বিষাদে বোধন
বোধনে বিষাদ
১
এখন আমার দু’ চোখ ভরে পানি
তোকে কতোখানি ভালোবাসি আমার অন্তর্যামী জানেন, আর আমি শুধু জানি।
কীসে তোর ভয়রে পাগলি? তোর কোনো ভয় নাই
এই বিশাল ভুবনে আমার বক্ষের পাশে আমৃত্যু অক্ষত তোর ঠাঁই।
২
যতো চাই ভুলে যেতে ততোই পিছে টানে সবাই
পিছু ফিরে চেয়ে দেখি, আমি আছি একা
আমার পেছনে আর কেউ নাই।
৩
‘তোকে দেখে তীব্র বিবমিষা, তা তুই বুঝিস?
এর চেয়ে ঢের ভালো মরে যাওয়া।’
সেই তোর চোখের ত্রিসীমা পার
অন্তহীন দূরের পথে ছুটেছি ক্লান্তিহীন
কতোকাল! সুদীর্ঘ পঁচিশ বছর
জমাট পঁচিশ শতাব্দী ডুবে গেলো কালের পাথারে
তোর কি এখনো বিবমিষা হয়?
৪
তুমি কি তোমার কবিকে বিলকুল ভুলে যেতে চাও?
তাহলে নিষ্ঠুর প্রেম শেখালে কেন? যেটুকু দিয়েছিলে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
২০০৬ এর ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু। তীক্ষ্ণ রোদের নিচে আজও দাঁড়িয়ে দেখি,
তুমিই অদ্বিতীয় নান্দনিক গুরু।
৫
আমি বেঁচে থাকি তোর নিশ্বাসে
প্রেম বেঁচে থাকে শুধু বিশ্বাসে
ঘুমে-জাগরণে, কাজে-অবকাশে
সবখানে দেখি তোর মুখ ভাসে।
তুই আমার সোনা, বিশ্ব-বিভূঁই
এ কোন্ অন্ধ প্রেম দিলি তুই?
৬
মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে উঠি আজকাল, তখন সান্ত্বনা খুঁজি
এখন আমার ডিপ্রেশনকাল চলছে। কতো যুগ চলবে কে জানে?
আপনি আমার ঘরের বাইরে নিকটতমা।
...আর কাউকে জ্বালাবো না,
এটাই পণ। আপনার নাম্বারটাও মোবাইল থেকে মুছে ফেলবো এখনি।
অহরহ মনে পড়বে আপনাকে; খুব ছটফট করবো সেল নাম্বার নেই বলে।
তারপর কোনো একভাবে কোনো একদিন আপনাকে
আবারো খুঁজে বের করবো। কতোদিন পর!
জানি না উত্তর।
৭
আঁসুর অনলে ক্ষয় হয়ে গেলো ঘুমহারা দুই আঁখি
তোর সে কবিকে কেমন করিয়া ভুলে গিয়েছিস, পাখি?
তোর সে কবিকে আর কি এখন তেমনটি মনে পড়ে
পড়তো যেমন রাতদুপুরের ঝুমুবৃষ্টি ও ঝড়ে?
ঝুমুবৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তুই কতোদিন খুঁজেছিলি
কতোদিন তুই খুন করেছিলি দুপুরের নিরিবিলি;
এইসব স্মৃতি মনে পড়ে আর চোখ ফেটে আসে জল
তোর সে কবিকে কেমন করিয়া ভুলে যাবি তুই, বল্?
৮
পৃথিবীর সব রূপ তোর মুখখানিতে
তাই আর কোনো রূপ পারিল না টানিতে।
৯
মন খুব খারাপ। কখনো কখনো মনের ভেতর
একা হয়ে পড়ি। খুব অসহায় বোধ হয়।
তখন তাহাকেই ডাকি, যার সাথে যোজন যোজন দূরত্বে শতাব্দীর পরিচয়।
১০
প্রতিদিন ভোরে ঘরের কোণে বাতাবিনেবুর ডালে
আমার দোয়েল শিস্ কেটে ঘুম ভাঙাতো।
আজ সারারাত ঘুম হলো না। দোয়েল পাখিও নীরবে উড়ে গেছে।
১১
একটু ঘুমোবো। জানি না এখন তুই কোথায়, হয়তো কাশিয়ানির পথে।
আমায় ভুলে যাস্ নে যেন যেতে যেতে। আমি আছি তোর স্মৃতির ভেতর
অপার আনন্দে মেতে।
১২
কথা দিয়ে তুই কথা রাখবি না, মনে হয় নি তা একটিবারও,
সবখানি ভুল ভেঙে দিয়ে সখী সত্যিই তুই কথা রাখলি না!
