somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাসলিমার ক আর আমাদের খ, গ………

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন তাসলিমার নতুন বই বের হয়েছে। নাম- ‘ক’। কিছুদিন পরেই শুনি ক নিষিদ্ধ হয়েছে। পত্র পত্রিকায় ক’র প্রচুর সমালোচনা পড়ে বদ্ধমূল ধারণা হলো- ক’ একটা যৌন উত্তেজক উপন্যাস ছাড়া আর কিছুই না। ফ্রেন্ডদের তুমুল আড্ডায় তাই বলেছিলাম ‘নিষিদ্ধ করেছে বেশ করেছে!’
রুশি মূহুর্তে থমকে গিয়ে তাকিয়েছিল আমার দিকে। একটু আগেও তাসলিমাকে নিয়ে কী একটা জোকস শুনে খুব হাসছিল। কিন্তু এখন দেখি একদম থমথমে।
-বেশ করেছে না? ছি! তোর মুখে এ কথা শুনব ভাবিনি।
-বেশইতো করেছে। অমন পর্ণো পত্রিকা……
-পর্ণো পত্রিকা?! তুই নিজে পড়ছস?
-না।
-বাব্বাহ! এইনা হলে খাস বাংগালী! লজ্জা করলনা তোর না পড়েই একটা বইয়ের উপর কমেন্ট করতে? তুই না বলে মুক্তমনা, হেন তেন কত ছাতা মাতা??
-দেখ রুশি, গালি দিবিনা। পত্রিকায় যেভাবে সমালোচনা করছে……
-খ্যাতা পুড়ি তোর সমালোচনার। আমারতো মনে হয় মূল বইয়ের চে’ সমালোচনাগুলোর ভাষা আরো বেশী খারাপ।
-কিন্তু বইটা যদি খারাপ-ই না হবে তো সরকার কি শখ করে বইটা নিষিদ্ধ…
(এবারও কথা শেষ করতে দিলনা, খেঁকিয়ে উঠল)
-দাঁড়া! এইখানেও আমার অবজেকশান আছে। এইটা যদি একটা গনতান্ত্রিক দেশ হ্য় তাহলে প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার আছে নিজের কথা বলার। তুই আমাকে গনতন্ত্রের মানে বুঝাতো দেখি!
-কিন্তু যে বই দশটা মানুষের ক্ষতি…।
-চুপ কর শালা। আমাকে জ্ঞান দিবিনা। বই পড়ে মানুষের ক্ষতি হয় এমন হাস্যকর যুক্তি শিখলি কোথা থেকে? যে খারাপ হয় সে বই পড়লেও খারাপ হবে না পড়লেও হবে। সিডির দোকানে সবার চোখের সামনে ব্লু-ফিল্মের সিডি সাজায়ে রাখে, ঐসব সিডি কেন নিষিদ্ধ হয়না? তুই এমেরিকান বিউটি মুভিটা দেখছস? জঘন্য একটা ফিল্ম। সেইটাতো এই দেশে নিষিদ্ধ না।এইরকম গুনে গুনে দেখাতে পারব ফ্রি… মুভির নাম। সিডির কথা বাদ দে। বইয়ের কথাতেই আয়। মাসিক অপরাধ চিত্র, মাসিক ক্রাইম রিপোর্ট এই রকম শত শত মাসিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আছে যেগুলার মত অশ্লীল পত্রিকা মনে হয় সারা দুনিয়াতে নাই। সেগুলাতো ফুটপাতে, বইয়ের দোকানে সবার চোখের সামনে বিক্রি হয়। সেগুলা নিষিদ্ধ হয়না কেন? হাহ! তাছাড়া আমি নিজে ক’ পড়ছি। তাই বলে কি আমি তাসলিমার মত চারটা বিয়ে করে ফেলছি? তার মত হয়ে গেছি?
দেখ, তাসলিমার সাথে অনেক কথাতে আমার দ্বিমত আছে। ও অনেক কথা বলছে যা ওর মত শিক্ষিত মানুষের মুখে অশোভন।এমন কথা বলছে যা অযৌক্তিক। এমন কথা বলছে যা ফ্রিক। তাই বলে বই নিষিদ্ধ না করে কারো কিছু বলার থাকলে পালটা লিখুক। মানা করছে কে? আর সমালোচনাগুলা ভাল করে পড়ে দেখ। সব বোগাস সমালোচনা। একটাতেও তাসলিমা যেসব যুক্তি দিছে ওগুলার পালটা যুক্তি আসেনাই। হুজুগে বাংগালীর একটা বলল ‘নিষিদ্ধ কর’, তো সবগুলা শিয়ালের মত উঠে পড়ে লাগছে নিষিদ্ধ করতে!

সেদিন আমি আর কথা বাড়াইনি। একেতো রুশি কখনো রাগেনা। এই প্রথম দেখছি রাগে যা তা বলল। আরেকেতো আমি তখনো ক’ কেন, তাসলিমার অনেক বই-ই পড়িনি।

নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশ বলে কথা। তাসলিমার মোটামোটি অনেক বই-ই এখন আমার পড়া। নাহ, নিষিদ্ধ হওয়া বা না হওয়া নিয়ে আমি কিছু বলবনা। তবে আমার প্রশ্ন হলো- আজকে তাসলিমার ক’ নিষিদ্ধ করা হলো, বেশ। কিন্তু কালকে যে সে খ’ লিখবেনা তার নিশ্চয়তা কে দিবে? খ’ নিষিদ্ধ হলে গ’ লিখবে, গ’ নিষিদ্ধ হলে ঘ’! আর তাসলিমাকেই নিষিদ্ধ করা হল, কে বলতে পারে- আরো কত তাসলিমা উঠে আসবে।
হ্যা, উঠে আসবেই। কারন আমরা তাসলিমার বই নিষিদ্ধ করি, কিন্তু যে সব কারনে তাসলিমারা উঠে আসে তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। তাসলিমাদের উঠে আসার পিছনের কারন গুলো দেখেও আমরা না দেখার ভান করি। কাকের মত চোখ বন্ধ করে থাকি। অবশ্য যত বেশী তাসলিমা বানানো যায় ততই লাভ, ইচ্ছামত ব্যাবহার করে যখন তখন নিষিদ্ধ করা যায় যে! আর দুঃখ এইসব তাসলিমাদের জন্যে, যারা বুঝে বা না বুঝে বোকার মত ব্যবহৃত হয়ে শেষে পরিত্যক্ত হয়ে ময়লা পলিথিনের মত পড়ে থাকে সমাজের ডাষ্টবিনে।
আমারতো মনে হয় তাসলিমার বই’র চে’ও ক্ষতিকর বই হচ্ছে ‘বেহেশতী জেওর’ টাইপ’র বই গুলো যেগুলোতে মোল্লাগুলো ইচ্ছামত দোয়া বানিয়ে ইসলামকে ফূটপাতে নামিয়ে এনেছে।দোয়ার নামে রগরগে যৌন বর্ননা ছাড়া আর কিছু না!

রুশির রাগটা একটু একটু করে আমার মধ্যেও ঢুকে পড়ে। কানে হাত না দিয়েই যেমন কান গেল কান গেল করে চিতকার করেছিল বেকুবে, আমরাও তার দলে যোগ দিয়েছি।কেও কিছু বললেই হল, ধর্ম গেল ধর্ম গেল চিতকার!!
আরে পেটে ভাত থাকলে তারপর ধর্ম! নবী-ই বলেছেন-“তোমরা দারিদ্রতা থেকে মুক্তি চাও।কারন দারিদ্রতা ঈমান নষ্ট করে দেয়”। আপনারা তাসলিমাকে নিয়ে যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন সেভাবে আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে নিয়ে লাগুন না! এ সমাজকে ভেংগে দিন যে সমাজে পেটের দায়ে গর্ভধারীনি নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়। কখনো ভেবে দেখেছেন কোন সুখে ফুটপাতের মেয়েগুলো দশটাকা, পাঁচটাকা এমনকি দু’টাকার বিনিময়েও নিজের শরীর দিয়ে দেয় দাঁতে দাঁত চেপে?

তাসলিমাকে নিষিদ্ধ করার আগে মেয়েদের শৈশব নিরাপদ আন্দোলনে নামুন। সমাজের বখাটে উতখাত আন্দোলনে নামুন। কোন সুখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে রুমির মত ফুটফুটে স্কুল ছাত্রীরা? কোন সুখে লাল নীল স্বপ্ন ভরা এই পৃথিবীর প্রতি একদলা থু থু ছিটিয়ে চিরবিদায়ের পথ বেছে নেয় সিমি’র মত স্বপ্ন আঁকিয়েরা? বলুন, কোন সুখে?? কোথায়, আপনারা তো রুমি, সিমি কারো হত্যার বিচার করতে পারলেন না! নিষিদ্ধ করতেই তো সুখ। তাহলে আর তাসলিমার মত সাহস করে নিজের ধর্ষিতা শৈশবের কথা কোনো মেয়ে বলতে আসবেনা যে!
এই সমাজে যারা রুমির মত বা সিমির মত সাহস করে পৃথিবীটাকে গুড বাই বলতে পারেনা, তারা তাসলিমা নাসরিন হয়ে যায়।
যে সমাজে একটা সচেতন মেয়ে প্রতিটা পদক্ষেপে দশবার হোঁচট খায়, হোঁচট খেয়ে পড়ে থাকলেও একটা সমবেদনার হাত খুঁজে পায়না উঠে দাঁড়াবার জন্যে, উলটো সমাজ, চারপাশের মানুষ, এমনকি নিজের জনক-জননী পর্যন্ত লাথথি মেরে বলে- ‘কোন পাপে তোর মত ……কে জন্ম দিছিলাম!’
সে সমাজে তাসলিমা না হয়ে কী উপায় আছে?

জন্মেই একটা মেয়ে দেখে আপনাদের কালো মুখ। আপনাদের মুখ দেখতে ঘৃনা হয়ে বলেই তাসলিমা’র সৃষ্টি হয়। আপনারা, এই আপনাদের সমাজ, ছেলের পাতে মাছের মাথাটা যখন তুলে দেন, মেয়েটা তখন বোবা দৃষ্টিতে দেখে, কিছু বলেনা। কারন শৈশবেই সে শিখে ফেলেছে- সে মেয়ে মানুষ, তাকে যে সব সহ্য করতে হবে! আর এই বাপের বাড়ীতে আসল অধিকার তার ভাইয়ের। সে তো চলে যাবে শ্বশুড় বাড়ি। তাই আদরের পাল্লাতো ছেলের দিকেই যাবে। কারন এ ছেলেই তো বাবা-মাকে খাওয়াবে! হাহ! এই ছেলে যদি বুড়াকালে লাথথি মেরে ফেলে দেয়, তাওতো ছেলেরে বাবা, একটু মাথা গরম। আরে ছেলেদের দোষ ধরতে নেই! প্রতি পদে পদে জন্মেই মেয়েটা বুঝে সে মেয়ে! বাবা মা, ভাই বোন, সমাজ সবকিছু তার কানের কাছে চিতকার করে বলতে থাকে- ‘তুই মেয়ে!’ বুঝেন আপনারা সেই মেয়ে কতটা হতাশা নিয়ে বড় হয়? কতটা মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাকে ফাইট দিতে হয় জীবনের সাথে?

তারপরও আমরা তাসলিমার মতো বলবনা আমাদেরকে ছেলেদের মত ক্রিকেট খেলতে দিতে হবে, আমরাও ছেলেদের মত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ………… করব, আমরা শুধু শক্ত একটুকরো মাটি চাই- যেখানে দাঁড়িয়ে মনের আনন্দে ছোটবোনকে সাথে নিয়ে গোল্লাছুট খেলতে পারব, লুকোচুরি খেলতে পারব, বৌঁচি খেলতে পারব।
তাসলিমাদেরকে নিরাপদ শৈশব দিন। চাইল্ড সাইকোলোজি জানলে আপনি জানেন, শৈশব ৯০ ভাগ নির্ধারণ করে দেয় একটা মানুষ কেমন হবে।তাদেরকে ধর্মের নামে নিষ্ঠুর এবং মিথ্যা ও বানানো ধর্মীয় অনুশাসন থেকে বাঁচান। তাহলে আর তারা আপনাদের ধর্মকে আঘাত করতে আসবেনা। তাহলে আর তারা তীব্র রাগ আর হতাশায় ধর্মকেই আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নিবেনা।
তাসলিমার পালটা জবাব দিন। দেখিয়ে দিন সে কোন পয়েন্টে ভুল বলেছে। তাহলেই তো মানুষ বুঝবে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৭:৫৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×