somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবার জন্য ভালোবাসা! সবার জন্য শুভকামনা!!

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কতদিন ঘরের ভিতর বন্দি থাকা যায়?

মন খুব ছটফট করে বাইরে বেরোবার জন্য। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে সাধ হয়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছেরা দুর্মর হয়ে ওঠে। অফিসের কর্মব্যস্ততায় ডুবে যেতে আকুল হয়ে উঠি। মানুষ একা একা অলসভাবে কতদিন বাঁচতে পারে?

ঘরের ভিতরে বসবাসকারী ছেলেমেয়েরাও ছটফট করে আমাকে একনজর দেখার জন্য। কিন্তু ডাক্তার নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করায় এসব কিছুই হচ্ছে না। কলকাতায় থাকাকালে কিছুদিন বিকেলে ৪৫-৬০ মিনিটের মতো হাঁটতে বেরোতাম। গত সপ্তাহে ডাক্তার বললেন, এসব বন্ধ রাখুন আপাতত। ঘর থেকে বেরোবেন না।

ছোটো ছেলে মাঝে মাঝে খুব সাবধানে দরজা খুলে উঁকি দেয়- হাই আব্বু!!! অমনি তার মা ধমকে ওঠে- খবরদার, দরোজা খুলবে না। বন্ধ করো দরোজা।

ভোর ৫টা-সাড়ে ৯টা, দুপুর দেড়টা-আড়াইটা, এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা আমার জন্য খুব ক্রিটিকাল টাইম। এ সময়ে ঘড়ির কাঁটা ধরে ওষুধ এবং খাবার খেতে হয়। এর মধ্যে দুটো ওষুধ আছে যেগুলো হাতে নিয়ে পানিসহ বসে থাকতে হয়, এলার্ম বাজা মাত্র মুখে দেয়ার জন্য। এ ওষুধগুলোর জন্য টাইমিঙের হেরফের করা যায় না। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা, বিকাল ৩টা-৫টা ঘুম। চেষ্টা করি ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তে।

গতকাল সন্ধ্যায় একটু অবহেলা হয়, ফলে ওষুধ খাওয়ার টাইমিঙে একটু তারতম্য হয়ে যায়। তড়িঘড়ি ওষুধ-খাবার-ওষুধ খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়ি। ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে ডেকে বললাম, ওদের বলে দাও, ১২টার সময় আমাকে যেন কেউ কল না করে। অমনি স্ত্রী কলকলিয়ে হেসে উঠে বলে, তোমার ছেলেরা যে সব আয়োজন কইরা বারোটার জন্য ওয়েট করতেছে। আমি জোর দিয়ে বললাম, ঘুম একবার ভাঙলে সহজে আর ঘুম আসে না। কাজেই, ঘুম ভাঙানোর দরকার নাই। ওসব সকালে হবে। বলেই চোখ বুজলাম। তখন ১০টা পার হয়ে গেছে।

ফোন বেজে উঠলো ঠিকই। মোবাইলের অপর প্রান্তে আর্মি মেডিকেল কলেজ থেকে মেয়ে।

- হ্যাপি বার্থ ডে, আব্বু।
- থ্যাঙ্কিয়্যু আম্মু।
- কী করেন?
- ঘুমাচ্ছিলাম।
- আচ্ছা ঠিক আছে আব্বু। ঘুমান।
- ওকে আম্মা।

আজ আমার সারাদিন জন্মদিন ছিল। হ্যাপি বার্থ ডে টু মি। ফ্রেন্ডস, আমাকে উইশ করতে পারেন। অন্যান্য বার আমার এ জাতীয় লেখার হেডিং হয়- হ্যাপি বার্থ ডে টু মি- বা এ ধরনের কিছু। এবার এ লেখাটার হেডিং বদলে দিলাম ইচ্ছে করেই। আশা করি আপনারা কারণটা ধরতে পেরেছেন। কারণটা কী, বলুন তো দেখি? :)

রাতে ফজরের আগ পর্যন্ত ২-৪ বার প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভাঙে। এ সময়ে খুব সংক্ষিপ্তভাবে আমি দুটো কাজ করি- ১ গ্লাস পানি খাই, এবং ফেইসবুকে একঝলক ঢুঁ মারি, আরেকটু সময় পেলে আমাদের এক্সক্লুসিভ ভাইবার গ্রুপটাও দেখি।

মেয়ের সাথে কথা বলার পর ফেইসবুকে ঢুকলাম। ইনবক্সে বড় ছেলের মেসেজ- হ্যাপি বার্থ ডে আব্বু। বি রেডি অ্যাট সেভেন। আমি ছেলেকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়ে চোখ বন্ধ করি।

সকালে ৭টার আগেই মাস্ক ও চশমা পরে আমি রেডি হয়ে বসে থাকি। দুই ছেলে মায়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দরোজা খুলে সুর করে উইশ করতে থাকে- হ্যাপি বার্থ ডে টু ইয়্যু...