তুই কি ভেবেছিস তোর কোনো কথা সত্যি মানিব এমনি আরো?
আর কি তা হয়, বুকের ভেতর বাজছে যখন অগ্নিবীণা?
১৩
তোর মাথায়
যদি আর কোনোদিনও চুল না গজায়,
আমি সবচেয়ে খুশি হবো। তুই ন্যাড়া মাথা খোলা রেখে
আমার হাত ধরে হাঁটবি, তা দেখে মানুষ অবাক হয়ে বলবে, এমনও কি প্রেম হয়,
শুধু মনেতে মনেতে মিলন, দেহলাবণ্যে নয়?
১৪
বয়স আমার দুই কুড়ি এক, তোরই সমান সমান
এমন মধুর বয়স কালে মন হলো তোর পাষাণ!
তোর যে বুকে জ্বলছে ভীষণ রুদ্র খরার আগুন
বল্ পাষাণী তোর কবিকে করলি এ কী খুন!
১৫
ভুলে যাবি তুই? যা না
যুগ যুগ পর একদা হঠাৎ
পাতাল ফুঁড়িয়া জাগিয়া আবার
অতর্কিতে তোর বুকে দেবো হানা।
তারপর তোর কলজে খাবো,
তখন করবি কী তুই-
সহসা আবার পালাই যদি ছাড়িয়া বিশ্ব-বিভূঁই?
১৬
যা তুই তবে হারামজাদি, খেলার মাঠেই যা
তোর লাগি কেন অশ্রু দেবো শুধুই খামোখা?
১৭
আমার কবিতার ভাষা করাতের মতো যদি হতো
তোর বুকের অন্তর্গত করে দিতাম এক ল ত।
১৮
হারিয়ে গেলে হন্যে হয়ে আমাকে তুই
খুঁজবিই
এ বিশ্বাসে যখন তখন গহীন জলে
ডুব দিই
কষ্ট দিলে কষ্ট পাবি তাই তোকে দিই
কষ্ট
তোর প্রেমেতে সন্ন্যাসী, তাই তোর প্রেমেতেই
ভ্রষ্ট
১৯
তোর প্রেমে আর সুখ হবে না, এরচে অনেক সুখ হতো রে
ভালো যদি বাসতে পেতাম বেশ্যাদের এক ছিনাল ধরে।
আস্থা ছিল তোর উপরে, আস্থা ছিল ভালোবাসায়
ভালোবাসায় আজ মনে হয় বেশ্যাদেরই ভালো মানায়।
২০
তুই কি আমার নীল-উচাটন পাখি?
বুকের ভেতর তোর বেঁধেছিস বাসা
অন্য কোথাও শান্তি যদি পাবি
এই বুকে তুই কেন করিস
নিত্য যাওয়া-আসা?
বুকের ভেতর বাঁধলি বাসা কেন
পাখি আমার হারিয়ে যাবি যদি?
অন্য কোথাও শান্তি যদি পাবি
আমার কেন করলি দু চোখ নদী?
২১
সোনাবুড়ির আঁচল টেনে হাঁটি
সোনাবুড়ির মায়াঞ্জনা ছায়া
সোনাবুড়ির স্নেহস্পর্শ সুধা
সোনাবুড়ির কুন্তলে সুখনদী
সারাবেলার কাজের ভেতর বহে
সোনাবুড়ির সঞ্জীবনী ধারা
আমার পিঠের জমিনখানি জুড়ে
সোনাবুড়ির চোখের তারা জ্বলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪৭