মহাশূণ্য মানে মহা ফাঁকাস্থান। বর্তমান মহা শূণ্যে আছে অনেক জ্যোতিষ্ক। যারা সবাই মহাশূণ্যে ভাসমান অবস্থায় বিদ্যমান। মহাশূণ্যের ফাঁকাস্থানে রয়েছে বিভিন্ন বায়বীয় ও গ্যাসীয় পদার্থ এবং বিভিন্ন শক্তি। যাদের উপর ভর করে ভাসমান অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে মহাশূণ্যের সব কিছু। মহামূণ্যের সব কিছুর মহাশূণ্যে বিদ্যমান থাকার একটা ব্যবস্থা মহাশূণ্যে রয়েছে।নতুবা মহাশূণ্যের ঘনবস্তু দ্বারা গঠিত সদস্যরা এতে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে কেমন করে? এ ব্যবস্থা যখন ভেঙ্গে পড়বে তখন মহা প্রলয় ঘটবে।আল্লাহ বলেছেন, ‘কুল্লুমান আলাইহা ফান, ওয়া ইয়াবকা অজহু রাব্বিকা যুল যালালি ওয়াল ইকরাম – তাতে সব কিছু বিলিন হয়ে থাকে। আর বাকী থাকে অথবা বাকী থাকবে তোমার মহিমাম্বিত ও দয়াময় প্রভু’- সুরা আর রাহমান, আয়াত নং ২৬ ও ২৭। প্রলয় যাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।
প্রলয় ঘটার কারণ ইসরাফিলের শিঙ্গার আওয়াজ। তারমানে শব্দশক্তি নষ্ট করবে পদার্থের আন্তআণুবিক শক্তি। ফলে অণু ও পরমাণু গুলো পারস্পরিক আকর্ষণ বল হারাবে। তারা আলাদা হতে হতে অবশেষে অণু ও পরমাণু থেকে ভেঙ্গে শক্তিতে পরিণত হবে।তাদের পদার্থগত অস্তিত্ব বিলিন হবে।তখন অবশিষ্ট থাকবে সকল শক্তি। আর সকল শক্তির সমম্বিত রূপ সর্বশক্তিমান। যাঁর নাম আল্লাহ। প্রলয় কান্ড তাঁর নিকট অপারগ। কিন্তু কেন?
পদার্থ যখন বিলিন তখন শক্তির স্থান মহাশূণ্য। যা অসীম। শক্তি তার অবস্থান স্থানের পুরোটা জুড়ে থাকে। তো অসীম স্থানের সবটা জুড়ে শক্তি থাকলে শক্তিও হয়েগেল অসীম। প্রলয় অসীমকে যতই বিলুপ্ত করুক উহা অসীমকে বিলুপ্ত করে শেষ করতে পারবে না। কারণ অসীমকে শেষ করা যায় না। এ জন্যই প্রলয়ের পরেও অসীম আল্লাহ টিকে থাকবেন।তাঁর লয় ঘটবে না।
তিনি আকার কিভাবে সব সৃষ্টি করবেন? পদার্থ এর অণু-পরমাণু থেকে ভেঙ্গে শক্তি হলো? শক্তি থেকে কিন্তু বিলুপ্ত হলো না বরং অসীম শক্তির সাথে মিলে গেল।অসীম শক্তির অসীম দৃষ্টিশক্তি তাদের প্রত্যেককে আলাদা করে চিনে রাখলো। তারপর তিনি যখন চাইবেন তখন তাদেরেকে আবার যুক্ত করে শক্তি তাড়ীত করে আবার সৃষ্টি করা শুরু করবেন।এভাবেই আবার ফিরে আসবে প্রলয়ে বিলুপ্ত হওয়া জগৎ।
মহাপ্রলয়ের পর বিদ্যমান অন্য একটা মহাশূণ্যের ধারণা পাওয়া গেল। যাতে শুধু আল্লাহ থাকবেন। কোন এক সময় যদি তাতে আল্লাহও না থেকে থাকেন। তবে তাতে কিছুই ছিল না (মনেকরা অর্থে)।এরপর তাতে যা হবে তা’ নিজে নিজে হওয়া সাব্যস্ত হবে। কিন্তু তাতে পদার্থ ও সসীম শক্তি হতে পারবে না।কারণ এগুলোর সীমা থাকতে হয়। আচ্ছা সীমা ছাড়া কি পদার্থ ও সসীম শক্তি হতে পারে? সীমা না দিলেতো ওগুলো অসীমে বিলিন হবে। আর অসীমে বিলিন হয়ে গেলে ওগুলো আর হতে পারলো কই? সংগত কারণে কোন সসীম নিজে নিজে হতে পারে না। যেখানে কিচ্ছু নেই সেখানে নিজে নিজে হওয়ার জন্য ওগুলোর সীমা দেওয়া হবে কি দিয়ে? আর সীমাই যদি দেওয়া না যায় তবে সসীম নিজে নিজে হয় কেমন করে? কোন বিজ্ঞানী একথার জবাব দিতে পারবেন কি? মহাজগতে আছে পদার্থ, সসীম শক্তি ও অসীম শক্তি। দু’টি যখন নিজে নিজে হতে পারলোনা তখন এমনিতেই সাব্যস্ত হয়ে যায় তৃতীয়টি নিজে নিজে হয়েছে। আর সেটা অসীম শক্তি।কেন অসীম নিজে নিজে হতে পারলো? কারণ তাঁর সীমা দেওয়ার দরকার নেই, আর সীমা দেওয়ার কিছু নেই, দু’টো একসমান।সংগত কারণে অনিবার্যভাবে অসীম নিজে নিজে হতে পেরেছেন।অসীমের নিজে নিজে হতে পারার কারণ তাঁর যোগ্যতা, সসীমের নিজে নিজে না হতে পারার কারণ তাদের অযোগ্যতা। তো সসীম যখন নিজে নিজে হতে পারলো না তবে তারা হলো কেমন করে? এক কথায় উত্তর অসীম তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অসীম একজন। কারণ তাঁকে সীমা দিয়ে একাধীক করার কিছুই তখন ছিল না। আর সীমা দিলে অসীস অসীম থাকে না বরং সসীম হয়ে যায়। এ অসীম হলেন আল্লাহ। কাজেই মুসলমানের আল্লাহ বিশ্বাস শতভাগ সঠিক।আর এভাবেই মহাশূ্ণ্য থেকে তাঁর আল্লাহতে রূপায়ন। যদি কোর কারণ বশত তিনি বিলুপ্ত হন (যদিও এটা সম্ভব নয়, কারণ আমারা বলেছি) তবে আবার তিনিই ফিরবেন।সময়ের শুরু আল্লাহর সাথে এ জন্য তিনি চির বিদ্যমান।তিনি নেই, কিছু নেই, সময় নেই, কাজেই তাঁর পূর্বে কিছু ছিল কি না এমন প্রশ্ন অবান্তর।তিনি শুরু তিনি শেষ। তাঁর আগে পরে কিছু নেই। তিনি না থাকলে সময় না থাকলে তাঁর আগে পরে কিছু থাকে কেমন করে?
