somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পকণিকা

১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্বোধ্য

প্রতি উইক-এন্ডে আসে, উইক-এন্ড শেষে ফিরে যায়। যৌবনের তীব্র আবেগ নেই। কিন্তু রাতভর গল্প আছে, পুরোনো গল্প- কীভাবে প্রথম যৌবনে তারা রাত কাটিয়ে দিত- এসব।
সে চলে যাচ্ছে।

‘কেন মিছেমিছি আসো এতদূর? কত কষ্ট!’

লোকটা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পায় না। মৈথুন, কিংবা সম্ভোগই কি পরম তৃষ্ণা? তাহলে চোখ? দেহের ভিতরে একটা মন আছে- মনের কি কোনো তৃষ্ণা নেই? কাউকে না দেখে কতদিন থাকা যায়?

কাউকে বোঝানো যায় না- শরীর মরে গেলেও মন খুড়ো হয় না।

সে চলে যাচ্ছে। আরেক উইক-এন্ডে আবার আসবে। ফিরে যাবে। আবার আসবে।

৪ জুলাই ২০১৪


আত্মজ

জনৈকা স্ত্রী তার দু বছরের সন্তান ও স্বামী ফেলে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেলো। তিন দিনের মাথায় স্বামীর মোবাইলে স্ত্রীর এসএমএস:

‘বাবুর কাগজপাতিগুলো ড্রেসিং টেবিলের ভিতর। চাবি ওয়ার্ড ড্রপের উপর পর্দার নীচে।’

৪ জুলাই ২০১৪


অপমৃত্যু

৮ বছর বয়সী মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘তাঁদের হাতে ধারালো ছুরি ছিল। আম্মু আর আব্বুকে খুন করে তারা জানালার শিক গলে বেরিয়ে আসমানে উড়ে গেলো।’

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত আদালত প্রতিবেদন পেশ করলো- ‘জোড়া খুনের আসামি একজোড়া জিন ছিল। জিন ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়াতে এ খুন অপমৃত্যু হিসাবে গণ্য করা হোক।’

১০ জুলাই ২০১৪


সরল অঙ্ক

রাহেলার বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। ৩ বছরের শিশুটি নানির কোলে বড় হচ্ছে। খালা আর মামাদের অতি আদরের ভাগ্নে। দু-চার মাসে এক-আধবার শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যায়। সেখানে রাহেলার মন টেকে না। দু-একদিন বাদেই বাপের বাড়ি ফিরে আসে।

নাতিকে না দেখতে পেয়ে দাদিরও বুক ছটফট করে। বিয়াইনের সাথে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা কম হয় নি। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই হলো মেয়েদের আসল বাড়ি। কিন্তু রাহেলার মা কিছুতেই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থাকতে দেবেন না। মেয়ে আর নাতিকে না দেখে তিনি একদম বাঁচতে পারেন না।

রাহেলার বড় ভাই বিয়ে করলো। বৌভাতের ৩তিন পর বউ শাশুড়িকে সাফ জানিয়ে দিল, সে এখন থেকে বাপের বাড়িতেই থাকবে।

১১ জুলাই ২০১৪


২৫ বছরের মৃতদেহ

একদা আমি তাকে ভালোবাসতাম। তাকে কাল আবার নতুন করে ভালোবাসতে গেলে আন্তরিক হাসিযোগে আমাকে গ্রহণ করলো। অন্তরঙ্গ আতিথেয়তা শেষে সে বললো, তোমাকে অভিবাদন, আজ আমার ২৫তম মৃত্যুদিবস।

১৫ মার্চ ২০১১


দ্বিতীয় বিয়ে

‘অনুগ্রহ করে আমাকে আরেকবার বিয়ে করে দেখো, আগের চেয়ে অনেক বেশিই সুখে থাকবে। আমরা একটা বাংলো বানাবো বলে যেটুকু জায়গা কিনেছিলাম, যাতে কয়েকটা বিম প্রোথিত হয়েছিল, তুমি আসবার পর ওগুলো সমাপ্ত করবো। আমাদের এবারের সংসার আমরা কীভাবে সাজাবো তার একটা দীর্ঘ ইশতেহার ইতোমধ্যে বার-বাড়ির বারান্দায় টাঙিয়ে দিয়েছি। চারদিকে এতো গান, এতো সুর, এতো আনন্দ, এতো সুখ দেখে তুমি মূর্ছা যাবে।’

যার নিগ্রহ ও জ্বালাতনে অতিষ্ঠ হয়ে চার বছরের এক বউ পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছিল, সেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এই দৈন্যগ্রস্ত আরজ দেখে পাড়াপড়শি তেড়ে এসে বললো, ‘ঐ থামলি? তোর ফাঁকা বুলি বন্ধ কর।’

ঢাকপেটানো জামাইটা এবার হাতে মাইক তুলে নিল- ‘আমি কথা দিচ্ছি- আরেকবার আমাকে স্বামী হবার সুযোগ দাও- তোমার সমস্ত অসমাপ্ত সাধ-আহ্লাদ ষোলো আনা পূরণ করে দিব। আর যদি অন্য কাউকে পাণিদান করো, মনে রেখো, সে তোমাকে তিলে তিলে মারবে, তোমাকে বিষ খাইয়ে মারবে। তখন হাড়ে হাড়ে টের পাবে- জামাই কাকে বলে!’

