হাদিসের বেঠিকতা দ্বারা ইসলামের বেঠিকতা নির্ণয় হবে না। কারণ মহানবি (স.) বলেছেন তাঁর নামে মিথ্যা হাদিস বানিয়ে প্রচার করা হবে।তো মহানবির (স.) নামে যে মিথ্যা হাদিস প্রচার করা হলো উহাতো মোটে মহানবির (সা.)হাদিস নয় তবে এর দ্বারা ইসলামের বেঠিকতা কিভাবে নির্ণয় হবে? মহানবির (সা.) নামে যে সব জাল হাদিস বানানো হয়েছে এর সবগুলো জাল সনাক্ত করা গেছে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। সে সব জাল হাদিসের কতিপয় সহিহ হাদিস হিসেবে বিদ্যমান না থাকা বিষয়েও কোন নিশ্চয়তা নেই। কোন কোন সহিহ হাদিসের ভুলক্রমে জাল সাব্যস্ত হয়ে হাদিসের তালিকা থেকে বাদ পড়ার বিষয়েও কোন নিশ্চয়তা নেই।কাজেই হাদিস বিষয়ে অতি উত্তেজনা মোটেও ঠিক নয়।
হাদিস মানুষের মুখে মুখে প্রচার পেয়েছে। মানুষ মাত্রই ভুল আছে। কাজেই প্রচারকের ভুলে কোথায় কোন ভুল যুক্ত হয়েছে তা কিভাবে বলা যাবে? তা’ছাড়া ইসলামের ক্ষতি সাধনের জন্য ইসলামের শত্রুদের ছদ্মভেসে নবির (সা.) নামে উল্টা-পাল্টা হাদিস প্রচারের সম্ভাবনা কিভাবে উড়িয়ে দেওয়া যায়? দেখাগেছে বড় সাহাবির নাম যুক্ত করে হাদিস প্রচার করা হলো যা মোটে নবির (সা.) হাদিস নয়।কেউ যদি নবির (সা.) নামেই মিথ্যা বলতে পারে তার পক্ষে অন্য যে কোন লোকের নামে মিথ্যা বলা সম্ভব। বোখারী (স.) সহিহ লোক থেকে যে হাদিস গ্রহণ করে সহিহ বললেন সে হাদিস আগে থেকেই জাল হয়ে থাকলে শেষ রাবী সহিহ হলেইবা কি লাভ!অনেক লোক কথা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য হাদিস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ রয়েছে। অনেকে আবার নিজের আবিষ্কৃত কথা গ্রহণযোগ্য হবার জন্য হাদিস হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। সে সব হাদিসের কোন কোনটি সহিহ হাদিস হিসেবে প্রচার পায়নি সেটা কি করে বলা যায়?
হাদিসের ক্ষেত্রে অনেক সন্দেহ জনক ঘটনা ঘটায় মুসলমানদের মাঝে কোরআন মান্যতায় অনাপত্তি থাকলেও কিছু কিছু হাদিস মানায় তাদের মধ্যে বিস্তর আপত্তি রয়েছে। কারণ সে সব মহানবির (সা.) হাদিস কি না সে বিষয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। অনেকে বলছে সহিহ হাদিস মানতে হবে। কিন্তু একজন যে হাদিসকে সহিহ বলছে অন্যজন সে হাদিসকে সহিহ বলছে না।সে হাদিস সহিহ হলেতো সবার সে হাদিস সহিহ বলার কথা। ইমাম বোখারী (র.), ইমাম মুসলিম (র.), ইমাম আবু দাউদ (র.), ইমাম ইবনে মাযা (র.), ইমাম নাসায়ী (র.), ইমাম তিরমিজি (র.) এ ছয়জন ইমামকে হাদিসের সহিহ ইমাম মানা হয়। এ ছয় জনের প্রত্যেকের হাদিস গ্রন্থে যে হাদিস থাকবে সে হাদিসকে সহিহ মানা যায়।কোন হাদিস যদি ছয়জন ইমামের কোন একজন ইমামের গ্রন্থে না থাকে তবে বুঝা যায় তিনি সে হাদিসকে সহিহ মনে করেননি। সহিহ নয় মনে করে কোন ইমামা যদি কোন হাদিসকে তাঁর গ্রন্থে স্থান না দিয়ে থাকেন তবে সে হাদিসকে সহিহ মানা যায় না। এখানে প্রশ্ন আসে এ হাদিস সহিহ হলে একজন হাদিসবিদ ইমাম কেন এ হাদিস সহিহ হিসেবে গ্রহণ করেননি? আর যে হাদিস হাদিসবিদ ইমাম সহিহ হিসেবে মানেন না আমাদের মত সাধারণকে সে হাদিস মানার জন্য কিভাবে বলা যায়? সংগত কারণে শুধুমাত্র ছয় ইমামের প্রত্যেকে সহিহ হিসেবে যে সব হাদিস তাদের গ্রন্থে সংকলন করেছেন শুধুমাত্র সে সব হাদিসের মান্যতা আবশ্যিক বলা যায়। হাদিসের বাইরে কিছু মানা যদি বিদয়াত হয়ে থাকে তবে এর বাইরে কোন কিছু মানা বিদয়াত হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
অনেকে বলেন বোখারীর (র.) হাদিস মানা আবশ্যিক। সেগুলো সহিহ। সে গুলো সহিহ কে বলেছে? ইমাম বোখারী (র.) বলেছেন? ইমাম বোখারী (র.) বললে সহিহ হবে, একথা কে বলেছে? মহানবি (সা.) বলেছেন? মহানবি (সা.) না বলে থাকলে ইমাম বোখারীকে (র.) সহিহ মানার দায়িত্ব কারো নেই। কাজেই ইমাম বোখারীকে (র.) সহিহ মানার দাবী অবান্তর। তো যাঁকে সহিহ মানার দায়িত্ব কারো থাকে না, তাঁর সহিহ বলা হাদিসকে সহিহ মানার দায়িত্ব কার থাকে? তাঁর সহিহ বলা প্রায় সাত হাজার হাদিস থেকে প্রায় পাঁচ হাজার হাদিস তাঁর প্রধান ছাত্র ইমাম মুসলিম (র.) সহিহ হিসেবে গ্রহণ করেননি। যিনি ইমাম বোখারীকে (র.) এত কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর নিকট তাঁর ওস্তাদের সহিহ বলা হাদিস যদি অসহিহ বিবেচিত হয় তবে আমাদের তা’ সহিহ মনে হওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে কি? প্রসঙ্গত ইমাম মুসলিম(র.) ইমাম বোখারীর (র.) বাইশশ তেইশটি হাদিস সহিহ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এসব হাদিসকে মোত্তাফাকুন আলাইহে হাদিস বলে। এ বাইশশ তেইশটি হাদিসের কয়টি অবশিষ্ট ছয়টি হাদিস গ্রন্থেই রয়েছে সে আল্লাহ ভাল জানেন। আমাদের কথা হলো কোন হাদিস ছয় ইমামের কোন ইমাম সহিহ মনে না করলে আমাদেরও সে হাদিস সহিহ মনে করার দরকার নেই এবং তা’ মানারও দরকার নেই। কাজেই হাদিস মানার জন্য এমন একটা হাদিস সংকলন তৈরী করতে হবে যে হাদিস সংকলনের হাদিস ছয় হাদিস গ্রন্থের সব হাদিস গ্রন্থে থাকবে। তো যে সব হাদিস ছয় হাদিস গ্রন্থের সব হাদিস গ্রন্থে নেই সে সব হাদিসের কি হবে? এখানে কথা হলো হাদিসের কোন এক ইমামের দৃষ্টিতে যে হাদিস সহিহ নয় আমরা সে হাদিস সহিহ মানি কেমন করে? হাদিসের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (র.) একটা সুন্দর সমাধান দিয়েছেন।তিনি বলেছেন যে সব হাদিস কোরআনের সাথে মিলবেনা সে সব হাদিস হাদিস হিসেবে সাব্যস্ত হবে না।সে সব হাদিস মানা যাবে না। আর এ কারণেই কারো কারো বলা সহিহ হাদিসের সাথে ইমাম আবু হানিফার মাছয়ালা মিলে না। কিন্তু তাঁর মাছয়ালা কোরআনের সাথে মিলে। যেমন তিনি বলেছেন, নামাজে ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ হলে মোক্তাদী জোরে আমিন বলবে না। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘ফাইযা কুরিয়া আলাইহিমুল কোরআনা ফাসতামিয়ু লাহু ওয়া আনসিতু- যখন তাদের নিকট কোরআন পাঠ করা হয় তখন তারা যেন উহা শুনে এবং চুপ থাকে’। কাজেই এ ক্ষেত্রে জোরে আমিন বলার যে হাদিস প্রচার করা হয় তা মূলত হাদিস নয় বলে সাব্যস্ত হবে। আর এটা হাদিস সাব্যস্ত হলে এটা মানসুখ বা রহিত হাদিস সাব্যস্ত হবে। ধরে নিতে হবে মুসলমানরা নামাজে জোরে আমিন বলত এ আয়াত নাজিলের পূর্বে। আয়াত নাজিলের পর তারা এটা বাদ দিয়েছেন। কারণ মুসলমানদের আল্লাহর অবাধ্য হয়ে হাদিস মানার চেষ্টা করার কথা নয়।কাজেই এখন কেউ নামাজে জোরে আমিন বললে, এটা নামাজের বাড়তি কাজ বা আমলে কাছির হিসেবে বিবেচিত হবে এবং জোরে আমিন বলার কারণে তার নামাজ ভঙ্গ বিবেচিত হবে। এরপর তার নিজের ফতোয়ায় তার নামজ হয়েছে বললে কারো কিছু করার নেই। কেউ কেউ বলে সৌদি আরবের লোকেরা নামাজে জোরে আমিন বলে। তো ইব্রহীমের (আ.) বংশধর হয়ে একদা তারা কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তিও ঢুকিয়ে ছিল। তাদের কাজ মাত্রই যদি সঠিক ধরতে হয় তবে তাদের মূর্তি পুজাও সঠিক ধরতে হয়। কিন্তু কোরআন তাদের সে কাজ বেঠিক বলেছে। কাজেই কোরআন খেলাফি তাদের সব কাজ বেঠিক সাব্যস্ত হবে। তবে কোরআনের সাথে তাদের মিল কাজ বেঠিক সাব্যস্ত হবে না। কোরআনে চারের অধিক বিবাহে বারণ আছে, এমনকি সমতা বিধান করতে না পারলে একের অধিক বিবাহে বারণ আছে অথচ সৌদি আরবের লোকেরা যতখুশী তত বিবাহ করে।সংগত কারণে যে সব হাদিসকে কেউ কেউ সহিহ বলেছেন কোরআনের সাথে গরমিল হলে শুধুমাত্র তাদের বলার দ্বারা সে সব হাদিস সহিহ তালিকা ভূক্ত হবে না এবং মান্যতার তালিকাতেও আসবে না। দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলামানের এটাই মত। কারণ দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলামান আবু হানিফাকে (র.) মান্য করেন।
কেউ সহিহ বললেই কোন হাদিস সহিহ না মানার কারণ মহানবির (সা.) নামে মিথ্যা হাদিস প্রচারের কথা মহানবি (সা.) নিজেই বলেছেন।কিছু অদ্ভুত কথা হাদিস হিসেবে প্রচার পেয়েছে যা হাদিস হিসেবে মানতে কষ্ট হয়।এমন অনেক কথা ইমাম আবু হানিফা (র.)হাদিস হিসেবে মানতে পারেননি। পরে অনেকে ইমাম আবু হানিফার (র.)হাদিস হিসেবে মেনে না নেওয়া কথাকে হাদিস হিসেবে মেনে ইমাম আবু হানিফাকে (র.) হাদিস খেলাফী বলেছেন।কিন্তু তথাপি লোকদের সাথে মিলে ইমাম আবু হানিফার (র.) অনুসারীরা তাঁর না মানা সে সব হাদিস মানতে পারেননি। কারণ সে সব হাদিস বিষয়ে তাদের সন্দেহ দূরিভূত হয়নি।কারণ সে সব হাদিস বিষয়ে সন্দেহ করার অনেক কারণ আছে। যদিও সেসব হাদিসকে কেউ কেউ সহিহ হাদিস বলেছেন।
কেউ কেউ যে সব হাদিসকে সহিহ হাদিস বলেছেন অনেকে মাযহাব ছেড়ে সে সব হাদিস মানার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম শুরু করেছে। সে তালিকায় সৌদি আরব সবার উপরে।নবির (সা.) দেশের এ রাষ্ট্রটিকে মেনে অন্য মুসলিম রাষ্ট্র মাযহাব ছেড়ে হাদিসের পথে আসছে না।
কোরআন একটি পুস্তক, হাদিস একটি পুস্তক নয় বরং অনেক গুলো পুস্তক। কোরআনে লেখা আছে এতে ভুল নেই, কিন্তু হাদিসে ভুল নেই এ কথাটি লেখা নেই।হাদিসের ভুল মানে মহানবির (সা.) ভূল নয় বরং যিনি মহানবির (সা.) নামে হাদিস প্রচার করেছেন তাঁর মহানবির (সা.) নামে ভুলক্রমে বা অন্যকোন কারণে ভুল কথা বলে ফেলা। এমন কথা বলা যার সাথে মূলত মহানবির (সা.) কোন সম্পর্ক নেই।মহানবি (সা.) তাঁর হাদিস মানতে বলেছেন, তাঁর নামে প্রচার করা অন্যের হাদিস মানতে বলেননি।হাদিসের মূল পরিচয় হলো এটা কোরআনের ব্যখ্যা। মূলের সাথে ব্যখ্যার মিল থাকতে হয়। কাজেই যে হাদিসের কোরআনের সাথে মিল পাওয়া যাবে না সে হাদিস সন্দেহের তালিকায় থাকতে হবে।কোরআনের সাথে মিল পাওয়া যায় এমন হাদিসের সাথে যে হাদিসের মিল পাওয়া যাবে না সে হাদিসও সন্দেহের তালিকায় থাকতে হবে। তারমানে মনে করতে হবে এটা মহানবির (সা.) হাদিস নাও হতে পারে।যেমন শীয়ারা বলে, মহানবি (সা.)বলেছেন আলীর (রা.) দল জান্নাতি। সে জন্য তারা শীয়ায়ে আলী (রা.)বা আলীর (রা.) দল নামে একটি দল গঠন করেছে, যাকে সংক্ষেপে শীয়া বলে।এ হাদিসের সাথে কোরআন ও অন্য হাদিসের গরমিল রয়েছে।প্রশ্ন হলো আল্লাহর দল বা শীয়ায়ে আল্লাহ, বা নবির (সা.) দল শীয়ায়ে নবি জান্নাতি না হয়ে শুধুমাত্র শীয়ায়ে আলী (রা.) বা আলীর (রা.) দল জান্নাতি হবে কেন? হতে পারে শীয়ায়ে আলী (রা.) বা আলীর (রা.) দল জান্নাতি দল সমূহের একটি। এটাই একমাত্র জান্নাতি দল নয়।সে সময় সাহাবা কেরামের (রা.) আরো দু’টি দল ছিল। একটি হজরত মুয়াবিয়ার (রা.) দল, অন্যটি হজরত আয়েশার (রা.) দল। তো সাহাবা কেরামের (রা.) তিনটি দল হওয়ার পর হাদিস পাওয়া গেল যে আলীর (রা.)দল জান্নাতি। তো আলীর (রা.) দল হওয়ার পূর্বে এ হাদিস কোথায় ছিল? এটা মহানবির (সা.) ভবিষ্যৎ বাণী হলে সেটা লোকদের আগে থেকেই জানার কথা। তো আগে থেকে কেউ কিছু জানে না, কোন নতুন ঘটনার প্ররিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ কোন হাদিস উদয় হলে সন্দেহ হয় যে, হয়ত হজরত আলীর (রা.) দলকে অন্য দুই দলের উপর প্রাধান্য দেওয়ার জন্য কেউ হয়ত হাদিসটি বানিয়েছে। এ সন্দেহের কারণে সব মুসলমান শীয়া হয়ে যায়নি বরং ছুন্নী নামে শীয়া ছাড়া অন্য মুসলমান আলাদা থেকেছে। আর যারা শীয়া থেকে আলাদা থেকেছে তারাই দলে ভারী। তারমানে শীয়া মত মুসলমানদের নিকট গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি। তারমানে শীয়া সংক্রান্ত হাদিসটিও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। যদি সব মুসলমান এটাকে হাদিস হিসেবে মানতো তবে সব মুসলমান শীয়া হয়ে যেত। ছুন্নী মুসলমান বলতে কিছুই থাকতো না।সন্দেহ যুক্ত হাদিসটি দ্বারা যদি এটা বুঝায় যে শুধু শীয়ারা জান্নাতি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অপর দু’দল জান্নাতি নয় তবে এটা কোরআনের বিপরীতমতের হবে কারণ, কোরআনে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম- আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট’। তো আল্লাহ যাদের উপর সন্তুষ্ট তারা জাহান্নমি হয় কেমন করে? তা’ছাড়া মহানবি (সা.) বলেছেন,‘মান কালা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ফা দাখালাল জান্নাহ-যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল সে যেন জান্নাতে প্রবেশ করলো’। তো শীয়া ছাড়া অন্য মুসলমান যেহেতু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে সেহেতু তারাও জান্নাতি সাব্যস্ত হয়, কাজেই শুধুমাত্র আলীর দল জান্নাতি এ কথা সঠিক নয়। যদি শীয়া ছাড়া অন্যদেরও জান্নাতি হওয়া সাব্যস্ত হয়ে থাকে তবে শীয়ায়ে আলী (সা.) বা আলীর (রা.) দল গঠিত হবে কোন কারণে? এমন দল হলেও সেটা হবে সাময়িক, সেটা স্থায়ী দল হবে না। কারণ আল্লাহ সব মুসলমানকে একদল থাকতে বলেছেন।সংগত কারণে শীয়াদের উপস্থাপিত উক্ত হাদিসটি মান্যতার বাইরে থাকবে। কারণ এটিকে মহানবির (সা.) হাদিস হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না।এ হাদিস অমান্য করে শীয়া না হওয়ার মাঝে মুসলমানিত্বের কোন ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
কোরআন যেভাবে গ্রন্থরূপ পেয়েছে হাদিস সেভাবে গ্রন্থরূপ পায়নি। কোরআনের গ্রন্থরূপ প্রস্তুত হয়েছে এমন একজনের নেতৃত্বে যিনি সরাসরি মহানবি (সা.) থেকে কোরআন শুনে মুখস্ত করেছেন। তাঁর সহযোগী ছিল আরো অসংখ্য হাফেজে কোরআন, যাঁরা মহানবি (সা.) থেকে কোরআন শুনে মুখস্ত করেছেন।কোরআন থেকে যা বাদ পড়েছে তা’ মহানবির (সা.) কথার ভিত্তিতেই বাদ পড়েছে। তবে কোরআনে নতুন কিছু যুক্ত হতে পারেনি। কারণ এত হাফেজে কোরআনকে ফাঁকি দিয়ে এতে কোন কিছু যুক্ত করা সম্ভব ছিল না। আর যা বাদ পড়েছে তাও কারো অগোচরে থাকেনি।সব মিলিয়ে কোরআন নির্ভুল রয়েছে এটাই এর সঠিকতার জন্য যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে কারো গাল গপ্প আমলে নেওয়া বেদরকারী।
সম্পূর্ণ কোরআর একটি গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।কিন্তু সকল হাদিস কেউ একটি গ্রন্থে পাবেন না। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হাদিসের গ্রন্থরূপ প্রস্তুতে নিরুৎসাহিত করেছেন। তাঁরা আশংকা করেছেন হাদিস গ্রন্থরূপ পেলে লোকেরা কোরআনের চেয়ে হাদিসকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করবে। অবশেষে হাদিস গ্রন্থরূপ পেয়েছে। আর আহলে হাদিস নামে একটা দল তৈরী হয়েছে। এরা কোরআনের চেয়ে হাদিসকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করার কারণে এদের দলের নাম আহলে কোরআন না হয়ে আহলে হাদীস হয়েছে। আরেক দল হয়েছে ছুন্নী, তাদের নিকট ফরজের চেয়ে ছুন্নতের গুরুত্ব বেশী। আরেক দল হয়েছে শীয়ায়ে আলী (রা.) বা শীয়া। তাদের নিকট আল্লাহ ও নবির (সা.) চেয়ে হজরত আলীর (রা.) গুরুত্ব বেশী। সেজন্য তারা শীয়ায়ে আল্লাহ বা শীয়ায়ে নবি (সা.) না হয়ে শীয়ায়ে আলী (রা.) হয়েছে।সব কিছুই হয়েছে হাদিসের ভুল ব্যখ্যার কারণে বা মহানবির (সা.) নামে জাল হাদিস প্রচার করার কারণে। আর মহানবির (সা.) নামে হাদিস বানিয়ে প্রচার করা হবে, এ কথাও মহনবি (সা.) নিজেই বলেছেন।
তাহলে হাদিসের উপর কিভাবে আমল করা হবে? এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফার (র.) কথা গ্রহণযোগ্য তিনি বলেছেন, হাদিস কোরআনের সাথে যদি না মিলে তবে এর উপর আমল করা যাবে না। এ বিষয়ে চার খলিফাও এমনটাই করেছেন। যেমন হজরত ফাতেমা বলেছেন মহানবি (সা.) তাঁকে মহানবির (সা.) খেজুর বাগান দান করে গেছেন। তাঁর এ দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য কোরআন অনুযায়ী কমপক্ষে দু’জন সাক্ষির প্রয়োজন ছিল। যা হাজির করতে হজরত ফাতেমা (রা.) সক্ষম হননি। যার কারণে প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) নবির (সা.)কন্যার দাবী মঞ্জুর না করে সবার জানা হাদিস অনুযায়ী মহানবির (সা.) খেজুর বাগান রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন।
কেউ একজন বলেছে মহানবি (সা.) হজরত আলীকে (রা.) তাঁর উত্তরাধীকারী করে গেছেন। যা আর কেউ জানতো না। সংগত কারণে প্রমাণ অভাবে মুসলমানগণ এ হাদিস মেনে তিন খলিফাকে অমান্য করে মহানবির (সা.) মৃত্যুর পর থেকে হজরত আলীকে (রা.) খলিফা হিসেবে গ্রহণ করেননি বরং তিনি খলিফা হয়েছেন তিন খলিফার পর।অথচ অধিকাংশ মুসলমানের প্রত্যাখাত হাদিসের দোহাই দিয়ে শীয়ারা হটকারীভাবে তিনি খলিফার খেলাফতকে অবৈধ বলছে। অথচ তাদের এ হটকারী হাদিস হজরত আলীও (রা.) হাদিস হিসে গ্রহণ করেননি। এতে বুঝাগেল কেউ হাদিস হিসেবে কোন কথা প্রচার করলেই তা’ হাদিস হিসেবে সাব্যস্ত হবে না যদি না অন্যরা তা’ হাদিস হিসেবে গ্রহণ না করে। আর আগে হাদিস হিসেবে গৃহিত না হয়ে পরে এক সময় হাদিস হিসে কারো কারো দ্বারা গৃহিত হলেও তা’ সবার নিকট হাদিস হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। এমনকি এমন অনেক কিছু সবাই গ্রহণ করেনি বরং কেউ কেউ সে সব হাদিসকে হাদিস হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের মাঝে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
ইমাম বোখারী (র.) হাদিস গ্রহণের বিষয়ে যথেষ্ট সাবধান ছিলেন। তিনি যাদের থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন তারা কি তারা যাদের থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন তাদের বিষয়ে ইমাম বোখারীর (র.) মতই সাবধান ছিলেন? তারাও এমন সাবধান ছিলেন এমন কথা শুনা যায় না। তাহলে ইমাম বোখারীর (র.) সাবধান হওয়া কোন কাজে আসছে? ইমাম বোখারী (র.) হাদিস গ্রহণ করেছেন পঞ্চম রাবী থেকে যাদেরকে তিনি দেখেছেন। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ রাবীকে তিনি দেখেননি। আর পঞ্চম রাবীরও তিনি উপর দেখেছেন ভিতর দেখেননি।তার সহিহ হাদিস বলা মানে শুনা কথাকে সহিহ বলা।সংগত কারণে তা’ সহিহ না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কাজেই ইমাম আবু হানিফার (র.) সাথে একমত না হয়ে উপায় নেই যে কোরআনের সাথে অমিল হলে কোন কথাকে মহানবির (সা.) হাদিস হিসেবে মানা যাবে না। এমনকি তা’ ইমাম বোখারী (র.) সহিহ বললেও নয়। তিনি হাদিস সংকলন করেছেন । সে সব হাদিসকে সহিহ বলেছেন। ভাল করেছেন। এখন আমরা সে সব হাদিস কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখব যদি তা’ কোরআনের সাথে মিলে তো আমরা তা’ মানব আর যদি তা’ কোরআনের সাথে না মিলে তবে আমরা তা’ মানব না। একই নিয়ম হবে অন্য যারা হাদিস সংকলন করেছেন তাদের ক্ষেত্রেও।
তারপর আমরা দেখব উপস্থাপিত হাদিসের সাথে চলমান ইবাদতের কতটা মিল ও অমিল রয়েছে। অমিল থাকলে আমরা এর কারণ খুঁজব। তাতেও যদি হাদিস সঠিক মনে না হয় বা মানসুখ মনে হয় তবে আমরা সে সব হাদিসও মানতে পারবনা।অধিকাংশের ক্ষেত্রে চলমান ইবাদত হলো রাফেঈ ইয়াদাইন না করা। আর সহিহ হাদিস হলো রাফেঈ ইয়াদাইন করা। এক হাদিসে দেখলাম ইবনে ওমর (রা.) রাফেঈ ইয়াদাইন যারা না করতেন তাদেরকে পাথর ছুড়ে মারতেন। তো ইবনে ওমর (রা.)যাদেরকে পাথর মারতেন তারা মহানবির (সা.) সাহাবা নয়তো তাবেঈ তো তারা কেন ছুন্নত ছেড়ে দেবেন, যদি সেটা মানসুখ না হয়? এতেই বুঝা যায় কেউ কেউ মুসলমানের নামাজ নষ্ট করার জন্য মানসুখকে জারি রাখার চেষ্টা করেছে এবং সাহাবার নামে মিথ্যা প্রচার করেছে। যেখানে মহানবি (সা.) তাঁর নামে মিথ্যা প্রচারের কথা বলেছেন সেখানে সহাবার নামে কেন মিথ্যা প্রচার করা হবে না। কাজেই মানসুখ সহিহ হাদিস দিয়ে অধিকাংশের নামাজ সংশোধনের চেষ্টা করা ঠিক নয়।
ইমাম বোখারী (র.) ভুল করেননি এমন কথা নিশ্চিত নয় কাজেই আবু হানিফার (র.) অনুসরন বাদ দিয়ে বোখারীর (র.) অনুসরনের যুক্তি নেই। বোখারী (র.) কোন কথাকে সহিহ হাদিস বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু তাঁর কথা নিশ্চিত সহিহ হওয়ার মত যুক্তি সংগত কোন কারণ নেই। কাজেই হাদিসের দোহাই দিয়ে মুসলমানদের বড়দল হানাফী ছেড়ে ছোট ছোট দল গড়ে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরী করা ঠিক নয়।যে সব হাদিসের ভিত্তিতে কেউ কেউ মুসলমানদেরকে একদল করার চেষ্টা করছে তাদের সে চেষ্টা সফল হওয়ার সংগত কোন কারণ নেই কারণ সে সব হাদিস সাহহ বলা হলেও তা’ সহিহ প্রমাণ করার সুযোগ একেবারেই নেই।শুধুমাত্র কোরআনকে নির্ভুল প্রমাণ করা যায়।কাজেই আমাদেরকে কোরআন ভিত্তিক সঠিক হাদিস মান্যতার চেষ্টা করে সঠিক পথের সন্ধান করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
হাদিসকে কোরআনের ছাঁছে ফেলে মানার চেষ্টা করা হলে এর দ্বারা বিভ্রান্তির সম্ভাবনা কম থাকবে। আর যে যেমন হাদিস বলবে সেভাবেই কারো কথাকে হাদিস হিসেবে মানতে থাকলে বিভ্রান্তির শেষ থাকবে না।এর দ্বারা বিভ্রান্তি শুধু বাড়তেই থাকবে।কাজেই বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে হলে হাদিস বিষয়ে বিশেষ সাবধানতা জরুরী। আর যে হাদিসের সঠিকতা প্রমাণ করা হয়নি সে হাদিস দিয়ে ইসলামের সঠিকতা প্রমাণের চেষ্টা করা বে মানান। ইসলামের সঠিকতা বিয়ে হাদিস ব্যবহার করতে হলে কোরআন দিয়ে সেই হাদিসের সঠিকতা নিরূপন করে তারপর সে হাদিসকে ইসলামের সঠিকতা প্রমাণের কাজে লাগাতে হবে।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫৩