জীব্রাঈলের (আঃ) যে বিরাট (পৃথিবীর চেয়ে বড়) আকারের কথা বলা হয়েছে তাতে অনেকের মনে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। কেউ একজন বলেছেন এত্ত বড় আকার নিয়ে জীব্রাঈল (আঃ) হেরা পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন কেমন করে? তিনি একবার বলেছেন ধর্মীয় জ্ঞান বেশ সহজ। ধর্মীয় জ্ঞান বেশ সহজ বলেই কি তিনি এটা বুঝতে পারেননি যে জীব্রাঈল কিভাবে হেরা পর্বতের গুহায় প্রবেশ করলেন? তবে ঘটনা হলো জীব্রাঈল চাইলে পিঁপড়ার গর্তেও প্রবেশ করতে পারেন। কারণ জীব্রাঈল শক্তি, ঘণ বস্তুর দেহধারী নন।শক্তি এর অবস্থান স্থানের সবটা জুড়ে অবস্থান করে। আপনার মোবাইল ব্যাটারির অর্ধেক চার্জ শেষ হলে বাকী অর্ধেক কি অর্ধেক ব্যাটারির মধ্যে থাকবে? নাকি সবটার মধ্যে থাকবে। কাজেই শক্তি এর আধাঁরের সবটা জুড়ে থাকে এটাই সাব্যস্ত। জীব্রাঈলের (আ.) প্রাণ পিঁপড়ার দেহে ঢুকলে তিনি পিঁপড়ার আকার ধারণ করবেন। তখন তাঁর পিঁপড়াপর গর্তে ঢুকতে মোটেও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কারণ পিঁপড়ারা সহজেই তাদের গর্তে ঢুকতে পারে।আর জীব্রাঈলের (আ.) প্রাণ সূর্যের দেহে ঢুকলে তিনি সূর্য়ের আকার প্রাপ্ত হবেন। তখন তিনি পৃথিবীর চেয়ে বড় হিসেবেই সাব্যস্ত হবেন।কারণ সূর্যের আকার পৃথিবীর চেয়ে বড়। আর জীব্রাঈলের (আ.) প্রাণ মহানবির (সা.) সমান কোন আকারে প্রবেশ করলে তাঁর হেরা পর্বতের গুহায় প্রবেশ করতে না পারার কথা নয়। বিষয়টা আমাদের বুঝতে কষ্ট হয় কারণ আমাদের প্রাণ জীব্রাঈলের (আ.) মত এক আকার ছেড়ে অন্য আকারে প্রবেশ করতে পারেনা।যদি আমরাও তা’ পারতাম তবে আমাদের প্রাণ হাতির দেহে ঢুকে সহজে হাতির মত বড় আকার ধারণ করতে পারতো। তখন আমরা সহজেই আমাদের শত্রুদের পায়ের নীচে পিষে মারতে পারতাম। আমাদের প্রাণ সিংহের দেহে প্রবেশ করে সিংহ হয়ে সহজেই শত্রু বিনাশ করতে পারত। অতঃপর শেখ হাসিনার দেহে প্রবেশ করে সহজেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারতো।জীব্রাঈলের (আ.) মত না হয়ে আমাদের কি ক্ষতিই না হলো! তবে আমাদের ও জীব্রাঈলের (আ.) মধ্যে তফাৎ হলো আমাদের ইচ্ছার স্বধীণতা আছে কিন্তু বেচারা জীব্রাঈলের ইচ্ছার স্বাধীণতা নেই। বেচারা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছুই করেনা।অথচ আমাদের অনেকে আল্লাহকে যা নয় তাই বলে বেড়ায়। সংগত কারণে আমাদেরকে একটি দেহে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু জীব্রাঈলকে দেহ বদলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বাবুই পাখি যা পারে তা’ কি অন্য পাখি পারে? বাস্তব হলো আল্লাহ যাকে যে ক্ষমতা দেন সে শুধূ সেটাই পারে। এর বাইরে কারো এক বিন্দু ক্ষমতা নেই।
আমাদের ছায়াঝবি ইচ্ছেমত বড় ছোট হতে আমরা দেখি। আমাদের ছায়াছবি কি পদার্থ? অবশ্যই তা’ নয়। আমাদের ছায়াছবি হলেও মূলত তা’শক্তি। এজন্য এটা আমাদের চেয়ে অনেকগুন বড় ও ছোট হতে পারে। জীব্রাঈলের (আ.) আসল দেহ আলোক শক্তি তো ওটা বড় ছোট হতে অসুবিধা কি? সূর্যের আলো নয় কোটি ত্রিশলক্ষ মাইল লম্বা হয়ে পৃথিবীতে পড়ে। কেউতো আর বলেনি জীব্রাইল (আ.)নয়কোটি ত্রিশলক্ষ মাইল লম্বা এর সাত কোটি মাইল চওড়া? আলোক শক্তি জীব্রাঈলকে (আ.) ওরকম বড় বললেইবা ক্ষতি কি ছিল?
আপনার দেহে পঞ্চাশটা ছোট ছোট ডানা স্থাপন করুন। এরপর আপনার ভিডিও করে আপনাকে বিশাল আকারে দেখানো হলে আপনাকেও পঞ্চাশটা ডানা বিশিষ্ট বিশাল একটা প্রাণী দেখা যাবে। আবার আপনাকে এ প্রক্রিয়ায় মুরগির বাচ্চার মত ছোট করেও দেখানো যাবে।তো জীব্রাঈলকে (আ.) মহানবি (সা.) ৬০০ ডানা বিশিষ্ট একটা আজব প্রাণী হিসেবে দেখে ভয় পেয়েছেন তাতে হয়েছে কি? একটা মানুষের ছবি বড় হতে পারলে জীব্রাঈলের ছবি বড় হতে দোষটা কোথায়? আর তাঁর আলোক নির্মিত বড় একটা দেহ থাকলেইবা অসুবিধা কি? আলো-ছায়াতো ওরকম বড় হয়েই থাকে। এমনতো আমরা সব সময় দেখি। তথাপি আমাদের নিকট এমনটা আজব কেন মনে হবে? সংগত কারণে জীব্রাঈলের আলোচনা মোটেও অস্বাভাবিক নয় বরং এটা নিতান্তই স্বাভাবিক আলোচনা।ঘটনা হলো এক লোক চিরকাল লোকদেরকে বলতো ছি ছি তোমরা এত্ত বেকুব। কিন্তু একদিন যখন সে নিজেকে বুঝতে পারলো তখন আস্তে আস্তে বলল ছি ছি আমি এত্ত বেকুব!
লোকটা বলে ধর্মীয় জ্ঞান নিতান্ত সহজ। অথচ ধর্মীয় জ্ঞানের মূল কথা যে ঈশ্বর বিশ্বাস বিজ্ঞানীরা এখনো নিত্য দিন এ নিয়ে হাবু ডুবু খেয়ে মরছে। তারা মানুষকে এখনো এ বিষয়ে নিশ্চিত কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। অথচ বৈষয়িক বিষয়ে তারা বহু সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলেছে। তাহলে ধর্মীয় বিষয় সহজ বলেই কি এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীর এমন বেহাল দশা? অবশেষে বেচারা বিজ্ঞানী ধর্মীয় বিষয়ে এন্তার নাকানী চুবানী খেয়ে যে মন্তব্য করছে তা’ লোকেরা মোটেও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে না। এ হলো তাদের সহজ ও কঠিনের ছিরি।সে জন্য আমি বলি তারা অন্য বিষয়ে মহাবিজ্ঞানী হলেও ধর্মীয় বিষয়ে তারা নিতান্ত অজ্ঞানী। এ বিষয়ে তাদের অনেককে নেহায়েত দুগ্ধপোষ্য শিশু বলেই মনে হয়।
আল্লাহ আলোক শক্তি দিয়ে জীব্রাঈলের (আ.) ৬০০ ডানা বিশিষ্ট দেহ নির্মাণ করে তাতে তাঁর অসীম শক্তি তাড়িত করে প্রাণ সঞ্চার করে তেমন একটা প্রাণী সৃষ্টি করলে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে। মানুষওতো শক্তি সঞ্চার করে কত্তবড় একটা উড়ো জাহাজ উড়িয়ে নিয়ে যায়। অথচ মানুষ সসীম শক্তি তাড়ীত করে।যে মানুষ নিজেকে এমন বুঝা বুঝে সে তার আল্লাহকে বুঝতে গিয়ে এত্তটা বেকুব কেমন করে হয়? আমার নিকট এটাও কম বিস্ময়কর মনে হয়না। প্রাণের সঞ্চার হলে সূর্যও প্রাণী হয়ে যেতে পারে। এমন যদি হয় আর সূর্য যদি পৃধিবীকে ছেড়ে অন্য কোথাও হারিয়ে যায় তখন আমাদের কি উপায় হবে? আমার এক ভাবী প্রায় কথায় বলেন, বুঝলে অনেক কিছু আর না বুঝলে কিচ্ছু না। কাজেই কেউ যদি ইসলামের কথাগুলো মন দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে তখন সে তাতে কোন অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাবেনা। কিন্তু কেউ যদি ইসলাম বুঝার চেষ্টাই না করে তখন ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্নের শেষ থাকবে না। বুঝার চেষ্টা করলে একটা সাত বছরের বালকও ইসলাম বেশ বুঝে। আর বুঝার চেষ্টা না করলে একজন সাতানব্বই বছরের বুড়োও ইসলাম কিছুই বুঝেনা।
ইবলিশ কর্তৃক কতিপয় লোকের মগজ এমন ধোলাই হয় যে তাতে ইসলামের অণুকনাও থাকে না। তখন এরা ইসলামের যে কথাই শুনে তাতেই তারা নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করে। কারণ শয়তানের স্পর্শ তাদের শুভবোধ একবারে নষ্ট করে দেয়।প্রবল প্রচেষ্টায় কেউ যদি শয়তানের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হতে পারে তখন সে আবার ইসলাম বুঝতে পারে। কাজেই নীজের ক্ষতি থেকে যারা আত্মরক্ষা করতে চায় শয়তান থেকে সব সময় তাদেরকে সাবধান থাকতে হবে। কথায় বলে সাবধানের মার নেই।
এক শিক্ষক বলেছিলেন এখান থেকে দিল্লিরে দূরত্ব যোলশ মাইল হলে আমার বয়স কত? এক ছাত্র ঠাস করে দাঁড়িয়ে বলল, পঞ্চাশ বছর। শিক্ষক বললেন, কিভাবে বললে? ছাত্র বলল স্যার এটা এক্কেবারে সহজ অংক। আমাদের এলাকায় এক পুরা পাগল আছে তার বয়স ১০০ বছর। আপনি যেহেতু আধ পাগল সেহেতু আপনার বয়স ৫০ বছর। কাজেই আমাদের কথাগুলোকে এমন সীমার মাঝে রাখা দরকার যেন লোকেরা আমাদেরকে মানসিক রুগী বলে না বসে। ইসলাম সম্পর্কে কিছু লোক এটা কেন সেটা কেন বলতেই থাকে। যেন লোকেরা নিজেদের পাঁচ কাজ রেখে তাদের কথার জবাব দিতে থাকবে। কেনরে বাপু লোকদের কি খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই? নিজের ভাবনার জাল বিস্তার করে নিজেরাই বরং নিজেদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিলেইতো হয়ে যায়।
একটা বড় প্লাটফর্ম একটা বড় হাট বাজারের মত এখান থেকে নিজের সুবিধামত প্রত্যেকের নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে হয়। পরের আশায় বসে থাকতে হয়না।কথায় বলে যে করে পরের আস সে খায় বনের ঘাস। তারমানে সে ছাগল তুল্য। মানুষের মত মানুষ হতে হলে নিজের মঙ্গলের চিন্তা ও চেষ্টা নিজেকেই করতে হবে। এর পর অন্যের মঙ্গলের চেষ্টায় আত্ম নিয়গ করতে হবে। এখানে কেউ আমাকে পথ দেখাবে তো সেই পথে চলে আমি লাভবান হব, এমন আশায় বসে থাকতে নেই। তারচে বরং নিজের লাভের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়। ইসলাম নিতান্তই সরল সুন্দর। তবে এর সুন্দর্য দেখার গুণ না থাকলে কি আর করা যাবে? কপাল পোড়াদের পোড়া কপালে কখনই জোড়া লাগেনা।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৩