ডাইনিং হলে একটা চকোলেট কালারের কেক। গতকাল সন্ধ্যায় বড় ছেলে বিইউপি থেকে বাসায় এসেছে আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। কিন্তু এই টেকনোলজির যুগে সিক্রেসি বজায় রাখা খুবই কঠিন। আমার পিএ হুমায়ুন কবীর এটা জানতে পেরে মুখ ফসকে বলে ফেলেন। আর আমিও সতর্ক হয়েই ছেলেদের মাকে বলে দিই- রাত বারোটায় আমাকে যেন ডাকা না হয় :)

আমি ডাইনিং টেবিলের হাই চেয়ারে বসে। সামনে কেক। একপাশে দুই ছেলে, অন্যপাশে তাদের মা। ছেলেরা সুরে সুরে উইশ করছে, আর তাদের মা দিচ্ছে হাততালি :) কোনো ক্যামেরার ক্লিক নেই, যদিও বড় ছেলে কেক কাটার আগেই কেকের দু-একটা ছবি তুলে রেখেছিল।

আমার ছেলেমেয়েদের জন্মদিন যেভাবে লিখে রাখা হয়েছে, আমারটা সেভাবে লিখে রাখেন নি আমার লেখাপড়া-না-জানা মা-বাবা। সেদিন খুব তুফান ছিল দিনভর। সন্ধ্যার দিকে তুমুল বৃষ্টি। মাঝরাতের কিছু আগে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। এসব কথা আমার মা বলতেন। দাদিও বলতেন। মা মারা গেছেন ৩৬ বছর, দাদি প্রায় ৪৩। মা জীবিত থাকাকালে চাঁদ আর ঝড়বৃষ্টির দিনের হিসেব করে জন্মদিন বের করার চেষ্টা করেছি খুব। কোনো সুরাহা হয় নি।

সন-তারিখ ভুল হতে পারে, আমার জন্মটা নিশ্চয়ই ভুল নয়। নিছক দাপ্তরিক কাজের জন্যই একটা জন্মতারিখ থাকতে হয় যদি ধরে নিই, তবে আমার জন্মতারিখটাও সেরকমই ধরে নেয়া আর কী।

প্রায় প্রতিবছরই, আমি বা আমরা ভুলে গেলেও যে দুটি তরুণ আমাকে উইশ করে মনে করিয়ে দেন যে আজ আমার জন্মদিন- ওঁরা হলেন মাসউদ আহমাদ ও পান্থ বিহোস। ওঁরা দুজনই খুব ভালো লেখক। ওঁদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আজ ফেইসবুকে প্রথম নোটিফিকেশন পেয়েছি মনোয়ারা মণির। এরপর ইকবাল স্যারের। ইনবক্সে ক্লাসমেট জহির। ভাইবারে আমার পিএ আমাকে উইশ করেছেন। মাসউদ আহমাদের আমাকে নিয়ে করা পোস্টটি অনবদ্য। এর জন্য তাঁকে বিশেষ ধন্যবাদ। এ ছাড়া, আজ সারাদিন ইনবক্সে, ই-মেইলে, মোবাইলে, ফেইসবুক ওয়ালে যাঁরা আমাকে উইশ করেছেন, সবার প্রতি বিনীত ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনারা ভালো থাকুন। আগে জন্মদিনে সামহোয়্যারইন ব্লগে একটা বেলুন উড়িয়ে দেয়া হতো, যেটি সারাদিনই উড়তো। এবার দেখছি না। অবশ্য গতবছরও ছিল কিনা তা খেয়াল করে দেখি নি। আমার জন্মতারিখটা কি গোপন করে ফেলেছি? ব্লগে খুঁজলাম- এ ধরনের ফিল্ড খুঁজে পেলাম না। কোথাও নিশ্চয়ই কিছু গণ্ডগোল করে ফেলেছি আমি নিজে; অথবা ব্লগ কর্তৃপক্ষ হয়ত এ জিনিসটা বাদ দিয়ে দিয়েছে।

আমার অ-আসল জন্মদিনে আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই।

এবার একটুকরো কবিতা, আমার 'অসম্পর্কের ঋণ' থেকেঃ

সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে অরূপ পাথারে নেমে এসে
অলৌকিক সুর তোলে গানে। তারপর রাত্রি শেষে
ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায় একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক

মাটিতে করুণ দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক

----


সবার জন্য ভালোবাসা। সবার জন্য শুভকামনা- একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখবেন, আলোর হাসিতে ঝলমল করছে বাতাসের কণা, গাছের পাতারা আনন্দে দুলছে রোদের আড়ালে, চারিদিকে তাকিয়ে দুচোখ উজাড় হয়ে যাচ্ছে আপনার! আহা, এত আনন্দ! এত আনন্দ কোথায় ছিল এতকাল!

পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখ আর সমৃদ্ধির খবরে আপনার হৃদয় উদ্বেলিত হয়; এক অসাধারণ অনুভূতি আপনার সর্বাঙ্গে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে।

আজ কোথাও আত্মঘাতী জঙলিদের হামলার সংবাদ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় অগুনতি মানুষের মৃত্যু হয় নি আজ। স্ত্রী ও শাশুড়ির যোগসাজসে ছাত্রী বালিকাকে দফায় দফায় তুফানীয় গণধর্ষণ, অতঃপর মাসহ মুণ্ডুমুণ্ডন, কিংবা ৪ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ শেষে গলা টিপে হত্যা ও নর্দমায় লাশ গুম- এসব নৃশংসতা আর বর্বর নৈরাজ্যের কোথাও কোনো পোর্টাল নেই।

আপনি অবাক! এ কোন অবাক বিশ্বের অবাক ভূ-ভাগে আপনি! স্বপ্নও এতটা হয় নি কখনো, অথবা কল্পনা। আপনার হৃদয় উদ্বেলিত; আপনার সর্বাঙ্গে অনুভূতিরা বাঙ্ময়।

সবার জন্য ভালোবাসা। সবার জন্য শুভকামনা- অন্তত একদিন এ সোনার বাংলায় এমন স্বপ্নের এমন একটা দিন আপনার আমার আমাদের সবার হয়ে উঠুক।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:৪৮
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×