‘ইউরেকা’ ‘ইউরেকা’ বলিয়া বিজ্ঞানী ঘুম হইতে চিৎকার দিয়া উঠিলেন। বিকট চিৎকারে সুপ্তোত্থিতা স্ত্রী হত-বিহবল ও আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় বিজ্ঞানীকে জড়াইয়া ধরিয়া জিজ্ঞাসিলেন, কী হইয়াছে প্রাণনাথ? কে সেই ভাগ্যবতী রমণী যার নাম ‘ইউরেকা’, যার নাম সম্বোধনে আপোনার নিদ্রাভঙ্গ ঘটিয়াছে?
বিজ্ঞানী মুচকি হাসিয়া কহেন, আরে গিন্নি, জব্বর খুশির ঘটনা ঘইট্যা গেছে। আমি ঘুমের মধ্যে দারুণ একটা বিষয় আবিষ্কার কইরা ফালাইছি। তাই বার বার আনন্দে লাফাইয়া উঠিতেছি।
গিন্নির ভীতসন্ত্রস্ত মুখাবয়বে মুহূর্তের মধ্যে আলোর ঝিলিক খেলিয়া যায়। তিনি বিজ্ঞানীকে বিষয়টি খুলিয়া বলিবার অনুরোধ জানান।
বিজ্ঞানী আবেগের আতিশয্যে কাঁপিতে কাঁপিতে কহেন, আজ আমি স্বপ্নের মধ্যে অতিসহজে মানুষের জন্মতারিখ বাহির করিবার ফর্মুলা আবিষ্কার কইরালাইছি।
গিন্নি আরো পুল্পকিত হইয়া কহেন, আর আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না জনাব। Please don’t test my patience. শীঘ্র খুইলা কন দেখি, কী আবিষ্কার কইরালাইছেন।
বিজ্ঞানী খুইলা কইতে থাকেন। আমি বিগত ৪০ বছর ধইরা অতিসহজে ও দ্রুত মানুষের জন্মতারিখ বাইর করবার ফর্মুলা তৈরি করার গবেষণা করতেছিলাম। অনেক শ্রম, অনেক ঘাম দিছি। কিন্তু ফর্মুলাডা ফাইনাল করবার পারি নাই; আর ঐ হালার ফর্মুলা দেখা দিল ঘুমের ভিতর স্বপ্নের মধ্যে। ফর্মুলাডা হইল গিয়া - আজকের তারিখ থেকে তোমার বয়সটা বাদ দিলে যেই তারিখটা পাইবা, হেইডাই হইল তোমার জন্মতারিখ। উদাহরণ স্বরূপ, ধরা যাক, ব্লগার শাহ আজিজ সাহেবের আজকের তারিখে বয়স হইল ৬৪ বছর ০৪ মাস ২৬ দিন। আজকের তারিখ থেকে এই বয়সটা বিয়োগ করলেই তার জন্মতারিখ বাইর হইয়া আসবো – ০৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭।
বিজ্ঞানীর বউও গদ গদ হাসিতে দাঁত বাহির করিয়া কহিলেন, মহাশয়, আপোনার আবিষ্কার দেইক্যা আমিও এইমাত্র একটা আবিষ্কার কইরা ফালাইছি।
বিজ্ঞানী বিস্মিত হইয়া চোখ বিস্ফারিত করিলেন। কী কহিতেছে এই মূর্খ রমণী? এত সাধনা, এত শ্রম দিলাম আমি, আর উনি রান্নাঘরের কর্ত্রী হইয়া মাত্র এক মুহূর্তে একটা আবিষ্কার কইরা ফালাইলো? স্ত্রীর বালখিল্যতায় বড্ড বিরক্ত হইয়া ঠোঁটটা একটু উল্টাইয়া অবজ্ঞার স্বরে বিজ্ঞানী বলিলেন, তুমিও আবিষ্কার কইরালাইছো? তোমার আবিষ্কারডা আবার কী, কও তো হুনি?
-হুম। আমারটাও যুগান্তকারী আবিষ্কার। কারো বয়স বাইর করার সহজ ফর্মুলা আমি বাইর কইরা ফালাইছি। আজকের তারিখ থেকে কেউ যদি তার জন্মতারিখটা মাইনাস করে, অমনি তার আজকের বয়সটা বাপ বাপ কইরা বাইর হইয়া যাইব।
বিজ্ঞানীর যেন ঘোর কাটে না। নিজের স্ত্রীকে তিনি কেবলই অবলা মূর্খ রমণী ভাবিয়াছিলেন। কিন্তু, তিনি পরীক্ষা করিয়া দেখতে পাইলেন, স্ত্রীর আবিষ্কার একদম ঠিক, খাপে খাপ চায়ের কাপ। অভাবনীয় ব্যাপার তো! একই রাতে দুটি আবিষ্কার!!! গিনেজ বুক অব রেকর্ডে তাইলে আরেকটা ইতিহাস যুক্ত হল – ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশী বিজ্ঞানী দম্পতির যুগল আবিষ্কার। তিনি খুশিতে স্ত্রীকে কোলে করিয়া ঘরময় লাফাইয়া লাফাইয়া নাচন শুরু কইরা দিলেন।
নাচিতে নাচিতে টায়ার্ড হওয়ার পর তারা মনের আনন্দে নাক ডাকিয়া ঘুম দিতে লাগিলেন।
০৩ জুলাই ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২১ রাত ১০:২৯