সমুদ্রের ঢেউ, সোনালি বালুকা, তীর্থযাত্রীর বিশ্বাস
রামেশ্বরম মসজিদের রাস্তা, সব একাকার,
আমার মা!
তুমি আমার কাছে এসেছিলে স্বর্গের দুটি আদদের হাতের মতো।
যুদ্ধের আগের দিন গুলির কথা মনে পড়ে
যখন জীবন ছিল কষ্টের, পরীক্ষার-
সুর্যোদয়ের আগে হেঁটে যেতে হত মাইলের পর মাইল
মন্দিরের কাছে আমার সাধু প্রকৃতির গুরুর কাছে পাঠ নেবার জন্যে।
বালির পাহাড় পার হয়ে রেলওয়ে স্টেশান রোডের পথে
মন্দির শহরের অধিবাসিদের জন্য সংবাদপত্র সংগ্রহ এবং বিলোতে বিলোতে
মাইল পথ পেরিয়ে আরবি শেখার স্কুলে পৌঁছনো,
সুর্যোদয়ের কয়েক ঘন্টা পরে।
সন্ধেবেলার কাজ, তারপর রাত্রে পড়া।
ছোট ছেলেটির বড় কষ্ট
মা, সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদের জন্য
পাঁচবার নতজানু হয়ে মাথে নত করে
সন্তানেরা শক্তি সঞ্চয় করত
তোমার পূণ্যের শক্তি থেকে।
তোমার যা কিছু শ্রেষ্ঠ, যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন তাদের দিতে।
ইশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখেই তুমি দিতে।
মনে পড়ে দশ বছর বয়সে তোমার কোলে শুয়ে আছি
দাদা-দিদিরা হিংসে করছে
সেদিন পূর্ণিমা, আমি কেবল জানতাম তোমাকে মা, আমার মা।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি চোঁখের জলে হাটু ভিজে গেছে
মা, তুমি জানতে তোমার সন্তানের ব্যাথা।
তোমার দুটি হাতের যত্ন আমার ব্যাথা মুছে দিত ধীরে ধীরে
তোমার ভালোবাসা তোমার যত্ন এবং বিশ্বাস আমাকে শক্তি দিত
সে সর্বশক্তিমানেরর শক্তিতে নির্ভয়ে জগতের মুখোমুখি হতে।
শেষ কেয়ামতের দিন আবার আমাদের দেখা হবে, আমার মা।
____________________________
এই কবিতাটি এ.পি.জে আব্দুল কালাম তার আত্মজীবনি Wings of Fire (অগ্নিপক্ষ) এর ভুমিকায় লিখেছেন। তাঁর মায়ের স্মৃতিতে।