ভুবননদীর গান
তোকে নিয়ে স্মৃতি বুনেছি বিগত বছর ধরে
গাউছিয়ায় জামদানি-বিপনি
নিউমার্কেটে রঙিন চিকেন, কলাবাগান লেক! কতোদিন! কতোদিন
বইমেলার তুখোড় যুগল, দোয়েল-চত্বরে ঘুমযাপন মিছেমিছি
টিএসসি’র মুখর সরণী আর আমাদের ‘অনু’হীন রুক্ষ রাগমালা
বিষণ্ণ বাদল ভিজিয়ে গেছে সবটুকু মন কতোদিন! কতোদিন
এপ্রিল-মে’র রৌদ্রদুপুর গলেছে চাঁদিমাথায় তোর আর আমার
রিভারভিউ’র আগুন বালুতে পা ডুবিয়ে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে
আচানক
পাটেবসা সূর্যের আলোয় আঁচল উঁচিয়ে মৃদু
‘এখানে হাত রাখ্’- এভাবেই আলগোছে তুলে নিয়ে আমার বাঁ হাত
রেখে দিলি বিপুল পেলবে। মনে নেই?
সেদিনই প্রথম ভুবন দেখালি
আমার বিস্ময়, নতুন স্বাদের ঘোর; মনে পড়ে, বুড়ি?
শহরের প্রতিটি ফুটপাত রেখেছে পায়ের স্বাক্ষর
শহরের প্রতিটি ফুটপাতের বড্ড মুখস্থ আমাদের পদশব্দ
ছোট্ট খুকিটির মতো গা ঘেঁষে হাঁটছিস
যেখানে যা কিছু চোখে পড়ে, অমনি আহ্লাদি আর্জি তোর :
- ‘আমি ঐ ঝালমুড়ি খাবো।’ - ‘কাঁচা আম, আমড়ার আচার।’
- ‘ওসব খাস্ নে সোনা, এমনিতেই পেটের পীড়া সারাবছর।’
তোর কি এখনও পেটের পীড়া হয়? ঝালমুড়ি দেখলেই
মনে কি পড়ে কারো কথা?
আরেকদিন রিভারভিউ যাবি? অন্য কোথাও?
এখনও আমায় তীব্র টানে ভুবননদীর গান। সূর্য তো পড়ে এলো।
আর কবে ফিরবি বুড়ি, কবে তোর শেষ হবে অভিমান?
৩-২৮ মার্চ ২০০৮
প্রতীক্ষা
১
এক ঝাঁক গ্যালাক্সি
বৃক্ষবীথি ধরে ধরে ধাবমান দ্রুত। অদ্ভুত অন্বেষায়
রাত ছুটে চলে সমুদ্র মন্থনে।
তুমি? একফালি ব্যবচ্ছেদ মহাশূন্যতায়।
২
অমিত্রাক্ষর ছন্দে হেঁটে যাও তুমি
পেছনে ক্ষয়িষ্ণু ছায়ার সজল পটভূমি।
তারপর দূরে, বহু বহু দূরে ধু-ধু ছায়াপথ...
আমার সবটুকু জুড়ে তাৎক্ষণিক, অতীত ও ভবিষ্যত।
৩
পুংসক পুকুরেও নৈঃশব্দ্য জমে
নক্ষত্র নিশ্চিহ্ন হয় বিস্ফোরণ শেষে।
৪
একটি দিনের ভেতর সমগ্র জীবন বেঁধে
বোতলবন্দি আয়ুষ্কাল কাঁদে।
৫
একটি শস্যবীজ একদিন অঙ্কুরিত হবেই
একদা নক্ষত্রঝরা রাত্রিতে তুমি ফিরবেই।
১৩ জুলাই ২০০৮