১৯৭৯ সালে আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করে। এরপর বিভিন্ন আইসিসি টুর্নামেন্টে অনেক আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে দুলতে, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে অবশেষে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টের ১ম সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রথম বড়ো অর্জন বা সাফল্যের মুখ দেখে। এর পরের সাফল্যটি আসে ১৯৯৭ সালে আইসিসির সহযোগী দেশ থেকে সদস্য দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি, যাতে বাংলাদেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার স্বীকৃতি পায়, একই সাথে ওডিআই স্টেটাস প্রাপ্ত হয়। ২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন, যেদিন বাংলাদেশকে টেস্ট স্টেটাস দেয়া হয়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ বিভিন্ন আইসিসি টুর্নামেন্টে কীরূপ সাফল্য দেখাতে পেরেছিল, এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরবো। একই সাথে, যাদের সাথে বাংলাদেশ খেলা শুরু করেছিল, তাদের বর্তমান অবস্থা বা স্টেটাস কি, তাও জানাতে চেষ্টা করবো। এ পোস্টের সব তথ্য (ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ ছাড়া) উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।
আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্ট-১৯৭৯view this link
আইসিসি ট্রফির উদ্বোধনী টুর্নামেন্টটি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২২ মে-২১ জুন ১৯৭৯ তারিখে, যেখানে বাংলাদেশসহ মোট ১৫টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। এটা ছিল ৬০ ওভার ম্যাচ। দলবিন্যাস নিম্নরূপ ছিল :
এ গ্রুপ : বারমুডা, ইস্ট আফ্রিকা, পিএনজি, সিঙ্গাপুর ও আর্জেন্টিনা
বি গ্রুপ : ডেনমার্ক, কানাডা, বাংলাদেশ, ফিজি ও মালয়শিয়া
সি গ্রুপ : শ্রীলংকা, ওয়েলস, ইউএসএ, নেদারল্যান্ডস ও ইসরায়েল।
গ্রুপ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল ফিজির বিপক্ষে। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ৪৩ ওভারে ১০৩ রান করে অলআউট হয়। ফিজি ৩৫.২ ওভারে ৮১ রানে অল আউট হয়। বাংলাদেশ ২২ রানে জয় লাভ করে।
বাংলাদেশের ২য় ম্যাচ ছিল কানাডার সাথে। কানাডা ৬০ ওভারে ১৯০/৯ রান করে। বাংলাদেশ ৫০.৩ ওভারে ১৪১ রানে অল আউট হয়। কানাডা ৪৯ রানে জয়ী হয়।
বাংলাদেশের ৩য় ম্যাচ ছিল মালয়শিয়ার সাথে। মালয়শিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৪৫.৫ ওভারে ১১৪ রান করে। বাংলাদেশ ৪১.২ ওভারে ১১৫/৩ রান করে ৭ উইকেটে জয়ী হয়। ডেনমার্ক ৪ খেলায় ৪টিতেই জয়, ১৬ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন ও কানাডা ৩টিতে জয়, ১২ পয়েন্ট পেয়ে রানার আপ হয়ে সেমি ফাইনালে যায়। বাংলাদেশ ২ জয়ে ৮ পয়েন্ট পেয়ে ৩য় হয় এবং গ্রুপ পর্যায় থেকে বিদায় নেয়।
এ গ্রুপ থেকে বারমুডা ও সি গ্রুপ থেকে শ্রীলংকা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে যায় (প্রতি গ্রুপের শুধু চ্যাম্পিয়ন); বি গ্রুপ থেকে ডেনমার্ক ও কানাডা যথাক্রমে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ হয়ে সেমিফাইনালে খেলে।
১ম সেমিফাইনাল : শ্রীলংকা ৩১৮/৮, ডেনমার্ক ১১০ (৪২।৫ ওভার)। শ্রীলংকা ২০৮ রানে জয়ী।
২য় সেমিফাইনাল : বারমুডা ১৮১ (৫৮।১ ওভার), কানাডা ১৮৬/৬ (৫৭।৫ ওভার)। কানাডা ৪ উইকেটে জয়ী।
ফাইনাল : শ্রীলংকা ও কানাডার মধ্যে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীলংকা ৬০ ওভারে ৩২৪/৮ করে। কানাডা ৬০ ওভারে ২৬৪/৫ করে। শ্রীলংকা ৬০ রানে জয়ী হয় এবং প্রথম আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়।
শ্রীলংকা ও কানাডা বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৯৭৯-এ অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়।
আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্ট-১৯৮২
২য় আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়, ১৬ জুন থেকে ১০ জুলাই ১৯৮২। বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ ৬০ ওভার ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। শ্রীলংকা তার আগেই ওডিআই/টেস্ট স্টেটাস পেয়ে যায়। ফাইনালে বারমুডাকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এবং ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল।
এ গ্রুপ : জিম্বাবুয়ে, পিএনজি, কানাডা, কেনিয়া, হংকং, ইউএসএ, জিব্রাল্টার ও ইসরায়েল।
বি গ্রুপ : বারমুডা, বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, ফিজি, সিঙ্গাপুর, ইস্ট আফ্রিকা, ওয়েস্ট আফ্রিকা ও মালয়শিয়া।
বাংলাদেশ ২৪৬, ওয়েস্ট আফ্রিকা ১৭০/৯, বাংলাদেশ ৭৬ রানে জয়ী
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর – বৃষ্টির কারণে খেলা হয় নি
বাংলাদেশ- ফিজি – বৃষ্টির কারণে খেলা হয় নি
বাংলাদেশ ১২২/৭ (বৃষ্টিতে ওভার কমিয়ে ২৫), মালয়শিয়া ১২১/৬। বাংলাদেশ ১ রানে জয়ী
বাংলাদেশ ৬৭, বারমুডা ৬৮/৩ (১৫.৫ ওভার)। বারমুডা ৭ উইকেটে জয়ী।
বাংলাদেশ ১৬৭/৪, নেদারল্যান্ডস ১৬৩/৬। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
এ গ্রুপে জিম্বাবুয়ে চ্যাম্পিয়ন, পিএনজি রানার আপ ও কানাডা ৩য় হয়।
বি গ্রুপে বারমুডা চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ রানার আপ হয়। নেদারল্যান্ডস ৩য়।
১ম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ১২৪ রান তোলে। জিম্বাবুয়ে ১২৫/২ (৩০ ওভার)। জিম্বাবুয়ে ৮ উইকেটে জয়ী।
২য় সেমিফাইনালে পিএনজি ১৫৩, বারমুডা ১৫৪/৪। বারমুডা ৬ উইকেটে জয়ী।
৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হয় বাংলাদেশ ও পিএনজির মধ্যে। বাংলাদেশ ২২৪, পিএনজি ২২৫/৭। পিএনজি ৩ উইকেটে জয়ী।
ফাইনাল : বারমুডা ২৩১/৮, জিম্বাবুয়ে ২৩২ (৫৫ ওভার)। জিম্বাবুয়ে জয়ী (কত উইকেটে জয়ী তা অজানা)।
আইসিসি ট্রফি তুর্নামেন্ট-১৯৮৬
৩য় টুর্নামেন্টটি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় ১১ জুন-৭ জুলাই ১৯৮৬ তারিখে, যেখানে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ ৬০-ওভার ম্যাচে খেলে। জিম্বাবুয়ে এবারও ২য় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৯৮৭-এ খেলার সুযোগ পায়।
এ গ্রুপ : জিম্বাবুয়ে, ডেনমার্ক, মালয়শিয়া, কেনিয়া, ইস্ট আফ্রিকা, বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনা।
বি গ্রুপ : নেদারল্যান্ডস, বারমুডা, ইউএসএ, কানাডা, পিএনজি, হংকং, ফিজি, জিব্রাল্টার।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে : জিম্বাবুয়ে ৩১৫/৭, বাংলাদেশ ১৭১/৮
বাংলাদেশ-কেনিয়া : বাংলাদেশ ১৪৩, কেনিয়া ১৩৪
বাংলাদেশ-মালয়শিয়া : মালয়শিয়া ২৩৯, বাংলাদেশ ৫৭ রানে হারে
বাংলাদেশ-ইস্ট আফ্রিকা : বাংলাদেশ ১৬২, ইস্ট আফ্রিকা ১৬৩/৪। ইস্ট আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী।
বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনা : আর্জেন্টিনা ১২২, বাংলাদেশ ১২৩/২ (৪০ ওভার)। বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
বাংলাদেশ-ডেনমার্ক : বাংলাদেশ ১৪৭, ডেনমার্ক ১৪৮/৬। ডেনমার্ক ৪ উইকেটে জয়ী।
১ম সেমিফাইনাল : বারমুডা ২০১/৭, জিম্বাবুয়ে ২০২/০ (৩৯ ওভার)। জিম্বাবুয়ে ১০ উইকেটে জয়ী
২য় সেমিফাইনাল : ডেনমার্ক ২২৪/৮, নেদারল্যান্ডস ২২৫/৫ (৫৪.২) নেদারল্যান্ডস ৫ উইকেটে জেতে।
৩য় স্থান নির্ধারণী খেলা : বারমুডা ১১৫, ডেনমার্ক ১১৬/৪। ডেনমার্ক ৬ উইকেটে জেতে।
ফাইনাল : জিম্বাবুয়ে ২৪৩/৯, নেদারল্যান্ডস ২১৮। জিম্বাবুয়ে ২৫ রানে জয়ী।
চলবে---
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:২৯