নিজে নিজে পদার্থ হয়নি, সসীম শক্তি হয়নি কিন্তু নিজে নিজে পদার্থ ও সসীম শক্তি অসীম শক্তিরূপে হয়নি এটা বলা যাচ্ছে না।সংগত কারণে পদার্থ ও সসীম শক্তি নিজে নিজে অসীম শক্তি রূপে হয়ে অসীমের সাথে মিশে অসীমের সত্ত্বাগত হয়ে গিয়েছে।এরপর অসীম সসীমের সীমা দিয়ে তার অসীম শক্তি তাড়িত করে এদের আলাদা অস্তিত্ব প্রদান করে তাঁর সৃষ্টির তালিকা ভুক্ত করেছেন। আর এভাবেই কোন কিছুর অস্তিত্ব বিহীন প্রথম মহাশূণ্য থেকে বিদ্যমান হলেন মহান আল্লাহ। দ্বিতীয় মহাশূণ্যে আল্লাহ ছিলেন।আর বর্তমানের তৃতীয় মহাশূণ্যে আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টি বিদ্যমান।মহা প্রলয়ের মাধ্যমে আবার কিছুকাল দ্বিতীয় মহশূণ্য বিদ্যমান থাকবে। এরপর আবার অন্যভাবে উপস্থাপিত হবে তৃতীয় মহাশূণ্য। কিন্তু প্রথম মহাশূণ্য আর কখনো আসবে না। ওটার চির বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ চির বিদ্যমান। এটাই হলো মহাজাগতিক মহাসত্য।
বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত আছে তৃতীয় মহাশূণ্য নিয়ে। দ্বিতীয় ও প্রথম মহাশূণ্য কবে যে মানুষের বুঝে আসে আল্লাহ মালুম।আর আমাদের এ মহান আল্লাহ রয়েছেন সর্বত্র এবং সবার সাথে।অণু জীবদের অণুভুতি পর্যন্ত তিনি বুঝেন।তাঁকে বুঝতে হলে তাঁকে নিয়ে ভাবতে হবে।
মানব জীবনে সব চেয়ে বড় আবিষ্কারের বিষয় হলো তার তাঁকে আবিষ্কার করা যার দয়ায় সে পেয়েছে তার মানব জীবন। অথচ দেখা যায় তাঁর প্রতি তার আগ্রহ নেহায়েত কম। সে উল্টা চিন্তা করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে কিভাবে মহা জগতের কথা ভাবা যায়। কিন্তু সে এটা ভাবতে পারেনি যে কোন কিছুর অস্তিত্ব বিহীন মহাশূণ্য বিবর্তীত হয়ে মহান আল্লাহ ছাড়া কিছু হওয়া সম্ভব নয়।
মহাজগত নিয়ে যে কেহ যে কোন যোক্তিক সমীকরণ নিয়ে কাজ করুক না কেন সকল সমীকরণে অবশ্যই অবশেষে আল্লাহ পর্যন্ত পোঁছবেই যদি সমীকরণে কোন ভুল না থাকে। আর রাস্তা ছেড়ে বেরাস্তায় হাঁটলে মানুষ দিশেহারা হয়ে কোথায় হতে কোথায় যায় সে নিজেও বলতে পারে না।কেনরে বাপু তোদের ভাবনাগুলো আল্লাহকে বাদ দিয়ে হতে যায় কেন? একবার অন্তত আল্লাহকে সাথে নিয়ে বিচরণ কর, দেখবে তিনি তোমাকে বঞ্চিত করবেন না। তাঁকে সাথে নিলে তিনি সহজে তোমার সত্য বুঝার ব্যবস্থা করবেন। আর তাঁকে বাদ দিয়ে চলতে গেলেই কপাল পুড়বে।
বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।
# প্রয়াত অভিজিৎ রায় শূণ্য থেকে মহাজগৎ পেয়েছেন। আর আমি পেলাম মহান আল্লাহকে। দু’জনের অংক ফল দাঁড়াল দু’রকম।
ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:২৯