বেকুব যে ঈশ্বর নয় তাকেও ঈশ্বর বলে উপাসনা করতে পারে, আর যে ঈশ্বর তাকেও ঈশ্বর নয় বলে অস্বীকার করতে পারে।বেকুবের সামনে ঈশ্বর এসে হাজির হওয়ার পর বেকুব যদি বলে তুমি যে ঈশ্বর তার প্রমাণ কি? এরপর ঈশ্বর তাঁর ঈশ্বরত্বের যতই প্রমান দেখান না কেন বেকেুবের যদি তাতে মন না ভরে তখন ঈশ্বর কি করবেন? বেকুব যদি বলে এ সব প্রমাণ দেখালেই কেউ ঈশ্বর প্রমাণীত হয় তার কি প্রমাণ আছে? তখন ঈশ্বরের কি করার থাকবে? বেকুবের সামনে এসে ঈশ্বরত্ব জাহির করে ঈশ্বর ইজ্জত নিয়ে ফিরতে পারবেন কি? এ জন্য বুদ্ধিমান ঈশ্বর বেকুবদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন, যেন বেকুবেরা তাঁকে অন্তত বেইজ্জতি করতে না পারে।
বেকুবের সামনে ঈশ্বর এসে হাজির হওয়াও ঈশ্বরের জন্য বেকুবী, ঈশ্বর এটা বুঝেন।এজন্য ঈশ্বর/আল্লাহ তাঁর কাজ দেখে অনুভব করতে বলেছেন।যারা ঈশ্বর/আল্লাহর কাজ দেখে তাঁকে বুঝতে পারবে তাঁর দৃষ্টিতে তারা বুদ্ধিমান। এরপর যারা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবে তারা আরো বুদ্ধিমান।তাদের সামনে ঈশ্বর/আল্লাহ এসে হাজির হলে তারা তাঁকে অস্বীকার করবে না। এ জন্য আল্লাহ সিদ্ধান্ত করেছেন যারা বুদ্ধিমান তাদেরকে তিনি জান্নাতে জড় করে তারপর তাদের সামনে তিনি হাজির হবেন। আর তখন তিনি তাদের থেকে যোগ্য সম্মান পাবেন। আর বেকুবলোক কখনোই তাঁকে দেখবে না।
ব্যাবিলনের রাজা নমরূদ নিজেকে ঈশ্বর বলেছে, কেউ তাকে ঈশ্বর মেনেছে কেউ তাকে ঈশ্বর মানেনি। মিশরের রাজা ফারাও দ্বিতীয় রেমসিস নিজেকে ঈশ্বর বলেছে, কেউ তাকে ঈশ্বর মেনেছে কেউ তাকে ঈশ্বর মানেনি।অনেকেই শ্রী কৃষ্ণকে দেখেছে, কেউ তাকে ভগবান মানে কেউ তাকে ভগবান মানেন না। অনেকেই রামকে দেখেছে, কেউ তাকে ভগবান মানে কেউ তাকে ভগবান মানেন না।এর দ্বারা বুঝাগেল ঈশ্বর বা ভগবানকে দেখলেই যে সবাই তাঁকে ঈশ্বর বা ভগবান মানবে ঘটনা এমন নয়। কাজেই ঈশ্বর বা ভগবানকে দেখার আব্দার কোন যৌক্তিক আব্দার নয়।
কারা ঈশ্বরকে না দেখার আক্ষেপ প্রকাশ করছে? লোকেরা যে সব ঈশ্বর বা ভগবান দেখেছে তারা কি তাদেরকে ঈশ্বর বা ভগবান মেনেছে? ঈশ্বর দেখা কি তারা খেলা মনে করেছে? যে ঈশ্বররা এসে তাদের সামনে হাজির হবে তখন তারা তাদেরকে বলবে যে তারা তাদের ঈশ্বর নন? এসব বেকুবদের সামনে ঈশ্বর এসে হাজির হলে এরা ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বের প্রমাণ চাইতে চাইতে ঈশ্বরকে অতিষ্ট করে তুলবে সেই ভয়েই ঈশ্বর এদের সামনে আসেন না। মহানবি (সা.) আল্লাহকে লোকের সামনে হাজির হন না কেন জিজ্ঞাস করায় তিনি বলেছেন হাজির হলেও এরা বিশ্বাস করবে না, বরং এরা তখন আল্লাহর আল্লাহ হওয়ার প্রমাণ চাইবে, আর যতই প্রমাণ দেওয়া হোক তাতে তাদের মন ভরবে না। আর তখন অসীম ক্রোধে আল্লাহ সব ধ্বংস করে দিবেন। আর তাঁর ক্রোধ থেকে জগৎ রক্ষার জন্যই তিনি এসব লোকের সামনে হাজির হন ন। তিনি বরং জান্নাতে তাঁর খাস বান্দাদের সম্মুখে হাজির হবেন।