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩


কাল ভোরে ঘুম থেকে জেগে

আমরা কোথায় যেন বেড়াতে গিয়ে তোমাকে হারিয়ে ফেলি; তারপর যখন খুঁজে পাই, তখন নির্জন গাছের নিচে শুয়ে থাকা সদ্যমৃত লোকটির কাছে গিয়ে দেখি- ওটি আমি। নিজ হাতে নিজের কবর খুঁড়ে আলগোছে নিজেকে সঁপে দিই মমতাময়ী কবরের গর্ভে; আমাকে হারানোর বেদনায় কেঁদে বুক ভাসাচ্ছ তুমি, আমিও ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে কবরে ঘুমিয়ে পড়ি- আমাদের শেষদেখা শেষবারের মতো শেষ হয়ে যায়।

কাল ভোরে ঘুম থেকে জেগে আজ রাতে যেসব স্বপ্ন দেখেছি একটি একটি করে তোমাকে বলবো আর তুমি চমকে উঠে জ্ঞান হারাবে রোজকার মতো।

২৩ অক্টোবর ২০১৩


আমাকে খুঁজতে এক রাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম

ভুলে গেছি, কবে, কোন্‌ ঘরে আমার সর্বশেষ নিবাস ছিল, কী কারণে রোজ রাতে নেমে পড়ি নগরীর রাস্তায়। আমাকে খুঁজতে এক রাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। বহুপথ ঘুরে অবশেষে দূর থেকে আবছা ছায়ার মতো আমাকে দেখি; আমার পৃষ্ঠদেশে পরিভ্রমণের কোনো বর্তিকা জ্বলে না, অস্পষ্ট পদছাপ খুঁজে খুঁজে আমি তার পিছু পিছু হাঁটি। শহরের পুষ্পোদ্যান পার হয়ে ঘিঞ্জি অলিগলিতে সে ঢুকে পড়ে। কখনো অস্থির, উদাসীন গতিবিধি তার, কখনো ধীর সৌম্য কদমে ফুটপাত ধরে হেঁটে হেঁটে গলিত জোছনা মেখে নেয় সমগ্র শরীরে। হঠাৎ হঠাৎ সে কোথায় হারিয়ে যায়, উদ্‌ভ্রান্তের মতো তাকে খুঁজতেই অকস্মাৎ মুখোমুখি। এভাবে সারারাত শহরের উত্তর-দক্ষিণ পার হয়ে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালে পুনর্বার মুখোমুখি হতেই সে চমকে ওঠে। মনে হয় আমাকে সে চিনতে পেরেছে, অথবা আমারই ভ্রম হয়- আমি তাকে চিনতে পারি নি।

৯ অক্টোবর ২০১৩


কী কী কারণে বউ বা প্রেমিকাকে ভালোবাসেন

বউ বা প্রেমিকাকে কেন ভালোবাসেন তার একহাজারটা কারণ খাতায় লিখে ফেলা সম্ভব। এটা করবেন না দয়া করে, তাতে আপনার ভালোবাসা বা ভালোলাগার কারণগুলো খুব সীমিত হয়ে গেলো। ভালোলাগার কারণগুলোকে সংখ্যায়িত করা যায় না; কোনো নির্দিষ্ট কারণে ভালোবাসেন না কাউকে; ভালোলাগার মূল কারণগুলো অনেক সময় খুঁজেও পাওয়া যায় না, এতোটা অজ্ঞাতবাসী।

‘তোকে ছাড়া আমি বাঁচবো না’, অহনা একদিবসে এ-কথাটা আমায় একশত বার বলতো। ‘কেন আমায় এতো ভালোবাসিস, তার তিনটি কারণ আমায় বল্ তো সোনা’, আমি খুব উদ্‌গ্রীব হয়ে ওর কাছে একদিবসে একশত বার এর উত্তর জানতে চাইতাম। জানার জন্য আমি যতই অস্থির হয়ে উঠতাম, অহনা ততই শান্তসৌম্য ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।

তিন বছরের মাথায় অহনা ওর এই ‘ভালোবাসা-দর্শন’ আমাকে জানালো; তারপর আমাকে পাগলের মতো এতো ভালোবাসার একটা কারণও না জানিয়ে চলে গেলো।

১৮ জানুয়ারি ২০০৯
৪৫৬ বার পঠিত
৩৬টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিরাট ব্যাপার-স্যাপার | রম্য =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নিজের মোবাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাই সরাসরি দুইস্তর বিশিস্ট প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন: নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার

লিখেছেন বিদ্রোহী ভৃগু, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৪

ভূমিকাঃ

ছাত্র-জনতার সফল জুলাই বিপ্লবের পর আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, আইনের শাসন ও প্রকৃত উন্নয়নের এক নতুন পথে যাত্র শুরু করেছে। নোবেল লরিয়েট ড। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=শোকর গুজার প্রভুর তরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪



প্রভু তোমার দয়ার কথা, বলে হয় না শেষ তো
কত রিযিক আহার দিয়ে, রাখছো মোদের বেশ তো!
তোমার সৃষ্টির কেরামতি, নেই কো বুঝার সাধ্য
তোমার বান্দা তোমার গোলাম, শুধু তোমার বাধ্য!

গাছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুপার সানডে : সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের পথে বাংলাদেশ!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭


আজকের দিনটি বাংলাদেশের সচেতন মানুষের দীর্ঘদিন মনে থাকবে। এত সংঘর্ষ ও মারামারি অনেকদিন পর ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করলো। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন তার উপর বিভিন্ন অবরোধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভয়েস অব আমেরিকার জরিপে সংস্কার শেষে ভোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৬৫.৯ % মানুষ

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


পাগল ও নিজের ভালো বুঝে ,কখনো শুনেছেন পাগল পানিতে ডুবে মারা গেছে কিংবা আগুনে পুড়ে মারা গেছে ? মানসিক ভারসাম্য না থাকলেও মানুষের অবচেতন মন ঠিকই বুঝে আগুন ও পানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×