তুই চলে যাবার পর
তোর মতো করে তোর সোনাবাবুকে
এতোখানি ভালোবাসবে, কাউকে পাই নি আজও খুঁজে। তোর মতো করে
তোর সোনাবাবুর উসখুশ মাথাটিকে
বুকের পেলবে টেনে নেবে, কে আছে এমন দরদিয়া? তোর কথা
কেবলই মনে পড়ে বুবু, অমনি
দু চোখ ফেটে প্রবল অশ্রুপ্রপাত।
সমগ্র চরাচরে তোর ছায়া দেখি, শুধু তোকে দেখি না কোথাও।
আমি আজ বড্ড ভবঘুরে বুবু, কিচ্ছুটুকুন লাগে না আমার ভালো
তুই চলে যাবার পর। পাখিমন পাগলপারা,
বুকের ভেতর সর্বগ্রাসী উথালপাথাল ঝড়।
বুবু, তুই গিয়েছিস চলে, চলে যাবার কারণটা না বলে
বুবু, তুই গিয়েছিস চলে তোর বাবুকে নগ্ন পায়ে দলে
বুবু, তুই গিয়েছিস চলে
আর কোনোদিন ফিরবি না তা জানি।
বুবু, ঘর হতে বেরুলেই
মনে হয় পায়ে পায়ে তুইও বেরিয়েছিস পথে, কখনো
ছোটো খুকিটির মতো হাত ধরে হাঁটছিস, কখনো
কাঁধের জমিনে নরম গাল রেখে
চোখ বুজে
তোর বাবুর কোমর জড়ানো দু হাতে তোর। তোর শরীরের
সৌরভ আর চুলের সুঘ্রাণ
ক্ষীণায়ু জীবনে জাগায় সুদীর্ঘ জীবনের সাধ
তোর বাৎসল্যরঙিন ছোঁয়ায়
একহিমালয় অহংকার জাগে বুকে, সবকিছু তছনছ
তুচ্ছ হয়ে যায় সবকিছু
বুবু, ঘর হতে বেরুলেই, একাকী বিষণ্ণ হাঁটি, উদাসীন
শহর-প্রান্তর ধু-ধু মরুভূমি, আচমকা ভ্রমবশে ঘুরে দাঁড়াই
অলৌকিক ‘পাখি’ সম্বোধনে।
বুবু, আমি তোর সোনাবাবু, মাছরাঙা, টিয়ে।
আমি তোর বাবুই পাখি রে বুবু।
তোর অলৌকিক স্বরে আমায় আর ডাকবে না কেউ কোনোদিন।
বুবু, ওরে আমার একরত্তি বুড়ি, তোকে পাবার মতো বৈভব আমার ছিল না
আর কিছুতেই। তোকে হারাবার মতো হতভাগ্য আর হয় না।
আমি আজ সবচেয়ে নিঃস্ব রে বুবু, শুধু তুই নেই বলে।
ভ্রমছায়া
এখনো মনে হয় সুতীব্র অভিমানে তুই
মেঝের উপর আছড়ে ফেলিস মুঠোফোন, আর আমি সবেগে ছুটে এসে
নীরবে পেছনে দাঁড়াই, সন্তর্পণে ঘাড়খানি তোর ছুঁই।
অমনি সচকিত ঘুরে
একফালি হাসি ঝেড়ে আহ্লাদে ছিটকে যাস দূরে।
এখনো মনে হয় একদিন সোনালি প্রত্যূষে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছি চৌমাথার ধারে,
হাসনাহেনার সুগন্ধি ছড়ানো হাসিমুখ তোর ভেসে আসে আবছা অন্ধকারে।
মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, মনে হয় আজও আছে সবকিছু ঠিকঠাক
অবিকল সেদিনের মতো
তারপর চেয়ে দেখি, তুই নেই, আছে শুধু তোর দেয়া একবুক ক্ষত।
অক্টোবর ২০০৭
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৫