচ করে কিনে আনবো ভেবে প্রথম দিকে ওইসব মেহেদীর দিকে ফিরেও তাকাতাম না । কারো হাতে টিউব মেহেদীর করা নকশা দেখলে বলতাম, ''তোমার টা মেহেদী না রং । আমার টা মেহেদী । রং দিয়ে সুন্দর করে আঁকা যায়। মেহেদী দিয়ে একে দেখাও । ''
তারপরেও না এক ঈদে লোভ সামলাতে পারলাম না কিনে ফেললাম একটা টিউব । পাশের বাসার এক আপু আমাদের সবাইকে মেহেদী লাগায় দিলো । এইখানেও আমার সেই চিরাচরিত সন্দেহ 'অন্যদের হাতের টা বেশি সুন্দর ! '' এরকম এক ঈদে দিয়ে দেওয়ার পর পরের ঈদে আপুর কাছে গেলাম । কিন্তু আসলে ঈদের আগের দিন বাড়ির মেয়েদের অনেক কাজ থাকে । তো আপু বললো একটু পরে এসো । এরকম ৩বার গেলাম কিন্তু আপুর কাজ তো শেষ হয়না । আমি ভাব্লাম আপু পারে বলে ভাব নিচ্ছেন রাগে দুঃখে নিজের হাতে নিজে নকশা করলাম !!! নকশা ছিলো কি জানেন ??? বাংলা বর্ণমালা । পারি না কিছু তার মাঝে বাংলা বর্ণমালা আমার পারা সবচেয়ে সুন্দর নকশা ছিলো । তখন আমাদের ক্যামেরা ছিলো না ! থাকলে এখন ছবিটা আপলোড দিতাম ! আফসোস !!!
সেই শুরু । মেহেদীর জন্য কেমন জানি নেশা এসে গেলো । মেহেদী হয়ে গেলো আমার তুলি আর হাত হয়ে গেলো ক্যানভাস । ♥♥♥ একদিন মনে কষ্ট আর রাগ নিয়ে একা একা যা করা শুরু করেছিলাম তার জন্য সেই পিচ্চি শিরিনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ । অমনভাবে রাগ না হলে এখনো ঈদে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে হাতে মেহেদী দিতে হয়তো কারো না কারো পিছে ছুটতে হতো । :-& কিন্তু ওই একদিনের রাগের জন্য এখন অনেকে আমার কাছে আসে মেহেদী দিতে ।
মেহেদী আমার কাছে একটা নেশার নাম । খুব মন খারাপ হলে মেহেদী দিয়ে নকশা করা শুরু করি কখন যে মন ভালো হয়ে যায় ।
মেহেদীর নকশা নিয়ে গবেষণা করতে আমার অসাধারণ ভালো লাগে । কখনো মেহেদী দিয়ে তৈরি করি নকশি কাঁথা-
কখনো মেহেদী দিয়ে হয়ে যায় ফুলের বাগান -
মেহেদী কখনো জল্পদ্মের ছায়া -
কখনো না মুয়ুরের কায়া- ইশ !!! মেহেদী যে কি আমার কাছে আমি জানি । যেন কল্পনাকে এক নিমেষে কারো হাতে একে দেয়া ।
মেহেদী অনেকে পছন্দ করে না । বিশেষ করে ছেলেরা । আমার তাতে আফসোস নাই বরং খুশি লাগে। ছেলেরা পছন্দ করলে তারাও হাতে দেয়া শুরু করতো । তখন হয়তো ভাগেই পেতাম না। তারপর মেহেদী নিয়েও অধিকার আন্দোলন করা লাগ্লে ???
কখনো ভেবে দেখেছেন ? হাত ভর্তি মেহেদীর নকশার মাঝে নতুন বৌয়ের স্বপ্নের কতটা রেখা আঁকা থাকে ? নতুন বৌয়ের হাতের মেহেদী উফ !!! অসম্ভব সুন্দর একটা জিনিস । আচ্ছা হাতে মেহেদী ছাড়া বৌ ভাবা যায় ??? আমি হাত ভর্তি করে মেহেদী পরিয়ে দিয়েছিলাম কয়েক জন বৌকে । কিন্তু হায় আমার বিয়েতে কে আমার হাতে মেহেদী পরায় দিবে ??? :-&
মেহেদী নিয়ে বলতে থাকলে আমার কথা কখনো ফুরায় না । এমন হইছে যে নিজের হাতে মেহেদী আছে । কাউকে পাচ্ছি না কিন্তু খুব নকশা করতে ইচ্ছা করতাছে তখন কি করি বলি শুনেন । পুরাতন সিডির ডিস্ক কাজে লাগায় দেই । হাতের বদলে ডিস্কেই নকশা করি ।
থাক থাক আর লেখা বাড়াবো না । শেষের আগে আমার আরও কিছু আঁকা ।
*** আমি ছবি ব্লগ বানাতে পারতাম না । একসাথে একাধিক ছবি দিয়ে ব্লগ লেখার এই ক্ষমতা শিখিয়েছেন নীল দর্পণ আপু, আশিক মাসুম ভাইয়া আর অচিন আলো ভাইয়া । কৃতজ্ঞ
আর ছবি ব্লগ হেল্প পোস্টে যারা হেল্প করছেন কিন্তু আমার বোকামির জন্য বুঝি নাই এই পোস্টটা তাদের জন্য ।
-banglar_hasan
-বোকামন
-আমি বাঁধনহারা