আমার শৈশবের দুঃখগুলো প্রতিভোরে, সন্ধ্যায় পেলব মাতৃস্নেহের মতো স্পর্শের সুগন্ধি ছড়ায়। অনেক দূরের শৈশব আগামীর পায়ে পায়ে অন্তরঙ্গ ছায়ার মতো নীরবে হেঁটে চলে সুমধুর সময়ের ছন্দে। আমার দুঃখিনী মা আজও ছেঁড়া কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছেন কুটিরের কোনা ধরে কোটরাগত চোখে। বাবার মাথায় দুঃখের ঝাঁপি, চোখে তাঁর ভবিষ্যতের ফুল উজ্জ্বল হাসে।
শৈশবের দুঃখকে ভোলা যায় না। শৈশবের দুঃখের উপর দাঁড়িয়ে শণের চালঘরে অবিরাম গড়ে ওঠে অনাবিল সভ্যতা। আমার দুঃখেরা অমর সঙ্গীতে দুলে ওঠে শৈশবের আড়িয়াল বিলে, তার নরম জলবিছানায় নিবিড় ঘুমিয়ে পড়ে বিনম্র ঢেউগুচ্ছের অকাতর মূর্ছনায়।
এসব শৈশবসঙ্গী দুঃখের উপর নিয়ত ভেসে থাকি- কপোলে, গ্রীবায়, শার্টের কলারে সূক্ষ্ম লিপস্টিকে স্ত্রীর প্রেমচিহ্ন গাঢ়তর সুখের মতো বেদনা জাগায় বিষম দূরভূঁইয়ে। সন্তানদের দেখি- একটা ‘আমি’ থেকে তিনটা ক্লোনের মতো তিনটা দেহাংশ কী অদ্ভুত আনন্দে আন্দোলিত হয় আলাদা আলাদা সত্তায়। আমার শৈশবের দুঃখগুলো রক্তে রক্তে ভেসে ভেসে ভাগ হয়ে যায়। আমার শৈশবের দুঃখগুলো রক্তে রক্তে সোনাবীজ বোনে।
শৈশবের দুঃখ শেষ হতে নেই। শৈশবের দুঃখ সলতের মতো জীবন জ্বেলে রাখে। শৈশবের দুঃখকে ভুলতে নেই; যেদিন ভুলে যাবে, জেনে রাখো, ঝিমুতে থাকবে, কুপির শেষ আলোর মতো এরপর দপ করে নিভে যাবে। শৈশবের দুঃখকে ভুলতে পারবে না; শৈশবের দুঃখ জীবনামৃত, এক হিরন্ময় সুখ।
আমার শৈশবের দুঃখগুলো, হে আমার অলঙ্ঘ্য সঙ্গীরা,
তোমাদের স্বর্ণচরণে চির অবনত শির
তোমরা আমাকে দুঃখ দাও নি কখনো
আমাকে অজর অর্ঘ্য দিয়েছো অক্ষয় আগামীর।
****
বিঃ দ্রঃ বড় ছেলে এসএসসি পাশ করলো এবার। ওর ভর্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যস্ত আছি। আজ স্কুল থেকে ফিরে এসে মেয়ে বলে, আব্বু টাকা দিন, আম্মুর জন্য গিফ্ট কিনবো। কীসের গিফ্ট? আজ মা দিবস। আম্মুকে উইশ করেছি। এখন গিফ্ট কিনে এনে গিফ্ট দিব।
ঐশী আর লাবিব এখন র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে ওদের আম্মুর জন্য গিফ্ট রেডি করছে। ওরা খুব ব্যস্ত।
এ লেখাটা কোনো গিফ্ট নয়, পুরোনো একটি লেখা। আমি আমার মাকে মনে করে রিপোস্ট করলাম। সেই সাথে আপনাদের জন্য পুরোনো আরেকটি লেখা : মাকে আমার পড়ে মনে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০৪