কেউ ঈশ্বর বা আল্লাহকে না দেখে তাঁকে বিশ্বাস করবে না, তো এ অপরাধে ঈশ্বর বা আল্লাহ তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন তো এতে তার কি লাভ হলো? নিজের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজ গরজে ঈশ্বর বা আল্লাহকে খোঁজা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
ঈশ্বর বা আল্লাহকে খুঁজে কি পাওয়া যাবে? ঈশ্বর বা আল্লাহকে খুঁজে ঈশ্বর বা আল্লাহ আছে কি না, থাকলে কেমন এসব তথ্যের আলামত খুঁজে পাওয়া যাবে। কোথায় পাওয়া যাবে এসব আলামত? খুঁজতে জানলে ব্যক্তি তার নিজের মাঝেই এ সব আলামত খুঁজে পাবে।এরপর যারা ঈশ্বর বা আল্লাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্রদান করেছে তাদের কথার সাথে নিজের বুঝ মিলিয়ে নিয়ে সেই মত নিজ জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ঈশ্বর বা আল্লাহকে না দেখলে মানব না এমন গোঁ ধরে বসে থাকলে কেমন কি হবে? ঈশ্বর বা আল্লাহ যদি আমার ইচ্ছামত না চলে তবে আমিও কি ঈশ্বরের বা আল্লাহর ইচ্ছামত না চলে তাঁর শাস্তি থেকে রেহাই পাব? তো সর্ব শক্তিমানের উপর শর্তারোপ করে আমার কি লাভ? আমি ঈশ্বর বা আল্লাহর উপর শর্তারোপ করলাম। ঈশ্বর বা আল্লাহ আমার শর্তে সাড়া প্রদান করলেন না। অবশেষে আমি ঈশ্বর বা আল্লাহর অবাধ্য হলাম এবং জাহান্নামে চলে গেলাম, এটা কেমন কি হলো? জাহান্নামবাসী হওয়ার পর আমাকে কি বলা যাবে বেকুব না বুদ্ধিমান?
কতিপয় বসে বসে আল্লাহ ও তাঁর নবির (সা.) দোষ হিসেব করে। তারা কি আল্লাহ ও নবিকে (সা.) শাস্তি প্রদান করতে পারবে? অতঃপর আল্লাহ যে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তি প্রদান করবেন, তার কি হবে? তারা কি আল্লাহর শাস্তি থেকে পালাতে পারবে? কাজেই আল্লাহ বা তাঁর নবির (সা.) দোষ ধরা কারো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কারণ আল্লাহ ও নবির (সা.) দোষ ধরে কেউ বড় জোর আল্লাহর অবাধ্য হতে পারে। তবে তারা কিছুতেই আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না।
আপনি মনে করছেন আল্লাহ নাই। সেজন্য আপনার আল্লাহর ভয় নাই। কিন্তু কারো মনে করা দ্বারা কোন বাস্তব জিনিস নাই হয়ে যায় না। যখন আল্লাহর শাস্তির সম্মুখিন হবেন তখন ঠিক ঠিক বুঝে যাবেন আল্লাহ আছে কি নেই? শুধু বুঝা নয় বরং তখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাবেন। কাজেই আল্লাহ বা তাঁর নবির (সা.) দোষ নয় তারচে বরং দেখুন আপনার নিজের কি দোষ রয়েছে।
কেউ ভুল পথে চলেও যদি একান্তই মনে করে সে ঠিক পথে আছে তবে সে অপেক্ষা করুক তার ঠিকটা দেখার জন্য।মনে রাখতে হবে ছোটকেই বড়র প্রতি মাথা নত করতে হয়। বড় কখনো ছোটর প্রতি মাথা নত করে না। বুধ্দিমান হলে এটা না বুঝার কথা নয়। আল্লাহ যদি বলেন তুই ক্যামনে আমাকে বিশ্বাস করবি আর ক্যামনে আমার ইবাদত করবি সেটা তোর ব্যাপার। কিন্তু আমাকে মানলে এই পাবি আর না মানলে এই পাবি, তখন লাভ ক্ষতি যার তাকেই ভাবতে হয় সে কি করবে। প্রবলের প্রতি দূর্বলের অহেতুক শর্তারোপ নিতান্ত বেকুবী, সেটা দূর্বলকে অবশ্যই ভাবতে হবে, যদি সে নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারতে না চায়।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৫